১৯ এপ্রিল থেকে পয়লা জুন — এই সাত দফায় ২০২৪’র লোকসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। বিশ্বে ১৪৩ কোটির সর্বাধিক জনবহুল দেশ এই ভারতবর্ষ আগামী নির্বাচন মারফত নির্বাচিত করবে পরবর্তী কেন্দ্রীয় সরকারকে। তাই সুবিবেচনা করেই আপামর ভারতবাসী প্রয়োগ করবেন তাঁদের গণতান্ত্রিক ভোটাধিকার, যার মধ্য দিয়ে ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে হবে অর্থ ও বাহুবলের বিপরীতে জনতার শক্তি।
দেশের বিপুল শ্রমজীবী জনতার কাছে গত দশ বছরের মোদী শাসনকাল ছিল মারাত্মক বিপর্যয় সৃষ্টিকারী। সংসদের ভেতরে তার নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে বিজেপি ব্যবহার করেছে কর্পোরেটদের আরও বেশি মুনাফা লোটার লক্ষ্যে, আপামর জনতার আর্থিক দুর্দশা ও অধিকার হরণের বিনিময়ে। শ্রমিকদের আইনি অধিকার কেড়ে নেওয়া হল সংসদে শ্রমকোড পাশ করিয়ে। মূল্যবৃদ্ধি ও বেকারত্ব আকাশছোঁয়া, উল্টো দিকে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের প্রকৃত আয় দিনের পর দিন মুখ থুবড়ে পড়ছে। নিজেদের বাসস্থান ও রুজি থেকে মানুষকে উৎখাত ও উচ্ছেদ করতে মোদী জমানার প্রতীক হয়ে উঠেছে বুলডোজার। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো জানাচ্ছে, ভারতে অসংগঠিত বা ইনফর্মাল শ্রমিকরা হলেন ৯৪ শতাংশ। নিয়োগকর্তারা এই বিপুল সংখ্যক শ্রমিকদের খাতায় কলমে তো নিয়োগই করেনি, এরা যে কোনো ধরনের সামাজিক সুরক্ষা থেকেও বঞ্চিত। ভারতের শ্রমিকশ্রেণির চরম বিপন্নতা প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছিল অতিমারীর সময়ে লকডাউন চলাকালীন। সম্পদসৃষ্টিকারী যে শ্রেণিটি দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখে, সংকটের প্রথম আঘাতে, লকডাউন ঘোষিত হওয়ার সাথে সাথেই তাঁরা হয়ে যান নেই-রাজ্যের বাসিন্দা। মুহূর্তের মধ্যে তাঁদের রোজগারে কোপ পড়ে। রুটি রুজি খুইয়ে চাল-চুলোহীন অযুত নিযুত শ্রমিকরা নিজ বাসভূমে বাধ্য হয়ে ফিরে যেতে হাজার হাজার কিলোমিটার পাড়ি দেন পায়ে হেঁটে। তাঁদের জন্য সরকার কোন বিকল্প ব্যবস্থা, কোনো রকম সুরক্ষা দিতে পারল না। আর, গোটা দেশে নেমে আসা অতিমারীর সেই ঘোর দুঃসময়ে চরম শ্রমিক বিরোধী শ্রমকোডগুলোকে পাস করিয়ে নেওয়ার জন্যই যেন ওৎ পেতে বসে ছিল মোদী সরকার। এই সরকারের নগ্ন কর্পোরেট প্রীতি, শ্রমিক বিরোধী মনোভাব এইভাবেই প্রকট হয়ে বেআব্রু হল।
লোকসভা নির্বাচন এখন দোরগোড়ায়। গত দশ বছর ধরে যে শ্রমিকশ্রেণিকে কেন্দ্রীয় সরকারের শ্রমিক বিরোধী নীতিগুলোর সাথে যুঝতে হয়েছে, এখন সময় এসেছে, এর বিরুদ্ধে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার, সকলের জন্য মর্যাদাপূর্ণ জীবন-জীবিকার দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার।
