প্রিয় দেশবাসী,
ভারতের সংবিধানকে, সংবিধান নির্দেশিত বহুদলীয় গণতন্ত্র ও যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে এতদিন ধরে আমরা স্বতঃসিদ্ধ ও স্বাভাবিক বলে ধরে নিয়েছিলাম। ২০২৪’র নির্বাচন যে চেহারা নিচ্ছে তাতে আর সে উপায় থাকছে না। মোদী সরকার ভারতকে একদলীয় রাষ্ট্রে পর্যবসিত করতে উঠেপড়ে লেগেছে। দিল্লীর ক্ষমতাসীন মুখ্যমন্ত্রী সহ দু’জন মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে নির্বাচনের প্রাক্কালে, এবং ভারতের প্রধান বিচারপতিকে হেনস্থা করা হচ্ছে অসাংবিধানিক ইলেক্টোরাল বন্ডকে খারিজ করে দেওয়ার জন্য, যে বন্ড ব্যবস্থা দুর্নীতিকে আইনি বৈধতা দিয়েছিল।
মোদী শাসনের দশ বছরে সংসদীয় গণতন্ত্রকে খর্ব করার চেষ্টা বিপজ্জনক মাত্রা নিয়েছে। এখন সরকার সংবিধানে আরও মারাত্মক আঘাত হানতে ৪০০+ সংখ্যাগরিষ্ঠতা তৈরির লক্ষ্য নিয়েছে। পরপর তৃতীয়বারের জন্য এবারেও মোদী সরকার ক্ষমতায় এলে তা সংবিধান ও সংসদীয় গণতন্ত্রের পক্ষে চরম বিপর্যয় ঘটবে। বিপন্ন হবে আমাদের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও প্রতিদিনের বেঁচে থাকা।
সরকার নানা রকম অসাংবিধানিক পথ নিচ্ছে এবং স্যাঙাতি কর্পোরেট ও গোদী মিডিয়ার পৃষ্ঠপোষকতায় নির্লজ্জ নীতিহীন অপকৌশলে ক্ষমতা ধরে রাখতে চাইছে। আমরা ভারতের জনগণ, আমাদের ভোট দেওয়ার সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগ করে এই বিপর্যয়কর রাজত্বের অবসান ঘটাব এবং ভারতকে এক সুস্থ সবল গণতন্ত্র হিসেবে পুনর্গঠিত করব। অনুগ্রহ করে আপনার ভোটাধিকার প্রয়োগ করুন। প্রতিটি ভোট যুক্ত হোক ভবিষ্যৎ ভারতের এই নির্ধারক সংগ্রামে, স্বৈরতন্ত্রকে পরাস্ত করে গণতন্ত্রের বিজয়ের লক্ষ্যে।
কেন্দ্রীয় কমিটি, সিপিআই(এমএল) লিবারেশন নিম্নলিখিত সনদের জন্য লড়াই করবে, সংসদের ভিতরে ও বাইরে। ‘ইন্ডিয়া’ জোটের অন্যতম শরিক হিসেবে আমরা বিশ্বাস করি যে এই পরিবর্তনগুলি ‘ইন্ডিয়া’ জোটকে জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষা পূরণে সক্ষম করে তুলবে।
১। ভোট অবশ্যই হতে হবে কাগজের ব্যালটে। ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে যথেচ্ছ কারচুপি করা যায়, তাই ইভিএমে ভোট বন্ধ করতে হবে।
২। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার (নিয়োগ, চাকুরির শর্ত ও কার্যকালের মেয়াদ) আইন, ২০২৩ বাতিল করতে হবে এবং ভারতের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশানুযায়ী সিলেকশন কমিটিতে ভারতের প্রধান বিচারপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলনেতাকে রেখে স্বচ্ছ পদ্ধতিতে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ করতে হবে।
৩। রাজনৈতিক দলগুলির নির্বাচনী খরচের ওপর একটি কার্যকরী সীমা আরোপ করতে হবে।
৪। নির্বাচকমণ্ডলীকে প্রয়োজনে নির্বাচিত জন প্রতিনিধিকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার অধিকার দিতে হবে।
