নির্বাচনি বন্ডের ঘোটালায় বেআব্রু বিজেপি
bjpdisgraced-in-electoral-bond-scam_0

প্রথমে নির্বাচনি বন্ড বিষয়টা একটু বুঝে নেওয়া যাক। একটা রাজনৈতিক দলের দৈনন্দিন কার্যকলাপ, সভা-সমিতি, বিক্ষোভ মিছিল, এবং অবশ্যই নির্বাচন ইত্যাদির জন্য টাকার প্রয়োজন হয়। এর জন্য দলগুলিকে মানুষের থেকে চাঁদা তুলতে হয়। ইতিপূর্বে নিয়ম ছিল কুড়ি হাজার টাকা অবধি কেউ নগদে চাঁদা দিলে তাঁর নাম প্রকাশ করার কোনো প্রয়োজন নেই। এছাড়া কোনো কোম্পানি তিন বছরের গড় লাভের ওপর ৭.৫% চাঁদা দিতে পারত। ২০১৩ সালে কংগ্রেস ইলেক্টোরাল ট্রাস্ট গঠন করার নিয়ম চালু করেছিল যাতে দাতাদের নাম প্রকাশ করার ব্যবস্থা ছিল। ঘটনা হচ্ছে আমাদের দেশে নির্বাচন এতো ব্যয়বহুল এতো করেও নির্বাচনে কালো টাকার প্লাবন রোধ করা যাচ্ছিল না। সুচতুর বিজেপি সরকার কালো টাকা রোধ করা এবং ভোট ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনার অজুহাত করে ২০১৭-১৮র বাজেটে নির্বাচনি বন্ডের মাধ্যমে রাজনৈতিক পার্টিকে চাঁদা দেওয়ার ব্যবস্থা চালু করল। এটা এমন এক ব্যবস্থা যাতে যে ব্যক্তি বা কোম্পানি টাকা দিচ্ছে এবং যে দল টাকা পাচ্ছে তারা ছাড়া আর কেউ এই লেনদেন সম্পর্কে কিছুই জানতে পারে না। স্বচ্ছতার পরিবর্তে এটা হয়ে দাঁড়ায় পুরোপুরি একটি অন্ধকারাচ্ছন্ন, অভেদ্য ব্যবস্থা।

শুরু থেকেই রিজার্ভব্যাঙ্ক এবং নির্বাচন কমিশন বেনামে চাঁদা তোলার এই রেওয়াজের বিরোধিতা করে। ‘এ্যাসোসিয়েশন অফ ডেমোক্রেটিক রিফর্মস’ (এডিআর) এবং অন্যান্য সংগঠন এই ব্যবস্থা রদ করার জন্য সুপ্রীম কোর্টে আবেদন করে। পাঁচ বছর আগে ২০১৯-এ সুপ্রীম কোর্ট যদিও স্বীকার করে যে এই নির্বাচনি বন্ড নির্বাচন ব্যবস্থাকে বিপুল ভাবে প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখে এবং এর ওপর বিস্তারিত শুনানি হওয়া উচিত, তবুও তাঁরা এর বিরুদ্ধে স্টে জারি করতে অস্বীকার করেন। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৌ’র নেতৃত্বে বেঞ্চ কোন রাজনৈতিক দল কত চাঁদা পেয়েছে তার যাবতীয় তথ্য নির্বাচন কমিশনকে জানানোর নির্দেশ দেন। শীর্ষ আদালত ‘বিস্তারিত শুনানি’র জরুরি প্রয়োজনীয়তার কথা বললেও পাঁচ বছর ধরে তারা এটা নিয়ে প্রায় নিশ্চুপ ছিল। আমরা শুধু এটা অনুমানই করতে পারি যে এটা শুধুমাত্র বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা না কি কেন্দ্রের শাসক দলকে মোটা তহবিল গড়ার সুযোগ করে দেওয়া? অবশেষে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি আদালত তথ্যের অধিকার ও সংবিধানের ধারা ১৯(১) এ লঙ্ঘন করার কারণে নির্বাচনি বন্ডকে অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা করে। তারা স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইণ্ডিয়া (এসবিআই), যাদের মাধ্যমে বন্ডসংক্রান্ত যাবতীয় লেনদেন হয়েছে, তাদের সম্পূর্ণ তথ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা দিতে বলে। ব্যাঙ্ক এটা নিয়ে বহু টালবাহানা করে। অবশেষে দুটি আলাদা ফাইলে তারা তথ্য জমা দেয় — একটি ফাইলে আছে যে কোম্পানি বা ব্যক্তিরা বন্ড কিনেছেন তাঁদের নাম, আরেকটিতে আছে যে দলগুলি বন্ড পেয়েছে তাদের নাম। তাদের এই জমা দেওয়া তথ্য অসম্পূর্ণ, ভুলে ভরা। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, প্রতিটি বন্ডের একটি আলাদা ইউনিক নম্বর আছে যেটা জানা গেলে তবেই কোন শিল্পপতি কোন রাজনৈতিক দলকে টাকা দিয়েছে তা জানা যাবে। এই লেখা হওয়া অবধি স্টেট ব্যাঙ্ক সেই নম্বর আদালতে জমা দেয়নি, সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী আগামী বৃহস্পতিবার, ২১ তারিখ তাদের এই তথ্য জমা দেওয়ার কথা। এরপরেও মোট লেনদেনের পরিমাণ, কোন কোম্পানি কত টাকা দিয়েছে, কারা কত টাকা পেয়েছে তা একেক মিডিয়া বা সংবাদপত্রে একেক রকম; সংখ্যায় বিরাট কোন ফারাক নেই আবার সংখ্যার কোন মিলও নেই। এই লেখা মূলত দুটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে রচিত হয়েছে।

