মুর্শিদাবাদের বিস্তীর্ণ উর্বর জমিতে নীরবে এক পরিবর্তন ঘটতে শুরু করেছে। একশ দিনের কাজে যে সমস্ত নারী পুরুষ একসময়ে কাজ পেতেন, তাঁরা এখন দলে দলে ভিন্ রাজ্যে পাড়ি দিচ্ছেন পরিযায়ী শ্রমিক হিসাবে। গত দু’বছর যাবত এই একশ দিনের কাজের প্রকল্প যা গ্রামীণ কর্মসংস্থানের একটা স্নায়ুকেন্দ্র ছিল, ক্রমেই শুকিয়ে যাচ্ছে।
গ্রামে যখন কৃষি কাজ থাকত না, তখন এই একশ দিনের কাজের প্রকল্প গ্রামীণ ভারতে কর্মসংস্থানের একটা গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র ছিল। মুর্শিদাবাদেও তাই ছিল। কিন্তু কেন্দ্র-রাজ্য বিবাদের জেরে ২০২১’এর ডিসেম্বরের পর থেকে এই খাতে তহবিল আসা বন্ধ হওয়ায় একশ দিনের কাজ মুখ থুবড়ে পড়তে শুরু করেছে। কেন্দ্র সরকার এই খাতে বরাদ্দ বন্ধ করায় গত দু’বছর চরম সংকটে পড়েছে গ্রামীণ রোজগার প্রকল্পটি। ডাউন টু আর্থ’এর পক্ষ থেকে মুর্শিদাবাদের গ্রামগুলিতে এক সমীক্ষা চালাতে গিয়ে সমীক্ষক দল এমন অনেক গ্রাম খুঁজে পেয়েছেন যা এখন রীতিমতো ‘ভূতুড়ে গ্রামে’ পরিণত হয়েছে, যেখানে সক্ষম ব্যক্তিরা গ্রাম ছেড়ে মালদা, দুবাই, উত্তরাখন্ড, রাজস্থান, কেরল, গোয়া-য় পাড়ি দিচ্ছেন। যারা বাইরে যেতে পারছেন না তাঁরা দু’বেলা পেটের খাবার জোটাতে বিভিন্ন কাজের খোঁজে রয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, মুর্শিদাবাদের অনেক গ্রামে ৮০-৯০ শতাংশ মানুষের হাতে কোন কাজ না থাকায় তাঁরা বাইরে চলে যাচ্ছেন।
২১ ডিসেম্বর, ২০২১’এর পর থেকে নরেগা খাতে বরাদ্দ বন্ধ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। যদিও বেশ অনেকেই অভিযোগ করেন যে তার বহু আগে থেকেই মজুরি পাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। বিডিও’র কাছে বারে বারে নালিশ করা সত্ত্বেও কোন সুরাহা হয়নি।
সমীক্ষায় এটাও উঠে এসেছে, ঠিকাদাররা যে সমস্ত প্রতিশ্রুতি দিয়ে গ্রামবাসীদের অন্য রাজ্যে নিয়ে যায়, সেই প্রতিশ্রুতি তারা পালন করেন না। এমন অনেকের সাক্ষাত মিলেছে, যারা গত তিন মাস কোনো মজুরি পাননি। ন্যায্য মজুরি প্রদানে ঠিকাদারদের বাধ্য করার কোনো বিধি ব্যবস্থা না থাকায় এই বঞ্চনা ক্রমে বেড়েই চলেছে।
- তথ্যসূত্র : ডাউন টু আর্থ, ২২ মার্চ, ২০২৪