শাসকদলকে ওষুধ কোম্পানিগুলির ঘুষ
companies-to-the-ruling-party

ইলেক্টোরাল বন্ডের মাধ্যমে ওষুধ কোম্পানিগুলির মোটা টাকা ঘুষ শাসকদলগুলোকে বিনিময়ে লাগামহীন ওষুধের দাম বৃদ্ধি সহ নিম্নমানের ওষুধের অবাধ ছাড়পত্র প্রতিবাদে সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের প্রেস কনফারেন্স

সম্প্রতি আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে ওষুধ কোম্পানিগুলো কে কত টাকার ইলেক্টোরাল বন্ড কিনেছে তার একটি আংশিক তথ্য সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। ফলে আজ হয়তো মানুষের মনে সন্দেহ জাগছে ওষুধের বাজারমূল্য কেন এত লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে চলেছে। সাধারণ মানুষ ওষুধের গুণমান নিয়ে হয়তো অতটা চিন্তিত নন। যতটা চিন্তা করেন ওষুধের দাম নিয়ে। কোন কোম্পানির কী ওষুধ, কী কাজ করে তা নিয়েও মানুষ হয়তো ততোটা ভাবিত নয়। তারা রোগভোগে একটু ওষুধ পেলেই খুশি থাকে। তা সে হাসপাতালের বিনা পয়সার ওষুধই হোক, কিংবা ডাক্তার না দেখিয়েই পাশের ওষুধের দোকানের ছেলেটির কাছ থেকে পয়সা দিয়ে দুটো ওষুধ পেলেই হল। কিন্তু অনেক ওষুধ খেয়েও রোগ না সারলেই স্বতঃস্ফূর্তভাবেই কেন জানিনা মানুষের ক্ষোভ গিয়ে পড়ে কোনো না কোনো ডাক্তারের উপর। সচেতন কিছু মানুষ অবশ্যই ওষুধের গুণমান নিয়ে চিন্তিত। কিন্তু তাদের অনেকেরই গাটের কড়ি খরচ করে দামি কোম্পানির ওষুধ কেনার ক্ষমতা থাকে না। ফলে তারা সরকারের জনমোহিনী বিভিন্ন জনঔষধি প্রকল্প কিংবা পিপিপি মোডের ন্যায্যমূল্যের দোকানের খপ্পরে গিয়ে পড়েন। কমদামে অনেক ওষুধ! কিন্তু তার মান কে যাচাই করছে।

ইলেক্টোরাল বন্ডের বিষয়টি সামনে আসতে আজ সমাজের যে অংশের মানুষ কিছুটা হলেও সচেতন এবং যাদের অর্থবল রয়েছে তারাও কি ওষুধের গুণমান সম্পর্কে নিশ্চিত থাকতে পারছেন? তথ্য কী বলছে?

গত ১৪ মার্চ ২০২৪ নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত তথ্য অনুসারে দেখা যাচ্ছে ইলেক্টোরাল বন্ডের মারফত ৩৫টি ওষুধ উৎপাদনকারী সংস্থা ভোট সর্বস্ব রাজনৈতিক দলগুলোর ভোট তহবিলে অনুদান হিসেবে দিয়েছে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ৭টি বৃহৎ কোম্পানি তাদের উৎপাদিত ওষুধের গুণমান পরীক্ষায় ফেল করার পরে ঐসব বন্ড কিনেছে এবং যথারীতি ফেল করা ঐসব ওষুধগুলোও বাজারে রমরমিয়ে চলছে!

এদের মধ্যে কয়েকটির উদাহরণ দেখা যাক।

ক) কোম্পানির নাম গ্লেনমার্ক : ২০২২’র নভেম্বরে এই ওষুধ কোম্পানিটি ৯.৭৫ কোটি টাকার বন্ড কিনেছে। পেছনের ইতিহাসটা কী? তাদের উৎপাদিত উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধ ‘টেলমা’ বারংবার ল্যাবরেটোরিতে গুণমান পরীক্ষায় ডাহা ফেল। এরজন্য ২০২২-২৩ সালে কমপক্ষে পাঁচ বার নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ফল কী হল? ঐ ইলেক্টোরাল বন্ডের নীচে চাপা পড়ে গেল গুণমান পরীক্ষার রিপোর্ট।

