বৈঠকে অংশগ্রহণকারী সকলেই একমত হয়েছিলেন যে ১৯৪৭ সালের ২০ জুন — যেদিন দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে বাংলাভাগের সিদ্ধান্ত বিধানসভায় গৃহীত হয়েছিল — বাংলার ইতিহাসে একটি কলঙ্কিত বেদনার দিন। যেসব সাম্প্রদায়িক শক্তির প্ররোচনায় দেশভাগের প্রাক্কালে বঙ্গভঙ্গ ঘটেছিল, তাদেরই প্রধান উত্তরসূরি বিজেপি আজ অতীতের ধর্মভিত্তিক সংঘাতের ইতিহাসকে খুঁচিয়ে তুলতে চাইছে। সেজন্য তারা ২০২১ সাল থেকে ১৪ আগস্ট ‘দেশভাগের বিভীষিকা দিবস’ পালন করতে শুরু করেছে, যাতে সেই দগদগে ক্ষত জিইয়ে রেখে নতুন করে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ চাগিয়ে তোলা যায়। আর এবছর থেকে বাংলার রাজ্যপালের মাধ্যমে ঐ কলঙ্কিত ২০ জুনকে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ হিসাবে পালন শুরু করছে। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে ভারত তথাবাংলার বুকে সাম্প্রদায়িক উন্মাদনা তৈরি করার এটি এক ঘৃণ্য ফ্যাসিবাদী কৌশল। আমরা বিশ্বাস করি, এ’রাজ্যের সমস্ত ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক দল ও সংস্থা, প্রতিটি শুভবুদ্ধি সম্পন্ন নাগরিক, বিশেষত যুব সম্প্রদায় সম্মিলিতভাবে মোদী-শাহদের এই ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দেবেন।
এই লক্ষ্যে আমরা ক্ষতলাঞ্ছিত ইতিহাসের আস্তাকুঁড় থেকে তুলে আনা বিভাজনের চিহ্নবাহী ২০ জুনের পরিবর্তে ১৬ অক্টোবর সম্প্রীতি দিবস বা মৈত্রী দিবস রূপে পালন করার প্রস্তাব রাখছি। ১৯০৫ সালে এই দিনটিতে লর্ড কার্জনের চাপিয়ে দেওয়া বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে কলকাতায় রবীন্দ্রনাথের নেতৃত্বে এক অভিনব সম্প্রীতি শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। রাখি বন্ধনের প্রচলিত তারিখ ও প্রথা অনুসরণ না করে সেদিন হিন্দু মুসলমানের হাতে, উঁচু জাতের মানুষ শ্মশান-সেবকদের হাতে ভ্রাতৃত্ব ও মৈত্রীর রাখি পরিয়ে দিয়েছিলেন। এখানে কোন ধর্মছিল না, ছিল কেবল শাসকের বিভাজন নীতির প্রতিবাদ আর নিজেরা বেঁধে বেঁধে থাকার সংকল্প। ঐদিন অপরাহ্নে কলকাতা টাউন হলে এক ভাবগম্ভীর সভায় ঘোষিত হল একই প্রতিবাদী সংকল্প। এই প্রতিবাদ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল, যার চাপে শেষ পর্যন্ত উদ্ধত ইংরেজকে মাথা নিচু করে বঙ্গভঙ্গ প্রত্যাহার করে নিতে হয়েছিল।
বাংলা সেদিন গর্জে উঠেছিল প্রশাসনিক বিভাজনের বিরুদ্ধে, আজ আমাদের লড়তে হবে আরো সাংঘাতিক সাম্প্রদায়িক বিভাজনের বিরুদ্ধে। শতাধিক বছর পেরিয়ে এসে আমরা আজ সেদিনের ঐতিহ্যকে নিছক অনুকরণ করব না — বিকশিত করব, আরো এগিয়ে নিয়ে যাব। আসুন, এবছর থেকে প্রতিটি ১৬ অক্টোবর আমরা জাত ধর্ম লিঙ্গ ভাষা বিচার না করে সমস্ত বঙ্গবাসী মৈত্রী বন্ধনে এক হই, ব্যর্থ করে দিই বিজেপির ‘ভাগ করে শাসন করো’ কৌশল।
- পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি, সিপিআই(এমএল) লিবারেশন