আইএলও এবং ইনস্টিটিউট ফর হিউমান ডেভেলপমেন্ট অন লেবার এমপ্লয়মেন্ট প্রকাশ করল ইন্ডিয়া এমপ্লয়মেন্ট রিপোর্ট, ২০২৪। এই রিপোর্ট বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রকাশিত তথ্য পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে তৈরি করেছে পূর্ণাঙ্গ এক নথি। মোদীর ভারতবর্ষে কর্মহীনতা, বেতন ও মজুরি সহ গ্রাম-শহরের শ্রমবাজারে বৈশিষ্ট্য সমূহ, মজুরির ক্ষেত্রে লিঙ্গবৈষম্য প্রভৃতি বিস্তৃত ক্ষেত্র জুড়ে গভীরে গিয়ে সমীক্ষা চালিয়ে যে পরিসংখ্যান তৈরি করেছে, তা মোদী শাসনকালে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রগুলোতে বিরাট সংকট, অবক্ষয় ও দারিদ্রকে প্রতিবিম্বিত করেছে ছত্রে ছত্রে।
বিশ্বে ডলারের সাপেক্ষে দ্রুততম বিকাশশীল পঞ্চম বৃহত্তম অর্থব্যবস্থার তকমা পাওয়া এই দেশটির অন্যান্য দিকগুলো রীতিমতো চিন্তাজনক। জি-২০ দেশগুলোর মাথাপিছু আয়ের ক্ষেত্রে ভারত সবচেয়ে নীচে, দেশের অভ্যন্তরের আর্থিক বিকাশ খুবই অসম। ২০২১-এ মাথাপিছু রাজ্য জিডিপি’র ক্ষেত্রে দিল্লীর অবস্থান বিহার-উত্তরপ্রদেশ-রাজস্থান-ঝাড়খন্ড-মণিপুর-মেঘালয়-আসাম এবং পশ্চিম দক্ষিণ ও উত্তরের রাজ্যগুলোর তুলনায় আটগুণ বেশি! শ্রমবাজারে ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ ইনফর্মাল ক্ষেত্রে কর্মরত, যা ভারতকে সাব সাহারা দেশগুলোর দলে ফেলেছে, নিম্ন-মধ্য আয়সম্পন্ন দেশগুলোর সাথে একাসনে রেখেছে। আইএলও’র মানদন্ডে ইনফর্মাল ক্ষেত্র তাকেই বলে যেখানে শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষার লেশমাত্র থাকে না। এমনকি, এই রিপোর্ট দেখিয়েছে, সংগঠিত ক্ষেত্রেও নিয়মিত কাজের সাথে যুক্ত রয়েছেন বিপুল সংখ্যক ইনফর্মাল শ্রমিক। ভারতীয় অর্থব্যবস্থার জৌলুশ নিয়ে মোদী যতই বিজ্ঞাপন করুক না কেন, আলোচিত রিপোর্ট দেখিয়েছে, ভারতের শ্রমবাজারে রয়েছে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্বরোজগেরে যা পশ্চাদপদ অর্থব্যবস্থারই বৈশিষ্ট্য। শ্রমশক্তিতে নারী শ্রমিকদের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রেও ভারতের স্থান বিশ্বের যে গড় রয়েছে, তার নীচে — ২৫ শতাংশ, যা লিঙ্গ অসাম্যের ছবিকেই ফুটিয়ে তোলে।
আরেকটা ক্ষেত্রে মোদীর ভারত রেকর্ড করেছে — শিক্ষিত যুবদের মধ্যে বেকারত্বের হারে। দেশে অনেক বেশি শিক্ষিত তরুণ তরুণী রয়েছেন, কিন্তু তাদের নিয়োগ করার মতো কাজ নেই। আইএলও’র রিপোর্ট জানিয়েছে, এ প্রশ্নে ভারত কয়েক দশক ধরে রয়েছে শীর্ষে! ২০০০ সালে এই কর্মহীনতার হার ছিল ৫.৬ শতাংশ, ২০১২-তে তা বেড়ে হয় ৬.২ শতাংশ, ২০১৮তে তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়ে এসে দাঁড়ায় প্রায় ১৮ শতাংশে।
সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হল, গত এক দশকের মধ্যে নিয়মিত বেতনভুক, স্বরোজগেরেদের গড় মাসিক আয় ক্রমাগত কমেছে। এটাও রিপোর্টে প্রকাশিত যে সর্বভারতীয় স্তরে ৪০.৮ শতাংশ নিয়মিত শ্রমিক এবং ৫১.৯ শতাংশ ক্যাজুয়াল শ্রমিক কৃষিক্ষেত্রে অসংগঠিত শ্রমিকদের জন্য নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরি পাননি। আর, নির্মাণ ক্ষেত্রেও ৩৯.৩ শতাংশ নিয়মিত শ্রমিক এবং ৬৯.৫ শতাংশ ক্যাজুয়াল শ্রমিক ওই ক্ষেত্রের নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
ভারতের শ্রমবাজারের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল, কাজের নিম্নমান, বিপজ্জনক কর্মস্থল ও অত্যন্ত কম মজুরি। বিরাট ঢাক পেটানো আর্থিক বৃদ্ধি কাজের বাজারে নতুন কর্মনিয়োগে পুরোপুরি ব্যর্থ। অন্যান্য বিকাশমান দেশগুলো আর্থিক বৃদ্ধির যে পথমানচিত্র অনুসরণ করে তা হল কৃষির উদ্বৃত্ত শ্রমশক্তিকে উৎপাদন শিল্পে স্থানান্তরকরণ। কিন্তু ভারত নিয়েছে ভিন্ন পথ। এখানে নির্মাণের মতো অসংগঠিত ক্ষেত্র ও গ্রামাঞ্চলের অকৃষি পরিষেবা ক্ষেত্রেই, অর্থাৎ যেখানে পুঁজির গঠন নিম্নমানের, সেখানেই স্থানান্তরিত হয়েছে কৃষির উদ্বৃত্ত শ্রমশক্তি — যা ভারতীয় অর্থব্যবস্থার অনুন্নয়নকেই সূচিত করে।
মোদীরাজ তছনছ করেছে দেশের অর্থনীতি। অকল্পনীয় গতিতে চওড়া হয়েছে আর্থিক অসাম্য। সংকুচিত হয়েছে মজুরি, বেতন। এই অন্যায়, অন্যায্য অত্যাচারী রাজকে আসন্ন নির্বাচনে নির্বাসনে পাঠাতে হবে ভারতীয় জনগণকে।