খ) ঠিক একই রকম ভাবে ‘সিপলা’ কোম্পানি তার উৎপাদিত ওষুধ ‘Ramdicivi’র, যা এক সময়ে করোনার আতঙ্ক থেকে বাচতে মানুষ চড়া দামে কিনতে বাধ্য হয়েছিল। গুণমান পরীক্ষায় ফেল করা সত্ত্বেও মানুষের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে সেদিন চড়া দামে মানুষকে কিনতে বাধ্য করা হয়েছিল। আজ প্রকাশ্যে আসছে কোম্পানিটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে ২৫.২ কোটি টাকার ইলেক্টোরাল বন্ড কিনেছে তার কথা।

এর আগেও ঐ কোম্পানির উৎপাদিত কফ সিরাপ ‘আরসি কফ’ ল্যাবোরেটরি টেষ্টে ফেল করেছিল। এবং পরের বছর কোম্পানিটি ১৪ কোটি টাকার বন্ড কেনে।

গ) এরপরে আরেকটি অত্যন্ত নামীদামি কোম্পানির কথায় আসা যাক। কোম্পানিটির নাম ‘টোরেন্ট ফার্মা’। যে কোম্পানি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রাজ্য গুজরাটেই প্রধাণত উৎপাদন করে। এর ইতিহাস কী? এই কোম্পানিটির উৎপাদিত ওষুধ স্যালিসাইলিক অ্যাসিড গুণমান পরীক্ষায় ফেল করে ২০১৮ সালে। ঐ বছরই এই কোম্পানির উৎপাদিত আরেকটি ওষুধ ‘ডেপল্যাট ১৫০’কেও নিম্নমানের বলে ঘোষণা করে মহারাষ্ট্রের ফুড অ্যাণ্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। আবার ২০১৯-তে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধ ‘লোসার এইচ’কে নিম্নমানের বলে ঘোষণা করে গুজরাটেরই ফুড অ্যাণ্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্টেশন। ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে হার্টের ওষুধ ‘নিকোরান এলডি’ মহারাষ্ট্রের ফুড অ্যাণ্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের গুণমান পরীক্ষায় অনুতীর্ণ হয়। ২০২৩’র ফেব্রুয়ারিতে ঐ কোম্পানির ডায়েরিয়ার ওষুধ ‘লোপামাইড’ও গুণমান পরীক্ষায় ডাহা ফেল করে। এতগুলো জীবনদায়ী ওষুধ গুণমান পরীক্ষায় ফেল করার পরেও ওষুধগুলো বাজারে রমরমিয়ে চলছে! এর পেছনে রসায়নটা কী? ২০১৯ থেকে ২০২৪’র জানুয়ারি পর্যন্ত কোম্পানিটি ৭৭.৫ কোটি টাকার ইলেক্টোরাল বন্ড কিনেছে। হায়রে মোদীর মনকে বাত!

ঘ) এরপরে আসা যাক, আইপিসিএ ল্যাবোরেটরিজ লিমিটেডের কথায় : ২০১৮’র অক্টোবর মাসে তাদের তৈরি অ্যান্টিপ্যারাসাইটিক ওষুধ ‘ল্যারিয়াগো’র কথায়। যে ওষুধে কম মাত্রায় ক্লোরোকুইন আছে বলে পরীক্ষায় ধরা পড়েছে — মুম্বাই ড্রাগ রেগুলেটরের দ্বারা। অথচ এই রিপোর্ট পরে পাল্টে যায় উত্তরাখন্ডের ড্রাগ রেগুলেটরের দ্বারা। খোজ নিয়ে দেখা গেল ঐ কোম্পানি ২০২২ থেকে ২০২৩’র অক্টোবরের মধ্যে ১৩.৫ কোটি টাকার বন্ড কিনেছে।

ঙ) ‘জাইডাস হেলথকেয়ার’ মূলত গুজরাটে অবস্থিত এই ওষুধ কোম্পানির তৈরি ‘রেমডিসিভিরের’ একটা ব্যাচের ওষুধের মধ্যে ব্যাক্টোরিয়া জাত এন্ডোটক্সিন পায় বিহার ফুড অ্যাণ্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এবং একে নিম্নমানের বলে ঘোষণা করে। পরে এই ওষুধ ব্যবহারের ফলে বেশ কিছু ক্ষেত্রে বিরূপ প্রতিক্রিয়াও ঘটে। অথচ গুজরাটের ড্রাগ রেগুলেটরি অথরিটি এই ওষুধের নমুনা পর্যন্ত সংগ্রহ করলো না। ফলে কোভিডের আতঙ্ককে কাজে লাগিয়ে কোম্পানিটি নিম্নমানের ও ক্ষতিকারী এই ওষুধটি চড়া দামে বিক্রি করে বিপুল মুনাফা অর্জন করলো। আর আজ প্রকাশিত হচ্ছে — কোম্পানিটি ২০২২ এবং ২০২৩ সালের মধ্যে ২৯ কোটি টাকার ইলেক্টোরাল বন্ড কিনেছে।

