বিশ্ব ব্যাঙ্কের দেওয়া হিসাবে ভারতে অধিকাংশ মানুষই গরিব
people-in-india-are-poor

বিশ্ব ব্যাঙ্কের তৈরি করা দারিদ্রের বৈশ্বিক মাপকাঠিতে ভারতের অধিকাংশ মানুষই গরিব!

এই মন্তব্য করেছেন, জেএন ইউ-এর অবসরপ্রাপ্ত অর্থনীতির অধ্যাপক অরুণ কুমার। নীতি আয়োগের মুখ্য কার্যকরী অফিসার বি ভি আর সুব্রহ্মণ্যম ২৫ ফেব্রুয়ারি ঘোষণা করেন যে ভারতের জনসংখ্যার সাপেক্ষে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৫ শতাংশের নীচে নেমে গেছে।

কোন হিসাবের ভিত্তিতে সুব্রহ্মণ্যম এই সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন, তা তিনি খোলসা করেননি। হতে পারে, মূল্যস্ফীতির সাপেক্ষে সুরেশ তেন্দুলকার কমিটি ২০০৫ সালে দারিদ্র সীমার যে মাপকাঠি তৈরি করেন, তার উপর দাঁড়িয়ে জাতীয় নমুনা সমীক্ষা দপ্তর যে পরিবারপিছু ভোগব্যয় সমীক্ষা ২০২২-২৩-এ প্রকাশ করে তার ভিত্তিতেই এই উপসংহারে এসেছেন।

অনেক বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন যে জাতীয় নমুনা সমীক্ষা যে পদ্ধতি অনুসরণ করেছে, তা অতীতের থেকে ভিন্ন। তাই, তেন্দুলকার কমিটির ফর্মূলা এ ক্ষেত্রে কার্যকর হবে না।

অরুণ কুমার জানিয়েছেন, দারিদ্রসীমা যা আগে নির্ধারিত হয়, তা কোন ধ্রুবক হতে পারে না। স্থান, কাল ও সময়ের বদলের সাথে তা পাল্টাবে। তাই, সময়ানুসারে তা পরিবর্তন করা দরকার। যেমন, আধুনিক সময়ে মোবাইল ফোন এমনকি গরিব মানুষের ক্ষেত্রেও অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। একজন সব্জি বিক্রেতা, রিক্সাচালকের কাছেও তা জরুরি এক মাধ্যম, কয়েক দশক আগে যা ভাবাই যেত না।

তাঁর মতে, “ন্যূনতম সামাজিক প্রয়োজনীয় ভোগব্যয়”-এর উপরই তা নির্ধারণ করতে হবে। যেমন, সুষম আহার, সন্তানদের জন্য উন্নত শিক্ষার সুযোগ, উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবা, পরিচ্ছন্ন পোষাক, ভালো বাসস্থান, পরিশ্রুত পানীয় জল, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ। যাঁরা এই সমস্ত সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত, তাঁদের গরিব বলা চলে।”

অরুণ কুমার বলেন, বিশ্ব ব্যাঙ্কের দারিদ্র সীমা অনুযায়ী, যাঁরা দৈনিক ২.১৫ ডলারের কম খরচ করেন তাঁরা গরিব। পাঁচ সদস্যের পরিবারে তা মাসিক ৩২২ ডলার বা ২৬, ৬৭৭ টাকা হয়। যদিও ক্রয় ক্ষমতার দিক থেকে তার প্রকৃত মূল্য মাসে ১০,০০০ টাকা হয়। তিনি আরও জানিয়েছেন, ২০২৩-এ কেন্দ্রীয় শ্রম দপ্তরের ই- শ্রম পোর্টালে ৮.৪ কোটি অসংগঠিত ক্ষেত্রের ৯৪ শতাংশ নথিভুক্ত শ্রমজীবী জানিয়েছেন, তাঁদের মাসিক আয় ১০,০০০ টাকা।

তাঁর মতে, সহজেই ধরে নেওয়া যায় যে তাঁদের পরিবারে ৫ জন সদস্য রয়েছেন। তাই বিশ্ব ব্যাঙ্কের দারিদ্র সীমার নিরিখে তাঁরা যদি চূড়ান্ত গরিব নাও বা হন, নিঃসন্দেহে বলা যায় যে তাঁরা গরিব।

যেহেতু তেন্দুলকার কমিটির রিপোর্ট এখন সেকেলে হয়ে পড়েছে, সরকারও নতুন কোনো দারিদ্রসীমা নির্ধারণ করেনি, তাই বিশ্ব ব্যাঙ্কের সূত্রায়িত দারিদ্রসীমাই একমাত্র গ্রহণযোগ্য, জানালেন অরুণ কুমার।

– সূত্র: দ্য টেলিগ্রাফ, ১১ মার্চ

খণ্ড-31
সংখ্যা-10