শ্রমিক বিরোধী শ্রমকোড ফিরিয়ে নাও
২০২০’র সেপ্টেম্বরে গোটা দেশ যখন অতিমারীর আক্রমণে বিপর্যস্ত, ঠিক সেই সময়ে মোদী সরকার ৪৪টি শ্রম আইনকে পরস্পরের সাথে সংযুক্ত করে তৈরি করল চারটি শ্রমকোড — শতাব্দীব্যাপী সংগ্রামের মাধ্যমে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনে অর্জিত অধিকারগুলোকে পুরোপুরি ছিনিয়ে নিয়ে।
মজুরি কোডে এমন সমস্ত বিধি রয়েছে যা নিয়োগকর্তাকে ন্যূনতম মজুরি প্রদানের বাধ্যকতা থেকে ছাড় দিয়েছে। এই কোড ফ্লোর লেভেল মজুরির ধারণা হাজির করেছে, যা ন্যূনতম মজুরির থেকে বেশ অনেকটাই কম। ন্যূনতম মজুরি দেওয়ার যে বাধ্যতা ছিল, মজুরি কোড তার অবসান ঘটাল। আট ঘণ্টা শ্রমদিবসের আন্তর্জাতিক সনদকে এই নতুন কোড অমান্য করেছে। অতিরিক্ত কাজ করলে ওভারটাইম মজুরি পাওয়ার যে নিয়ম ছিল, এই কোড তাও ছিনিয়ে নিয়েছে।
শিল্প সম্পর্ক কোড শ্রমিকদের আগাম নোটিশ ছাড়াই ছাঁটাই করার, সেই পদক্ষেপের পেছনে কোনো ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রয়োজনকে খারিজ করেছে। নিয়োগ কর, ছাঁটাই কর — এই জমানাকেই আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়ে শিল্প গণতন্ত্রকেই কণ্ঠরুদ্ধ করল। ফিক্সড টার্ম এমপ্লয়মেন্ট চালু করে ভারতের শ্রমিকশ্রেণির জন্য স্থায়ী চরিত্র সম্পন্ন কাজগুলি লোপাট হওয়ার রাস্তা পরিষ্কার করল। ইউনিয়ন গঠন করা, শ্রমিকদের অধিকার ও স্বার্থে নিয়োগকর্তার সাথে দরকষাকষি করার এযাবত সুযোগ ও অধিকারগুলো খুবই দুর্বল করল এই কোড। শ্রমিকদের অধিকার হরণ হলে সেই বিরোধ মীমাংসার পদ্ধতি খুবই দুর্বল করেছে এই কোড। এই কোড শ্রম আদালতগুলোকে তুলে দিয়েছে, শ্রম ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্তকে উল্টে দেওয়ার প্রভূত ক্ষমতা সরকারের হাতে দেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে শ্রমিকদের যেটুকু সামাজিক সুরক্ষার সুযোগ রয়েছে, সামাজিক সুরক্ষা কোড তার উপর বড় ধরনের হামলা নামিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ এখন যে সমস্ত সামাজিক সুরক্ষার সুযোগ সুবিধা রয়েছে, যেমন — পিএফ, ইএসআই, গ্রাচ্যুইটি, পেনশন, মাতৃত্বকালীন সুযোগ সুবিধা বা অন্যান্য তা এবার থেকে কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকারের বিজ্ঞপ্তির উপরই নির্ভরশীল হবে। সামাজিক সুরক্ষার ব্যয় এবার থেকে শ্রমিকদেরই বহন করতে হবে। নিয়োগকর্তাকে এই দায় থেকে ছাড় দেওয়া হয়েছে।