এছাড়াও বড় বড় কোম্পানিগুলির মধ্যে ডক্টর রেড্ডিজ ল্যাবোরেটরি ৮৪ কোটি টাকা, সিরাম ইনস্টিটিউট ৫২ কোটি টাকা, সান ফার্মা ৩১.৫ কোটি টাকা সহ দেশের মোট ৩৫টি ওষুধ কোম্পানি ১ হাজার কোটি টাকার বন্ড কিনেছে। বলাই বাহুল্য যেখানে দেশে ওষুধ পরীক্ষার ল্যাবরেটরির বিপুল ঘাটতি থাকায় বেশিরভাগ ওষুধ টেস্ট করাই হয় না। অথবা টেস্টে পাঠানোর পরে রিপোর্ট আসতে এতটাই দেরি হয়, যখন গুণমান পরীক্ষায় ফেল করা ওষুধও ঐ সময়ের মধ্যে ব্যবহার করা হয়ে যায়। যতটুকু পরীক্ষায় ধরা পড়ে, যা কার্যত হিমশৈলের চূড়া মাত্র; তা শাসক দলের নির্বাচনী তহবিলে কয়েক কোটি ঢেলে দিলেই কালা রিপোর্ট সাদা হয়ে যায়। শাসকদল এবং সরকারের বদান্যতার সুযোগ নিয়ে ঐ কোম্পানিগুলি জনগণের পকেট কেটে আরো বহুগুণে মুনাফা অর্জন করতে থাকে।

চ) এরপর আসা যাক, কোভিড ভ্যাক্সিন কেলেঙ্কারির কথায়। সরকারি স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর বিপুল ঘাটতি এবং সরকারি উদাসীনতা ও ভ্রান্ত স্বাস্থ্য পরিকল্পনার ফলে কোভিডে আক্রান্ত হাজার হাজার মানুষ যখন কার্যত বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু মুখে ঢলে পড়ছে। রাজ্যে রাজ্যে গণচিতা জ্বলছে। লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মানুষ পরিত্রানের পথ খুজছেন। তখন মোদীজী মানুষকে থালা বাজাও, তালি বাজাওয়ের নিদান দিচ্ছেন। তারই অনুগামীরা মানুষকে গোমূত্র ও গোমোই সেবনের নিদান দিচ্ছেন। অন্ধ ভক্তগণ অনেকেই তা সেবন করে চলেছেন। তখন মোদীজী শুধু এর মধ্যেই থেমে থাকেননি। তিনি ভারতবাসীর প্রাণ বাঁচানোর দায়িত্ব নিজ হাতে তুলে নিলেন এবং ভ্যাক্সিন আবিষ্কারের পূর্বেই কবে থেকে ভ্যাক্সিন দেওয়া হবে তার দিনক্ষন ঘোষণা করে বসলেন। অথচ বিজ্ঞান বলছে জরুরি ভিত্তিতেও ফাস্ট ট্রাক ট্রায়ালের মাধ্যমেও ভ্যাক্সিনের ট্রায়াল শেষ করতে গেলে ন‍্যূনতম যে সময় লাগে তার অর্ধেক সময়ও তিনি দিলেন না। ফলে ট্রায়াল শেষের আগেই মোদীজীর আশির্বাদে সিরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি ভ্যাক্সিন ‘কোভিশিল্ড’ ছাড়পত্র পেয়ে গেল! মানুষও সাতপাচ অত না ভেবে গদোগদো চিত্তে মোদী সরকারকে দুহাত তুলে আশীর্বাদ করতে লাগলো।