৫। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি দলত্যাগ করলে নির্বাচিত সংস্থা থেকে তৎক্ষণাৎ স্বয়ংক্রিয়ভাবেই তার সদস্যপদ বাতিল হয়ে যাবে।
১। কর্মনিযুক্তি, পুষ্টি, স্বাস্থ্য ও আবাসের অধিকারকে অবশ্যই মৌলিক অধিকার হিসেবে ঘোষণা করতে হবে।
২। বৈষম্যমূলক সিএএ-এনআরসি-এনপিআর বাতিল করতে হবে।
৩। ইউনিফর্ম সিভিল কোডের (অভিন্ন দেওয়ানি বিধির) যে কোনও ধারণা খারিজ করতে হবে।
৪। ‘আধার’ ও অন্যান্য বায়োমেট্রিক সংযুক্ত চিহ্নিতকরণ পত্র ও প্রক্রিয়া বাতিল করতে হবে। সমস্ত কল্যাণমূলক প্রকল্পের সুবিধা যাতে সবাই পেতে পারে তার সংস্থান রাখতে হবে।
৫। বৈষম্য-বিরোধী একটি আইন লাগু করতে হবে যা যৌন প্রবণতা, লিঙ্গ পরিচিতি, অক্ষমতা, জাত ও ধর্ম ভিত্তিক সমস্ত বৈষম্য নিষিদ্ধ করবে।
৬। ভারতীয় অভিবাসীদের উৎপীড়নের হাতিয়ার হিসেবে ওসিআই’এর ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
১। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের সমস্ত প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন, সরকারি কোম্পানি ও সরকার-অধিগৃহীত সংস্থায়, সংরক্ষিত পদ সহ সমস্ত শূন্যপদ অবিলম্বে পূরণ করতে হবে।
২। চাকরি বা কাজ নেই এমন সকলের জন্য বেকার ভাতা দিতে হবে।
৩। বেসরকারি ক্ষেত্রেও প্রান্তিক জাতি ও জনগোষ্ঠীর জন্য শিক্ষা ও কর্মসংস্থানে অবশ্যই সংরক্ষণ চালু করতে হবে।
৪। সেনাবাহিনীতে ‘অগ্নিপথ প্রকল্প’ বাতিল করতে হবে।
১। জাতীয় ন্যূনতম মজুরি অবশ্যই মাসিক ৩৫,০০০ টাকা হতে হবে।
২। শ্রমিক-বিরোধী চার শ্রমকোড বাতিল করতে হবে।
৩। পুরোনো পেনশন স্কিম ফিরিয়ে আনতে হবে।
৪। অসংগঠিত ও অনিয়মিত শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষার সুযোগের (স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অবসরকালীন সুযোগ সহ) আওতায় আনতে হবে। যে কোনও ক্ষেত্রে, ভিডিএ (পরিবর্তনশীল মহার্ঘ ভাতা) সংযুক্ত ন্যূনতম ১০,০০০ টাকা মাসিক পেনশন চাই।
৫। প্রকল্প, চুক্তি, আউটসোর্স ও অনলাইন প্ল্যাটফর্ম শ্রমিক সহ সমস্ত চুক্তিভিত্তিক ও সাময়িক পদের নিয়মিতকরণ করতে হবে।
৬। সমস্ত কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের জন্য মাতৃত্বকালীন সবেতন ছুটি এবং শিশু-পরিচর্যার ব্যবস্থা আবশ্যিকভাবে চালু করতে হবে। নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে সব ধরনের লিঙ্গবৈষম্যমূলক নীতির অবসান ঘটাতে হবে।
১। স্বামীনাথন কমিশনের সুপারিশ অনুসারে সমস্ত ধরনের ফসলের জন্য অবশ্যই সি২+৫০ শতাংশ ফর্মুলায় ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ‘এমএসপি’র আইনি গ্যারান্টি চাই।
২। কৃষক ও গ্রামীণ মজুরদের সরকারি বা বেসরকারি সংস্থা থেকে নেওয়া সমস্ত ঋণ মকুব করতে হবে
৩। কৃষি অনুদান সুনিশ্চিত করতে হবে এবং সার ও অন্যান্য কৃষি-উপকরণ সুলভ মূল্যে সহজলভ্য করতে হবে।
