ইন্ডিয়া জোটের সমন্বয় সমিতির প্রথম বৈঠকে টিএমসির প্রতিনিধি অভিষেক ব্যানার্জির অনুপস্থিতির প্রসঙ্গে তাঁকে ইডি দপ্তরে ডাকাকে বিজেপির প্রতিহিংসার রাজনীতি বলে অভিহিত করা হয়। যত সত্বর শরিক দলগুলি নিজেদের মধ্যে আসন সমঝোতার কথাবার্তা শুরু করবে। দেশের বিভিন্ন অংশে যৌথ জনসভা সংগঠিত করা হবে। প্রথম জনসভা হবে ভোপালে, যেখানে মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব ও বিজেপি সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রচার কেন্দ্রীভূত করা হবে। কাস্ট সেন্সাস অর্থাৎ জাতজনগণনার বিষয়টি তুলে ধরতে সকলে সম্মত হয়। সমন্বয় সমিতি তার মিডিয়া উপসমিতিকে দায়িত্ব দেয় কোন কোন মিডিয়া অ্যাংকরের প্রোগ্রামে ইন্ডিয়া জোটের শরিক দলগুলি নিজেদের প্রতিনিধি পাঠাবে না তা ঠিক করার।
ইন্ডিয়া জোটের মিডিয়া উপসমিতি বেশ কিছু অ্যাংকারদের নামের তালিকা নির্দিষ্ট করে যারা টিভি চ্যানেলে নিয়মিত হিংসা বিদ্বেষ ও মিথ্যা প্রচার করে। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিজেপি আরএসএস যথারীতি তাদের অপপ্রচার শুরু করেছে। এই প্রসঙ্গে সিপিআই(এমএল) সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের মন্তব্য (ভাষান্তরে),
গোদি মিডিয়ার নির্দিষ্ট কিছু অ্যাংকারকে বয়কট করার সিদ্ধান্ত এসেছে মূলত এই জন্য যে এই অ্যাংকারেরা ধারাবাহিকভাবে বিদ্বেষ ও মিথ্যা ছড়াতে অভ্যস্ত। বয়কট এই কারণে করা হয়নি যে তাঁরা অ-বিজেপি দলগুলির প্রতি ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’ নন। এটা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাকে খর্ব করা নয়। এটা হল এক মুক্ত সাধারণতন্ত্রে মুক্ত সংবাদমাধ্যমের জন্য লড়াই। সংঘবাহিনী ও গোদি মিডিয়ার সমস্বর প্রচার সম্পর্কে সতর্ক থাকুন। ওরা এই ইস্যুটিকে ধূর্ততার সাথে ঘুরিয়ে দিয়ে হেঁটমুণ্ডু ঊর্ধ্বপাদ করে দিতে চায়।
প্রকৃত ইস্যুগুলিকে ঘুলিয়ে দিয়ে ফালতু বিতর্ক তৈরি করে বিষয়গুলোকে উল্টে দেওয়াটা ফ্যাসিবাদী প্রোপাগান্ডার বরাবরের কৌশল। ইন্ডিয়া বনাম ভারত করেও ওরা এরকম ঝুটা বিতর্ক চাগাতে চেয়েছে, বিরোধীপক্ষকে অভিযুক্ত করেছে যে তারা ‘ভারত’-এ ভয় পায়। অথচ দেখা গেল যে পুরো বিষয়টা হল, সংঘ ব্রিগেডের ‘ইন্ডিয়া’ শব্দেই ভীষণ আপত্তি যে ইন্ডিয়া হল আমাদের দেশের সাংবিধানিকভাবে ঘোষিত ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত নাম যা ভারত নামের পাশাপাশি ও সমার্থকরূপে বরাবর ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
আসল বিষয়টা ঘুলিয়ে দেওয়ার আরেকটা উদাহরণ হল, ওরা সামাজিক সমতা ও জাতের বিনাশের সমগ্র প্রকল্পটিকেই হিন্দু-বিরোধী ষড়যন্ত্র বলে প্রচার চালাচ্ছে। জাত ব্যবস্থা এবং তাকে আশ্রয় করে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাওয়া বহুবিধ অবিচারের প্রশ্নে স্পষ্টভাবে নিজের মত প্রকাশ করার বদলে ওরা “হিন্দু খতরে মেঁ হ্যায়” বোতাম টিপছে। ঘটনাচক্রে একই সময়ে মোহন ভাগবত এখন স্বীকার করলেন যে জাত ব্যবস্থার নিপীড়ণ ২০০০ বছরের পুরানো। এটা স্বীকার করে তিনি আরএসএস-এর এত দীর্ঘ দিনকার প্রচারণা থেকে সরে এলেন যা প্রচার করত যে জাত ব্যবস্থা আসলে মুঘল যুগের বিকৃতি যা ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসনে নতুন করে শক্তিশালী হয়।