স্বপ্নদীপের মৃত্যুর পর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আভ্যন্তরীণ কমিটি গঠন হয়েছিল তার রিপোর্ট জমা পড়ার পর সেই অনুযায়ি কিছু পদক্ষেপ নেওয়া শুরু হয়। গত ২১ আগস্টের একটি মিটিংয়ের রেসোলিউশন সম্প্রতি সামনে এলে দেখা যায়, আগের রেগিং-বিরোধী কমিটিতে আরো কিছু মেম্বার যুক্ত করে ৩৩ জনের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিতে দুটি এনজিও’র সদস্য এবং যাদবপুর থানার ওসিকেও যুক্ত করা হয়েছে। ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে আর্টস ফ্যাকাল্টি স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (আফসু)’র একজন প্রতিনিধি ও প্রথম বর্ষের দুই ছাত্রকে কমিটিতে রাখা হয়েছে। ক্যাম্পাসের কিছু জায়গায় সিসিটিভি লাগানোর এবং ক্যাম্পাসে সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে প্রাক্তন সেনা ও পুলিশকর্মীদের নিয়োগ করার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে।
এই মিটিং ও তার রেজোলিউশনকে ঘিরে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিক্ষোভ ছড়ায়। এই মিটিংয়ে সায়েন্স ফ্যাকাল্টি স্টুডেন্টস ইউনিয়িন (এসএফএসইউ) ও ফ্যাকাল্টি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনলজি স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (ফেটসু)’র কোনো প্রতিনিধিকে ডাকা হয়নি। ডাকা হয় নি বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনগুলিকেও। এই মিটিংয়ের খবর সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআই ছাড়া ক্যাম্পাসের অন্য কোনো সংগঠনের কাছেই ছিল না। ২০১৯ সালে স্টুডেন্টস ইউনিয়নের সর্বশেষ নির্বাচন হওয়ায় ইউনিয়ন এখন অকার্যকরী হয়ে আছে। সেখানে আফসু থেকে প্রতিনিধি যেতে হলে সেটা সাধারণ সভার মাধ্যমে নির্ধারণ করার কথা। কিন্তু এক্ষেত্রে সেটা হয়নি। এমনকি মিটিংয়ের মিনিটসে উপরের সিদ্ধান্তগুলি নিয়ে আফসুর কোনো বিরোধ বা ‘নোট অব ডিসেন্ট’-ও নেই।
অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (আইসা) জেইউ ইউনিটের সেক্রেটরি বর্ষা বড়াল ও প্রেসিডেন্ট সায়নি সাহার জারি করা এক প্রেস বিবৃতিতে বলা হয়,
বর্তমান পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে ছাত্রছাত্রীদের বিরুদ্ধে যে মিডিয়া ট্রায়াল চলে তাকে নিন্দা করে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে কলুষিত করার উদ্দেশ্যকে নিন্দা করে ভিসিকে প্রেসে একটি বক্তব্য প্রকাশ করতে বলা হয়েছিল সংশ্লিষ্ট সর্বপক্ষ (অল স্টেক হোল্ডার্স) -এর বিগত মিটিঙে। এই সিদ্বান্ত ভিসি, প্রোভিসি এবং কর্তৃপক্ষের অন্যান্য সদস্যদের উপস্থিতিতে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু উল্লিখিত মিটিং শেষ হওয়ার ঠিক পরের মুহূর্তেই ভিসি বাইরে এসে মিডিয়ার সামনে বক্তব্য রাখেন যে, ওনাকে নাকি ছাত্রছাত্রীরা জোর করে এই বক্তব্য রাখতে বলেছে। ওই মিটিংএ নেওয়া সিদ্বান্তকে চাপা দেওয়ার জন্য তিনি মিথ্যে বলেন মিডিয়ার সামনে।
কিছুদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মধ্যে সেনার পোষাক পরিহিত ২০ জন ঢুকে পড়ার যে ঘটনায় চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছিল তার পেছনে থাকা ‘এশিয়ান পিস কিপিং সোসাইটি’ নামে সংগঠনের সভায় যাদবপুরের ভিসি স্বয়ং উপস্থিত ছিলেন বলে জানিয়েছে আইসার বিবৃতি। আইসা এই ঘটনাকে ‘আতঙ্কজনক’ বলে অভিহিত করেছে। বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ভিসি বুদ্ধদেব সাউ পড়ুয়াদের উদ্দেশ্যে কটূক্তি করেন এবং সমস্ত বিষয়ে অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রবণতা দেখান যা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল পরিসরকে সংকীর্ণ করে তুলছে এবং ভিসির ব্যক্তিগত সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট থেকে আরও জানা যায় যে তিনি এসসিএসটিদের সংরক্ষণের অধিকারের বিরোধী, নারী-বিদ্বেষী, হোমোফোবিক।
প্রথম থেকেই অ্যান্টি ৠাগিং সেলে নির্বাচিত প্রতিনিধি রাখার দাবি জানানোর পরেও কোন ভিত্তিতে দুজন পড়ুয়াকে নির্বাচন ছাড়াই ওই কমিটিতে রাখা হল সে প্রশ্ন তুলেছে আইসা। ২১ আগস্টের মিটিং ও সিদ্ধান্ত সম্পর্কে আফসু সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ধোঁয়াশায় রেখেছিল কেন সে প্রশ্নও উঠেছে। ফ্যাসিস্ট শক্তির আক্রমণের মুখে দাঁড়িয়ে ছাত্রছাত্রীদের ঐক্য অটুট রাখতে সবরকম প্রচেষ্টা আইসা চালিয়ে যাবে বলে জানিয়েছে।