পেশাগত নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ও কাজের পরিবেশগত কোড হল এমনই এক বিধান যা সম্ভবত পেশাগত নিরাপত্তার সমস্ত বিদ্যমান ধারা উপধারাকে দারুণভাবে শিথিল করেছে। এই কোড শুধুমাত্র ঝুঁকিপূর্ণ কাজের সংজ্ঞাকেই শিথিল করেনি, বরং প্রায় ৮০ শতাংশ শ্রমশক্তিকে এর আওতার বাইরে রেখেছে। কর্মরত শ্রমিকদের যথাযথ কাজের পরিবেশ দেওয়ার ক্ষেত্রে আর কোন বাধ্যতা থাকল না নতুন এই কোডের, ক্রেশ’এর বাধ্যতামূলক ব্যবস্থাও এই কোড রাখল না।
মূল কথা হল, এই চারটে কোড লাগু হলে নিয়োগকর্তা ও কর্পোরেট ঘরানাগুলো ন্যায্য মজুরি দেওয়ার প্রশ্নে আর বাধ্য থাকবে না, সামাজিক সুরক্ষা বা শোভন কাজের পরিবেশ বজায় রাখার দায় থেকেও মুক্ত হবে।
মাসিক ৩৫,০০০ টাকা ন্যূনতম মজুরি সুনিশ্চিত কর
পাঁচ বছর অন্তর ন্যূনতম মজুরি সংশোধন করার যে কেন্দ্রীয় আইন রয়েছে, খোদ সরকারই তা অমান্য করেছে। বর্তমানে ভারতের শ্রমিক শ্রেণির জীবনযাত্রার মানকে মাথায় রেখে, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় বৃদ্ধি যেভাবে হচ্ছে তাতে মাসিক ন্যূনতম মজুরি হওয়া উচিত ৩৫,০০০ টাকা। স্কিম, প্ল্যাটফর্ম, গৃহ সহায়িকা, সমস্ত ধরনের ইনফর্মাল শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরির আওতায় আনা দরকার।
পুরোনো পেনশন স্কিম ফিরিয়ে আনো
অবসরের ঠিক আগে শেষ প্রাপ্য বেতনের ৫০ শতাংশ অবসরকালীন পেনশন হিসাবে প্রদানের যে স্কিম ছিল, ২০০৪ সালে বিজেপি সরকার তা প্রত্যাহার করে। নয়া পেনশন প্রকল্পে অবসরগ্রহণের পর নিশ্চিত অঙ্কের পেনশন পাওয়ার সুযোগ নেই। নয়া পেনশন প্রকল্প অবসরকালীন সময়ে পেনশনকে বাজারের অনিশ্চয়তার উপর ছেড়ে দিয়েছে, পেনশনের টাকাও নাম কা ওয়াস্তে। শ্রমিকদের ভবিষ্যত জীবন মর্যাদাপূর্ণ ও সুরক্ষিত করার অধিকারই সরকারের বুনিয়াদি নীতি হওয়া উচিত। সমস্ত বেতনভুক কর্মীদের ক্ষেত্রে পুরোনো পেনশন প্রকল্প ফিরিয়ে আনতে হবে। অন্যান্য সমস্ত শ্রমিকদের জন্য, এমনকি যারা ইপিএস-৯৫’র আওতায় রয়েছেন, তাঁদের সকলের ক্ষেত্রে মাসিক পেনশন ন্যূনতম ১০,০০০ টাকা করতে হবে, যা যুক্ত করতে হবে মহার্ঘ ভাতার সঙ্গে।
সমস্ত শ্রমিকদের জন্য স্বাস্থ্য বিমা এবং প্রভিডেন্ট ফান্ড সুনিশ্চিত করতে হবে
অসংগঠিত ও ইনফর্মাল ক্ষেত্রে শ্রমিক সহ সমস্ত শ্রমিকদের ইএসআই’এর মতো সরকারি স্বাস্থ্য বিমার আওতায় নিয়ে আসা সুনিশ্চিত করতে হবে। একই সাথে, অসংগঠিত ও ইনফর্মাল শ্রমিক সহ সমস্ত শ্রমিকদের পিএফ ও অবসরকালীন সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা সরকারকে করতে হবে।
মর্যাদাপূর্ণ কাজ হল মৌলিক অধিকার