১২ এপ্রিল, ২০১৯ থেকে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪-এর মধ্যে মোট বন্ড বিক্রি হয়েছে ১২৭৬৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিজেপি পেয়েছে ৬০৬১ কোটি (৪৭.৪৬%), তৃণমূল ১৬১০ কোটি (১২.৬%) এবং কংগ্রেস ১৪২২ কোটি (১১.১৪%) ইত্যাদি। ১৭ ফেব্রুয়ারি আরও কিছু তথ্য প্রকাশ্যে আসে যার ফলে ওই তিনটি দলের প্রাপ্য অর্থ হয়ে দাঁড়ায় যথাক্রমে ৮৪৫১.৪১, ১৯৫০.৯০ এবং ১৭০৭.৮১ কোটি। সবচেয়ে বেশি চাঁদা দিয়েছে স্যান্টিয়াগো মার্টিন নামক এক ব্যক্তি যিনি ‘লটারি কিং’ নামে পরিচিত, তাঁর ‘ফিউচার গেমিং এন্ড হোটেল সার্ভিসেস’ – ১৩৬৮ কোটি টাকা। এরপর আছে মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (৯৬৬ কোটি), কুইক সাপ্লাই চেন (৪১০ কোটি) ইত্যাদি। পশ্চিমবাংলার হলদিয়া এনার্জি কোম্পানি (৩৭৭ কোটি) আছে চতুর্থ নম্বরে। সিইএসসি অধীনস্থ এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র ২০১৫ সালে চালু হয়। বলাই বাহুল্য নির্বাচনী বন্ড দ্বারা সবচেয়ে লাভবান কেন্দ্রের শাসক দল। মার্চ, ২০১৮-তে বন্ড বিক্রি শুরু হওয়ার প্রথম পাঁচ দিনেই তারা রেকর্ড ২১০ কোটি চাঁদা পায় এবং ২২ মে’র মধ্যে তারা ৩৯৪১.৫৭ কোটি চাঁদা তুলে নেয়। এই বিপুল অর্থভান্ডার তাদের ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচন জিততে কীভাবে সাহায্য করেছে তা বিশেষ ভাবে লক্ষ্যণীয়। লোকসভা নির্বাচন হয়েছিল মার্চ ও এপ্রিল মাসে; ওই দুই মাসে বিজেপি বিভিন্ন কোম্পানির থেকে চাঁদা তুলেছে যথাক্রমে ১৫৭২.৯৩ এবং ৭০৭.৭০ কোটি টাকা।

বিভিন্ন কোম্পানি নেহাত ভালোবেসে বা করুণাবশত বা হিন্দুরাষ্ট্রের কল্পনায় মোহিত হয়ে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এই টাকা বিজেপিকে দেয়নি। কখনো তারা হাত মুচড়ে টাকা আদায় করেছে, কখনো মূলোটা-কলাটা লোভ দেখিয়েছে, কখনো স্রেফ হুমকি দিয়ে বাধ্য করেছে টাকা জমা দিতে। পাঁচ বছর ধরে বন্ড কেনাবেচার মধ্যে দিয়ে কী কী প্রবণতা স্পষ্ট হয়েছে তা আমরা বোঝার চেষ্টা করব।

