১০ থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত নদী বাঁচাও অভিযান কর্মসূচির অঙ্গ হিসাবে ১১ সেপ্টেম্বর থেকে বজবজে এক কর্মসূচি পালিত হয়। প্যালেস স্টার মোড় থেকে মিছিল শুরু হয়ে বজবজ ফেরীঘাট ‘কালিবাড়ি’তে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। গঙ্গোত্রীর সন্নিকট ভারতের শেষ প্রান্তে যোশীমঠ বাঁচাও সংঘর্ষ সমিতির আহ্বায়ক অতুল শতি, ছত্রিশগড়ের গৌতমবাবু, বাংলার পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের অক্লান্ত সংগঠক তাপস দাস, থার্ড প্ল্যানেট, বজবজ মহেশতলা নেচার স্টাডি সেন্টার, নদী বাঁচাও জীবন বাঁচাও, যুব ভারত, সিপিআই(এমএল) লিবারেশন ও গঙ্গা প্রেমিক সাথীরা নদী ও পরিবেশ বাঁচাতে একসাথে পথ চললো।
আইপিসিসি বা পরিবেশ সংক্রান্ত বিশ্ব স্তরের বৈঠকগুলোর যে রির্পোট প্রকাশিত হচ্ছে তা ভয়ঙ্কর। প্রকৃতি মানুষ সহ সব জীবজন্তুর উপযোগী এই গ্রহকে গড়ে তুলতে অকৃপণ হাতে সাজিয়েছিল। মানুষরূপী একদল মুনাফাখোরের স্বার্থে পৃথিবী দ্রুত গতিতে শেষ হওয়ার দিকে এগিয়ে চলেছে। বিশেষ করে ৯০’র দশকে সমস্ত সমস্যার সমাধান বিশ্বায়ন, বিশ্বায়ন, একমাত্র বিশ্বায়নে আছে, এই শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত। কল্যাণকর নয়, বাজার অর্থনীতিই আমাদের বেঁচে থাকার একমাত্র পথ। বাজার অর্থনীতিকে উন্নয়নের চাদরে ঢেকে আমাদের নয় — আমার আরো চাই, আর এই আরো চাই এর দর্শনে গোটা সমাজকে গ্রাস করতে থাকল। লোহা গরম থাকতে থাকতে হাতুড়ি পেটাতে হয়। আরো চাই আর উন্নয়নের মিশেল যখন মানুষকে মোহিত করে চলেছে, ঠিক তখনই সবুজে ভরা তৃতীয় বিশ্বের বুক চিরে ছুটতে থাকলো কর্পোরেটদের বুলডোজার। ব্রাজিলের এ্যামাজন জঙ্গল থেকে গঙ্গার উৎসস্থলের নিকটে একাধিক জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তুলতে নদী বাঁধ দেওয়া, চারধামের পূণ্যি নিতে পাহাড় কেটে চার লেনের রাস্তা নির্মাণ, হিমালয়ের পাদদেশে গাড়োয়াল, কুমায়ুন ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া। চারদিকে জল-জঙ্গল-জমি লুঠ করে, ভেল্কি বাজির মতো ঝা চকচকে নগরায়ন গড়ে উঠল। চারদিক কংক্রিটের জঙ্গল। জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হতে থাকল। এই নির্মাণ কান্ডে অল্প সময় অতিমুনাফা। তাই দ্রুত অতিমুনাফার লক্ষ্যে দুর্বল চিত্তের ভদ্রলোকের দরকার নেই। চাই লৌহমানব। যে দল বা মানুষটি সিদ্ধান্তকে কার্যকরী করতে সমস্ত কাঁটা অতিদ্রুত নিকেষ করতে নির্মমতম পথ অবলম্বনে কুণ্ঠাবোধ করে না। সেই রকম ৫৬ ইঞ্চি ওয়ালা মোদীকে ক্ষমতায় আনতে কর্পোরেটরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল, সাথ দিয়েছিল উচ্চ বেতনভুকরা, আর দিশাহারা, বিভ্রান্ত, হতদরিদ্র মানুষের একটা অংশ।
প্রকৃতির এই অবাধ লুন্ঠনে, প্রকৃতি মুচকি হাসছে। প্রকৃতির অবাধ লুন্ঠন তো মানুষ সহ জীবকুলের শ্মশান যাত্রা। পাশ্চাত্যের সাম্রাজ্যবাদী শীতপ্রধান দেশগুলোর কোথাও কোথাও ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা উঠে যাওয়ায় আমাদের দেশের মত অনেকে পথ চলতে চলতে জল দিয়ে সারা শরীরে ভিজিয়ে নিচ্ছে। অর্থাৎ গ্লোবাল ওয়ার্মিং যুগ পেরিয়ে গ্লোবাল বয়েলিং যুগে প্রবেশ করছি। জনবিরোধী, পরিবেশ বিরোধী উন্নয়নের অশ্বমেধের এই ঘোড়াকে এখনি রুখতে না পারলে এ গ্রহ দ্রুত জীবকূলের বাসের অযোগ্য হয়ে যাবে। তাই এই কঠিন লড়াই শুধুমাত্র পরিবেশকর্মী, বিজ্ঞান কর্মীদের লড়াইয়ে জয়ী হওয়া যাবে না। এই গ্রহকে জীবকূলের বাসযোগ্য রাখতে পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন, বিজ্ঞান আন্দোলন, সমাজের সমস্ত স্তরের মানুষ ও প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক, বামপন্থী আন্দোলনের রাজনৈতিক কর্মীদের অংশগ্রহণ একান্ত দরকার। তাই ১০-২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ পরিবেশ রক্ষায় যে কর্মসূচি চলছে তাকে সফল করুন। যা আগামী প্রজন্মকে পথ দেখাবে।
- কিশোর সরকার