খবরা-খবর
অল ইণ্ডিয়া ফেডারেশন ফর সোশ্যাল জাস্টিসের দ্বিতীয় সম্মেলনে সিপিআই(এমএল)-এর বার্তা
federation-for-social-justice

পার্টির পক্ষ থেকে সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য এই বার্তা তুলে ধরেন

সম্মেলনের সভাপতি, বক্তাগণ ও সামাজিক ন্যায়ের লড়াইয়ের সমস্ত বন্ধুরা,

দ্বিতীয় সম্মেলন সংগঠিত করার জন্য আপনাদের অভিনন্দন। ভারতীয় জনগণের সামনে থাকা এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এজেণ্ডায় সংগঠিত এই সম্মেলনে আমাদের আমন্ত্রণ জানানোর জন্য সিপিআই(এমএল)-এর পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর এত দিনে সামাজিক ন্যায় ভারতীয় গণতন্ত্রের এক গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান দিক হয়ে ওঠার কথা ছিল। জনগণের জন্য এই গ্যারান্টিটুকু থাকা দরকার ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হল, সামাজিক ন্যায়ের ধারণা ও মূল্যবোধের প্রতিই ক্রমশ বেড়ে চলা বিরোধিতা ও শত্রুতার এক পরিবেশ বর্তমান সময়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি।

আর সেই কারণেই সকলে মিলে গণতন্ত্র ও সংবিধান সুরক্ষিত রাখার লড়াই করা এবং ফ্যাসিবাদী আগ্রাসনের কবল থেকে ভারতকে মুক্ত করতে সামাজিক ন্যায়ের প্রশ্নকে জনপ্রিয় সমাবেশ ও গণ আন্দোলনের মঞ্চ হিসেবে ঊর্ধ্বে তুলে ধরা আজ আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

সামাজিক ন্যায়ের ওপর আজ বহু দিক থেকে আক্রমণ চলতে দেখছি আমরা। প্রথমত, যে সংবিধান সামাজিক ন্যায়ের ভিত্তিস্বরূপ তা সুব্যবস্থিত হামলার মুখে। দ্বিতীয়ত, অর্থনৈতিক তলে আমরা দেখছি তীব্রতর কর্পোরেট আগ্রাসন যা জনগণের অধিকার ও সংসাধনের সুযোগ লুটে নিচ্ছে।

২০১৪ সালে মোদি সরকার কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পর থেকে, এবং আরো বেশি শেষ কয়েক বছরে, সামাজিক ন্যায়ে সুব্যবস্থিত অন্তর্ঘাত চালাতে আমরা দেখছি, এমনকি অতি সীমায়িত অর্থে যে সংরক্ষণের ধারণা ছিল তার ওপরও।

একদিকে আমরা দেখলাম ‘ই ডব্লু এস’ সংরক্ষণ যা সংরক্ষণের সাংবিধানিক ধারণাটিতেই অন্তর্ঘাত চালালো, এবং এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি ‘বিশ্বকর্মা যোজনা’-র মধ্যে দিয়ে মানুষকে পরম্পরাগত জাতভিত্তিক পেশায় আবদ্ধ রাখার অপচেষ্টা।

সুতরাং আমরা একদমই নিশ্চিত যে, লড়াইটা আমাদের লড়তে হবে বিভিন্ন তলে একই সাথে। সংবিধান তার প্রস্তাবনায় সামগ্রিক ন্যায়ের কথা বলেছে। সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়। এবং সামাজিক ন্যায়ের লড়াইকে শক্তিশালী করতে আমাদের অর্থনৈতিক ন্যায় দরকার, রাজনৈতিক ন্যায় দরকার। আম্বেদকর সর্বদাই স্বাধীনতা, সমতা ও সংহতিকে অবিচ্ছেদ্য সমগ্র হিসেবে জোর দিয়েছেন এবং সমতাকেও হতে হবে একই সাথে সামাজিক ও অর্থনৈতিক।

আজ আমরা যখন অর্থনৈতিক অসাম্য এবং আমাদের নাগরিক স্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকারের অবক্ষয় ক্রমশ বেড়ে চলতে দেখছি, যখন নাগরিকদের পর্যবসিত করতে চাওয়া হচ্ছে প্রজাতে, যেন আমরা কোনো রাজতন্ত্রে বাস করছি, তখন সামাজিক ন্যায় যে খর্ব হতে থাকবে তা স্বাভাবিক।  আমাদের লড়াইটা হল নাগরিকত্বের সমস্ত রকম অধিকারের ও সমস্ত রকম সাংবিধানিক অধিকারের লড়াই, যাতে আমরা সামাজিক ন্যায়ের জন্য এক উন্নত পরিবেশ ও ভিত্তি পেতে পারি।

আমরা জাত-জনগণনা বা কাস্ট সেন্সাসের দাবি তুলেছি এবং দাবি তুলেছি আরো প্রসারিত সংরক্ষণের। সংরক্ষণ ব্যবস্থার প্রসারন বলতে আমরা বোঝাচ্ছি সংরক্ষণের শতাংশ বৃদ্ধি এবং একই সাথে প্রাইভেট সেক্টরেও সংরক্ষণ চালু করাকে, যাতে সংরক্ষণ প্রকৃতই অর্থবহ হয়ে ওঠে।  কিন্তু সংরক্ষণ নিজে, তা এক অ্যাফার্মেটিভ একশান হওয়া সত্ত্বেও, খুবই সীমিত কার্যকারিতার। যা দরকার তা হল সামাজিক গতিময়তাকে বাড়িয়ে তোলা এবং মানুষের অধিকারের ক্ষেত্রকে প্রসারিত করা। আমাদের পক্ষ থেকে এটা নিশ্চিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে সামাজিক ন্যায়ের লড়াই সামাজিক তলেই লড়া হবে, এবং আমরা নিশ্চিত যে অ-বিজেপি বহুবিধ দলের, বিশেষত সামাজিক ন্যায়, সামাজিক সমতা, নাগরিক স্বাধীনতা ও অধিকারের প্রতি দায়বদ্ধ দলগুলির, একত্রে আসাটা এই লড়াইকে অবশ্যই শক্তিশালী করবে।

শেষে আরেকবার এই গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলনের সংগঠকদের ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমরা নিশ্চিত যে এই সম্মেলনের বার্তা ভারতের জনগণের সমস্ত অংশের কাছেই পৌঁছবে এবং যারা একবিংশ শতকে একধরণের রাজতন্ত্রের পথে মনুস্মৃতির লাইনে ভারতকে পেছনের দিকে ঠেলে দিতে চাইছে সেই ফ্যাসিবাদী শক্তিগুলির নাগপাশ থেকে ভারতকে মুক্ত করার স্বপ্ন সফল করতে, সামাজিক ন্যায়ের স্বপ্ন বাস্তব করতে, আমরা পরস্পরের হাত ধরে এগিয়ে যেতে পারব।

আমরা যারা স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল্যবোধ ও সামাজিক পরিবর্তনের লক্ষ্য পোষণ করি তারা সকলে মিলে এই ধ্বংস, অন্যায় ও বৈষম্যের শক্তিকে পরাস্ত করে লক্ষ্যে পৌঁছতে পারব।

সকলকে অনেক ধন্যবাদ।

খণ্ড-30
সংখ্যা-33