আজ প্রকাশ্যে আসছে ২০২২ সালের ১ আগস্ট, ২ আগস্ট ও ১৭ আগস্ট সিরাম ইনস্টিটিউটের মালিক কিভাবে ৫০ কোটি টাকার ইলেক্টোরাল বন্ড কিনেছে। তারপর ঐ কোম্পানির CEO আদার পুনাওয়ালা ২৩ আগস্ট ২০২২ সাক্ষাৎ করছেন মোদীজীর সাথে আর সাথে সাথেই ট্রায়াল শেষ হওয়ার আগেই কিভাবে ছাড়পত্র পেয়ে গেল ‘কোভিশিল্ড’। অতীতের সমস্ত নজির ছাড়িয়ে এর দাম ধার্য করা হলো ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা করে। অতীতে ভ্যাক্সিন যেখানে সারা বিশ্বজুড়েই বিনামুল্যেই দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। সেখানে এই রকম একটা চড়া দাম ধার্য করা হল। এবং মানুষকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে এই দামে নিতে বাধ্যও করা হলো। পরে দেশজুড়ে আন্দোলনের চাপে সরকার জনগণের ট্যাক্সের টাকা খরচ করে চড়া দামে সিরাম ইনস্টিটিউটের থেকে কিনে নিয়ে বিনামূল্যে সরকারি হাসপাতাল থেকে কিছু মানুষকে ভ্যাক্সিন দেওয়ার ব্যবস্থা করলো। পাশাপাশি ঐ কোম্পানি বাজারে চড়াদামে কোভিশিল্ড বিক্রি করতে থাকলো। মানুষের মধ্যে ভয়ে আতঙ্কে ভ্যাক্সিন নেওয়ার জন্যে কাড়াকাড়ি পড়ে গেল। বছর শেষে দেখা গেল ঐ কোম্পানির মালিক সাইরাস এস পুনাওয়ালার ঘরে মুনাফা জমলো ১ হাজার কোটি টাকা। আর ঘুর পথে ইলেক্টোরাল বন্ডের মাধ্যমে বিজেপির ঘরে গেল ৫০০ কোটি। সবটাইতো জনগণেরই টাকা। অথচ মানুষ এখনো জানতেই পারলো না কোভিশিল্ডের ক্রিয়া এবং বিরূপ প্রতিক্রিয়া কী কী হয়েছে!

ছ) ইতিমধ্যে খবরে প্রকাশ হয়েছে — দক্ষিণ ভারতের অরবিন্দ ফার্মা কোম্পানির (২০২২-২৩-এ যার নিট মুনাফা ছিল প্রায় দু’হাজার কোটি টাকা) ডিরেক্টর পি শরৎচন্দ্র রেড্ডির বয়ানের ভিত্তিতে ইডি দিল্লীর মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে গ্রেফতার করেছে। এই ভদ্রলোক ১০ নভেম্বর ২০২২ ইডির হাতে গ্রেফতার হন ও ১ জুন ২০২৩ রাজসাক্ষী হয়ে যান। এর আগে এপ্রিল ২১ থেকে অক্টোবর ২২ পর্যন্ত এই কোম্পানি ২২ কোটি টাকার বণ্ড কেনে যার মধ্যে বিআরএস ১৫ কোটি, বিজেপি ৪.৫ কোটি ও টিডিপি (তেলেগু দেশম পার্টি) ২.৫ কোটি টাকা পেয়েছিল।

ঘটনাক্রম লক্ষ্য করুন, গ্রেফতারি, বয়ান দেওয়া ও রাজসাক্ষী হওয়ার পর ৮ নভেম্বর ২০২৩-এ এই কোম্পানি ২৫ কোটি টাকার বণ্ড কেনে যার সবটাই যায় বিজেপির ঘরে! ইলেক্টোরাল বণ্ডের কি মহিমা!

