ওয়ার্কশপে যোগ দিতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই ওরা সবাই চল এসেছিলেন। কেউ হেঁশেল ঠেলে, কেউ ঘরের রান্না সেরে আবার মিড ডে মিলের সহকর্মীকে গুছিয়ে দিয়ে, কেউ আবার খেতের কাজে ছুটি করে বা স্বনিযুক্তির কাজ ফেলে রেখে। কেউ উপবাস নিয়েও এসেছিলেন। মাসুদা বিবি, ফিরদৌসী বিবি, প্রমীলা অধিকারী, কার্মী কিস্কু, জাহানারা খাতুন, রিজিয়া বিবি, সাধনারা। এসেছিলেন গৌরীপুর জুট মিলের বর্ষীয়সী ডলিদি, রেবাদি, বেলাদি সহ আরও অনেকে।
বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই গোটা দেশবাসীর সঙ্গে বিশেষ করে মেয়েদের উপর নানা নির্যাতন নামিয়ে এনেছে, মুখে সশক্তিকরণের কথা বললেও মেয়েদের স্বাধীনতা-স্বাধিকার কেড়ে নিচ্ছে, ধর্ষকদের মদত দিচ্ছে। তাই আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে মোদী সরকারকে পরাস্ত করার আহ্বান রেখেই হালিশহর সাংস্কৃতিক সংস্থার ঘরে গত ৯ মার্চ’ ২০২৪ একটি ওয়ার্কশপের আয়োজন করে আইপোয়ার উত্তর ২৪ পরগণা জেলা কমিটি।
হালিশহর, নৈহাটি শহর, শিবদাসপুর, জগদ্দল, খড়দহ, অশোকনগর সহ জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় ৫০ জন মহিলা এই ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণ করেন।
প্রথমে আইপোয়ার উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সভানেত্রী অর্চনা ঘটক সংক্ষেপে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের ইতিহাস তুলে ধরেন। আর তারই ধারাবাহিকতায় আজকের ভারতীয় মহিলাদের সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব ও রণধ্বনিকে তুলে ধরেন সংগঠনের সম্পাদিকা মিতালি বিশ্বাস। অন্যান্য বক্তারা মোদীর ‘নারীশক্তি বন্দনার’ আসল অভিসন্ধি, মোদী জমানায় বিদ্বেষ বিভাজনের রাজনীতি, ধর্ষণ সংস্কৃতি, হিন্দুত্বের অ্যাজেন্ডা তথা দলিত মুসলিম আদিবাসী ও নারীদের প্রতি বিদ্বেষ এবং নৃশংসতাকে তুলে ধরেন। মোদীর এই বাংলায় শুধু সন্দেশখালির ন্যক্কারজনক ঘটনাকে নির্বাচনী প্রচারের মর্মবস্তু করে, তুলনাহীন বেকারত্ব, নারীর হাতের কাজ কেড়ে নেওয়া, প্রকল্পকর্মীদের নিষ্ঠুর শোষণ বঞ্চনা, শিশুপুষ্টিকে নস্যাৎ করা আর দেশ লুঠকে আড়াল করার ঘৃণ্য অপচেষ্টাকেও তীব্র নিন্দা করা হয়। এইসব বক্তব্যের মাঝেই অংশগ্রহণকারী মহিলারা মোদী জমানার মিথ্যাচার নিয়ে তাদের উষ্মা ও ক্ষোভ উগরে দেন। কেউ বললেন, মূল্যবৃদ্ধি ভয়ঙ্কর স্তরে পৌঁছে গেছে আর নির্বাচনের আগে গ্যাসের দাম দু’একশো টাকা কমিয়ে তারা মহিলাভোট পেতে চান। তারা নারীদের এতই ‘মূর্খ’ ভাবেন! তারা বলেন, দাঙ্গাবাজ মোদী সরকার শান্তি চায় না। নানাভাবে মানুষের পকেট কাটছে, পেটে লাথি মারছে আর সবসময় মানুষকে একটা ভয়ের মধ্যে রাখছে, লাইনে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে। নিজেদের জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। নয়া শিক্ষানীতির জনবিরোধী রূপ, যুব সমাজের বেকারত্ব, স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে বিজেপি সরকারকে তুলোধোনা করেন বক্তারা গৌরীপুর জুট মিলের আশু দাবি ও আন্দোলনের প্রসঙ্গেও বক্তব্য রাখা হয়। বক্তারা ছিলেন রাজ্য সম্পাদিকা ইন্দ্রাণী দত্ত, দেশব্রতী পত্রিকার সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য জয়ন্তী দাশগুপ্ত, মহিলা সংগঠক অনন্যা চক্রবর্তী, জেলা নেত্রী রীনা মজুমদার, কার্মী কিস্কু, রিজিয়া বিবি, রেবা সর্দার, জাহানারা বিবি, মেহুলি। মোদী-জুমলার বিরুদ্ধে গোটা সময়টাই সভার এ কোণ ও কোণ থেকে নানা মন্তব্যে সভা ছিল রীতিমত সরগরম।
সভা পরিচালনা করেন অর্চনা ঘটক। সভা শুরু হয়েছিল মেহুলি, মিঠু, তপতী, মন্দিরা, অনন্যার গলায় “আমার মুক্তি আলোয় আলোয় ...” গানটি দিয়ে, শেষ হয় গণসংস্কৃতি পরিষদের সম্পাদক গণশিল্পী সরিৎ চক্রবর্তীর গলায় “লড়াই করো, লড়াই করো যতদিন না বিজয়ী হও ...” গানে-সবাইকে উদ্বেল করে। ‘বিজেপি হারাও, দেশ বাঁচাও’ স্লোগানে মুখরিত হয় সভাঘর। আগামী ৩১ মার্চ বারাসাতে জেলা সমাবেশে মিলিত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সভা শেষ হয়।