৪। সমস্ত ভাগচাষিকে নথিভুক্ত করে কৃষক হিসেবে তাঁদের অধিকারগুলি সুনিশ্চিত করতে হবে; সিলিং-উদ্বৃত্ত জমি, বাস্তু জমি, ভূদান জমি, মঠ মন্দিরের জমি এবং পতিত জমি অবশ্যই ভূমিহীনদের মধ্যে বিতরণ করতে হবে।
৫। মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মনিশ্চয়তা আইন (এনআরইজিএ) অনুযায়ী কর্ম-প্রত্যাশী সকলের জন্য দৈনিক ন্যূনতম ৬০০ টাকা মজুরি ও বছরে ২০০ দিন কাজের নিশ্চয়তা দিতে হবে।
১। আবাসন, পানীয় জল, জনস্বাস্থ্য রক্ষা সংক্রান্ত বিশেষ করে পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থা ও নাগরিক সুযোগ-সুবিধা সমস্ত শহর ও নগরবাসীর জন্য অবশ্যই সুলভে সমানভাবে লভ্য হতে হবে।
২। ঘর গুঁড়িয়ে দেওয়ার অভিযান এখনই বন্ধ করতে হবে এবং বস্তিবাসীদের অবশ্যই সুরক্ষিত করতে হবে। উচ্ছেদ হওয়া মানুষদের একই এলাকা বা স্বাভাবিক বাসযোগ্য স্থানে (ইন-সিটু) পুনর্বাসন দেওয়াকেই ‘নিয়ম’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
৩। সমস্ত শহরবাসীর জন্য চাই সুলভ গণপরিবহন ব্যবস্থা।
৪। একটি পৌর কর্মনিশ্চয়তা আইন অবিলম্বে প্রণয়ন করতে হবে শহরের কর্মপ্রার্থীদের চাহিদা মেটাতে।
১। একটি ‘সর্বভারতীয় জাতি জনগণনা’ পরিচালনা করতে হবে এবং তার ভিত্তিতে সংরক্ষণের পরিধি প্রসারিত করতে হবে।
২। গ্রাম ও শহরের সমস্ত গৃহহীন পরিবারের জন্য বিনামূল্যে আবাসনের ব্যবস্থা।
৩। প্রতিটি পরিবারকে মাসে ৫০ কেজি খাদ্যশস্য ও তার সাথে চিনি, দুধ, ডাল ও ভোজ্য তেল সরবরাহের উদ্দেশ্যে জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইনের আওতায় গণবন্টন ব্যবস্থাকে সার্বজনীন করে তোলা আজ অত্যন্ত জরুরি।
৪। সমস্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও পরিষেবার মূল্য কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
৫। এসসি/এসটি সাবপ্ল্যান আইন, ২০১৩; এসসি/এসটি নিপীড়ণ নিবারণ আইন, ১৯৮৯/১৯৯৫; এবং ম্যানুয়াল স্ক্যাভেঞ্জারস (হাতে করে বর্জ্য সংগ্রহকারী) আইন, ২০১৩, অবশ্যই কঠোরভাবে বলবৎ করতে হবে এবং বিষয়টি নিয়মিত নজরদারিতে রাখতে হবে।
৬। বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের (পিডব্লুডি) সমস্ত জনপরিসরে ও পরিবহনে সমান প্রবেশাধিকার চাই। শিক্ষা ও কর্মসংস্থানে ৫ শতাংশ আসন তাঁদের জন্য সংরক্ষিত রাখতে হবে; তাঁদের উপার্জনের ওপর কোন কর আরোপ করা চলবে না; তাঁদের ব্যবহার্য সহায়তাকারী প্রযুক্তি ও যন্ত্রাদির জন্য সরকারি অর্থানুকূল্যের পর্যাপ্ত সহযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে।
৭। প্রবীণ নাগরিক, বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তি এবং বিধবাদের মাসে ১০,০০০ টাকা পেনশনের নিশ্চয়তা দিতে হবে যা মাহার্ঘ ভাতা ‘ডিএ’র সাথে সংযুক্ত থাকবে।
৮। সাচার কমিটি ও রঙ্গনাথ মিশ্র কমিশনের সুপারিশগুলির সার্থক ও সময়ানুগ রূপায়ণ চাই।
