আজকের দেশব্রতী : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ (অনলাইন সংখ্যা)
deshabrati-14-sept-23bharat-will-joinindia-will-win
১১-১২ সেপ্টেম্বর পাটনায় পার্টির পলিটব‍্যুরো মিটিং-এর বার্তা

অ-বিজেপি দলগুলির মধ‍্যে ঐক‍্য প্রক্রিয়ার বিকাশ সম্পর্কে সিপিআই(এমএল)-এর পলিটব‍্যুরো আলোচনা করে। সিপিআই(এমএল) লিবারেশন এই প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যেতে দায়বদ্ধ। আসন্ন নির্বাচনে ইন্ডিয়া জোটের নির্ধারক জয় নিশ্চিত করার লক্ষ‍্যে “জুড়বে ভারত, জিতবে ইন্ডিয়া” অভিযান তীব্র করতে এবং পার্টির নির্বাচনী অভিযানে সমগ্র পার্টিকে সদর্থক আন্তরিকতায় প্রস্তুত হতে আহ্বান জানিয়েছে পলিটব্যুরো।

ঘোসি, ডুমরি ও ধুপগুড়িতে ৫ সেপ্টেম্বরের উপনির্বাচনে এনডিএ প্রার্থীদের পরাজয়কে পলিট ব‍্যুরো স্বাগত জানিয়েছে। ডুমরি ও ঘোসিতে আমাদের কমরেডরা যথাক্রমে জেএমএম ও এসপি প্রার্থীদের জয়ের লক্ষ‍্যে প্রাণবন্ত প্রচারাভিযান চালায়। ত্রিপুরায় সমস্ত অ-বিজেপি দলগুলির সমর্থন সত্ত্বেও সিপিআই(এম) প্রার্থীদের পরাজয় তথা নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্পর্কে পিবি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। সিপিআই(এম) এই নির্বাচনকে প্রহসন বলে অভিহিত করে পুনর্নির্বাচন দাবি করেছে।

উদ্ভট পরিকল্পনার জি-২০ বৈঠককে ঘিরে উৎপন্ন করা উল্লাসের পেছনের প্রকৃত বাস্তবতা এখন উন্মোচিত। বিলাসবহুল জাঁকজমকের ব‍্যবস্থাপনা শেষ পর্যন্ত ত্রুটিপূর্ণ ও অপর্যাপ্ত পরিকাঠামোকে আড়াল করতে পারেনি। গরিবদের অপসারণ, বস্তি গুঁড়িয়ে দেওয়া এবং দিল্লির রাজপথ বরাবর জীবনযাত্রাকে বলপূর্বক অদৃশ‍্য করে দেওয়া, রাস্তার জীবজন্তুদের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ, নগরজীবনকে ব‍্যাপকভাবে পর্যুদস্ত করে নগরে লকডাউন আরোপ এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ‍্যমকে এই কর্মসূচির সাথে কোনোরকম আলোচনামূলক আন্তক্রিয়ায় যেতে না দেওয়া এই কর্মসূচিকে জি-২০র ইতিহাসের সবচেয়ে সমালোচিত বৈঠকে পর্যবসিত করেছে। আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মঞ্চের একটি কর্মসূচিকে নগ্ন নির্লজ্জভাবে নরেন্দ্র মোদির আত্মম্ভরী প্রচারাভিযানে ব‍্যবহার করাটা আসলে ভারতের আন্তর্জাতিক অবস্থান ও সার্বভৌম জাতীয় স্বার্থকেই দুর্বল করে তোলে।

বিরোধীপক্ষের সাথে কোনোরকম আগাম আলোচনা ছাড়াই, কোনো এজেণ্ডা ঘোষণা না করেই, সংসদের এক বিশেষ অধিবেশনের হঠাৎ ঘোষণা সংবিধান ও সংসদীয় গণতন্ত্রের ওপর চলমান হামলারই এক বিপজ্জনক পরিবর্ধন। নতুন সংবিধান রচনার জন‍্য সদ‍্য যে ষড়যন্ত্রমূলক চেঁচামেচি, ‘এক দেশ, এক ভোট’-এর নামে কেন্দ্রীকৃত যুগপৎ নির্বাচনের হৈচৈ, সংবিধান স্বীকৃত ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত নাম ইন্ডিয়াকে ঔপনিবেশিক চিহ্ন হিসেবে অভিহিত করা এবং বিচারবিভাগীয় সংস্কারের নামে বিবিধ নতুন আইন প্রস্তাবনা ইত‍্যাদির সাথে মিলিয়ে দেখলে এই রহস‍্যময় অধিবেশনকে এক কূটিল ষড়যন্ত্র বলে মনে হয়।

এইসব সুচারু সমন্বিত পদক্ষেপগুলির পরিপূরক হিসেবে দেখা যাচ্ছে আসন্ন নির্বাচনের আগে এক সাম্প্রদায়িক জিঘাংসার নির্মাণ। ভিএইচপি ও বজরং দলের মুসলিম বিরোধী হিংসা এবং রাষ্ট্রের বুলডোজার অভিযান – এই দুইয়ের যুগলবন্দী, যেমনটা হরিয়ানায় দেখা গেল, আসন্ন নির্বাচনের প্রাক্কালে এক হিংস্র সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের ছককে দেখিয়ে দিচ্ছে। ভিএইচপি ও বজরং দল ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে এক পক্ষকালব‍্যাপী ‘শৌর্য জাগরণ যাত্রা’ ঘোষণা করেছে যার ঘোষিত লক্ষ‍্য হল একটা ‘ধর্ম যোদ্ধা’ সেনা গঠন করা যার কাজ হবে তারা যাকে বলে ‘লাভ জিহাদ’ ও ‘ধর্মান্তর করণ’ তার মোকাবিলা করা।

