আন্তর্জতিক নারী দিবসের আওয়াজ: নারীবিদ্বেষী বিজেপি-আরএসএস দূর হঠো
voice-feminist-bjp-rss-get-away

মেয়েদের কাছে অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক এ বছরের নারী দিবস। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন ও প্যালেস্টাইনে বহু নারী ও শিশু নিহত, আহত, সর্বস্বান্ত হয়েছেন, হয়ে চলেছেন। আমাদের দেশে ফ্যাসিস্ট বিজেপি-র শোষণ ও বঞ্চনা, সাম্প্রদায়িক হিংসা, নারী-নিপীড়ন, ধর্ষণ, খুন এবং অপরাধীদের আড়াল করার, এমনকি সম্মানিত করার প্রবণতা বাড়ছে, বেড়েই চলেছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শিক্ষার আঙিনায় ও কাজের বাজারে লিঙ্গ-বৈষম্য — মেয়েদের বঞ্চনা।

এই কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলায় আমাদের আন্দোলন কিভাবে এগিয়ে নিয়ে যাব এ নিয়ে আলোচনার জন্য হুগলি জেলায় সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতির জেলা শাখা ১০ মার্চ ব্যান্ডেলে দুর্গা লজে নারী দিবস উপলক্ষে এক সভার আয়োজন করে।

আমরা জানি, নারী দিবস শুরু হয়েছিল আন্তর্জতিক শ্রমজীবী নারী দিবস হিসেবে। এখনও মূলগতভাবে তাই আছে, তবে বর্তমানে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সমস্ত নারীর অধিকার, মর্যাদা ও স্বাধীনতার আরও বহু ইস্যু। এই সভাতেও সেটাই দেখা গেল।  মিডডে মিল রন্ধন কর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, শিক্ষিকা, চাকরিজীবী, কৃষি শ্রমিক — সংখ্যায় এরাই ছিলেন। সব মিলিয়ে শতাধিক সংগ্রামী নারী এতে অংশ নিয়েছিলেন।

সভার শুরুতে জেলা সম্পাদিকা শিপ্রা চ্যাটার্জি আন্তর্জাতিক নারী দিবসের ঐতিহাসিক তাৎপর্য নিয়ে বলেন। রাজ্য ও জাতীয় পরিস্থিতি এবং আমাদের কর্তব্য প্রসঙ্গে বক্তব্য রাখেন জেলার কার্যকরী সভানেত্রী চৈতালি সেন। প্রকল্প কর্মীদের প্রতি বঞ্চনার বিরুদ্ধে আন্দোলনের পাশাপাশি সার্বিক নারী নির্যাতনের প্রতিবাদেও আমাদের সোচ্চার হতে হবে — বলেন সমিতির জেলা সংগঠক ও অঙ্গনওয়াড়ি শিক্ষিকা রুমা আহিরী। এআইসিসিটিইউ-র জেলা নেতা ভিয়েত ব্যানার্জি নারী শ্রমিকদের প্রতি অন্যায় ও বঞ্চনার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে তার বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনকে আরও জোরদার করার আহ্বান রাখেন।

এছাড়াও নিজের নিজের সংগ্রামী অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন ধনিয়াখালির নেত্রী রূপা শীট, রন্ধন কর্মী কল্পনা মালিক, পম্পা আদক, উমাতারা পাকিরা, ভিটে থেকে উচ্ছেদের বিরুদ্ধে সংগ্রামরত কৃষি শ্রমিক সুমিতা মুর্মু এবং অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী তুলিকা শী। আগামী ১৬ মার্চ এআইসিসিটিইউ-র “বিজেপি হঠাও  শ্রমিক বাঁচাও” কনভেনশনে অংশ নেওয়ার আহ্বান রাখেন চৈতালি সেন। এতে কমরেডদের সাড়াও মেলে।

নারী দিবস উপলক্ষে চন্দ্রানী ব্যানার্জির মন ছুঁয়ে যাওয়া কবিতা পাঠের মধ্যে দিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়। শিপ্রা চ্যাটার্জি, অঙ্গনা বসাক কবিতা পাঠ করেন। সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে বক্তব্যের সঙ্গে সঙ্গীত পরিবেশন করেন রিতা ব্যানার্জির নেতৃত্বে “ভোরাই” সংগীত সংস্থার টিম। ষোলো থেকে ষাট বছর বয়সের আদিবাসী মেয়েরা নৃত্য পরিবেশন করেন। সমগ্র সভাটি পরিচালনা করেন সুদীপ্তা বসু।

উদ্দীপ্ত শ্লোগানের মধ্যে দিয়ে আলোচনা সভা শেষ হলে ব্যান্ডেল চার্চের মোড়ে পথসভা করা হয়। বক্তব্য রাখেন জেলা সভানেত্রী শোভা ব্যানার্জি, চৈতালি সেন ও রুমা আহিরী। তাঁরা আওয়াজ তোলেন সম্প্রতি দিল্লিতে নামাজিদের ওপর পুলিশি অত্যাচারের বিরুদ্ধে। মানুষের কাছে আহ্বান জানান — সংখ্যালঘু-বিদ্বেষী, দাঙ্গাবাজ, নারী নিপীড়নকারী বিজেপিকে একটি ভোটও নয়। বিজেপি হটাও সংবিধান বাঁচাও। একই সঙ্গে দাবি তোলা হয়, সন্দেশখালিতে নারী নির্যাতনকারী জমি মাফিয়াদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

খণ্ড-31
সংখ্যা-9