ইতিপূর্বে সরকার বহুবার জাতীয় ওষুধ নীতির পরিবর্তন ঘটিয়ে ভেষজ নীতিকে আজ চূড়ান্ত জনবিরোধী করে তুলেছে। ড্রাগ প্রাইসিং অথরিটিকে অন্যায়ভাবে কাজে লাগিয়ে সরকার দফায় দফায় অত্যাবশ্যকীয় এবং জীবনদায়ী ওষুধের দাম বিনিয়ন্ত্রিত করে চলেছে। এমনিতেই ওষুধ কোম্পানিগুলো তার উৎপাদন খরচের উপর মোটামুটি ১ হাজার থেকে ৩ হাজার শতাংশ পযর্ন্ত লাভ করে থাকে। তার উপরে ওষুধের বাজার দর বিনিয়ন্ত্রণের ফলে এবং ওষুধের গুণমান পরীক্ষার উপযুক্ত পরিকাঠামো দেশে না থাকার ফলে ইতিমধ্যেই ওষুধ কোম্পানিগুলো চড়া দামে অত্যন্ত নিম্নমানের ওষুধ দিয়ে বাজার ছেয়ে ফেলেছে। ফলে মানুষ এমনিতেই চড়া দামে অত্যন্ত নিম্নমানের ওষুধ বাজার থেকে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। তার উপরে যতটুকু গুণমান পরীক্ষা হচ্ছে, তার ফলটাও ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে ইলেক্টোরাল বন্ডের তলায়। নির্বাচনের আগে কোম্পানিগুলো মোটা টাকা শাসক দলের নির্বাচনী তহবিলে ঢেলে দিচ্ছে আর সাত খুন মাফ হয়ে যাচ্ছে। এই সব বন্ডের টাকা বতর্মান শাসক দল বিজেপি এবং স্বাধীনতার পর থেকে সব থেকে বেশি সময় শাসন ক্ষমতায় থাকা কংগ্রেস সহ বিভিন্ন রাজ্যের শাসক আঞ্চলিক দলগুলোও পাচ্ছে। ফলে ওষুধ কোম্পানিগুলো পরীক্ষায় ফেল করা নিম্নমানের ওষুধ চড়া দামে বিক্রি করার অঘোষিত লাইসেন্স পেয়ে জনগণের পকেট কেটে তার মুনাফা সুদে আসলে উসুল করে নিচ্ছে।

যেখানে মানুষের চিকিৎসা খরচের ৭০ থেকে ৮০ ভাগ খরচই হয়ে থাকে ওষুধ বাবদ। এবং যে দেশে চিকিৎসা করাতে গিয়ে ২৫ শতাংশের উপরে মানুষ দারিদ্র্যসীমার নীচে চলে যায়। যে দেশের বাজার ইতিপূর্বেই নিম্নমানের এবং ক্ষতিকর ওষুধে ভর্তি হয়ে রয়েছে। পৃথিবীর মধ্যে এইসব ক্ষতিকর ওষুধের বৃহত্তম বাজার হিসেবে ভারতবর্ষ চিহ্নিত হয়ে রয়েছে। সেখানে নির্বাচনী তহবিলে ঘুরপথে ভোট সর্বস্ব রাজনৈতিক দলগুলোকে এই বিপুল অঙ্কের টাকা ঘুষ দেওয়ার মধ্য দিয়ে — দেশের কমপক্ষে ৩৫টি বৃহত ওষুধ কোম্পানির অসাধু ব্যবসায়ের লাইসেন্স আজ আরো পাকাপোক্ত হল। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার সরকারি ওষুধ সরবরাহ বিপুল ভাবে কমিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে মানুষকে আরো বাধ্য করা হচ্ছে চড়া দামে বাজার থেকে নিম্নমানের ওষুধ কিনতে। এর সুযোগ নিয়ে মানুষের পকেট কেটে ঐ কোম্পানিগুলো ইলেক্টোরাল বন্ডে দেওয়া অর্থের হজারো গুণে টাকা অচিরেই তুলে নেবে, তাতে কোনো সন্দেহ নাই। আর রাজনৈতিক দলগুলো ঐ টাকা দিয়ে নির্বাচনে যথেচ্ছ রিগিং করবে, জঘন্যতম গুন্ডামীর পেছনে ঐ টাকা উড়াবে। ঐ মাসেলম্যানদের দাপটে মরবে সাধারণ মানুষ এবং ভোটে হারবে সাধারণ মানুষের স্বার্থ। মৃত্যু ঘটবে গণতন্ত্রের। জিতবে ঐ সব ভোটসর্বস্ব রাজনৈতিক দলগুলো। ভোটে জিতে ঐসব দলগুলো আবারও জনবিরোধী ভেষজ নীতি প্রয়োগ করে ওষুধের দাম আরো বাড়াবে। যাতে ঘুষ দেওয়া ঐসব কোম্পানিগুলো আরো বেশি মুনাফা করার সুযোগ পায়। মানুষ মরবে বিনা ওষুধে বা ক্ষতিকর ওষুধে। ভোটের মাধ্যমে চক্রাকারে কি এই জিনিসই চলতে থাকবে!

- ডাঃ দুর্গাপ্রসাদ চক্রবর্তী এবং

ডাঃ সজল বিশ্বাস

খণ্ড-31
সংখ্যা-14