এই ছকেরই এক নয়া উপাদান হল জাত ব‍্যবস্থা ও গোঁড়ামি অবসানের ডাকে উদয়নিধি স্টালিনের দেওয়া বিবৃতিকে ধরে উন্মাদনা তৈরি করার অপচেষ্টা যাতে স্বয়ং নরেন্দ্র মোদিও সামিল হয়েছেন মন্ত্রীসভার সদস‍্যদের প্রতি এর জবাব দেওয়ার আহ্বান নিয়ে এবং বিজেপি প্রচারকদের দ্বারা একে হিন্দুদের গণহত‍্যা করার হুমকি বলে বর্ণনায়। তামিলনাড়ুর সামাজিক ন‍্যায় ও আত্মসম্মান আন্দোলনে অত‍্যন্ত স্বাভাবিকভাবে ব‍্যবহৃত হয়ে আসা লব্জকে স্মরণে রেখে উদয়নিধি সনাতন শব্দটি ব‍্যবহার করেছেন জাতবাদী নিপীড়ণ, লিঙ্গ হিংসামূলক অন‍্যায় ও অন‍্যান‍্য বহুবিধ প্রতিক্রিয়াশীল দিককে উল্লেখ করতে যেগুলোকে ধর্মের নামে সমর্থন করা ও তোল্লাই দেওয়া হয়। সনাতন শব্দটি প্রণয়ন করা হয়েছে হিন্দু ধর্ম ও তার শাস্ত্রগুলির কল্পিত এক চিরন্তন চরিত্র দাবি করে হিন্দু ধর্মের অভ‍্যন্তরে সংস্কারের আহ্বানকে প্রতিহত করতে। বিশেষত মনুস্মৃতির মতো শাস্ত্র দ্বারা অনুমোদিত সতী প্রথা ও অন‍্যান‍্য চরম পশ্চাদপদ লিঙ্গগত কুসংস্কার, অপমান, অন‍্যায় ও অবিচার দূর করার আহ্বানকে প্রতিহত করার উদ্দেশ‍্যে। সংঘবাহিনী এখন হিন্দুইজম, হিন্দুত্ব ও সনাতন শব্দগুলিকে একে অন‍্যের সমার্থক হিসেবে ব‍্যবহার করে। সামাজিক ন‍্যায় ও সামাজিক সমতার সংগ্রামকে কোনো ধর্মের সাথে সাংঘর্ষিক রূপে দেখানোর অপচেষ্টাকে অনুমোদন দেওয়া চলে না এবং ধর্মীয় উন্মাদনা তৈরি করে সামাজিক ন‍্যায় আন্দোলনকে দমন করার ছককে রুখে দিতে হবে।

পিবি বিহারের কমরেডদের অভিনন্দন জানিয়েছে আশা কর্মীদের এক মাস ব‍্যাপী ধর্মঘটের বিজয়ী সমাপনের জন‍্য এবং অল ইন্ডিয়া স্কিম ওয়ার্কারস ফেডারেশন সফলভাবে শুরু করার জন‍্য। পিবি সমস্ত রাজ‍্য কমিটিগুলিকে আইপোয়ার আরো সদস‍্য সংগ্রহ করা ও দিল্লিতে আইপোয়ার আসন্ন সম্মেলনকে ব‍্যাপকভাবে সফল করে তোলার কথাও বলেছে। পিবি অভিনন্দন জানিয়েছে পশ্চিমবাংলার ছাত্রছাত্রী কমরেডদের, সম্প্রতি আইসার জাতীয় সম্মেলন সফলভাবে সম্পন্ন করার জন‍্য।

পলিটব্যুরের পক্ষে স্বদেশ ভট্টাচার্য

arrogance-and-crueltyarrogance-and-cruelty

দিল্লীর বুকে অনুষ্ঠিত জি-২০’র শীর্ষ বৈঠকের আয়োজনে একদিকে কুৎসিত বৈভব, উৎকট প্রাচুর্যর পাশাপাশি ছিল রাষ্ট্রের চরম বর্বরতা ও গরিব মানুষদের প্রতি হিংস্রতার প্রদর্শনী। দরিদ্র আশ্রয়হীন অযুত দিল্লীবাসীর মুখচ্ছবি জি-২০’র রাষ্ট্রনেতাদের চোখের সামনে যাতে ফুটে না ওঠে, তারজন্য চরম নির্মমতার সাথে, নির্বিচারে চলল বুলডোজার, যা এখন মোদীর শাসনতন্ত্রের ঘৃণ্য প্রতীক। হাজারে হাজারে বস্তি-ঝুপড়িবাসীকে উচ্ছেদ করা হল। রাতারাতি নয়, এই উচ্ছেদ অভিযান চালালো হয়েছে কয়েকমাস ধরে। তিলে তিলে দিল্লীকে সাজানোর, বৈভবের প্রসাধনী প্রলেপ দিতে চলেছিল বেশ কয়েকমাস ধরে এই ধ্বংসযজ্ঞের বহু বিজ্ঞাপিত আয়োজন।

ভারত জি-২০’র প্রেসিডেন্সি পাওয়ার পর থেকেই দিল্লী জুড়ে শুরু হয় এই উচ্ছেদ অভিযান। মেহেরলিতে ৭০০টি উচ্ছেদের নোটিস দেওয়া হয়, ২৫টি বাড়ি ভেঙে গুড়িয়ে দেয় প্রশাসন। কিন্তু তুঘলাকাবাদের উচ্ছেদ ছিল সবচেয়ে ব্যাপক ও হিংস্র। অধিকাংশ সংখ্যালঘু মেহনতিদের বাস এই অঞ্চলে উচ্ছেদের ১,৫০০ নোটিশ দেওয়া হয়, ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় ৩০০০’র উপর ঘরবাড়ি কিন্তু অপেক্ষাকৃত সচ্ছল অধিবাসিদের বাড়ি-ঘরে কোনো আঁচড় পড়েনি। ওই এলাকাটি এখন যেন বোমা বিধ্বস্থ! এতো বড় মাপের, এত বৃহৎ পরিধি জুড়ে আর কোথাও হয়নি উচ্ছেদ অভিযান। উচ্ছেদের দিনে বিশাল বাহিনী নিয়ে পুলিশ বস্তি ঘিরে ফেলে, কেউ যাতে উচ্ছেদ অভিযানের ভিডিও করতে না পারে তারজন্য পুরো এলাকা জুড়ে জ্যামার লাগান হয়, উচ্ছেদের খবর পেয়ে যারা যারা প্রতিবাদ জানাতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছিলেন, তাঁদের মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করা হয়, আশপাশের সমস্ত হোটেল-দোকানপাট বন্ধ করে দেয় প্রশাসন, দিন দুয়েকের মধ্যে বিশাল বস্তি অঞ্চলটি গুঁড়িয়ে সাফ করে দেওয়া হয়।

