১ সেপ্টেম্বর কমরেড রাজারাম পাটনার পিএমসিএইচ হাসপাতালে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি বিহারের রাজ্য স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য ছিলেন এবং ১৯৭৪ সালের আন্দোলনের অন্যতম সৈনিক ছিলেন। প্রায় আড়াই দশক পর্যন্ত তিনি পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং দু-বারের জন্য পার্টি কন্ট্রোল কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি ইন্ডিয়ান পিপলস ফ্রন্টের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
তিনি কাশি জ্বর ও মূত্রনালির সংক্রমণ নিয়ে ভুগছিলেন, কিন্তু আকস্মিক তার চলে যাওয়াটা সকলের কাছে বিরাট এক ধাক্কা। ২৭ অগস্ট তাঁকে পাটনা মেডিকাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি হাঁপানি ও উচ্চরক্ত চাপ নিয়ে ভুগছিলেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় তাঁকে ইন্টেন্সিভ কেয়ার থেকে জেনেরাল বেডে স্থানান্তরিত করা হয়। সন্ধ্যায় হাল্কা কিছু খাবার খাওয়ার পর হঠাৎ কমরেডদের সাথে কথোপকথন বন্ধ হয়ে যায়।
তাঁর মৃত্যুর পর বহু সংখ্যক মানুষ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মী ও নেতা শ্রদ্ধা জানাতে ছগ্গুবাগে বিধায়কের আবাসে উপস্থিত হন। ৩ সেপ্টেম্বর এক সংক্ষিপ্ত স্মরণ অনুষ্ঠানে দীপঙ্কর ভট্টাচার্য, স্বদেশ ভট্টাচার্জ ও অন্যান্য বক্তারা বক্তব্য রাখার পর অন্তিম যাত্রায় হাজারো মানুষ শোকমিছিলে সামিল হন। বাম দল ও মহাগঠবন্ধনের নেতারাও তাঁকে শ্রদ্ধা জানান।
কমরেড রাজারাম বিপ্লবের জন্য ছিলেন এক উৎসর্গীকৃত প্রাণ, যিনি ছিলেন একজন আদর্শ কমিউনিস্ট। পাটনার এক ছোট শহরতলী ফাতুয়া থেকে তিনি তাঁর জীবন শুরু করেন এবং বিহার, ঝাড়খন্ড, ছত্তিসগড় সহ অনেক রাজ্যেই পার্টির সম্প্রসারণের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন। পার্টির দিল্লি সদর দপ্তরেও তিনি অনেক বছর দায়িত্ব পালন করেন। সাদামাটা জীবন যাপন ও আদর্শের প্রতি অবিচলতা ছিল তাঁর প্রধান গুণাবলী যা তরুণদের কাছে অনুসরণযোগ্য হয়ে ওঠে। ছাত্রাবস্থাতেই তিনি রাজনীতিতে আকৃষ্ট হন এবং বাম আন্দোলনের সাথে যুক্ত হন। ১৯৭৪ সালে বিহার থেকে শুরু হওয়া ছাত্র আন্দোলনের তিনি এক গুরুত্বপূর্ণ সংগঠক ছিলেন।
কমরেড রাজারাম সিপিআই(এম) ছেড়ে ৭০ এর গোড়ার দিকে এ কে রায় এর সাথে যুক্ত হন। জরুরি অবস্থার সময় গ্রেপ্তার হন। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর সিপিআই(এমএল)-এর সাথে যুক্ত হন, আইপিএফ গঠনে বিরাট ভূমিকা রাখেন, এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিপ্লবী গণতন্ত্রের বার্তা ছড়িয়ে দিতে ভূমিকা রাখেন। এর পর পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসাবে তিনি বিহার ঝাড়খন্ড ও ছত্তিসগড়ে পার্টিকে নেতৃত্ব দেন।
বহু সংখ্যক কর্মী, বিভিন্ন দলের নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গ, ঝাড়খন্ড-উত্তরপ্রদেশ দিল্লির নেতারা তাঁর অন্তিম যাত্রায় উপস্থিত ছিলেন। পার্টির নেতৃবৃন্দের সাথে তাঁর জীবন সাথী সঙ্গীতা ও পুত্র অভিষেকও পাশে ছিলেন। সিপিআই’র রাজ্য সম্পাদক রামনরেশ পান্ডে, সিপিআই(এম)’র অরুণ মিশ্র, আরজেডির নেতা ও বিহার বিধানসভার প্রাক্তন স্পিকার উদয় নারায়ণ চৌধুরি, কংগ্রেস নেতা মোহন শর্মা, প্রখ্যাত সাংবাদিক শ্রীকান্ত সহ অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ শেষ যাত্রায় সামিল হন। বর্ষীয়ান কমরেড কেডি যাদব প্রয়াত কমরেডের সাথে তাঁর ৫২ বছরের একসাথে চলার স্মৃতি তুলে ধরেন, পার্টির বিরাট এক স্তম্ভ হিসাবে বর্ণনা করেন। ১৯৮২ সালে আইপিএফ এর প্রতিষ্ঠা সম্মেলনে তিনি সর্বসম্মতিক্রমে সাধারণ সম্পাদক হিসাবে নির্বাচিত হন।
পার্টি কেন্দ্রীয় কমিটি তাঁর প্রয়াণে গভীর শোক জ্ঞাপন করছে, তাঁর বিপ্লবী আদর্শকে এগিয়ে নিয়ে যেতে গোটা পার্টির কাছে আবেদন জানাচ্ছে।
কমরেড রাজারাম লাল সেলাম।