আরও জোরের সাথে, কার্যকরীভাবে, আরও বেশি তথ্যসমৃদ্ধ হয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে প্রচার মানুষের কাছে নিয়ে যেতে হবে। এই দাবিতে ২৩ মার্চ ধুবুলিয়া হাই স্কুলের অঘোর কামিনী হলে অনুষ্ঠিত হল পার্টির নদীয়া জেলা কর্মী বৈঠক। শুরুতে ধুবুলিয়া অফিসে ভগত সিং’এর শহীদ দিবস পালন করা হয়। তারপর জেলার বিভিন্ন ব্লক থেকে আগত প্রায় ৬৪ জন কর্মীর উপস্থিতিতে কর্মী বৈঠকের আলোচ্য বিষয় ছিল — ‘‘আসন্ন লোকসভা নির্বাচন এবং আমাদের কর্তব্য’’। কর্মী সভা সঞ্চালনা করেন জেলা সম্পাদক জয়তু দেশমুখ। শুরুতে বক্তব্য রাখেন পার্টির রাজ্য কমিটি সদস্য বাসুদেব বসু। এরপর বক্তব্য রাখেন রাজ্য সম্পাদক অভিজিৎ মজুমদার। তিনি বিজেপি আরএসএস’এর রাজনীতি সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা রাখেন। তিনি বলেন মোদী সরকারের রাজত্বে নেমে আসা বিপর্যয়ের বিভিন্ন দিকগুলি এ রাজ্যে বহুল চর্চিত নয়। সমগ্র দেশকে ফ্যাসিবাদের আগ্রাসন থেকে রক্ষা করতে আমাদের রাজনৈতিকভাবে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। দেশ জুড়েই জনগণের প্রতিবাদ প্রতিরোধ গড়ে উঠছে। তিনি চলমান কৃষক আন্দোলনের বৈশিষ্ট্যগুলি ব্যাখ্যা করে বলেন নকশালবাড়ির কৃষক আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় এই আন্দোলন এগিয়ে চলেছে।
শ্রমিকশ্রেণী ও ছাত্র-যুবরা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। এগুলির সাথে আমাদের একাত্মতা আরো বাড়িয়ে তুলতে হবে।
এ রাজ্যের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, “একটা বড় অংশের মানুষ আছেন যারা গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে চান। অন্তত একটা ভোটাধিকারের মাধ্যমেও তারা গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসেন। তাঁদের উপরই আমাদের নির্ভর করতে হবে। নদীয়া জেলায় আমাদের প্রার্থী নেই। তবুও আমাদের আরও জোরের সাথে, আরও কার্যকরীভাবে, আরও বেশি তথ্যসমৃদ্ধ হয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে প্রচার মানুষের কাছে নিয়ে যেতে হবে। এটাই আমাদের মূল কাজ। আমরা বলেছি বিজেপিকে প্রতিহত করতে ভারতের জনগণ ২০০৪ সালে তাদের বুদ্ধিমত্তা ও বিবেচনাকে প্রমাণ করেছেন। ২০২১ সালে যখন বিজেপি বাংলা দখলে উঠে পড়ে লেগেছিল, তখন তৃণমূলে ভাঙ্গন দেখা গিয়েছিল। অনেকেই তৃণমূল ছেড়ে চলে যাচ্ছিল। সেসময় বাংলার মানুষ বিজেপি বিরোধী প্রচারের ফলেই হোক কিংবা নিজেদের চিন্তা চেতনার জায়গা থেকেই হোক বিজেপিকে ক্ষমতায় আসতে দেয়নি। তারা যে সবাই তৃণমূলের সমর্থক ছিল এমনটা নয়। তবুও মানুষের বিজেপি বিরোধী আকাঙ্ক্ষা নির্বাচনে প্রতিফলিত হয়েছিল। সে সময় তৃণমূলের জেতার কথা ছিল না। কিন্তু জিতেছিল, কারণ কোন বিকল্প ছিল না। বামেরা শূন্য হয়ে গিয়েছিল। ৩৪ বছর ক্ষমতায় থেকে বামদের গ্রহণযোগ্যতা এখনও মানুষের মধ্যে নেই। তারা চেষ্টা করছেন। যুব বাহিনী দিয়ে ব্রিগ্রেড ভরিয়েছেন। তবুও এখনও তাঁদের গ্রহণযোগ্যতা আসেনি।