সমাজের বিভিন্ন স্তরের ‘উদ্বিগ্ন নাগরিক’দের এক প্রতিবাদী ফোরাম দিল্লির বুকে সংগঠিত এই উচ্ছেদ অভিযানকে ‘বেআইনি, সংবিধান বহির্ভূত’ আখ্যা দিয়েছেন। তাঁদের সম্মিলিত প্রতিবাদী মঞ্চ, যার মধ্যে রয়েছেন হর্ষ মন্দার, আনন্দ য়াজ্ঞনিক, শিমলার অবসরপ্রাপ্ত মেয়র টিকেন্দর পানওয়ার সহ বেশ কিছু প্রবীন সাংবাদিক অভিযোগ করেছেন এই জি-২০’র দোহাই দিয়ে শহরের আপামর গরিব মেহনতি খেটে খাওয়া মানুষের উপরই তান্ডব নামিয়েছে রাষ্ট্র। এরআগে বিভিন্ন আদালতের যতগুলো রায় বেরোয়, তার প্রতিটিতেই উচ্ছেদের আগে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করতে বলেছে সর্বোচ্চ আদালত। বম্বে হাইকোর্ট এমনকি এটাও স্পষ্ট করেছে যে, ‘জবরদখলকারী’দের (এনক্রোচার) ক্ষেত্রেও পুনর্বাসন প্রশাসনকেই নিশ্চিত করতে হবে।

জি-২০’র প্রস্তুতি পর্বে নাগপুরে ‘সিভিল ২০’ নামক এক মেগা ইভেন্টের সময় এক বিচারপতি বলেই বসেন, “নাগপুরবাসীকে শৃঙ্খলা পরায়ণ হয়ে সেই সময় থাকতে হবে”। সেখানকার পুলিশ কমিশনার এক সরকারি আদেশনামায় ঘোষণা করে দিলেন সেই সময় কোনো ভিখারি যেন প্রকাশ্য রাস্তায় ভিক্ষা না করে। আর, জি-২০ চলাকালীন গোটা দিল্লী শহরে কার্যত কার্ফু জারি করা হয়, বন্ধ থাকে সমস্ত স্কুল কলেজ, সরকারি বেসরকারি সংস্থা, কতজন রোজগেরে মানুষকে যে ওই কয়েকটা দিন আয় হীন, উপার্জন হীন হয়ে থাকতে হয়েছিল, তার হিসাব আর কেই বা রাখে!

দু’দিনের জি-২০ সম্মেলনের রাজসূয় যজ্ঞ উপলক্ষ্যে শুধুমাত্র দিল্লীর সৌন্দর্যায়নে খরচ হয়েছে প্রায় ৪,০০০ কোটি টাকা। সম্পদ সৃষ্টিকারী মেহনতি মানুষ, যাদের ছাড়া একমুহূর্তও সচল থাকে না মহানগরী, তাঁরাই রাষ্ট্রের চোখে হয়ে উঠল অসুন্দর, কুৎসিত, আর তাঁদের বর্বর উচ্ছেদ যজ্ঞের আবাহনেই ‘বিশ্বগুরু’ তুলে ধরলেন ‘এই কপট কদর্য’ প্রাচুর্যের ছবি।

কী নির্মম এই রসিকতা!

why-this-desperationone-nation-one-election

আদ‍্যাক্ষর অনুসারে ‘ইন্ডিয়া’ নামে পরিচিত হয়ে ওঠা ঐক‍্যবদ্ধ বিরোধী পক্ষের প্রতিনিধিরা যখন মুম্বাইয়ে তাঁদের তৃতীয় বৈঠকে মিলিত হচ্ছেন তখন মোদী সরকার আচানক ১৮ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সংসদের বিশেষ অধিবেশন হবে বলে ঘোষণা দিলেন। সংসদের বাদল অধিবেশন সদ‍্য শেষ হয়েছে, এরমধ‍্যেই যেভাবে এই বিশেষ অধিবেশনের কথা ঘোষণা করা হল, বিরোধীপক্ষের সাথে কোনোরকম আলোচনা ছাড়াই সম্পূর্ণ একতরফাভাবে এবং প্রতিষ্ঠিত সংসদীয় নিয়মনীতি উল্লঙ্ঘন করে, তা স্বাভাবিকভাবেই সরকারের উদ্দেশ‍্য সম্পর্কে সন্দেহ জাগিয়েছে। পাঁচ দিনের এই সদনে প্রাত‍্যহিক প্রশ্নোত্তর পর্ব ও প্রথাগত ‘জিরো আওয়ার’ বলে কিছু থাকবে না, এবং সেখানে কোনো এজেণ্ডা নিয়ে চর্চা হবে সেটাও মানুষকে জানানো হয়নি। প্রত‍্যেক দিনই মোদী সরকার আমাদের এই গণতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্রের নির্বাচিত সংসদকে একটু একটু করে খর্ব করে নবাবের দরবারে পর্যবসিত করছে।