দেশের কর্মরত সমস্ত ভারতীয় নাগরিকদের জন্য ন্যায্য মজুরি, শোভন ও সুরক্ষিত কর্মক্ষেত্র এবং সামাজিক সুরক্ষাকে মৌলিক অধিকার হিসাবে স্বীকৃতি দিতে হবে। শহর কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা প্রকল্প প্রবর্তন করতে হবে, মনরেগার কাজকে বছরে ২০০ দিন ও দৈনিক ৬০০ টাকা মজুরি দিতে হবে। দেশে আতঙ্কজনক বেকারত্বের পরিস্থিতিতে সরকার কখনই চোখ কান বন্ধ রাখতে পারে না।
উচ্ছেদ বন্ধ কর, বাসস্থানের অধিকারকে স্বীকৃতি দাও
সকলের জন্য বাসযোগ্য আবাস নিশ্চিত করতে হবে। সংলগ্ন এলাকায় যথাযথ পুনর্বাসন না দিয়ে ঘর বাড়ি ভেঙে দেওয়াটা নতুন সরকারকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে। কর্মক্ষেত্রের কাছাকাছি কর্মীদের উপযুক্ত থাকার ব্যবস্থা বা আবাসনের বন্দোবস্ত করতে হবে।
জাতীয় মনিটাইজেশন পাইপলাইন নীতি প্রত্যাহার কর, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিক্রি বন্ধ কর
গত ১০ বছর ধরে মোদী সরকার দেশের পরিকাঠামো ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোকে নির্বিচারে বিক্রি করার অভিযানে নেমেছে, কয়েক দশক ধরে যার উপর দাঁড়িয়ে আমরা এক স্বাধীন আত্মনির্ভর দেশ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করি। এই সমস্ত কিছুই বেচে দেওয়া হচ্ছে বেসরকারি কর্পোরেট সংস্থাগুলোর কাছে। রেল, প্রতিরক্ষা, রাস্তা, বিদ্যুৎ ক্ষেত্র গোটা মনিটাইজেশন প্রকল্পের ৬৬ শতাংশ। এটা সকলেরই জানা আছে যে এই ক্ষেত্রগুলোতেই সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান হয়। অন্যান্য আর যে সমস্ত ক্ষেত্রগুলো বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে তা হল, টেলিকম, বিমানবন্দর, প্রাকৃতিক গ্যাস, পেট্রোলিয়াম পণ্য, স্টেডিয়াম প্রভৃতি। কর্মসংস্থানের এই ক্ষেত্রগুলো বিক্রি করে মোদী সরকার যে কর্পোরেটদের হাতেই মুনাফা লোটার ব্যবস্থা করছে তাই নয়, দেশের যুবকদের জন্য কর্মসংস্থানের এই ক্ষেত্রগুলোর দরজাও চিরদিনের মতো বন্ধ করে দিচ্ছে। ইতিমধ্যেই আমরা দেখেছি রেল সহ অন্যান্য সরকারি ক্ষেত্রে শূন্যস্থান পূরণের জন্য যুবসমাজের ব্যাপক আন্দোলন।
জাতীয় মনিটাইজেশন পাইপলাইনের হাত ধরে কেন্দ্রীয় সরকার কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোর নির্বিচার বিলগ্নীকরণ করছে। এই যথেচ্ছ বিলগ্নীকরণ পদক্ষেপ দেশের যুবকদের মর্যাদাপূর্ণ কর্মসংস্থানের সমস্ত সুযোগই কেড়ে নিচ্ছে। বর্তমান জমানার সবচেয়ে প্রিয়পাত্র আদানিকে দেশের কয়লা উৎপাদনের অনুমতি দিয়ে এতদিন যে সমস্ত বিধিনিষেধ ছিল, তা শিথিল করা হল।
জাতীয় মনিটাইজেশন পাইপলাইন, বিলগ্নীকরণের নীতি থেকে সরকারকে সরে আসতে হবে। প্রতিরক্ষা সহ সমস্ত ক্ষেত্রে এফডিআই’এর অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে। দেশের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদন শিল্প ও পরিকাঠামোগত সম্পদ সরকারকেই পরিচালনা করতে হবে। দেশের আর্থিক সমৃদ্ধি, মর্যাদাপূর্ণ কর্মসংস্থানের দায়িত্ব মুনাফাখোর কর্পোরেটদের হাতে না পাচার করে সরকারকেই প্রধান ভূমিকায় আসতে হবে।
