আবেদন
যোগ্য শিক্ষক শিক্ষিকার ন্যায়বিচারের লড়াইয়ের পাশে থাকুন
justice-of-qualified-teachers

নবম-দশম দুর্নীতির অভিযোগ ৮.৫ শতাংশ এবং একাদশ-দ্বাদশ ১৪.১৪ শতাংশ! অথচ কোর্টের পর্যবেক্ষণ — এত পরিমাণ বেআইনি নিয়োগ হয়েছে যে, কে ‘আসল’ আর কে ‘বেআইনি’ নিয়োগ পেয়েছে তা পৃথক করা দুঃসাধ্য। অর্থাৎ, বেআইনিভাবে ঠিক কতজন বা কে কে চাকরি পেয়েছে সেটা কোর্টের কাছে পরিষ্কার নয়। অতএব প্যানেল পুরোপুরি ক্যান্সেল। এ তো এক অদ্ভুত ব্যাপার! ঠগ বাছতে গাঁ উজার! কোর্টের পর্যবেক্ষণেই পরিষ্কার ‘আসল’ নিয়োগ হয়েছে। ‘আসল’দের চাকরি কোর্ট এভাবে বাতিল করতে পারে? ‘আসল’ চাকরি প্রাপক ও তাদের পরিবারকে আগামী দিনগুলোতে যে দুর্বিষহ কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে তার দায় কে নেবে? ভারতীয় আইন ব্যবস্থার মূল স্পিরিট দোষী ছাড়া পেলেও কোনভাবেই যেন একজনও নির্দোষ সাজা না পায়। এই রায়ে সেই স্পিরিট কি রক্ষিত হল?

প্রশিক্ষিত সিবিআই, ইডি যে দুর্নীতিগ্রস্তদের চিহ্নিত করতে ব্যর্থ, ডিএম’রা কিভাবে সেই দুর্নীতিগ্রস্তদের খুঁজে বার করে সুদ সমেত মাইনে ফেরতের ব্যবস্থা করবেন? বা যে পদ্ধতিতে চার সপ্তাহের মধ্যে খুঁজে বার করবেন প্যানেল ক্যান্সেল না করে সেই পদ্ধতি অবলম্বন করলে কী ক্ষতি হতো? এই প্যানেল ক্যান্সেল পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা ব্যবস্থার উপর কি কোন বিরূপ প্রভাব ফেলবে নাতো? চার সপ্তাহের মধ্যে লক্ষ লক্ষ টাকা ফেরত দেবে কিভাবে? এটা সম্ভব কি? নাকি তারা আত্মহত্যা করবে?

সমস্ত দায় ওই বেকার যুবকদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে তাকে মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়া, কী ধরনের বিচার?

হ্যাঁ, দুর্নীতি একটা তো নিশ্চয়ই হয়েছে। এবং এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকরী লড়াইয়ের শরীক তো আমরাই। কিন্তু দুর্নীতির কারণে যারা বঞ্চিত হয়ে দীর্ঘদিন অমানুষিক কষ্ট সহ্য করলেন তাদের নিয়োগের কী হল? তারা কেন আজও ন্যায়বিচার পেল না? কেন তাদের এবং প্যানেল ক্যান্সেল হওয়া প্যানেলের যোগ্য ছেলেমেয়েদের চাকরির নিশ্চয়তার জন্য আরো পাঁচ/দশ বা সুপ্রিম কোর্টে এই নিয়োগ মামলা নিষ্পত্তি হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। সমস্যার সমাধান তো আগেই হয়ে যেতে পারত যদি সরকারের সদিচ্ছা থাকত, আইন ব্যবসায়ীরা প্রকৃত দায়িত্ব পালন করতেন বা বিচারকরা যদি বিচারের আসনে বসে রাজনীতি না করতেন।

বঞ্চিত চাকরি প্রার্থীসহ প্যানেল ভুক্ত যোগ্য শিক্ষকরা আজ বিচার ব্যবস্থা এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের নোংরা গোপন বোঝাপড়া এবং সরকারি দলের সাথে তাদের রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের শিকার এবং এই দ্বন্দ্বের ফলে একদল যোগ্য প্রার্থী ২০১৯ সাল থেকে বঞ্চিত। প্যানেল ক্যান্সেলের পর তাদের সাথে যুক্ত হল আরো এক দল যোগ্য শিক্ষক শিক্ষিকা মন্ডলী। আপনারা কী ভাবতে পারছেন যদি এই ১৭/১৮ হাজার শিক্ষককে একলপ্তে বসিয়ে দেওয়া হয়, সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থার কী হাল হবে! গরিব বাড়ির ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার কী হবে? প্রথম দফার নির্বাচনের পর এই রায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত নয় তো?

যা হচ্ছে তা অন্যায়, প্রতিবাদ হওয়া উচিত। কেবলমাত্র নোংরা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিচারববস্থাকে পিছন থেকে পরিচালনা করার এই ট্রেন্ডের বিরুদ্ধে আমাদের এক জোট হতেই হবে। শুভেন্দু অধিকারীরা রায় ঘোষণার আগেই কিভাবে জেনে যায়? মনে প্রশ্ন জাগে না? প্রাক্তন তৃণমূলী শুভেন্দু কি সরকারি নিয়োগে দুর্নীতির সাথে যুক্ত নয়? যারা দুর্নীতিগ্রস্ত তাদের সাজা হোক কিন্তু কারো কারো নোংরা রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য যোগ্য ছেলেমেয়েদের এভাবে যন্ত্রণাময় অন্ধকার জীবনে নিক্ষেপ করার এই অপচেষ্টার বিরুদ্ধে সোচ্চার হোন। বঞ্চিত চাকরি প্রার্থীদের সহযোদ্ধা হিসাবে দুর্নীতির কারণে যারা বঞ্চিত এবং প্যানেল ক্যান্সেল হওয়ার জন্য প্যানেলভুক্ত যোগ্য, যারা আবার নতুন করে বঞ্চিত হলেন তাদের সকলের লড়াইয়ের পাশে বিগত দিনে যেমন ছিলাম আগামীতেও থাকবো। বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্র সহ পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষদের প্রতি আমার আহ্বান এধরনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে এক জোট হোন, অন্যায়ের শিকার এই যুবক-যুবতীদের পাশে দাঁড়ান। সংগ্রামী অভিনন্দন সহ।

- সজল কুমার দে

(বঞ্চিত চাকরি প্রার্থীদের সহযোদ্ধা এবং বর্ধমান পূর্ব (তপঃ) লোকসভা কেন্দ্রের

সিপিআই(এমএল) লিবারেশন মনোনীত প্রার্থী)

খণ্ড-31
সংখ্যা-15