১। সংসদ ও রাজ্য বিধানসভাগুলিতে মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ সংরক্ষণ (ওবিসি কোটার প্রবিধান সহ) অবিলম্বে লাগু করতে হবে। তদুপরি স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলিতে মহিলাদের জন্য ৫০ শতাংশ আসন সংরক্ষিত রাখতে হবে।
২। যৌন নিপীড়ন, গার্হস্থ্য হিংসা, ‘সম্মানরক্ষার’ নামে অপরাধের শিকার এবং হিংসার সম্মুখীন ভিন্ জাত ও ভিন্ ধর্মের প্রেমিক প্রেমিকাযুগল — এদের সুরক্ষার জন্য রাষ্ট্রীয় অনুদানপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা, কার্যকরী হেল্পলাইন ও সহযোগিতা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হবে।
৩। পার্সোনাল ল’গুলির সংস্কার যেন মহিলাদের সংবিধান স্বীকৃত অধিকারগুলির সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ হয়।
৪। রূপান্তরকামী গোষ্ঠীর সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। তাদের জন্য নালসা (এনএএলএসএ) রায়-নির্দেশিত সমস্ত ধরনের প্রয়োজনীয় সুরক্ষা ও কল্যাণমূলক পদক্ষেপগুলি নিশ্চিত করতে হবে।
৫। এলজিবিটিকিউআইএ+ ব্যক্তিদের জন্য পর্যাপ্ত আইনি সুরক্ষা ও সহায়ক ব্যবস্থাপনা থাকতে হবে। ‘সিভিল ইউনিয়ন’ সম্পর্কে আবদ্ধ হতে ইচ্ছুক যে কোনো দুটি মানুষের অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার উদ্দেশ্যে যৌন প্রবণতা ও লিঙ্গ পরিচিতিগত বৈষম্যহীন একটি আইন প্রণয়ন করতে হবে। (সিভিল ইউনিয়ন = সমকামী যুগলের জন্য একটি আইনি মর্যাদা যার সুবাদে ঐ দম্পতি বিষমকামী কোনো দম্পতির মতোই আইনি অধিকার ও দায়িত্ব পালনের সুযোগ পাবেন। এই আইনি মর্যাদার সঙ্গে কর্মসংস্থান, উত্তরাধিকার, সম্পত্তি, পিতা-মাতার অধিকার ইত্যাদি বিষয়গুলিও যুক্ত।)
৬। কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের হেনস্থা বন্ধ করতে বিশাখা গাইডলাইন কঠোরভাবে বলবৎ করতে হবে। জাস্টিস ভার্মা কমিটির রিপোর্টের সমস্ত সুপারিশ কার্যকর করতে হবে।
১। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ অবশ্যই বাতিল করতে হবে। বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে জিডিপি’র ১০ শতাংশ করতে হবে।
২। স্কুল শিক্ষার সমস্ত স্তরে চাই মাতৃভাষায় অবৈতনিক শিক্ষা। সংস্কৃত বা অন্য কোনও ভাষা জোর করে চাপিয়ে দেওয়া চলবে না।
৩। শিক্ষায় সংরক্ষণের প্রশ্নে চালু আইনি প্রবিধানগুলি কঠোরভাবে লাগু করতে হবে। এই প্রবিধানগুলি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্যও প্রযোজ্য হবে।
৪। জাত ও লিঙ্গবৈষম্য নির্মূল করাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। ‘রোহিত ভেমুলা আইন’ প্রণয়ন করতে হবে এবং সমস্ত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘যৌন হয়রানি বিরোধী লিঙ্গ সংবেদনশীলতা কমিটি (জিএসক্যাশ)’ গঠন করতে হবে।
৫। স্কুলের মিড-ডে-মিল প্রকল্পে বাজেট বরাদ্দ বাড়াতে হবে। ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যাহ্ন ভোজনে ডিম ও মাংস দিতে হবে।
৬। নীট (এনইইটি) ও সিউয়েট (সিইউইটি) প্রত্যাহার করতে হবে।