আরেক হঠাৎ পদক্ষেপে, সংসদ, রাজ‍্য বিধানসভা, পঞ্চায়েত ও পুরসভা ভোট একসাথে করার বিষয়ে সুপারিশ করতে ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বে একটি উচ্চস্তরীয় কমিটি ঘোষণা করে দেয় মোদী সরকার। সংবিধানের নিরিখে সন্দেহজনক এবং রাজনৈতিকভাবে বিতর্কিত একটি বিষয়ে সুপারিশের জন‍্য এভাবে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতিকে চেয়ারে রেখে কমিটি বানানো দেখিয়ে দিচ্ছে যে মোদী সরকার সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকে চরমভাবে লঙ্ঘন করে নিজের রাজনৈতিক এজেণ্ডা চাপিয়ে দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। কমিটিতে বিরোধীপক্ষ থেকে মাত্র একজনকে রাখা হয়েছে, লোকসভার বিরোধি দলনেতা কংগ্রেসের অধীর রঞ্জন চৌধুরিকে, যিনি এই কমিটিতে থাকতে অস্বীকার করেছেন, কারণ এটা একটা সন্দেহজনক কমিটি যেখানে রাজ‍্যসভার বিরোধী দলনেতার বদলে এক বিজেপি ঘনিষ্ঠ প্রবীণ সদস‍্যকে রাখা হয়েছে এবং এই কমিটিটা বানানোই হয়েছে ‘এক দেশ, এক ভোট’ এজেণ্ডাকে শীলমোহর দিতে।

‘এক দেশ, এক ভোট’ অনেক দিন ধরেই মোদী সরকারের লালিত পালিত আকাঙ্খা। আইন কমিশন থেকে শুরু করে নীতি আয়োগ পর্যন্ত বিভিন্ন সংস্থা ইতিমধ‍্যেই বিষয়টির নানা দিক খতিয়ে দেখেছে এবং এই প্রস্তাবকে অত‍্যন্ত সমস্যাজনক ও বিতর্কিত হিসেবেই সাব‍্যস্ত করেছে। কারণ এটা বাস্তবায়িত করতে সংবিধানে একগুচ্ছ সংশোধনী আনতে হবে এবং বিরোধী দলগুলিকে ও বিভিন্ন রাজ‍্যের সরকারগুলিকে ঐকমত‍্যে আনতে হবে। এখন যেভাবে এটা করা হচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে কোনোরকম ঐকমত‍্য ছাড়াই ওপর থেকে বিষয়টা চাপিয়ে দেওয়া হবে। যে কমিটি বানানো হল তা বিজেপি নেতা, সরকারপন্থী সদস‍্য ‘এক দেশ, এক ভোট’ আইডিয়ার পরিচিত প্রবক্তায় ভরা। ফলত কমিটির মত কী হবে তা আগেভাগেই নির্ধারিত হয়ে আছে। ইলেক্টোরাল বণ্ডের প্রবর্তন করে সরকার ইতিমধ‍্যেই নির্বাচনী তহবিলে অর্থদানের বিষয়টিকে অস্বচ্ছ ও হিসাবহীন করে দিয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে মনোনীত করার বিষয়ে যে নতুন আইনপ্রস্তাব আনা হয়েছে তা নির্বাচন কমিশনের সবরকম স্বায়ত্ত্বতা ও নিরপেক্ষতা কেড়ে নিয়ে তাকে কার্যনির্বাহী প্রশাসনের অধীনস্থ করে দেবে। এবং এবারে একসাথে সব ভোট চাপিয়ে দিয়ে মোদী সরকার নির্বাচনী প্রক্রিয়াকেই চরম বিদ্রুপে পর্যবসিত করবে।

‘এক দেশ, এক ভোট’এর সমর্থনে সরকারের মূল যুক্তি হল, এরফলে খরচ বাঁচবে আর নির্বাচনী আচরণবিধির বাধায় মাঝে মাঝেই উন্নয়নের থমকে যাওয়া গতিকে মসৃণ ও ত্বরান্বিত করবে। দুটোই অত‍্যন্ত ছেঁদো যুক্তি। ভোটখরচের সিংহভাগই করে রাজনৈতিক দলগুলি, এবং সম্পূর্ণ সন্দেহজনক উৎস থেকে পাওয়া বিপুল অর্থ খরচ করে বিজেপি দলটিই ভোটকে টাকার খেলায় পর্যবসিত করার মূল কালপ্রিট। নির্বাচনে আদর্শ আচরণবিধি (যা নতুন পলিসি বা প্রকল্প ঘোষণার ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে) কেবল ভোটবদ্ধ রাজ‍্যগুলিকে প্রভাবিত করে, দেশজুড়ে উন্নয়নের গতি ‘থমকে’ যায় না। ভোটের সময় তথাকথিত যে ব‍্যাঘাত সাময়িকভাবে ঘটে তা নোটবন্দী বা প্রলম্বিত লকডাউনের মতো ভুল পদক্ষেপের দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির তুলনায় কিছুই না।

এ’কথাও বলা হচ্ছে যে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত ভারতে লোকসভা ও বিধানসভার ভোট একসাথেই হত। কিন্তু আসল কথা হল, এরজন‍্য কোনো সাংবিধানগত সমর্থনের প্রয়োজন ছিল না, ঘটনাচক্রেই একসাথে ভোট চলে আসছিল। ১৯৬৭ সালের পর এই চলতি চক্র ভেঙে যেতে থাকে বেশ কিছু কারণে। মূল মূল কয়েকটি কারণ উল্লেখ করতে হলে বলা যায় — বেশ কিছু সরকার মেয়াদ উত্তীর্ণ করার আগেই পড়ে যাওয়ায় মধ‍্যবর্তী সময়েই নির্বাচন সংগঠিত করতে হয়, নতুন নতুন রাজ‍্য তৈরি হয়, আঞ্চলিক দলগুলির উত্থান ঘটে, জোটযুগ সামনে আসে (যা আগেকার একক পার্টি প্রাধান‍্যকে চ‍্যালেঞ্জ করে) এবং গণতন্ত্রের তৃতীয় স্তর হিসেবে স্থানীয় সংস্থাগুলির নির্বাচন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়। এখন যদিও আরেকবার সময়কে কৃত্রিমভাবে পেছনের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা চলছে, কিন্তু তথাপি এই যুগপৎ ভোটের চক্রকে চালিয়ে যেতে জনগণকে নির্বাচিত সরকার পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করে মধ‍্যবর্তীকালীন নির্বাচনের প্রবিধান লুপ্ত করতে হবে এবং রাজ‍্যগুলিতে রাষ্ট্রপতি বা রাজ‍্যপাল বা লেফটেনান্ট গভর্নরের শাসন জারি করতে হবে। ২০১৯’র ৫ আগস্ট থেকে জম্মু ও কাশ্মীরে এটাই চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। ‘এক দেশ, এক ভোট’ ফর্মুলা কি তাহলে জম্মু ও কাশ্মীরের কায়দায় সমগ্র ভারতে ক্ষমতার অতিকেন্দ্রীকতাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার অপচেষ্টা?

