সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতি’র আহ্বান : নারী-বিরোধী বিজেপি সরকারকে ২০২৪’র নির্বাচনে পরাস্ত করুন
progressive-womens-association

কি ভাবছেন?

বিজেপি নারীদের পক্ষে আছে?

আমরা তাহলে কেন বিজেপিকে ভোটে হারাতে বলছি?

আপনার ভোট পাঁচ বছরের জন্য কেন্দ্রে একটা সরকার নির্বাচিত করবে, যে সরকার কেন্দ্রে গিয়ে আমাদের ভালো থাকা অর্থাৎ আপনার আমার জাত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে চাকরি, ন্যায্য মজুরি, নিরাপত্তা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিষেবার মতো সংবিধান প্রদত্ত অধিকারগুলি সুনিশ্চিত করবে।

গত ১০ বছর শাসন করল বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার।

মহিলারা কী পেল এই দশ বছরে? আসুন দেখি,

বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও

এই প্রকল্পে কেবল প্রচারেই ব্যবহার হয়েছে ৮০ শতাংশ টাকা। বাস্তবে বেটিদের নয় ধর্ষকদের পাশেই থেকেছে বিজেপি। বিজেপি একমাত্র দল যারা ধর্ষকদের সমর্থনে মিছিল করে। কাঠুয়ায় শিশু ধর্ষণ ও হত্যার পরে ধর্ষকের সমর্থনে জাতীয় পতাকা হাতে মিছিল করেছে বিজেপির বিধায়ক। হাথরসে দলিত মেয়ে ধর্ষণ হওয়ার পর প্রমাণ লোপাটের জন্য রাতের অন্ধকারে ধর্ষিতার দেহ পুড়িয়ে দিয়েছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ।

বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ শেঙ্গার উন্নাওতে এক তরুণীকে ধর্ষণ করার পর, তরুণী ও তাঁর পরিবার বিচার চাইতে গেলে, মেয়ের বাবাকে গ্রেফতার করে জেলের মধ্যে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। তরুণীকেও লরির তলায় পিষে মেরে ফেলার চেষ্টা হয়েছে। বিজেপি শাসিত মণিপুরে তিন আদিবাসী মহিলা’কে নগ্ন প্যারেড করানো হয়েছে।

অলিম্পিক জয়ী মহিলা কুস্তিগিররা বিজেপির সাংসদ ব্রিজভূষণ সিং এর বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ আনলে, সেই ব্রিজভূষণকেই পূর্ণ সমর্থন দিয়ে গেছে সরকার। নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধনে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু’কে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি, কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর পাশে ছিলেন ব্রিজভূষণ।

বিলকিস বানোর ধর্ষকদের সাজা ফুরানোর আগেই মুক্ত করে দিয়েছিল গুজরাট সরকার।

প্যারোলে মুক্ত রাম রহিম সহ অনেক ধর্ষক।

ঊজ্বলা যোজনা

প্রাথমিকভাবে কিছু মহিলারা উনুন, গ্যাস পেলেন বটে, ভর্তুকিও এল। তারপর গ্যাসের দাম হু-হু করে বাড়লো আর ভর্তুকি কমতেই থাকল। তাই গরিব পরিবারের গ্যাস সিলিন্ডারে নয়, ভরসা হল সেই কাঠ কুটো।

সংবিধান নয়, দেশ চলবে ধর্মীয় অনুশাসনে

ক্ষমতায় আসার পর থেকে মেয়েদের ব্যক্তিগত জীবন, অধিকার ও স্বাধীনতার উপর হামলা নামিয়ে আনা হচ্ছে।

কর্ণাটকে শুধুমাত্র হিজাব পরে স্কুলে যাবার জন্য মুসলিম ছাত্রীদের শিক্ষার অধিকার ছিনিয়ে নেবার চেষ্টা হয়েছে। অথচ শিক্ষা সমস্ত নাগরিকের মৌলিক অধিকার।

হিন্দু মেয়ে মুসলমান ছেলের স্বাভাবিক প্রেম বিবাহকে মুসলমান সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা বৃদ্ধি করার ষড়যন্ত্র বলে তাকে ‘লাভ জিহাদ’ হিসেবে দাগিয়ে দিয়ে ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি করে চলেছে বিজেপি-আরএসএস। বর্তমানে এই বিয়ে আটকাতে আইনও পাশ হয়েছে বিজেপি শাসিত কয়েকটি রাজ্যে। এইভাবেই তারা নারীর শরীর, নারীর ইচ্ছার উপর দখলদারি চালাতে চায়।

নারীদের ক্ষমতায়ন, নারী সশক্তিকরণ মোদীর নারীদের সশক্তিকরণের লম্বা চওড়া ভাষণের সাথে দেশের রাজনীতি ও অর্থনীতিতে মহিলাদের অংশগ্রহণের বাস্তবের আকাশ পাতাল পার্থক্য।

ভোটের আগে সংসদে নারীদের ৩৩ শতাংশ সংরক্ষণ আইন পাশ করে মোদী নাকি নারীর ক্ষমতায়ন করলেন বলে চমক দিলেন, কিন্তু ২০২৪ নির্বাচনে সেটি লাগু করলেন না কেন?

