তিনজন ভূতপূর্ব মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’কে জানিয়েছেন যে সম্প্রতি আয়কর বিভাগ, ইডি বিরোধী দল ও তাদের নেতাদের বিরুদ্ধে যে সমস্ত পদক্ষেপ নিয়েছে, তা সুষ্ঠুভাবে, সমস্ত প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনী ময়দানে সমতা নিশ্চিত করার যে নির্বাচনী বিধি রয়েছে, তার পরিপন্থী।
ইতিমধ্যে আয়কর দপ্তর কংগ্রেসকে ২০১৪-১৫ এবং ২০১৬-১৭’র জন্য নতুন করে ১,৭৪৫ কোটি টাকার নোটিশ ধরিয়েছে। এর আগে, ১৯৯৪-১৯৯৫ এবং ২০১৭-১৮’র আয়কর নোটিশ আগেই ধরানো হয়, ফলে সব মিলিয়ে ৩,৫৬৭ কোটি টাকা দেবার জন্য আয়কর দপ্তর হুমকি দিয়েছে। এর আগে, আয়কর দপ্তর কংগ্রেসের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে ১৩৫ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দু’জন ভূতপূর্ব কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, এই ধরনের পদক্ষেপ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়ার পথে বাধাস্বরূপ। তাঁরা বলেছেন, ভারতীয় নির্বাচন কমিশনের মুখ্য আধিকারিক সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে নির্দেশ দিতে পারেন যে আপাতত ওই সমস্ত পদক্ষেপ মুলতুবি থাকুক। নির্বাচন পর্ব সাঙ্গ হওয়ার পর আবার তারা অগ্রসর হতে পারেন।
“আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি নির্বাচন কমিশন ওই পদক্ষেপকে নিজের ক্ষমতাবলে স্থগিত রাখতে পারে, কারণ তা নির্বাচনী ময়দানে সমতা নিশ্চিত করার নীতিকে (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) ক্ষতিগ্রস্ত করছে।” নির্বাচন কমিশনে আমরা যে নীতি অনুসরণ করতাম তা হল, “এতদিন ধরে যা অপেক্ষা করেছিল, নির্বাচনের সময় তা অপেক্ষা করুক”। যে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটা উঠে আসে তা হল, ওই পদক্ষেপ আপাতত মুলতুবি রাখলে কি অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাবে? তিন মাসের জন্য এমন কোন অপূরণীয় ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই, বলেছেন ভূতপূর্ব মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এস ওয়াই কুরেশি।
আরেকজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভূতপূর্ব মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, আমাদের আমলে এই ধরনের ঘটনাগুলো কখনই ঘটেনি। যেহেতু এই ধরনের নজির নেই, তাই বলাটাও মুশকিল যে নির্বাচন কমিশন কিভাবে হস্তক্ষেপ ঘটাবে। তবে এটা নিশ্চিত করেই বলা যায় যে, আদর্শ আচরণ বিধি অনুযায়ী নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সকলকেই ভোটের ময়দানে সমতা দিতে হবে। কর সংস্থাগুলো যদি লাগাতারভাবে প্রধান বিরোধী দলকে একের পর এক নোটিশ ধরাতে থাকে, ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে, এমনকি সেই অ্যাকাউন্ট থেকে টাকাও কেটে নেয় নির্বাচনী প্রচার চলাকালীন, তবে নির্বাচন কমিশন সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ডাইরেক্ট ট্যাক্সকে বলতেই পারে, এমন কী বাধ্যবাধকতা রয়েছে যে তোমরা নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারবে না? কেন কমিশন সিবিডিটি’র সাথে বৈঠক করে তা মেটাতে পারছে না?
সকল প্রাক্তন নির্বাচনী আধিকারিক বলেছেন, নির্বাচন কমিশন নীরব হয়ে বসে থাকতে পারেনা। তারা সরাসরি কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলোকে জানাক, এখন নয়, নির্বাচন মিটে যাওয়ার পর যা করার করবে।