১। বিনামূল্যে সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা এবং সুলভ মূল্যের ওষুধ সকলের জন্য নিশ্চিত করতে হবে।
২। সরকারি হাসপাতাল ও পিএইচসি ক্লিনিকের সংখ্যা অতি অবশ্যই বাড়াতে হবে এবং সেগুলির গুণগত মান উন্নত করতে হবে।
১। সমস্ত কর্পোরেটমুখী নীতি ও অরণ্য/পরিবেশ সংক্রান্ত আইনের বিভিন্ন সংশোধনীকে অবশ্যই বাতিল করতে হবে। যে সব শিল্প পরিবেশকে দূষিত করছে তাদের কঠোরভাবে শাস্তি দিতে হবে।
২। বনাধিকার আইন (এফআরএ) কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে। বনের জমি ও বনসম্পদের ওপর বনের অধিবাসীদের অধিকার তিলমাত্র খর্ব করা চলবে না। অরণ্য থেকে এবং তাদের জমি থেকে আদিবাসীদের উচ্ছেদ করা চলবে না, হাসদেও অরণ্যে আদানির প্রজেক্ট অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।
৩। হিমালয় ও অন্যান্য বাস্তুতন্ত্র সংবেদী অঞ্চলে বৃহৎ নির্মাণ প্রকল্প নিষিদ্ধ করতে হবে। যোশিমঠের বিপর্যয় বিপন্ন মানুষদের জন্য বিশেষ পুনর্বাসন, পুনর্গঠন ও সুস্থিতির প্যাকেজ আনতে হবে।
১। অতি ধনীদের সম্পত্তি ও উত্তরাধিকারের ওপর ১ শতাংশ হারে বাধ্যতামূলক কর আরোপ করতে হবে এবং কর্পোরেটদের করের হার বাড়াতে হবে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি থেকে কর্পোরেটদের নেওয়া যে সব ঋণ জমা-খরচের খাতা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে (রিটন্ অফ) বা যেগুলির পরিশোধ দীর্ঘ দিন ধরে বকেয়া পড়ে আছে (নন পারফর্মিং অ্যাসেট), সেগুলি অবশ্যই কর্পোরেট কোম্পানিগুলি থেকে উদ্ধার করতে হবে।
২। কর্পোরেট দায়বদ্ধতা সংক্রান্ত সার্বিক সুসমন্বিত একটি আইন আনতে হবে যার মধ্যে, কোম্পানির পরিচালন বোর্ডে শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্ব, আর্থিক স্বচ্ছতা, পার্টিকে চাঁদা দেওয়ার ওপর নিয়ন্ত্রণ, কর ফাঁকি নিবারণ ও কর্মক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষার বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
৩। বুনিয়াদি পরিকাঠামো ও বিত্তীয় ক্ষেত্রের বেসরকারিকরণ অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। সরকারি ক্ষেত্রের ইউনিটগুলিকে এবং মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্পগুলিকে পুনরুজ্জীবিত ও শক্তিশালী করা দরকার। ন্যাশনাল মানিটাইজেশন পাইপলাইন বাতিল করতে হবে।
৪। অরণ্য ভূমি, উপকূল এলাকা ও পরম্পরাগতভাবে মাছ ধরার এলাকাগুলির বেসরকারিকরণ ও বাণিজ্যিকীকরণ বন্ধ করতে হবে।
৫। জিএসটি প্রত্যাহার করে নিতে হবে এবং পণ্য ও পরিষেবার ওপর প্রগতিশীল (ক্রমবর্ধমান হারে) করা রোপ নীতি লাগু করতে হবে।
১। তথ্যের অধিকার আইনকে শক্তিশালী করতে হবে।
২। জনসাধারণের প্রতি দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে এবং আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার নামে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অবসান ঘটাতে, পুলিশ প্রশাসন ও কারার সংস্কার এক অতীব জরুরি প্রয়োজন হিসেবে দেখা দিয়েছে। প্রশাসনে অধিকতর স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতাকে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্যে পুলিশি ব্যবস্থার সংস্কার শুরু করা দরকার।