এ’কথা সকলেই জানেন যে মোদী সরকার সারাক্ষণই ভোটের মোডে থাকে, ভোটের রাজ‍্যগুলিতে নির্বাচনী সমাবেশে ভাষণ দেওয়টাই সর্বদা নরেন্দ্র মোদীর প্রধানতম অগ্রাধিকার থাকে। মোদী মণিপুর পরিদর্শনে যাওয়ার সময় পান না, কিন্তু কর্ণাটক থেকে মধ‍্যপ্রদেশ, মধ‍্যপ্রদেশ থেকে রাজস্থান লাফিয়ে বেড়ান ভোটসভা আর বুথ কর্মীসভায় ভাষণ দিতে, রোডশোতে হাত নাড়াতে। এখন হঠাৎ বিধাননসভা ও লোকসভা ভোটকে একসাথে জুড়ে দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে কেন? স্পষ্টতই একটার পর একটা রাজ‍্য নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার মধ‍্যে দিয়ে ক্ষমতা হারিয়ে ফেলার ভয়ের সাথে এর একটা জোরালো সম্পর্ক আছে। পরিসংখ‍্যান আপাতভাবে এটাই দেখায় যে আলাদা আলাদা ভোট হওয়ার চেয়ে বিধানসভা ও লোকসভায় একসাথে ভোট হলে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দলের জেতার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। এটাও স্পষ্ট যে ‘মোদী ফ‍্যাক্টর’ বিধানসভার চেয়ে লোকসভাতেই একটু বেশি কাজ করে। তাই ব‍্যবস্থাপনাটা বদলে দিয়ে ফায়দা তুলতে মরিয়া।

এই প্রকল্পের পেছনে অবশ‍্যই সংঘ-বিজেপির ক্ষমতা অতিকেন্দ্রীরণের এবং ভারতের বিবিধতার সংস্কৃতিকে, বহুত্ববাদী রাজনীতিকে ও যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে ক্রমাগত দুর্বল করে দেওয়ার অভিসন্ধি কাজ করছে। প্রত‍্যেক নির্বাচনের নিজস্ব প্রেক্ষিত আছে। পঞ্চায়েত ও বিধানসভা নির্বাচনে তাৎক্ষণিক স্থানীয় পরিস্থিতি প্রতিফলিত হতে বাধ‍্য এবং সংঘ-সৃষ্ট তথাকথিত ‘জাতীয় বাস্তবতা’ তা ভাসিয়ে নিতে পারে না, যদি না তার ভাঙ্গা কাঁসরের কর্কস আওয়াজ সবকিছুকে ঢেকে দেয়। সব ভোটকে এক বন্ধনীতে এনে ফেলে মোদী সরকার নির্বাচনগুলির নিজ নিজ প্রেক্ষিত কেড়ে নিতে চায় এবং জনগণের রাজনৈতিক পছন্দকে সংকুচিত করে ফেলতে চায়। মোদীর হিন্দী-হিন্দু-হিন্দুস্তান জমানার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রীয় ভারত এক প্রাণবন্ত বিরোধীপক্ষ ও দৃঢ়সংকল্প প্রতিরোধ খাড়া করতে পারে, হিন্দী বলয়ের বাইরের রাজ‍্যে রাজ‍্যে ক্রমবর্ধমান সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আলোড়নের মধ‍্যে দিয়ে যা খুবই স্পষ্ট হয়ে উঠছে (এবং হিন্দী বলয়ের অভ‍্যন্তরেও তা বেড়ে চলেছে)। ‘এক দেশ, এক ভোট’ এই আলোড়নগুলিকে খর্ব করার এবং গণতান্ত্রিক ভারতকে ফ‍্যাসিবাদী শাসনের রাজকীয় ছকে আনার ফর্মুলা। ক্ষমতাপ্রাপ্ত স্বাধীন নাগরিককে অনুগত প্রজার স্তরে নামিয়ে আনতে, ভারতকে ফ‍্যাসিবাদের নাগপাশে বেঁধে দাস বানাতে, আইন, শাসন ও সাংবিধানিক কাঠামোর ক্ষেত্রে যে বহুবিধ প্রচেষ্টা ওরা চালাচ্ছে তারই অঙ্গ এই ছক। যেকোনো উপায়ে এই ছককে আটকাতে হবে ভারতকে।

- এমএল আপডেট সম্পাদকীয়, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩

seven-by-electionsonly-one-indication

৫ সেপ্টেম্বরের উপনির্বাচনগুলির ফলাফল সামনে এসে গেছে। ওপর থেকে দেখলে আপাত কোনো পরিবর্তন নাই — এনডিএ — ৩, ইন্ডিয়া — ৪। কিন্তু একটু গভীরে নজর দিলেই বোঝা যাচ্ছে যে ভেতরে ভেতরে অনেক কিছু বদলে গেছে। সবচেয়ে বড় পরিবর্তনটা ঘটেছে ইউপিতে, যে রাজ‍্য লোকসভায় সবচেয়ে বেশি সংখ‍্যক সদস‍্য পাঠায়।