ভয় দেখিয়ে চাঁদা নেওয়া

মোট ১২৬০টি কোম্পানি বন্ড কিনেছে। (ভারতে প্রায় ১৬ লাখ কোম্পানি আছে, এটা দেখিয়ে দেয় অর্থনৈতিক ক্ষমতা কত কুক্ষিগত)। এর মধ্যে যে ৩০টি কোম্পানি সর্বোচ্চ বন্ড ক্রয় করেছে তাদের মধ্যে ১৪টিতে ইডি, আইটি বা সিবিআই রেইড হয়েছে। কয়েকটা উদাহরণ দেখা যেতে পারে, কিন্তু মনে রাখতে হবে এগুলি সবই অনুমানভিত্তিক; অর্থাৎ রেইড হয়েছে বলেই তারা টাকা দিয়েছে এটা আমরা শুধু অনুমান করতে পারি। ফিউচার গেমিংয়ের মার্টিন অতীতে বালি পাচারের জন্য গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাঁর বিরুদ্ধে ৩২টি লটারি জালিয়াতির কেস চলছে। ২০১৫-য় তাঁর পুত্র বিজেপিতে যোগদান করেন। দোসরা এপ্রিল, ২০২২ তাঁর বাড়ি অফিসে ইডি হানা দেয়। এর মাত্র পাঁচ দিন বাদে তিনি ১০০ কোটি টাকার বন্ড খরিদ করেন। ইডি কারা নিয়ন্ত্রণ করে আমরা জানি, সুতরাং এই ১০০ কোটি মার্টিন কোন পার্টিকে খুশি করতে দিয়েছেন তা সহজেই বোঝা যায়। করোনার সময়ে হায়দ্রাবাদের যশোদা হাসপাতালে ইনকাম ট্যাক্স বিভাগ হানা দেয়; তাঁরা অক্টোবর ২০২২-এ ১২২ কোটি টাকা বন্ড খরিদ করেন। হিরো মোটোর্সে আইটি হানা দেয় ২০২২-এর মার্চে, অক্টোবরে তাঁরা ২০ কোটি টাকার বন্ড খরিদ করেন। একই ভাবে মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং, বেদান্ত (কুখ্যাত খনন কোম্পানি যাদের বিরুদ্ধে ওড়িশা ও ছত্তিশগড়ে আদিবাসীরা সংগ্রাম করছেন), জিন্দাল স্টিল (এদের বিরুদ্ধেও ওড়িশার জগৎসিংপুরে আদিবাসীদের উচ্ছেদ করার অভিযোগ আছে), ডিএলএফ ডেভেলপার্স (২০০৮-১২, এরা আইপি এলের স্পনসর ছিল), আইএফবি এগ্রো ইত্যাদি কোম্পানির অফিসে বিভিন্ন সরকারি সংস্থা রেইড করার পর তারাও বন্ড কিনে শাসক দলকে খুশি করতে বাধ্য হয়। এইভাবে ইডি, আইটিকে দিয়ে কোম্পানির অফিসে হানা করিয়ে চাঁদা তোলার পদ্ধতিকে নিন্দুকেরা ‘তোলাবাজি’ বলে আখ্যা দিয়েছে।

