প্রিয় নির্বাচকমন্ডলী,
আগামী ১৩ মে (৩০ বৈশাখ) বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্রে আপনার গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের দিন। বেছে নিতে হবে দেশের ও জনগণের জন্য যোগ্য প্রতিনিধিকে, যিনি এই জেলার কৃষক জনগণ, তাঁতি সহ বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ ও সাধারণ জনগণের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কাজের দাবিকে সংসদে তুলে ধরবেন।
এবারের লোকসভা নির্বাচন ভারতীয় জনগণের কাছে বড় কঠিন চ্যালেঞ্জ। কেন্দ্রের মোদী সরকার দেশকে এক বড় বিপর্যয়ের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। দেশের সংবিধান, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ব্যবস্থা, গণতন্ত্র আজ বিপদের মুখে। দেশের জনগণও চাইছে বিজেপির এই নাগপাশ থেকে মুক্ত হতে। সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপে বিজেপির নির্বাচনী বন্ডের কোটি কোটি টাকার কেলেঙ্কারী দেশের সবচেয়ে বড় দুর্নীতি হিসাবে সদ্য সামনে এসেছে। বিরোধীদের দুর্নীতি নিয়ে সরব প্রধানমন্ত্রী এই প্রশ্নে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। বিজেপির এই দুর্নীতি নিয়ে দেশের মানুষ দাবি তুলেছে অবিলম্বে এই টাকা বাজেয়াপ্ত করতে হবে। বিজেপি দেশের সম্পদ (কৃষি, রেল, কোলিয়ারী, বিদ্যুৎ, ব্যাঙ্ক, এলআইসি প্রভৃতি) কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর হাতে তুলে দিচ্ছে। বিভেদ, বিভাজন, ঘৃণার রাজনীতির মাধ্যমে সম্প্রীতির পরিবেশকে ধ্বংস করছে। বিরোধী দলগুলিকে ইডি, সিবিআই, ভুয়ো মামলা দিয়ে গ্রেফতার করা, নির্বাচিত রাজ্য সরকারগুলিকে ভেঙে দিতে কোটি কোটি টাকা খরচ করে ঘোড়া কেনাবেচা চলছে। চক্রান্ত চালাচ্ছে মানুষকে বেনাগরিক করার। জনগণের প্রধান শত্রু এই ধরনের ফ্যাসিস্ট সরকারকে পরাস্ত করা আজ সময়ের দাবি।
এদিকে বাংলার শাসক তৃণমূল সরকার বাংলার যুবকদের চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতারণা করেছে। রোদ, বৃষ্টি, ঠান্ডা’কে উপেক্ষা করে কলকাতায় মাসের পর মাস অবস্থান করে চলেছে চাকরিপ্রার্থী ভাবি-শিক্ষকরা। মেধায় যারা যোগ্য তারা চাকরি থেকে আজও বঞ্চিত হয়ে আছে। কিন্তু সরকার বধির। প্রতিদিন নতুন নতুন দুনীর্তির তথ্য সামনে আসছে। তৃণমূলের এই অধঃপতনের সুযোগ নিয়ে বিজেপির এজেন্ট বিচারপতি হাততালি কুড়িয়ে নিয়ে এবারে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন। শুধু চাকরি নয় বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতি এবং গণতন্ত্র হরণের প্রশ্নে তৃণমূল আজ কাঠগড়ায়। বামফ্রন্ট আমল থেকে বাংলার কৃষিমজুর ও গ্রামীণ যুবরা রাজ্যে কাজ না পেয়ে পরিযায়ী শ্রমিক হিসাবে অন্য দেশ ও অন্য রাজ্যে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। বর্তমান শাসনকালে তার সংখ্যা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে কোভিড সময়ে মোদী সরকারের চরম পৈশাচিক আচরণ এবং রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করা মানুষ আজও ভোলেনি। পূর্ব বর্ধমান জেলায় পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে আমাদের পার্টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। এর পাশাপাশি আমরা গড়ে তুলি ঋণমুক্তি আন্দোলন। কালনা, জামালপুর, পূর্বস্থলী, রায়না সহ সমস্ত ব্লকে এই আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা ঋণগ্রস্ত মানুষের পাশে, বিশেষ করে মহিলাদের পাশে দৃঢ়তার সাথে দাঁড়াই।
মোদী সরকার কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর হাতে জমি, কৃষি ও কৃষি-বাজার তুলে দিচ্ছে। চাষের খরচের দেড়গুণ ফসলের সহায়ক মূল্য আজও কৃষকের অধরা। দেশব্যাপী কৃষক আন্দোলনে আমাদের পার্টি, তার কৃষক সংগঠন, কৃষি ও গ্রামীণ মজুর সংগঠন নেতৃত্বকারী ভূমিকা নিয়েছে। পূর্ব বর্ধমান জেলায় এই ধরনের আন্দোলনে স্বাধীনভাবে ও সংযুক্ত কৃষক মোর্চার নেতৃত্বে সংহতিমূলক আন্দোলনে আমাদের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। খুব স্বাভাবিকভাবেই এই জেলার সমস্ত নাগরিকদের কাছে অনুরোধ বিজেপিকে পরাজিত করতে আপনারা আজকের সময়ের যোগ্য পার্টি ও প্রার্থিকে বিপুল ভোটে জয়যুক্ত করুন। আমাদের পার্টি ‘ইন্ডিয়া’ জোটের শরিক। সংগ্রামী বামপন্থী পার্টি হিসাবে জাতীয় রাজনৈতিক মঞ্চে নতুনত্ব নিয়ে আপনাদের পাশে এসেছি। দায়িত্বশীল, বিশ্বস্ত, স্বচ্ছ পার্টি হিসেবে কাজ করে চলেছি। আমরা জনগণের উপর নির্ভর ও ভরসা করে চলি। বিজেপি আপনাকে হিন্দুত্ব দেখিয়ে দেশের ঐতিহ্য ও সংবিধান নস্যাৎ করে চলেছে। সচেতন ভোটার ও বিবেকবান নাগরিক হিসেবে আপনাকে আপনার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে হবে।
বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্রে আমাদের পার্টি সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের প্রার্থী যুবনেতা ও শিক্ষকপদে চাকরি প্রার্থীদের চলমান আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক সজল দে। তার নির্বাচনী প্রতীক পতাকায় তিন তারা। চরম দুর্নীতিবাজ ও কর্পোরেট দালাল বিজেপিকে পরাজিত করতে এবং তৃণমুল সরকারের অপশাসনের বিরুদ্ধে সিপিআই(এমএল) লিবারেশন প্রার্থীকে আপনারা জয়যুক্ত করুন।
অভিনন্দন সহ,
সলিল দত্ত,
সিপিআই(এমএল) লিবারেশন,
বর্ধমান জেলা কমিটি