ঘোসি উপনির্বাচন কোনো মৃত‍্যুজনিত কারণে ঘটেনি, ঘটেছে দলত‍্যাগের কারণে। সমাজবাদী পার্টির পূর্বতন এমএলএ দলত‍্যাগ করে বিজেপিতে যোগ দেন এবং বিজেপির টিকিটে পুনর্নির্বাচিত হতে মাঠে নামেন। মোদী-শাহ-যোগীর ‘ডাবল ইঞ্জিন’ ব‍্যবস্থাপনার সমগ্র পরাক্রম তাঁর পেছনে ছিল। বিজেপিকে হারিয়ে দিয়ে ঘোসির জনতা সর্বশক্তিমান যোগী শাসনকেই পরাস্ত করেছে। এবং পরাজিত করার বিপুল মার্জিন এই বার্তাটিকেই আরো সোচ্চার করেছে।

ঝাড়খণ্ডের ডুমরিতেও লড়াই ছিল কঠিন ও তীব্র। ২০১৯ সালে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার (জেএমএম) প্রখ‍্যাত নেতা জগন্নাথ মাহাতো সহজেই জয় নিশ্চিত করতে পেরেছিলেন কারণ বিজেপি ও আজসু আলাদা আলাদা লড়েছিল। এবারে আজসুর পেছনে সর্বশক্তি নিয়ে ছিল বিজেপি, যারা আবার বাবুলাল মারাণ্ডির নেতৃত্বে চলা পূর্বতন জেভিএম’এর পূর্ণ সমর্থন ভোগ করে। এই পরিস্থিতি বিবেচনা করে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী-লেনিনবাদী) লিবারেশনের গিরিডি জেলা ইউনিট জেএমএম’এর সমর্থনে নির্বাচনী প্রচার অভিযানে সর্বশক্তি নিয়ে যোগ দেয়। বিজেপি-আজসু যুগলের পরাজয়কে তাই ঝাড়খণ্ডে সমগ্র ইন্ডিয়া শিবিরেরই লক্ষ‍্যভেদ বলা চলে।

পশ্চিমবঙ্গের ধূপগুড়ি উপনির্বাচনের দিকেও নজর করা যাক। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ‍্যে দিয়ে বিজেপিকে পরাস্ত করতে সক্ষম হয়েছে টিএমসি। ২০২১’র নির্বাচনে বিজেপি উত্তরবঙ্গে ঝড় তুলে জিতেছিল, কিন্তু হাওয়া এবারে ঘুরতে শুরু করেছে বলে মনে হয়।

- দীপঙ্কর ভট্টাচার্য, সাধারণ সম্পাদক, সিপিআই(এমএল) লিবারেশন

regarding-banglaregarding-bangla
২৯ আগস্ট সর্বদলীয় বৈঠকের পরবর্তী কার্যক্রম সম্পর্কে সিপিআই(এমএল) লিবারেশন প্রেরিত প্রস্তাব

বৈঠকে অংশগ্রহণকারী সকলেই একমত হয়েছিলেন যে ১৯৪৭ সালের ২০ জুন — যেদিন দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে বাংলাভাগের সিদ্ধান্ত বিধানসভায় গৃহীত হয়েছিল — বাংলার ইতিহাসে একটি কলঙ্কিত বেদনার দিন। যেসব সাম্প্রদায়িক শক্তির প্ররোচনায় দেশভাগের প্রাক্কালে বঙ্গভঙ্গ ঘটেছিল, তাদেরই প্রধান উত্তরসূরি বিজেপি আজ অতীতের ধর্মভিত্তিক সংঘাতের ইতিহাসকে খুঁচিয়ে তুলতে চাইছে। সেজন্য তারা ২০২১ সাল থেকে ১৪ আগস্ট ‘দেশভাগের বিভীষিকা দিবস’ পালন করতে শুরু করেছে, যাতে সেই দগদগে ক্ষত জিইয়ে রেখে নতুন করে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ চাগিয়ে তোলা যায়। আর এবছর থেকে বাংলার রাজ্যপালের মাধ্যমে ঐ কলঙ্কিত ২০ জুনকে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ হিসাবে পালন শুরু করছে। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে ভারত তথাবাংলার বুকে সাম্প্রদায়িক উন্মাদনা তৈরি করার এটি এক ঘৃণ্য ফ্যাসিবাদী কৌশল। আমরা বিশ্বাস করি, এ’রাজ্যের সমস্ত ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক দল ও সংস্থা, প্রতিটি শুভবুদ্ধি সম্পন্ন নাগরিক, বিশেষত যুব সম্প্রদায় সম্মিলিতভাবে মোদী-শাহদের এই ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দেবেন।

এই লক্ষ্যে আমরা ক্ষতলাঞ্ছিত ইতিহাসের আস্তাকুঁড় থেকে তুলে আনা বিভাজনের চিহ্নবাহী ২০ জুনের পরিবর্তে ১৬ অক্টোবর সম্প্রীতি দিবস বা মৈত্রী দিবস রূপে পালন করার প্রস্তাব রাখছি। ১৯০৫ সালে এই দিনটিতে লর্ড কার্জনের চাপিয়ে দেওয়া বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে কলকাতায় রবীন্দ্রনাথের নেতৃত্বে এক অভিনব সম্প্রীতি শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। রাখি বন্ধনের প্রচলিত তারিখ ও প্রথা অনুসরণ না করে সেদিন হিন্দু মুসলমানের হাতে, উঁচু জাতের মানুষ শ্মশান-সেবকদের হাতে ভ্রাতৃত্ব ও মৈত্রীর রাখি পরিয়ে দিয়েছিলেন। এখানে কোন ধর্মছিল না, ছিল কেবল শাসকের বিভাজন নীতির প্রতিবাদ আর নিজেরা বেঁধে বেঁধে থাকার সংকল্প। ঐদিন অপরাহ্নে কলকাতা টাউন হলে এক ভাবগম্ভীর সভায় ঘোষিত হল একই প্রতিবাদী সংকল্প। এই প্রতিবাদ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল, যার চাপে শেষ পর্যন্ত উদ্ধত ইংরেজকে মাথা নিচু করে বঙ্গভঙ্গ প্রত্যাহার করে নিতে হয়েছিল।