বেনামি কোম্পানি বা ‘শেল’ কোম্পানি

এই ১২৬০টি কোম্পানির মধ্যেবেশ কিছু আছে যাদের কোনো ওয়েবসাইট নেই অথচ তারা কোটি কোটি টাকার বন্ড কিনেছে। যেমন কুইক সাপ্লাই চেন প্রাইভেট লিমিটেড। দেখা গেছে এদের শেয়ারহোল্ডার কোম্পানির ডিরেক্টররা একই সাথে রিলায়েন্স কোম্পানির বর্তমান বা ভূতপূর্ব আধিকারিক। এদের লাভের ৩৭৭ গুণ বেশি এরা বন্ড কিনেছে, তাই সন্দেহ এরা রিলায়েন্সের ‘ফ্রন্ট’ কোম্পানি। একইভাবে হলদিয়া এনার্জি কোম্পানির লাভের ৬৩৫ গুণ বন্ড কিনেছে। মদনলাল লিমিটেড নামক কোম্পানি তাদের লাভের ১৮৬৪ গুণ বেশি বন্ড খরিদ করেছে। এর মালিক কলকাতার মহেন্দ্র কে জালানের মোট চারটে ফার্ম ৬১৬.৯২ কোটি টাকার বন্ড কিনেছে। অন্য তিনটি কোম্পানি হল কেভেন্টার ফুড পার্ক, এমকেজে এন্টারপ্রাইজেস, সাসমল ইনফ্রাস্ট্রাকচার। বিশেষজ্ঞদের মতে দেশের প্রথিতযশা অর্বুদপতিরা এই শেল কোম্পানিগুলির মাধ্যমেই বন্ড কিনে শাসক দলকে খুশি রেখেছে, তাই তাঁদের নাম তালিকায় পাওয়া যাচ্ছে না। আশ্চর্যজনকভাবে ইনফসিস ছাড়া (কর্ণাটকের জেডিএস দলকে তারা চাঁদা দিয়েছে) কোনো আইটি কোম্পানির নামও তালিকায় নেই। তারাও কি শেল কোম্পানির মাধ্যমে শাসককে তোয়াজ করেছে?

চাঁদার বদলে ধান্ধা

অভিযোগ, কিছু কোম্পানি সরকারকে বন্ডের মাধ্যমে উৎকোচ দিয়ে বড় বড় সরকারি কন্ট্রাক্ট পেয়েছে, যেটাকে ইংরাজিতে বলা হয় ‘কুইদ প্রো কুও’ — গিভ অ্যান্ড টেক, বা ‘দেয়া নেয়া’। যেমন ২০২২এর ১৮ অগস্ট সরকারকে চাঁদা দেওয়ার চার দিন বাদেই এক ওষুধের কোম্পানি করোনার টিকার বরাত পায়। এই টিকা দেশে প্রভূত জনপ্রিয় করে সরকার। বন্ড ক্রেতাদের তালিকায় দ্বিতীয় নম্বরে মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং। এরা ৯৬৬ কোটি টাকার বন্ড খরিদ করেছে; এদের সহায়ক কোম্পানি ‘ওয়েস্টার্ন ইউপি পাওয়ার ট্র্যান্সমিশন’ খরিদ করেছে ২২০ কোটি টাকা। এরা বিপুল সব প্রকল্পের বরাত পেয়েছে, যেমন শ্রীনগর ও লাদাকের মধ্যে জোজি লা সুড়ঙ্গ, চারধাম টানেল, মুম্বাইয়ে থানে-বোরিভালি সুড়ঙ্গ, বুলেট ট্রেনের জন্য বান্দ্রা-কুরলা কমপ্লেক্স স্টেশন। এই কোম্পানি টিভি ৯ চ্যানেল নিয়ন্ত্রণ করে। দেখা গেছে বিভিন্ন মন্ত্রী এই কোম্পানির প্রশংসায় পঞ্চমুখ। উত্তরাখন্ডের সিল্কয়ারা টানেল যা কয়েক মাস পূর্বে ধসে যাওয়ার কারণে ৪০ জন শ্রমিক আটকে পড়ে, সেটির নির্মাতা নবযুগ ইঞ্জিনিয়ারিং ৫৫ কোটি টাকা বন্ড কিনে চাঁদা দিয়েছে।