৩। সমস্ত দমনমূলক আইন, যেমন আনল’ফুল অ্যাক্টিভিটিজ প্রিভেনশন অ্যাক্ট (ইউএপিএ), আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট (আফস্পা), এবং তিনটি ক্রিমিনাল কোড প্রত্যাহার করতে হবে। সমস্ত রাজনৈতিক বন্দিদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।
৪। জাতিগত ও সম্প্রদায়গত গণনিধনের মতো অপরাধ এবং বিচারবহির্ভূতভাবে মেরে ফেলার মতো অপরাধগুলির বিচারের জন্য অবশ্যই বিশেষ আদালত (ট্রাইব্যুনাল) গঠন করতে হবে।
৫। আরাধনাস্থল (বিশেষ প্রবিধান) আইন, ১৯৯১, কঠোরভাবে বলবৎ করতে হবে।
৬। আমীর দাস কমিশনকে পুনরুজ্জীবিত করতে হবে এবং বিহারের নিষিদ্ধ রণবীর সেনার (ভূস্বামীদের নিজস্ব বাহিনী) রাজনৈতিক যোগসূত্রগুলি খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু করতে হবে।
১। যুক্তরাষ্ট্রীয় নীতিমালা জনপ্রিয় করে তুলতে হবে। রাজ্যগুলির বকেয়া প্রাপ্য নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মিটিয়ে দিতে হবে। রাজ্যপাল পদটি তুলে দিতে হবে।
২। আঞ্চলিক অসাম্য দূরীকরণের উদ্দেশ্যে পিছিয়ে থাকা রাজ্যগুলিকে ‘বিশেষ মর্যাদা’ দেওয়ার মাধ্যমে বিশেষ সহযোগিতা দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
৩। জম্মু ও কাশ্মীর, দিল্লী এবং পুদুচেরিকে পূর্ণাঙ্গ রাজ্যের মর্যাদা দিতে হবে। লাদাখকে সংবিধানের ষষ্ঠ তফশিলভূক্ত করতে হবে।
৪। উত্তর পূর্বাঞ্চলের স্বায়ত্তশাসিত জেলা কাউন্সিলগুলিকে অধিকতর স্বাধীনতা দিতে হবে। অসমের কার্বি আংলং অঞ্চলকে স্বশাসিত রাজ্যের মর্যাদা প্রদানের জন্য অবশ্যই অনুচ্ছেদ ২৪৪(ক) বলবৎ করতে হবে।
১। ভারতকে অবশ্যই তার প্রতিবেশী দেশগুলির সাথে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের অনুশীলন করতে হবে। জোট নিরপেক্ষতার নীতি বজায় রাখতে হবে এবং শক্তিশালী করতে হবে। আমাদের নিজেদের জন্য এমন একটি বিদেশ নীতি সুনিশ্চিত করতে হবে যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমী শক্তিগুলির স্বার্থ ও অগ্রাধিকারগুলি থেকে মুক্ত থাকবে।
২। সকল ভারতীয় যুবক, যাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে এবং রাশিয়া ও অন্যান্য দেশে ভাড়াটে সৈন্য বা সেনার সহকারী হিসেবে কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে, তাদের অবিলম্বে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে।
৩। বর্ণবিদ্বেষী, গণহত্যাকারী ইজরায়েল রাষ্ট্রের সাথে সমস্ত সামরিক, অর্থনৈতিক এবং শ্রম সংক্রান্ত চুক্তি বাতিল করতে হবে। ইজরায়েলের বিরুদ্ধে একটি আন্তর্জাতিক অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা বলবৎ করার জন্য ভারতকে উদ্যোগী হতে হবে।