বাংলা সেদিন গর্জে উঠেছিল প্রশাসনিক বিভাজনের বিরুদ্ধে, আজ আমাদের লড়তে হবে আরো সাংঘাতিক সাম্প্রদায়িক বিভাজনের বিরুদ্ধে। শতাধিক বছর পেরিয়ে এসে আমরা আজ সেদিনের ঐতিহ্যকে নিছক অনুকরণ করব না — বিকশিত করব, আরো এগিয়ে নিয়ে যাব। আসুন, এবছর থেকে প্রতিটি ১৬ অক্টোবর আমরা জাত ধর্ম লিঙ্গ ভাষা বিচার না করে সমস্ত বঙ্গবাসী মৈত্রী বন্ধনে এক হই, ব্যর্থ করে দিই বিজেপির ‘ভাগ করে শাসন করো’ কৌশল।

- পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি, সিপিআই(এমএল) লিবারেশন

coordination-committee-meetingmeeting-of-india-alliance
ঘৃণা প্রচারকারী অ্যাংকরদের বয়কটের ডাক

ইন্ডিয়া জোটের সমন্বয় সমিতির প্রথম বৈঠকে টিএমসির প্রতিনিধি অভিষেক ব্যানার্জির অনুপস্থিতির প্রসঙ্গে তাঁকে ইডি দপ্তরে ডাকাকে বিজেপির প্রতিহিংসার রাজনীতি বলে অভিহিত করা হয়। যত সত্বর শরিক দলগুলি নিজেদের মধ্যে আসন সমঝোতার কথাবার্তা শুরু করবে। দেশের বিভিন্ন অংশে যৌথ জনসভা সংগঠিত করা হবে। প্রথম জনসভা হবে ভোপালে, যেখানে মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব ও বিজেপি সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রচার কেন্দ্রীভূত করা হবে। কাস্ট সেন্সাস অর্থাৎ জাতজনগণনার বিষয়টি তুলে ধরতে সকলে সম্মত হয়। সমন্বয় সমিতি তার মিডিয়া উপসমিতিকে দায়িত্ব দেয় কোন কোন মিডিয়া অ্যাংকরের প্রোগ্রামে ইন্ডিয়া জোটের শরিক দলগুলি নিজেদের প্রতিনিধি পাঠাবে না তা ঠিক করার।

ইন্ডিয়া জোটের মিডিয়া উপসমিতি বেশ কিছু অ্যাংকারদের নামের তালিকা নির্দিষ্ট করে যারা টিভি চ্যানেলে নিয়মিত হিংসা বিদ্বেষ ও মিথ্যা প্রচার করে। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিজেপি আরএসএস যথারীতি তাদের অপপ্রচার শুরু করেছে। এই প্রসঙ্গে সিপিআই(এমএল) সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের মন্তব্য (ভাষান্তরে), 

গোদি মিডিয়ার নির্দিষ্ট কিছু অ্যাংকারকে বয়কট করার সিদ্ধান্ত এসেছে মূলত এই জন্য যে এই অ্যাংকারেরা ধারাবাহিকভাবে বিদ্বেষ ও মিথ্যা ছড়াতে অভ্যস্ত। বয়কট এই কারণে করা হয়নি যে তাঁরা অ-বিজেপি দলগুলির প্রতি ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’ নন। এটা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাকে খর্ব করা নয়। এটা হল এক মুক্ত সাধারণতন্ত্রে মুক্ত সংবাদমাধ্যমের জন্য লড়াই। সংঘবাহিনী ও গোদি মিডিয়ার সমস্বর প্রচার সম্পর্কে সতর্ক থাকুন। ওরা এই ইস্যুটিকে ধূর্ততার সাথে ঘুরিয়ে দিয়ে হেঁটমুণ্ডু ঊর্ধ্বপাদ করে দিতে চায়।

প্রকৃত ইস্যুগুলিকে ঘুলিয়ে দিয়ে ফালতু বিতর্ক তৈরি করে বিষয়গুলোকে উল্টে দেওয়াটা ফ্যাসিবাদী প্রোপাগান্ডার বরাবরের কৌশল। ইন্ডিয়া বনাম ভারত করেও ওরা এরকম ঝুটা বিতর্ক চাগাতে চেয়েছে, বিরোধীপক্ষকে অভিযুক্ত করেছে যে তারা ‘ভারত’-এ ভয় পায়। অথচ দেখা গেল যে পুরো বিষয়টা হল, সংঘ ব্রিগেডের ‘ইন্ডিয়া’ শব্দেই ভীষণ আপত্তি যে ইন্ডিয়া হল আমাদের দেশের সাংবিধানিকভাবে ঘোষিত ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত নাম যা ভারত নামের পাশাপাশি ও সমার্থকরূপে বরাবর ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

আসল বিষয়টা ঘুলিয়ে দেওয়ার আরেকটা উদাহরণ হল, ওরা সামাজিক সমতা ও জাতের বিনাশের সমগ্র প্রকল্পটিকেই হিন্দু-বিরোধী ষড়যন্ত্র বলে প্রচার চালাচ্ছে। জাত ব্যবস্থা এবং তাকে আশ্রয় করে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাওয়া বহুবিধ অবিচারের প্রশ্নে স্পষ্টভাবে নিজের মত প্রকাশ করার বদলে ওরা “হিন্দু খতরে মেঁ হ্যায়” বোতাম টিপছে। ঘটনাচক্রে একই সময়ে মোহন ভাগবত এখন স্বীকার করলেন যে জাত ব্যবস্থার নিপীড়ণ ২০০০ বছরের পুরানো। এটা স্বীকার করে তিনি আরএসএস-এর এত দীর্ঘ দিনকার প্রচারণা থেকে সরে এলেন যা প্রচার করত যে জাত ব্যবস্থা আসলে মুঘল যুগের বিকৃতি যা ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসনে নতুন করে শক্তিশালী হয়।