অপরদিকে তৃণমূল কিছু সংস্কারের কথা বলছে। যেমন লক্ষীর ভান্ডারে ওরা ৫০০ টাকা বাড়িয়ে ১০০০ টাকা করেছে। কিন্তু একে আমরা কেবলমাত্র একটি শব্দবন্ধ — খয়রাতি বলছি না। মানুষ যে আর্থিক দুরবস্থার মধ্যে রয়েছে সেখানে একটি গরিব পরিবারের কাছে পাঁচশো বা হাজার টাকা জীবনধারণের জন্য একটা বড় অবলম্বন। এটাকে কখনই আমরা “ভিক্ষা” বলবো না। কিন্তু এটা দিয়ে সমাধানের তো কিছু হবে না। সমাধান কিছুটা হতে পারত যদি কর্মসংস্থানের জায়গাটা প্রশস্ত করা হতো। আজ রন্ধনকর্মীদের সামান্য ৫০০ টাকা ভাতা বাড়ানো হয়েছে, আশা, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের ভাতা কিছুটা বাড়ানো রয়েছে। কিন্তু এটা থেকে কোনো স্থায়ী সমাধানের জায়গা কি আমরা পাচ্ছি? প্রকল্প কর্মীদের দাবি ছিল শ্রমিক মর্যাদা ও একটা বেতন কাঠামো তৈরি করা। যদি সদিচ্ছা থাকতো তাহলে ১৩ বছর ক্ষমতায় থেকে তারা এটা করতেই পারতেন। কিন্তু করলেন না। চা বাগানে বিগত ১০ বছর ধরে নূন্যতম মজুরি ঘোষণা করা হচ্ছে। কিন্তু বিভিন্নভাবে সেটাকে সরিয়ে রাখা হচ্ছে। নতুন আইন করে চা বাগানের শ্রমিকদের লিজের জমি ফ্রিহোল্ড করে পুঁজিপতিদের হাতে ওরা তুলে দিতে চাইছে।
তাই নির্বাচনেই সবকিছু শেষ হয়ে যাচ্ছে না। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘস্থায়ী লড়াই আমাদের চালিয়ে যেতে হবে। জনগণের চেতনা, বুদ্ধি বিবেচনার উপর আমাদের আস্থা রাখতে হবে। আমরা বিজেপির বিরুদ্ধে প্রচার চালাতে গিয়ে তৃণমূল সম্পর্কে চুপ করে থাকবো না। বামপন্থী হিসেবে একটা দায়বদ্ধতা আমাদের আছে। তবে আমরা কখনই সিপিএমের মতো প্রচার করব না। যেমন ওরা তৃণমূল নিয়ে লম্বা ফিরিস্তি দেয় অথচ বিজেপি নিয়ে কিছুই বলে না। এর বিপরীতে আমাদের রাজনৈতিক অবস্থান খুবই সুস্পষ্ট। আমাদের আহ্বান — ‘‘বিজেপিকে হারাও। গণতন্ত্র বাঁচাও। সংবিধান বাঁচাও।’’ আসন্ন ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন একটা যুগান্তকারী নির্বাচন হতে চলেছে। বিজেপিকে প্রতিহত করতে আমাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করতে হবে। এরপর এক প্রশ্নোত্তর পর্বে কর্মীরা বিভিন্ন প্রশ্ন করেন। মূলত আমরা সরাসরি কোনো শক্তিকে ভোট দিতে বলবো কিনা এই প্রশ্ন আসে। আলোচনায় উঠে আসে যে পার্টির স্ট্যান্ডে কোনো ফাঁক নেই। ইন্ডিয়া জোট থাকলে আমরা জোটের জন্য ভোট দিতে বলতাম। যখন জোট নেই তখন আমরা শুধু বিজেপিকে পরাজিত করার কথা বলব। এর চেয়ে বেশি প্রকাশ্যে আমাদের বলার কোনো প্রয়োজন নেই। বাকিটা জনগণ ঠিক করে নেবেন।
কর্মী বৈঠকের পর ধুবুলিয়া নেতাজি পার্কে এক প্রচার সভা হয়। বিজেপি হারাও দেশ বাঁচাও! গণতন্ত্র ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষা করতে সমস্ত মানুষ এক হোন! ইলেকটোরাল বন্ডের মাধ্যমে দেশের সবচেয়ে বড় তোলাবাজ বিজেপির মুখোশ খুলে দিন! প্রভৃতি শ্লোগানে এলাকা মুখরিত হয়ে ওঠে।