ময়নাগুড়িতে ৩১ মার্চ ২০২৪ বিধ্বংসী ট্যুইস্টার ঘূর্ণিঝড়ের অভূতপূর্ব তান্ডবে দক্ষিণ বার্নিশ অঞ্চলে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিতে ১ এপ্রিল শিলিগুড়ি ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশনের উদ্যোগে পরিচালিত হয়েছে এক ত্রাণশিবির। এই ত্রাণকার্যে প্রথম থেকে শেষ অবধি তৎপর থেকেছেন পার্টির জলপাইগুড়ি জেলা সদস্য শ্যামল ভৌমিক, মুকুল চক্রবর্তী, দেবনাথ রায়, অন্নদেব রায় সহ তপেশ দাশগুপ্ত ও একঝাঁক তরুণ গ্রামীণ পার্টি সদস্য। সঙ্গে ছিলেন রাজ্য সম্পাদক। ৫০টি পরিবারকে চিড়ে, মুড়ি, বিস্কুট, পানীয় জল, মোমবাতি, দেশলাই ইত্যাদি সামগ্রী বণ্টন করা হয়।
ত্রাণের কাজ শুরুর আগে কয়েকটি গ্রাম প্রদক্ষিণ করে যে ভয়াবহ ও আতঙ্কজনক পরিস্থিতি প্রত্যক্ষ করা গেছে তা অবর্ণনীয়। মাত্র মিনিটখানেকের বিধ্বংসী তান্ডবের গতিপথের ব্যাসার্ধ বড় জোড় ১ কিলোমিটার। কিন্তু এই গতিপথে ট্যুইস্টার যা কিছু পেয়েছে আকাশসমান ধুলোধূসর এই ঘূর্ণিদৈত্য তা দুমড়েমুচড়ে ছারখার করে দিয়েছে। গতিপথের সামান্য বাইরে থাকা বিস্তীর্ণ বসতি ও ফসলসমৃদ্ধ মাঠপ্রান্তর অক্ষত ও অবিকৃত রয়ে গেছে। অথচ গায়ে লেগে থাকা মাঠে লক্ষ লক্ষ টাকা মূল্যের বেগুন, টমেটো ও অন্যান্য অর্থকরী ফসল সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। প্রাণহানি ও গুরুতর আঘাতপ্রাপ্তি ঘটেছে। হতাহতের সংখ্যা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। ঝড়ের প্রবল শক্তির অভিঘাত দেখে স্তম্ভিত হতে হয়।
আশেপাশের অঞ্চলগুলি থেকে হাজারে হাজারে রাজবংশী গ্রামীণ মানুষ তাঁদের আত্মীয়, পরিজন, অপরিচিত মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, বিভ্রান্ত সহনাগরিকদের প্রতি সহমর্মিতায় দীর্ঘ ও এখন অনেকটাই রুদ্ধ পথ হেঁটে পৌঁছতে চেষ্টা করছেন।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকরী উদ্যোগ চোখে পড়েনি। বিদ্যুত বিভাগের কর্মঠ শ্রমিকেরা অসম্ভব পরিশ্রম করে চলেছেন। NDRF’এর একটি ইউনিট মোতায়েন আছে একটি মাত্র জায়গায়। কিন্তু সরকারীভাবে বড়ো লঙ্গর চালানো বা ভেঙে পড়া বাড়িঘর পুনর্নির্মাণের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি।
রাতে টেলিফোন মারফত খবর পাওয়া গেল যে আমাদের পরামর্শ অনুযায়ী অকুস্থলে হাজির জেলা সম্পাদক ভাস্কর দত্ত, শ্যামল ভৌমিক, দেবনাথ রায়ের উদ্যোগে পয়েরবাড়ি গ্রামের ২২টি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের যথাযথ ক্ষতিপূরণের দাবি জোরালো করতে প্রত্যেকটি পরিবারের একটি তালিকা তৈরি হয়েছে বিদ্যুতবিহীন অন্ধকারে বাড়িতে বাড়িতে ঘুরে। আগামীকাল এই পরিবারের সদস্যরা পার্টি কমরেডদের নেতৃত্বে ময়নাগুড়ি বিডিও দপ্তরে তাঁদের দাবিসনদ পেশ করবেন। ক্ষতিপূরণ অনাদায়ে ধর্ণা-বিক্ষোভ সংগঠিত হবে। অন্যান্য সংলগ্ন গ্রামগুলিতে এই পার্টি উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।
১ এপ্রিল রাতে তৃণমূল ও বিজেপির নির্বাচিত স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যদের উদ্যোগহীনতার বিপরীতে ময়নাগুড়ি শহর ও ময়নাগুড়ি রোডের কিছু যুবক নিজেদের উদ্যোগে গ্রামগুলির প্রত্যন্ত অংশে চাল-ডাল ফুটিয়ে গ্রামের মানুষকে রাতের অন্ন যোগাতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে নেমে পড়েছেন। আমরা তরুণ নাগরিকদের এই মানবিক উদ্যোগকে সেলাম জানাই।
কয়েকদিন বাদে নির্বাচনী ডামাডোলে এই বিপন্ন মানুষগুলির বিস্মৃতির শিকার হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
সহৃদয় কমরেড ও সহনাগরিকদের প্রতি একান্ত আবেদন বিপর্যস্ত পরিবারগুলির পাশে দাঁড়ান। সাধ্যমতো রাশি রাজ্য ত্রাণ তহবিলে যুক্ত করুন। দুর্গত পরিবারগুলিকে মাথা তুলে দাঁড়াতে সাহায্য করুন।
- অভিজিৎ মজুমদার