বিবৃতি
মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষণ অবিলম্বে কার্যকর কর
implemented-immediately

লোকসভা ও রাজ্য বিধানসভাগুলির অন্তত ৩৩ শতাংশ আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত করার দাবি বহু দিনের। ১৯৯৬ সালে প্রথম এই বিষয়ক একটি আইন প্রস্তাবনা লোকসভায় পেশ হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা পাশ হয়নি। পরবর্তীতে ২০১০ সালে আবার এই বিল পেশ হয় এবং রাজ্যসভায় পাশও হয়ে যায়। কিন্তু লোকসভায় পাশ না হওয়ায় বিলটি নির্দিষ্ট সময়সীমার পর বাতিল হয়ে যায়। রাজনৈতিক পরিসরে নারী ও পুরুষ প্রতিনিধিত্বের সমতার লক্ষ্যে আসন সংরক্ষণের আইন প্রণয়নের প্রশ্নে থেকে বহু আলোচনা চলেছে। এই আইন পাশ করার দাবিতে দেশের নারী আন্দোলনের পক্ষ থেকে দীর্ঘ আন্দোলন চলেছে। এখন দুই দফা পূর্ণ ক্ষমতা ভোগ করে সাধারণ নির্বাচনের প্রাক্কালে বিজেপি সরকার নাটকীয়ভাবে এই বিষয়ক নতুন বিল হাজির করেছে। সংসদের বাদল অধিবেশন শেষ হওয়ার পরপরই হঠাৎ আবার বিশেষ অধিবেশন ডেকে এই আইন প্রস্তাবনা উত্থাপন করা হয়। লোকসভা ও রাজ্য বিধানসভাগুলিতে ৩৩ শতাংশ আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত থাকার কথা বলা হয়েছে আইন প্রস্তাবে। এই সংরক্ষিত আসনগুলির তিনভাগের এক ভাগ এসসি ও এসটি মহিলাদের জন্য নির্ধারিত। ওবিসি মহিলাদের কথা বলা হয়নি। এবং সবচেয়ে বড় বিষয় হল, আইন প্রস্তাবটিতে বলা হয়েছে, জনগণনা সম্পন্ন হওয়ার পর নতুন করে নির্বাচনী ক্ষেত্রগুলির পুনর্বিন্যাস বা ডিলিমিটেশন হয়ে গেলে তবেই এই আইন কার্যকর হবে। সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি, সারা ভারত মহিলা সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতির পক্ষ থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর জারি করা যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে,

“মহিলা সংগঠনগুলি ২৫ বছর ধরে এই বিল পাশের দাবি জানিয়ে আসছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার ছাড়পত্র পাওয়া বিলটির খসড়া অনুযায়ী মনে হচ্ছে মহিলা সংরক্ষণ সেই ২০২৯-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে কার্যকর হবে না। জাতীয় মহিলা সংগঠনগুলির স্পষ্ট উপলব্ধি, বিজেপি সরকার যদি সত্যিই সংসদ ও রাজ্য বিধানসভাগুলিতে মহিলাদের আসন সংরক্ষণকে যথার্থ গুরুত্ব দিত তাহলে ২০১৪ সালেই এটা পাশ করাতে পারতো।”

১৯ সেপ্টেম্বর সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের পক্ষ থেকে সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য বিবৃতি জারি করে বলেন,

“মোদী সরকার আমাদের বিশ্বাস করাতে চাইছে, মহিলা সংরক্ষণের ব্যাপারে তারা এতটাই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে বিলটি পাশ করার জন্যই তাদের সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকতে হয়েছে। কিন্তু এই তাড়াহুড়োর পেছনে যে ভণ্ডামিটা আছে তা বুঝতে কারো বাকি নেই। এই আইন কার্যকর করাকে জনগণনা শেষ হওয়া এবং সেই অনুযায়ী ডিলিমিটেশন হওয়ার সাপেক্ষ করে তোলা হল। এখনই, কোনও বিলম্ব না করে, কেন এই আইন কার্যকর করা হবে না? কোথায় আটকাচ্ছে?

“ভারতবর্ষের ইতিহাসে মোদী সরকারই একমাত্র সরকার যারা প্রত্যেক দশকে জনগণনা চালানোর নিয়মিত কর্তব্যটি সমাধা করতে ব্যর্থ হয়েছে। কোভিড সত্ত্বেও, চিন, গ্রেট ব্রিটেন বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো গুরুতর কোভিড-আক্রান্ত দেশগুলোও জনগণনার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে, কিন্তু মোদীর নেতৃত্বাধীন ভারত ব্যর্থ হয়েছে। মহিলা আসন সংরক্ষণের উদ্দেশ্য হল আইনসভার পরিসরে মহিলাদের অপর্যাপ্ত প্রতিনিধিত্বের তীব্র সমস্যাটির প্রতি মনোযোগী হওয়া এবং এই গুরুত্বপূর্ণ ঘাটতি সংশোধন করা। সমস্যাটির গুরুত্ব নতুন করে খতিয়ে দেখা এবং সমাধানের জন্যে আরেকটি জনগণনা সম্পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারি না আমরা।

“এরকম একটি চূড়ান্ত গুরুত্ববহ আইন প্রস্তাবনা যে ধরণের আইনি পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে রূপ পাওয়া দরকার ছিল তা নেওয়া হয়নি, অত্যন্ত তাড়াহুড়া করে খসড়াটি প্রস্তুত করে দেওয়া হয়েছে বলে মনে হয় এবং তা এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যা সংসদীয় গণতন্ত্রের কর্মপদ্ধতিকে হেয় করেছে। এইরকম একটি অত্যন্ত জরুরি আইন বাস্তবে কার্যকর করার ক্ষেত্রে এত বিলম্ব করার নিদানটি আমাদের গান্ধীর এক বিখ্যাত মন্তব্যকে স্মরণ করিয়ে দেয়। রাজ্যের মর্যাদা নিয়ে ক্রিপস মিশনের প্রস্তাবকে তিনি অভিহিত করেছিলেন, “ফেল করতে চলা ব্যাংকের পোস্ট-ডেটেড চেক” বলে। একটি আইন প্রস্তাবনা, যা নিয়ে দেশের মহিলারা কয়েক দশক ধরে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন, যার পিছনে প্রগতিশীল রাজনৈতিক শক্তির এক বিস্তৃত পরিসরের সমর্থন অব্যাহত আছে, তাকে আরেকটি নির্বাচনী চমকে পর্যবসিত হতে দেওয়া যাবে না।”

খণ্ড-30
সংখ্যা-33