বিজেপি জমানায় সামাজিক ন্যায়ের করুণ ছবি
social-justice-in-the-bjp-era

সংবিধান গৃহীত হওয়ার পঁচাত্তর বছর পার হওয়ার পরও সমতা ভিত্তিক সমাজ গঠনের প্রক্রিয়াটা রীতিমতো এক বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। ২০১৩-১৪ সালে সর্বোচ্চ আয়কর দাতাদের এক শতাংশ দেশে সমগ্র আয়ের ১৭ শতাংশ দখল করে রাখে, যা ২০২১-২২ বেড়ে সমগ্র আয়ের ২৩ শতাংশ হয়। আবার, এটা দেখা যাচ্ছে, মধ্যবিত্তদের তুলনায় অতি ধনীদের আয় অনেক দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৩-১৪ থেকে ২০২১-২২’র মধ্যে ওই এক শতাংশ সর্বোচ্চ আয়কর দাতাদের আয় ১৩ শতাংশ বেড়েছে, যা সবচেয়ে নিচে থাকা ২৫ শতাংশ আয়কর দাতাদের আয়ের তুলনায় ৬০ শতাংশ দ্রুত বেগে বৃদ্ধি। দেশের গভীরে প্রোথিত জাতপাত ব্যবস্থার ভিত্তির উপরেই দাঁড়িয়ে রয়েছে এই অসাম্য। আম্বেদকর পাঠচক্র ও বহুত্ব কর্নাটক নামে এক নাগরিক সংগঠন বিভিন্ন সামাজিক খাতে সরকারি ব্যয় বরাদ্দের নানা প্রকল্প, সাফাই শ্রমিকদের নিয়ে অনুসন্ধান ও সমীক্ষা চালিয়ে যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, তাতেই উঠে এসেছে ওই পরিসংখ্যান।

স্বাস্থ্যক্ষেত্রে, আমাদের সমাজে ক্ষমতারবিভিন্ন স্তরেও এই অসাম্যের ছাপ প্রকট রূপেই দেখা যায়।

উল্লিখিত সংস্থা ২০১৯ থেকে সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছে যে, দেশের কর্পোরেট জগতে পরিচালক মন্ডলীর ৯৪ শতাংশই অগ্রসর জাতপাত থেকে আগত। সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির এক রিপোর্ট উদ্ধৃত করে তারা দেখিয়েছে, ২০১৮’র পর হাইকোর্টগুলোতে মাত্র ৩ শতাংশ তপশিলি জাতি এবং ১.৫ শতাংশ উপজাতি বিচারপতি হয়েছেন।

২০১৯ সালের অক্সফামের এক সমীক্ষা থেকে দেখা যাচ্ছে, ১২১টি সংবাদ সংস্থার পরিচালকদের মধ্যে একজনকেও খুঁজে পাওয়া যায়নি যারা এসসি/এসটি থেকে আগত। ৩১ মার্চ ২০২২এ এমএসএমই’র ডেভেলপমেন্ট কমিশনারের দপ্তর থেকে প্রকাশিত পরিসংখ্যান থেকে দেখা যাচ্ছে দেশের ক্ষুদ্র-ছোট-মাঝারি সংস্থাগুলোর মালিকদের ৬১.৮ শতাংশই সাধারণ ক্যাটেগরি থেকে আগত। মাত্র ৬.৮ শতাংশ ইউনিটের পরিচালক তপশিলি জাতির থেকে এবং ২.১ শতাংশ উপজাতির থেকে আগত।

কেন্দ্রীয় সরকারের পরিসংখ্যান থেকেই দেখা যাচ্ছে, বিজেপির শাসনাধীনে তপশিলি জাতি উপজাতিদের উপর অত্যাচারের ঘটনা বেড়েছে ৪৮ শতাংশ। শুধুমাত্র ২০২২ সালেই নথিভুক্ত অত্যাচারের ঘটনা ছিল ৬৭,৬৪৬ অর্থাৎ দৈনিক ১৮৮। ২০১৫-২০১৯’র মধ্যে দলিত মহিলাদের উপর ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে ৪৯.৮৭ শতাংশ!

দেশে সাফাই কাজে কায়িক শ্রমের চির অবসানের জন্য ২০২৩’র আগস্ট’কে লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়। কিন্তু এখনও পর্যন্ত দেশের ৭৬৬ জেলায় কায়িক শ্রমের মাধ্যমে মধ্যযুগীয় প্রথায় সাফাই কাজ করানো হচ্ছে।

সামাজিক ন্যায় ও সশক্তিকরণ মন্ত্রকের কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী রামদাস অটওয়াল লোকসভায় এক প্রশ্নোত্তরে জানান, ২০১৮ থেকে নভেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত ৪৪৩ জন সাফাই কর্মী নিকাশি নালার ভেতর ঢুকে সাফাই করতে গিয়ে মারা যান, কিন্তু আরেকটি অসরকারি সংস্থার সমীক্ষা রিপোর্টথেকে জানা যায় যে এই সংখ্যাটি তার অনেক বেশি — তা হল ১,৭৬০!

- ব্যাঙ্গালোর মিরর, ৪ মে ২০২৪

খণ্ড-31
সংখ্যা-17