রাজ্যের বুকে নগরায়নের নামে গরিব মানুষকে উচ্ছেদ করার চক্রান্ত চলছে। তাঁদের সামনে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে উচ্ছেদের খাঁড়া। এমনটাই ঘটে চলেছে কল্যাণী পার্শ্ববর্তী গয়েশপুর পৌরসভার অন্তর্গত এলাকায়। সেখানকার সাঁতরাপাড়া সহ ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের এক হাজারেরও বেশি সংখ্যক পরিবার আজও বাস্তু এবং কৃষি জমির অধিকার থেকে বঞ্চিত। অথচ দীর্ঘ ৫৫ বছর ধরে তাঁরা এই জমিতে চাষাবাদ করছেন, বসতি স্থাপন করে কয়েক প্রজন্ম পরম্পরায় বসবাস করছেন। এই জমির পরিমাণ প্রায় এক হাজার একর। অতীতে এই জমি ব্রিটিশ সরকার সামরিক বাহিনীর জন্য অধিগ্রহণ করেছিল। পরবর্তীকালে জমির একটা অংশ বিড়লা কোম্পানির পিঞ্জারাপোল সোসাইটি দখল করে নেয়। ৬০’র দশকের শেষভাগে ওই জমি বাস্তুহীন ভূমিহীন গরিব মানুষেরা দখল করেন এবং আজও তাঁরা দখলে রেখেছেন। ‘৭৯ সালে চাকদা বিএলএলআরও দপ্তরের পক্ষ থেকে ওই জমি জরিপ করে পাট্টা দেওয়ার একটা প্রচেষ্টা শুরু হয়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। সম্প্রতি নগরায়নের নামে কোনোরকম পুনর্বাসন ছাড়াই গরিব মানুষকে উচ্ছেদ করবার চক্রান্ত চলছে। স্টেডিয়াম ও সড়ক নির্মাণ, বিভিন্ন সরকারি দপ্তর স্থাপন, কখনো বা জঞ্জালের ভ্যাট তৈরি করা সর্বোপরি সরকারী “ল্যান্ড ব্যাংক”-এর নামে পুনর্বাসন বা ক্ষতিপূরণ ছাড়াই গরিব মানুষকে উচ্ছেদ করার চক্রান্ত চলছে। অথচ এই জমিতে পৌরসভার ও সরকারী আবাস যোজনায় তিন শতাধিক ঘর তৈরি হয়েছে।
গত ১১ মার্চ এই এলাকার শতাধিক গরিব মানুষ চাকদা বিএলএলআরও দপ্তরে বিক্ষোভ ডেপুটেশন কর্মসূচি সংগঠিত করেন। কৃষি ও বাস্তু জমি রক্ষা কমিটি গঠন করে তাঁরা সরকারি অবহেলা ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে আন্দোলনের পথে এগিয়ে এসেছেন। চাকদা চৌমাথা থেকে এক দৃপ্ত মিছিল ব্লক দপ্তরে আসে। সেখানে ভূমি দপ্তরের কাছে তাঁদের ডেপুটেশনের প্রধান দাবি ছিল অবিলম্বে দখলিকৃত কৃষি ও বাস্তু জমির মালিকানা দলিল দিতে হবে। এলাকার চাষিদের কৃষক বন্ধু সহ সমস্ত সরকারি প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, ইতিপূর্বে সরকারি কাজে অধিগৃহীত জমির ন্যায্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে প্রভৃতি। প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন কৃষি ও বাস্তু জমি অধিকার রক্ষা কমিটি গয়েশপুর সংগঠনের পক্ষে সেখ আতাবুর, টিনা দাস সহ অন্যান্যরা। সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে ছিলেন বিজয় সাহা, শেখর চৌধুরী। ব্লক ভূমি দপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয় পৌরসভা এলাকায় বাস্তু জমির পাট্টা সংক্রান্ত বিষয়ে জেলা দপ্তরে যোগাযোগ করতে হবে। কৃষি জমির অধিকার সংক্রান্ত বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। সংগঠনের পক্ষ থেকে আগামী দিনে আন্দোলনকে আরো ব্যাপক ও তীব্রতর করার আহ্বান জানানো হয়।