সমর পাল চৌধুরী স্মরণসভা : সংসদীয় রাজনীতিও আজ বিপদাপন্ন — নকশাল নেতার স্মরণসভায় উদ্বেগ
memorial-meeting

ইন্দিরা গান্ধী দেশে জরুরি অবস্থা জারি করলেও সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষ কথাটি তুলে দেননি। কিন্তু কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন মোদী সরকার আগামী লোকসভায় নির্বাচনে ৪০০ বেশি আসন জিততে চায়। দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে তারা দেশের ধর্মনিরপেক্ষতাকে ধ্বংস করে হিন্দুরাষ্ট্র ঘোষণা ও দেশের সংবিধানকেও পাল্টিয়ে দিতে চায়। এমনই অভিযোগ তুললেন বিভিন্ন নকশালপন্থী নেতা ও বুদ্ধিজীবীরা। তারা বলেন, বিজেপি হিন্দু মন তৈরি করতে চাইলেও কৃষক আন্দোলন গড়ে তুলেছে পাল্টা প্রতিরোধ। গত ২৫ মার্চ সিপিআই(এমএল)-এর ভূতপূর্ব নদীয়া জেলা সম্পাদক সমর পাল চৌধুরীর ৪৫তম শহীদ দিবসে ফুলিয়া ও বয়ড়া গ্রামে মিলিত হন বামপন্থী নেতা, বুদ্ধিজীবী, সাধারণ মানুষ ও শহীদদের পরিবার। সেখানে অনুষ্ঠিত সভা থেকে অভিযোগ ওঠে — কেন্দ্রে বিরাজ করছে একটা ফ্যাসিস্ট সরকার।

ইন্ডিয়া জোটের শরিক সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের নেতা বাসুদেব বোস বলেন, “মহুয়া মৈত্র কোন দলের সংসদ এটা বড় কথা নয়। তিনি সংসদে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছিলেন। তারজন্য তাকে বহিস্কার হতে হল। দিল্লীর মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল গ্রেপ্তার হলেন। ফ্যাসিবাদ দরজায় কড়া নাড়ছে। সংবিধান পদদলিত। বিজেপিকে সরকার থেকে সরাতে পারলে বা তারা ক্ষমতায় না থাকলে তাদের নখ, দাঁত কিছুটা তো দুর্বল হবেই।” অবসরপ্রাপ্ত সরকারি আধিকারিক ও একটি ক্ষুদ্র পত্রিকার সম্পাদক বৈদ্যনাথ সেনগুপ্ত বলেন, “নির্বাচনে বিজেপি হারলেও হিন্দুত্ববাদীদের থাবা হিন্দু মন তৈরির ফ্যাসিবাদী ধারা চালিয়ে যাবে। নেতিবাচক মানসিকতা হিসাবে রাম মন্দিরের পাল্টা জগন্নাথ ও হনুমান মন্দির তৈরি হচ্ছে। পাশাপাশি এই ফ্যাসিবাদী আক্রমণের বিরুদ্ধে দিল্লী, হরিয়ানা সহ গোটা উত্তর ভারত জুড়ে কৃষকদের প্রতিরোধ আন্দোলন শুরু হয়েছে।” তিনি সিপিআই, সিপিএমের মতো বামেদের সমালোচনা করে বলেন, “ওদের নেতিবাচক ভূমিকায় আরএসএস-বিজেপি ক্ষমতায় এসেছে।”

বিজেপি জনবিরোধী প্রকল্প হিসাবে হিন্দু-মুসলিম ভাগ করে ক্যা, এনআরসি চালু করতে চায়। কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাতিল করেছে। ভাঙরে পাওয়ার গ্রিড বিরোধী আন্দোলন ও নবগঠিত সিপিআই(এমএল) মাস লাইনের নেতা অলীক চক্রবর্তী বলেন, “বুর্জোয়াদের সবচেয়ে প্রতিক্রিয়াশীল অংশের সন্ত্রাসবাদী শাসন ফ্যাসিবাদ, এনআরসি ও ক্যা’র মাধ্যমে মুসলিমদের আরও দাবিয়ে রাখতে বিভাজনের রাজনীতির করছে বিজেপি। নাগরিকত্বের নামে ভাঁওতা দেওয়া হচ্ছে। ভারতের বাজার দখলই আন্তর্জাতিক পুঁজিবাদের লক্ষ্য। সার্ভার আমেরিকার হাতে। আমেরিকার অস্ত্রের ক্রেতা ভারত, পাকিস্তান। এটা মনে করার কারণ নেই ভারতকে বিশ্বের মধ্যে এরা শ্রেষ্ঠ আসনে বসাতে চায়।” প্রাক্তন উপাচার্য ডঃ অসিত চক্রবর্তী ফ্যাসিবাদের বিভিন্ন লক্ষণ তুলে ধরে বলেন, “যোগীর রাজ্যে দোষী মনে হলেই এনকাউন্টারে মেরে দেওয়া হয়। বুদ্ধিজীবীদের চাপে রাখা, ধর্মের সাথে রাষ্ট্রের গাঁটছড়া, গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করা, এগুলো সবই ফ্যাসিবাদের লক্ষণ। গোলওয়ালকার তাঁর বইতে লেখেন, পাকিস্তানকে ধ্বংস করাই একজন হিন্দুর মহান কর্তব্য। হিটলারের জার্মানির মতোই এখানে এক দেশ, এক বিধান, এক প্রধানকে তুলে ধরা হচ্ছে।” সিপিআই(এমএল) এনডি’র নেতা আশীষ দাশগুপ্ত বলেন, “চারু মজুমদার ও সরোজ দত্ত’কে রাষ্ট্রশক্তি হত্যা করেছে। এই ফ্যাসিবাদী শক্তিকে মোকাবিলা করেই কমিউনিস্ট ও লাল ঝান্ডাধারীদের এগিয়ে যেতে হবে।”

অনুষ্ঠানে ১৯৭২ সালে শহীদ মহিউদ্দিনের পরিবারের সদস্য শিশুশিল্পী মাহীর গাইল, ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’। মহিউদ্দিনের ভাইঝি শিক্ষিকা মিরাজী আবৃত্তি করলেন আর বললেন, “আমার ছোট ছেলে মাহীর স্কুলে যেতে চায় না, কারণ বন্ধুরা বলেছে মিশবে না। আমরা মুসলিম।” দেশপ্রেমের কোলাজ আবৃত্তি করে সমবেতভাবে শিশুশিল্পী মাহীর, জেনিফার, সবনাজ, রাইনা, রায়ান। গণসঙ্গীতে মাতিয়ে দিলেন প্রখ্যাত গণসঙ্গীত শিল্পী নীতীশ রায়। গান গাইলেন শহীদ মহিউদ্দিনের ভাই হেসামউদ্দিন। এদিন সমর পালচৌধুরীর সঙ্গে ১৯৭২’র শহীদ গণেশ ঘোষ এবং ১৯৭৯-তে শহীদ বাচ্চু ঘোষ সহ অমর শহীদদের স্মরণ করা হয়।

- রথীন পাল চৌধুরী

খণ্ড-31
সংখ্যা-13