১১ এপ্রিল মহাত্মা জ্যোতিরাও ফুলে জন্ম জয়ন্তী। ভারতকে ব্রাক্ষণ্যবাদের গোলামী থেকে মুক্ত করার আধুনিক রাজনীতির পথিকৃৎ তিনি। অর্থনৈতিক শোষণ আর সাংস্কৃতিক আধিপত্য যে পরস্পর সংযুক্ত সে সমাচার তিনি সেই উনবিংশ শতকেই তুলে ধরেছিলেন। ‘শুদ্র-অতিশুদ্র-স্ত্রী’ এই শব্দবন্ধ ব্যবহার করে তিনি জাত ব্যবস্থা ও পিতৃতন্ত্রকে অবিচ্ছেদ্য হিসেবে দেখতে শিখিয়েছেন। ভারতের পুরান ও কিংবদন্তির বর্ণবাদী বয়ানকে ছিন্নভিন্ন করে তিনি সমগ্র ইতিহাসকে নিপীড়িত জনসাধারণের অবস্থান থেকে দেখতে শিখিয়েছিলেন। ভারতের সমাজকে শোষক ও শোষিতের এক “দ্বিবর্ণ” ব্যবস্থা হিসেবে বিশ্লেষণ করেছেন। ইতিহাস বুঝিয়েছেন শোষক ও শোষিতের সামাজিক-সাংস্কৃতিক-নৈতিক সংঘাতের রাজনীতি হিসেবে। এবং এই যা কিছু তত্ত্বতালাশ তার সবকিছুকে বাল্য বয়স থেকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত গণসংগ্রামের ময়দানে আর নিজস্ব যাপনে পালন করেছেন ফুলে যুগল — জ্যোতি ও সাবিত্রী, যথাক্রমে মাত্র ১৩ ও ১০ বছর বয়সকালে দুজনে মিলিত হওয়ার পর থেকে।
পশ্চিম ভারতে যখন জ্যোতিরাও ফুলে তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ “গোলামগিরি” রচনা করছেন, ঠিক তখনই পূর্ব ভারতে ব্রাহ্মণ্যবাদী আধিপত্যের বিরুদ্ধে এক অভূতপূর্ব সামাজিক ধর্মঘট সংগঠিত হচ্ছিল, ১৮৭২ সালে, শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের ভাবান্দোলনের পথ ধরে, কোনোরকম আর্থিক দাবি ব্যতিরেকে কেবলমাত্র সামাজিক মর্যাদার প্রশ্নে গ্রামীণ শ্রমজীবী শ্রেণীর প্রায় ছয় মাস ধরে চলা কাজ বয়কট আন্দোলন।
ফুলে যুগলের শিক্ষা ও আন্দোলনকে বিস্তারিত করেন বাবাসাহেব আম্বেদকর। জাতের বিনাশ, নারীমুক্তি, পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম এবং মনুবাদী রাজনীতিকে পরাস্ত করা ছিল তাঁর জীবন ও সংগ্রামের মূল কথা। ফ্যাসিবাদকে নিছক ইউরোপের বিষয় হিসেবে না দেখে মনুবাদের সাথে তার গভীর মতাদর্শগত যোগসূত্রকে দেখিয়েছিলেন আম্বেদকর। হিন্দুরাজকে দেশের গণতন্ত্রের চরম বিপর্যয় বলে সতর্ক করে তাকে যে কোনো মূল্যে প্রতিহত করার আহ্বান রেখেছিলেন। ১৪ এপ্রিল আম্বেদকর জয়ন্তী।