নিপীড়িতের থিয়েটার বলে কিছু হয় না, বরং বলা যায় থিয়েটার ফর ডেভেলপমেন্ট। এভাবেই বিপ্লাণু মৈত্র শুরু করলেন তাঁর বক্তব্য। ১৩ এপ্রিল ২০২৪, ক্রিক লেনের জর্জ ভবনে তিনি বক্তব্য রাখছিলেন দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রয়াণ দিবসে দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায় স্মারক কমিটি আয়োজিত স্মারক বক্তৃতায়। বিষয় ছিল নিপীড়িতের থিয়েটার। দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রয়াণের দেড় দশক পড়েও তিনি যে কত প্রাসঙ্গিক তা বোঝা যায় দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায় স্মারক বক্তৃতায় বিপ্লাণু মৈত্রের নিপীড়িতের থিয়েটার বিষয়ক আলোচনা থেকে। রসায়নে পিএইচডি এবং বেসরকারি সংস্থা আইপিএ-এর কর্মী ছিলেন দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। সকলের সঙ্গে আন্তরিক ভাবে মিশতেন এবং বাংলা ও ইংরেজিতে তাঁর বহু লেখা প্রকাশিত হয়েছে। চলচ্চিত্র বিষয়ক বহু লেখা তিনি লিখেছেন। বাংলা ভাষায় লিখিত প্রবন্ধগুলির একটি নির্বাচিত সংকলন গ্রন্থ এদিন প্রকাশিত হয়। গ্রন্থটির সম্পাদনা করেন নিত্যানন্দ ঘোষ।
এবার আসি বিপ্লাণু মৈত্রের থিয়েটার ফর ডেভেলপমেন্ট বা উন্নয়নের জন্য থিয়েটারের বিষয়ে। রবীন্দ্র ভারতীর কৃতী ছাত্র এই মানুষটি একসময় নিশ্চিত পেশা ছেড়ে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে প্রান্তিক মানুষের মাঝে গিয়ে তাঁদের সচেতন করে তুলেছেন এবং বাংলা নাটক ডট কমের মাধ্যমে প্রত্যন্ত জায়গায় ছড়িয়ে দিয়েছেন তাঁর চিন্তাভাবনা। তাঁর কথায় অত্যাচারীর স্বরূপ যখন আমাদের কাছে পরিষ্কার নয় তখনই মানুষ নিয়তি নির্ভর হয়ে ওঠে। এই প্রসঙ্গে আরও একটি কথা। অনেক সময়ই এই প্রান্তিক মানুষদের জন্য করা সরকারি প্রকল্পগুলি প্রত্যাশিত সাফল্য পায় না। যেমন পশ্চিমবঙ্গের একটি জেলায় অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য দেওয়া হয় একটি শূকরছানা ও একটি মুরগি। কিন্তু প্রত্যাশিত ফললাভ না হওয়ায় কারণ অনুসন্ধান করা হয় এবং দেখা যায় প্রকল্প সম্পর্কে তাঁরা অবগত নয়। এরপর নাটকের মাধ্যমে তাঁদের সেই সচেতনতা জাগ্রত হয় এবং প্রত্যাশিত ফললাভ হয়। এক্ষেত্রে অবশ্য একটি অন্তরায় ছিল তাঁদের পড়তে না পারা বা পড়ার প্রতি চরম অনাগ্রহ। এখানেই সাফল্য বলা যায় উন্নয়নের জন্য থিয়েটারের।
পশ্চিম ভারতের একটি বিলুপ্তপ্রায় উপজাতি বেগার উপজাতি। সরকার তাঁদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য অনেক টাকা খরচ করে। একবার এই উপজাতির আটশো জন ম্যালেরিয়ায় মারা যায়। খোঁজ নিয়ে জানা যায় মশারি দেওয়া সত্ত্বেও তাঁরা সেটা না খাটিয়ে সেটা দিয়ে মাছ ধরে। ম্যালেরিয়া সম্পর্কে তাঁদের ভুল ধারণা ছিল। পরে অবশ্য সেই সব ভুল ধারণা দূর হয়। ফলে নাটক অনেক সহজে মানুষের কাছাকাছি যেতে পারে।
পরবর্তী পর্যায়ে ছিল অমিত রায়ের গান। সেই গানগুলি এই পরিবেশের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে দর্শকদের মনকে আপ্লুত করে দিয়েছে। বিপ্লাণু মৈত্র ছাড়াও কিন্নর রায় এবং আরও অনেকে সংক্ষিপ্ত স্মৃতিচারণ করেন। সমগ্র অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা ও পরিচালনা করেন নিত্যানন্দ ঘোষ।
- দীপা জোয়ারদার