স্কিম কর্মী, গৃহ সহায়িকা, প্ল্যাটফর্ম কর্মীদের ‘শ্রমিক’ হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার পাশাপাশি
আনুষঙ্গিক সুযোগ সুবিধা দিতে হবে
প্রাথমিক শিক্ষা-স্বাস্থ্য-শিশুপরিচর্যা এবং পুষ্টির জন্য সরকারের প্রধান প্রধান স্কিমগুলো সচল রেখেছেন এক কোটির উপর স্কিম কর্মী। দেশব্যাপী বিরাট পরিধি জুড়ে বিক্ষোভ আন্দোলন হওয়া সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় সরকার এই বিপুল সংখ্যক স্কিম কর্মীদের ‘শ্রমিক’ হিসাবে স্বীকৃতি দেয়নি। তাঁদের নেই কোনো আইনি অধিকার। একইভাবে গৃহসহায়িকা, প্ল্যাটফর্ম কর্মীদেরও নেই কোনো আইনি অধিকার। এই সমস্ত শ্রমিকরা নয়া সামাজিক সুরক্ষা কোডের আওতায় থাকবেন বলে কেন্দ্রীয় সরকার প্রচার করলেও বাস্তবে এদের মধ্যে নিয়োগকর্তা-কর্মী সম্পর্কটাকেই অস্বীকার করা হয়, ন্যূনতম মজুরি-স্বাস্থ্য বিমা-সামাজিক সুরক্ষার মতো বুনিয়াদি অধিকারগুলোকেই সরকার দিতে প্রস্তুত নয়। স্কিম কর্মীদের সরকারি কর্মী হিসাবে স্বীকৃতি দিতে হবে, সরকারি কর্মচারীদের সমহারে তাঁদের মজুরি, অন্যান্য সুবিধা দিতে হবে। গৃহসহায়িকা ও প্ল্যাটফর্ম কর্মীদেরও ন্যূনতম মজুরি, ইএসআই, পিএফ, পেনশন ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দিতে হবে।
সমস্ত সরকারি শূন্যপদ পূরণ কর, কন্ট্রাক্ট প্রথা বাতিল কর
সাম্প্রতিক রিপোর্ট থেকে দেখা যাচ্ছে ৩০ লক্ষ সরকারি শূন্যপদ রয়েছে। বিগত দশ বছরে মোদী সরকার পরিকল্পিতভাবে নানাবিধ প্রক্রিয়ায় কর্মসংস্থানের উপর কোপ চালিয়েছে, বিভিন্ন সরকারি পদ অবলুপ্ত করেছে, বিলম্বিত করেছে শূন্য সরকারি পদ পূরণে। আকছার দুর্নীতি, নিয়োগ পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র ফাঁস এই জমানায় সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনকি জাতীয় নিরাপত্তার সাথে সম্পর্কিত সেনাবাহিনীতেও অগ্নিপথের মতো প্রকল্প চালু করা হয়েছে। ফিক্সড টার্ম এমপ্লয়মেন্ট হল আরেকটা রাস্তা যার মাধ্যমে নিরাপত্তাহীন কাজ তৈরি করা হচ্ছে, যেখানে নিয়োগ কর-ছাঁটাই কর হল একমাত্র দস্তুর।
সমস্ত সরকারি শূন্যপদ ভর্তি করতে হবে, ঠিকা প্রথায় নিযুক্ত সমস্ত ঠিকা কর্মীদের নিয়মিত করতে হবে। যে কোনো শিল্পে স্থায়ী ও অনিয়মিত শ্রমিকদের অনুপাত নির্দিষ্ট করতে হবে।
ভারতের শ্রমিকদের যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশগুলোতে রপ্তানী করা হচ্ছে কেন?
