অ-বিজেপি দলগুলির মধ্যে ঐক্য প্রক্রিয়ার বিকাশ সম্পর্কে সিপিআই(এমএল)-এর পলিটব্যুরো আলোচনা করে। সিপিআই(এমএল) লিবারেশন এই প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যেতে দায়বদ্ধ। আসন্ন নির্বাচনে ইন্ডিয়া জোটের নির্ধারক জয় নিশ্চিত করার লক্ষ্যে “জুড়বে ভারত, জিতবে ইন্ডিয়া” অভিযান তীব্র করতে এবং পার্টির নির্বাচনী অভিযানে সমগ্র পার্টিকে সদর্থক আন্তরিকতায় প্রস্তুত হতে আহ্বান জানিয়েছে পলিটব্যুরো।
ঘোসি, ডুমরি ও ধুপগুড়িতে ৫ সেপ্টেম্বরের উপনির্বাচনে এনডিএ প্রার্থীদের পরাজয়কে পলিট ব্যুরো স্বাগত জানিয়েছে। ডুমরি ও ঘোসিতে আমাদের কমরেডরা যথাক্রমে জেএমএম ও এসপি প্রার্থীদের জয়ের লক্ষ্যে প্রাণবন্ত প্রচারাভিযান চালায়। ত্রিপুরায় সমস্ত অ-বিজেপি দলগুলির সমর্থন সত্ত্বেও সিপিআই(এম) প্রার্থীদের পরাজয় তথা নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্পর্কে পিবি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। সিপিআই(এম) এই নির্বাচনকে প্রহসন বলে অভিহিত করে পুনর্নির্বাচন দাবি করেছে।
উদ্ভট পরিকল্পনার জি-২০ বৈঠককে ঘিরে উৎপন্ন করা উল্লাসের পেছনের প্রকৃত বাস্তবতা এখন উন্মোচিত। বিলাসবহুল জাঁকজমকের ব্যবস্থাপনা শেষ পর্যন্ত ত্রুটিপূর্ণ ও অপর্যাপ্ত পরিকাঠামোকে আড়াল করতে পারেনি। গরিবদের অপসারণ, বস্তি গুঁড়িয়ে দেওয়া এবং দিল্লির রাজপথ বরাবর জীবনযাত্রাকে বলপূর্বক অদৃশ্য করে দেওয়া, রাস্তার জীবজন্তুদের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ, নগরজীবনকে ব্যাপকভাবে পর্যুদস্ত করে নগরে লকডাউন আরোপ এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে এই কর্মসূচির সাথে কোনোরকম আলোচনামূলক আন্তক্রিয়ায় যেতে না দেওয়া এই কর্মসূচিকে জি-২০র ইতিহাসের সবচেয়ে সমালোচিত বৈঠকে পর্যবসিত করেছে। আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মঞ্চের একটি কর্মসূচিকে নগ্ন নির্লজ্জভাবে নরেন্দ্র মোদির আত্মম্ভরী প্রচারাভিযানে ব্যবহার করাটা আসলে ভারতের আন্তর্জাতিক অবস্থান ও সার্বভৌম জাতীয় স্বার্থকেই দুর্বল করে তোলে।
বিরোধীপক্ষের সাথে কোনোরকম আগাম আলোচনা ছাড়াই, কোনো এজেণ্ডা ঘোষণা না করেই, সংসদের এক বিশেষ অধিবেশনের হঠাৎ ঘোষণা সংবিধান ও সংসদীয় গণতন্ত্রের ওপর চলমান হামলারই এক বিপজ্জনক পরিবর্ধন। নতুন সংবিধান রচনার জন্য সদ্য যে ষড়যন্ত্রমূলক চেঁচামেচি, ‘এক দেশ, এক ভোট’-এর নামে কেন্দ্রীকৃত যুগপৎ নির্বাচনের হৈচৈ, সংবিধান স্বীকৃত ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত নাম ইন্ডিয়াকে ঔপনিবেশিক চিহ্ন হিসেবে অভিহিত করা এবং বিচারবিভাগীয় সংস্কারের নামে বিবিধ নতুন আইন প্রস্তাবনা ইত্যাদির সাথে মিলিয়ে দেখলে এই রহস্যময় অধিবেশনকে এক কূটিল ষড়যন্ত্র বলে মনে হয়।