আমাদের দেশে ৭৩.২ শতাংশ গ্রামীণ মহিলা কৃষি কাজের সাথে যুক্ত, কিন্তু ভারতে কৃষিজমির ১৩ শতাংশেরও কম মহিলাদের মালিকানাধীন। কৃষি মন্ত্রকের তথ্য অনুসারে (২০২০-২১) ভারতে মহিলা ক্ষেতমজুর গড়ে দৈনিক ৮৮ টাকা কম পান পুরুষদের দৈনিক মজুরির (৩৮৩ টাকা) থেকে।

ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামের গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট ২০২৩-এ মহিলাদের অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ এবং সুযোগের ক্ষেত্রে ১৪৬টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ১৪২তম।

১০০ দিনের কাজে গ্রামীণ মহিলারাই বেশি যুক্ত, কিন্তু ১০০ দিনের প্রকল্পকেও মোদী সরকার ক্রমেই গুটিয়ে নিয়ে আসছে। ফলত কাজের অভাবে মহিলারা কম মজুরিতে বহু পেশার সাথে যুক্ত হতে বাধ্য হচ্ছেন।

এমএসপি গ্যারান্টি আইন, ঋণমুক্তি, শস্যবীমা, ফসলের ক্ষতিপূরণ সহ কৃষক আন্দোলনের প্রধান দাবিগুলিকে কোনো মান্যতাই দেওয়া হচ্ছে না। উল্টে কৃষিতে বরাদ্দ অর্থের পরিমাণ কমিয়ে দিয়ে কর্পোরেটদের বিপুল পরিমানে কর ছাড় দেওয়া হচ্ছে।

বিজেপি’র ক্ষমতায় আসার ১০ বছর পরে আজ দেশের বেকারত্বের হার বিগত চার দশকে সবচেয়ে বেশি। জানেন নিশ্চয়ই মেয়েরা বেশি পরিমাণে কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণের সুযোগ না পেলে দেশের অর্থনীতিও শক্তিশালী হবে না।

বিজেপি কি হিন্দু নারীদের পক্ষে?

তাহলে অসমে এনআরসি তালিকা থেকে বাদ যাওয়া বেশিরভাগ নাম হিন্দু নারীদের কেন?

সম্প্রতি সারা দেশে সিএএ আইন পাশ হয়েছে। আচ্ছা বলুন তো মতুয়ারা তো এই দেশের নাগরিকই। তারা ভোটে দাঁড়ায়, ভোট দেয়। মতুয়া সম্প্রদায় থেকে আসা শান্তনু ঠাকুর নির্বাচিত বিজেপি সাংসদ। তাহলে মতুয়াদের সরকার নাকি নাগরিকত্ব দেবে এই ভাওঁতা দেওয়া হচ্ছে কেন? আর এইটা জানেন নিশ্চয়ই, নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য কাগজ দেখাতে হলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন মেয়েরাই। কারণ বেশিরভাগ মেয়েদের না আছে স্কুল কলেজের সার্টিফিকেট, না আছে বাবার সম্পত্তিতে নাম, না আছে নিজস্ব জমি।

সব সরকারই নারীদের অধিকারের ব্যাপারে ঔদাসীন্য দেখায়। কিন্তু বিজেপির মতো ফ্যাসিবাদী শক্তি মতাদর্শগতভাবে নারী অধিকারের বিরোধী। এদের আদর্শ হলো মনুসংহিতা মেনে মেয়েদের উপর কর্তৃত্ব বজায় রাখা। কিন্তু মেয়েদের স্বাধীনতা কদাপি নয়।

তাই মেয়েরা এক হোন।

এইবারের নির্বাচনে পিতৃতান্ত্রিক ব্রাহ্মণ্যবাদী বিজেপি সরকারকে পরাস্ত করুন।

জুমলা নয় জবাব চাই,

১০ বছরের হিসাব চাই।

বিজেপিকে একটি ভোটও নয়।

খণ্ড-31
সংখ্যা-14