বন্ড ক্রেতার একটি বড় অংশ কয়েকটি শিল্পে সীমাবদ্ধ, যেমন — পরিকাঠামো, সিমেন্ট, খনন এবং ওষুধ। পরিকাঠামো শিল্পের খেলুড়েদের বদান্যতার কারণে কীভাবে শাসকের তহবিল ভরে উঠেছে তার কিছু উদাহরণ আমরা ওপরে দেখেছি। সিমেন্টের কোম্পানিগুলি মোট ২৩৩ কোটি টাকার বন্ড ক্রয় করেছে। পরিবেশ রক্ষায় বেদান্তরা একেবারেই দায়িত্বশীল নয় তবুও এই কোম্পানি দেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল ও গভীর বনাঞ্চলে বিভিন্ন প্রকল্পের বরাত পেয়ে থাকে। এটা অবাক করে না যখন দেখা যায় যে তারা ৩৭৬ কোটি টাকার বন্ড কিনে শাসকদের তুষ্ট করেছে। মাত্র ৩০টি ওষুধের কোম্পানি ৯০০ কোটি টাকার বন্ড কিনেছে। এদের মধ্যে যশোদা হাসপাতাল ছাড়াও আছে ডক্টর রেড্ডিজ ল্যাবরেটরি (৮০ কোটি), টরেন্ট ফার্মা (৭৭.৫ কোটি), সিপ্লা (৩৯.২ কোটি) ইত্যাদি। ওষুধের কোম্পানিগুলিকে ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণ, কর ফাঁকি ইত্যাদির জন্য ভয় দেখানো সহজ। তিরিশটির মধ্যে অন্তত সাতটি কোম্পানির ওষুধের মান খারাপ হওয়ার কারণে তদন্ত চলছিল। এদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে তারা এক সাথে একই সময়ে বন্ড খরিদ করেছে! মার্চ, ২০২২’এ বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির বিরুদ্ধে কর ফাঁকি দেওয়ার তদন্ত শুরু হয়। ১০ নভেম্বর সিপ্লা, ডক্টর রেড্ডিস, ইপকা ল্যাব ৫০ কোটি টাকার বন্ড কেনে। পরের কয়েক দিনে গ্লেনমার্ক, পিরামাল, আলেম্বিক ফার্মা ক্রয় করে আরও প্রায় ৫০ কোটি টাকার বন্ড।

রাজ্যের শাসক দল, তৃণমূল কংগ্রেস চাঁদা প্রাপকদের তালিকায় দুনম্বরে, জাতীয় দল কংগ্রেসেরও ঊর্ধ্বে! আজ অবধি তারা এই বিষয়ে আশ্চর্যজনকভাবে প্রায় নীরব। অথচ ডিএমকে, এসপি, আপ, এনসিপি সহ অন্তত দশটি দল কোন কোম্পানির থেকে চাঁদা পেয়েছে তা জানিয়ে দিয়েছে। ২০২১-এ পুনরায় সরকার গঠন করার পর এরা প্রায় এক-তৃতীয়াংশ চাঁদা পেয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস জানিয়েছে তাদের যাঁরা চাঁদা দিয়েছেন তাঁরা নাম জানাতে অনিচ্ছুক। দল যত বন্ড পেয়েছে তার বেশির ভাগ তাদের অফিসে পাঠানো হয়েছে বা ড্রপ বাক্সে ফেলা হয়েছে। এছাড়া কিছু ব্যক্তি যাঁরা পার্টিকে সমর্থন করেন তাঁরা কারো মাধ্যমে বন্ড পাঠিয়েছেন। এই কারণে ক্রেতাদের নাম তাদের কাছে নেই। ভাবতে অবাক লাগে দেশে আজও এতো নিঃস্বার্থ কোম্পানি/ব্যক্তি আছেন! আগেই আমরা দেখেছি বিজেপি ২০১৯-এ লোকসভা নির্বাচন চলাকালীন কি বিপুল অর্থ চাঁদা পেয়েছে। বেআইনি পয়সায় নির্মিত সরকার কি বেআইনি নয়? প্রশ্ন ওঠে দীর্ঘ পাঁচ বছর আগে এডিআর নির্বাচনি বন্ডের বিরুদ্ধে মামলা করা সত্ত্বেও শীর্ষ আদালত কেন জরুরি ভিত্তিতে সেই মামলার শুনানির ব্যবস্থা করেনি! এটাতো বিজেপিকে পাহাড়প্রমাণ অর্থভান্ডার গড়ে তোলার সুযোগ করে দিয়েছে। সেই অর্থব্যবহার করে তারা নির্বাচন জিতেছে, বিভিন্ন রাজ্যে জনপ্রতিনিধি (ঘোড়া!) কেনাবেচা করে বিরোধী সরকারের পতন ঘটিয়েছে। গোটা তিরিশেক সাঙাতের বেআইনি পয়সায় আজ নির্বাচনে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হচ্ছে, গণতন্ত্র আজ এই শাসক দলের চেলা-চামুন্ডাদের কুক্ষিগত হয়ে গেছে।

– সোমনাথ গুহ

খণ্ড-31
সংখ্যা-10