বিভিন্ন রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, ভারতের শ্রমিকদের যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ, যেমন ইজরায়েলে রপ্তানি করা হচ্ছে কর্মসংস্থানের অজুহাতে। আর এই মর্মে উভয় দেশের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
মোদী সরকারের এই পদক্ষেপকে দেশের শ্রমিকশ্রেণিকে তীব্রভাবে বিরোধিতা করতে হবে।
ইউএপিএ বাতিল কর — শ্রমিকদের অপরাধী হিসাবে দাগানো বন্ধ কর
সমস্ত ধরনের গণতান্ত্রিক স্বরকে মোদী সরকার নির্মমভাবে কণ্ঠরুদ্ধ করছে। নয়া শ্রমকোড ইউএপিএ’র মতো দমনমূলক ফৌজদারী আইনকে শ্রমিকশ্রেণির বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে। গাড়ির চালকদের সাত বছর জেলে পোরার পদক্ষেপের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে ব্যাপক প্রতিরোধ ও ধর্মঘটের মুখে মোদী সরকার পিছু হটে ও সেই দানবীয় ধারাটি স্থগিত রাখে। এখন এটা জানা নেই যে নির্বাচনের মুখেই যা করা হল তা আবার পরে ফিরে আসবে কিনা। মুম্বাইয়ে রিল্যায়েন্স বিদ্যুৎ সংস্থায় কিছু শ্রমিককে ইউএপিএ ধারায় জেলে আটক করা হয়। এটা নিশ্চিত আগামী দিনে ওই সমস্ত নতুন ফৌজদারী আইন শ্রমিকদের বিরুদ্ধেই পরিচালিত হবে।
ইউএপিএ সহ সমস্ত দানবীয় ফৌজদারী আইনগুলোকে প্রত্যাহার করতে হবে।
সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাবাজ ও ঘৃণা সৃষ্টিকারীদের কঠোর সাজা দিতে হবে
গত দশ বছরে আমরা দেখেছি মুসলিমদের নিশানা করে কিভাবে ঘৃণা ভাষণ ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানো হয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অপরাধীরা বেকসুর খালাস পেয়ে যায়। বহু ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও মূক বধির হয়ে থাকে এমনকি দাঙ্গাবাজ ও ঘৃণা সৃষ্টিকারীদের রক্ষাকর্তা হয়ে দাঁড়ায়। রাষ্ট্র নিজেই ঘৃণা ছড়ানোর রাজনীতি করছে। যে সরকারটি শ্রমিকশ্রেণির বহু সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত অধিকারগুলোকে লাগাতারভাবে ছিনিয়ে নিচ্ছে, সেই সরকারই শ্রমিক শ্রেণির মধ্যে বিভাজন তৈরি করতে ধর্ম, জাতপাত, খাদ্যাভাস, ধর্মীয় উৎসবকে কাজে লাগাচ্ছে। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাবাজদের রক্ষা করা থেকে সরকারকে নিবৃত্ত থাকতে হবে, যারা ঘৃণা ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
২০২৪’র লোকসভা নির্বাচন হয়ে উঠুক শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠার এক সুযোগ, জনগণের শত্রুদের কাছ থেকে জবাবদিহি চাওয়ার এক মাধ্যম।
গণতন্ত্র বাঁচাও
সংবিধান বাঁচাও
শ্রমিক বাঁচাও
মোদী নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারকে হারাও
২০২৪’র লোকসভা নির্বাচনে বাম গণতান্ত্রিক কণ্ঠকে শক্তিশালী কর