এইসব সুচারু সমন্বিত পদক্ষেপগুলির পরিপূরক হিসেবে দেখা যাচ্ছে আসন্ন নির্বাচনের আগে এক সাম্প্রদায়িক জিঘাংসার নির্মাণ। ভিএইচপি ও বজরং দলের মুসলিম বিরোধী হিংসা এবং রাষ্ট্রের বুলডোজার অভিযান – এই দুইয়ের যুগলবন্দী, যেমনটা হরিয়ানায় দেখা গেল, আসন্ন নির্বাচনের প্রাক্কালে এক হিংস্র সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের ছককে দেখিয়ে দিচ্ছে। ভিএইচপি ও বজরং দল ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে এক পক্ষকালব্যাপী ‘শৌর্য জাগরণ যাত্রা’ ঘোষণা করেছে যার ঘোষিত লক্ষ্য হল একটা ‘ধর্ম যোদ্ধা’ সেনা গঠন করা যার কাজ হবে তারা যাকে বলে ‘লাভ জিহাদ’ ও ‘ধর্মান্তর করণ’ তার মোকাবিলা করা।
এই ছকেরই এক নয়া উপাদান হল জাত ব্যবস্থা ও গোঁড়ামি অবসানের ডাকে উদয়নিধি স্টালিনের দেওয়া বিবৃতিকে ধরে উন্মাদনা তৈরি করার অপচেষ্টা যাতে স্বয়ং নরেন্দ্র মোদিও সামিল হয়েছেন মন্ত্রীসভার সদস্যদের প্রতি এর জবাব দেওয়ার আহ্বান নিয়ে এবং বিজেপি প্রচারকদের দ্বারা একে হিন্দুদের গণহত্যা করার হুমকি বলে বর্ণনায়। তামিলনাড়ুর সামাজিক ন্যায় ও আত্মসম্মান আন্দোলনে অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসা লব্জকে স্মরণে রেখে উদয়নিধি সনাতন শব্দটি ব্যবহার করেছেন জাতবাদী নিপীড়ণ, লিঙ্গ হিংসামূলক অন্যায় ও অন্যান্য বহুবিধ প্রতিক্রিয়াশীল দিককে উল্লেখ করতে যেগুলোকে ধর্মের নামে সমর্থন করা ও তোল্লাই দেওয়া হয়। সনাতন শব্দটি প্রণয়ন করা হয়েছে হিন্দু ধর্ম ও তার শাস্ত্রগুলির কল্পিত এক চিরন্তন চরিত্র দাবি করে হিন্দু ধর্মের অভ্যন্তরে সংস্কারের আহ্বানকে প্রতিহত করতে। বিশেষত মনুস্মৃতির মতো শাস্ত্র দ্বারা অনুমোদিত সতী প্রথা ও অন্যান্য চরম পশ্চাদপদ লিঙ্গগত কুসংস্কার, অপমান, অন্যায় ও অবিচার দূর করার আহ্বানকে প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে। সংঘবাহিনী এখন হিন্দুইজম, হিন্দুত্ব ও সনাতন শব্দগুলিকে একে অন্যের সমার্থক হিসেবে ব্যবহার করে। সামাজিক ন্যায় ও সামাজিক সমতার সংগ্রামকে কোনো ধর্মের সাথে সাংঘর্ষিক রূপে দেখানোর অপচেষ্টাকে অনুমোদন দেওয়া চলে না এবং ধর্মীয় উন্মাদনা তৈরি করে সামাজিক ন্যায় আন্দোলনকে দমন করার ছককে রুখে দিতে হবে।
পিবি বিহারের কমরেডদের অভিনন্দন জানিয়েছে আশা কর্মীদের এক মাস ব্যাপী ধর্মঘটের বিজয়ী সমাপনের জন্য এবং অল ইন্ডিয়া স্কিম ওয়ার্কারস ফেডারেশন সফলভাবে শুরু করার জন্য। পিবি সমস্ত রাজ্য কমিটিগুলিকে আইপোয়ার আরো সদস্য সংগ্রহ করা ও দিল্লিতে আইপোয়ার আসন্ন সম্মেলনকে ব্যাপকভাবে সফল করে তোলার কথাও বলেছে। পিবি অভিনন্দন জানিয়েছে পশ্চিমবাংলার ছাত্রছাত্রী কমরেডদের, সম্প্রতি আইসার জাতীয় সম্মেলন সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য।
পলিটব্যুরের পক্ষে স্বদেশ ভট্টাচার্য