10-years-of-modi-government

project-workers

দেশজুড়ে জোরদার আন্দোলন করে নিজেদের অধিকার ছিনিয়ে আনার অঙ্গীকার ঘোষিত হল স্কিম ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের প্রথম জাতীয় সম্মেলনে

৯-১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ পাটনার গেট পাবলিক লাইব্রেরীর সুবিশাল মঞ্চ সাক্ষী হয়ে থাকলো ভারতবর্ষের শ্রমিক আন্দোলনের এক নতুন দিক হিসাবে। এই শতাব্দীতে শ্রমিক আন্দোলনের নতুন শক্তি হিসেবে মিড-ডে-মিল, আশা, অঙ্গনওয়ারীর সাথে যুক্ত প্রধানত এক কোটি মহিলা কর্মীদের আগামী দিনে এগিয়ে চলার দৃপ্ত অঙ্গীকার শোনা গেল সম্মেলনে।

শিক্ষা, স্বাস্থ্যের মতো বুনিয়াদী ক্ষেত্রে এই বিপুল সংখ্যক কর্মীদের গত ২ দশক ধরে প্রায় বেগার শ্রমিক হিসেবে মোদী সরকার যেভাবে কাজ করিয়ে চলেছেন, তার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মীর স্বীকৃতি, ন্যূনতম মজুরি ও সামাজিক সুরক্ষা আদায়ের দাবিতে ইতিমধ্যেই গত এক দশক ধরে রাজ্যে রাজ্যে কর্মীরা লড়ছেন। রাজ্যভিত্তিক কিছু দাবি আদায়েও সফল হয়েছেন। বিহারের আশা কর্মীদের ঐতিহাসিক ধর্মঘট ও জয়লাভ ছাড়াও উত্তরাখন্ড, আসাম, মহারাষ্ট্রে মজুরি বৃদ্ধির দাবি আদায়ে তারা সফল হয়েছেন। সম্প্রতি ঝাড়খণ্ডের মিড-ডে-মিল কর্মীরাও তাদের মজুরি দ্বিগুণ (৩০০০ টাকা) আদায় করতে সক্ষম হন এবং ১০ মাসের বদলে ১২ মাসের জন্য তা বরাদ্দ করাতে পেরেছেন।

সম্মেলনের উদ্বোধনে সিপিআই(এমএল) লিবারেশন সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য স্কিমকর্মীদের এই লড়াইকে ঐতিহাসিক এবং ভারতীয় সমাজের বুনিয়াদী পরিবর্তনের ইঙ্গিত বলেন। তিনি আরো বলেন, আজ যখন মহিলাদের মর্যাদা ও সম্মান আক্রান্ত, তখন এই লড়াই তার বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরোধ। সারা দেশের শ্রমিক, গ্রামীণ মজুর সর্বোপরি সিপিআই(এমএল) পার্টি এই লড়াইকে পূর্ণ সহযোগিতা করবে।

স্কিম ওয়ার্কার্স ফেডারেশন গঠনের উদ্যোক্তা কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন এআইসিসিটিইউ’র সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক রাজীব ডিমরি স্বাগত ভাষণে বলেন, এ এক ঐতিহাসিক সম্মেলন। সাম্প্রতিক শ্রমিক আন্দোলন ও দেশব্যাপী শ্রমিক ধর্মঘটগুলিতে স্কিমকর্মীদের অংশ গ্রহণ এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। সারা দেশে ট্রেড ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ কাঁধে কাঁধ রেখে এই লড়াইয়ে সামিল হচ্ছেন। তিনি আরো বলেন, স্কিমকর্মীদের প্রতি মোদী সরকারের বেইমানি, ও বঞ্চনার জবাব আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে মোদী সরকারকে উৎখাতের মধ্যে দিয়ে করতে হবে। এআইসিসিটিইউ’র সর্বভারতীয় সভাপতি ভি শংকর স্কিমকর্মীদের অভিনন্দিত করেন। তাঁদের দাবি পূরণে এআইসিসিটিইউ যে অঙ্গীকারবদ্ধ, তা উল্লেখ করেন।

plight-of-project-workers

১০টি রাজ্যের ৪৫০ জনের অধিক মিড-ডে-মিল, অঙ্গনওয়ারী ও আশা আন্দোলনের প্রতিনিধি অংশ নেন। রাজ্যে রাজ্যে তাদের লড়াই ও বিজয়ের জন্য অঙ্গীকার প্রতিনিধিদের ভাষণে উঠে আসে। নিঃস্ব, দরিদ্র মহিলারাও যে সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে সরকারকে তাঁদের দাবি মানাতে বাধ্য করতে পারে, তা প্রতিনিধিদের ভাষণে উঠে এলো।

সম্মেলন সর্বসম্মত ভাবে পশ্চিমবঙ্গের ৪ সদস্য সহ ৪৫ জনের জাতীয় কার্যকরী কমিটি নির্বাচিত করে। ১৩ জনের অফিস বেয়ারার নির্বাচিত হন। যার সম্মানীয় সভানেত্রী সরোজ চৌবে ও সভাপতি রামবলী যাদব, কার্যকরী সভানেত্রী গীতা মন্ডল, ৫ জন সহ সভানেত্রী যার অন্যতম পশ্চিমবাংলার জয়শ্রী দাস, সাধারণ সম্পাদিকা শশী যাদব এবং ৫ জন সহ-সম্পাদিকা সহ একজন কোষাধ্যক্ষ নির্বাচিত হন। এরাজ্য থেকে নির্বাচিত ৪ জন জাতীয় কার্যকরী সদস্যরা হলেন, জয়শ্রী দাস, শীলা দে সরকার, আবুল কাশেম শেখ ও সঞ্জীব চক্রবর্তী।

এই সম্মেলন আসন্ন মাসগুলোতে দেশজোড়া এক শক্তিশালী সংগঠন ও আন্দোলন গড়ে তুলতে ৮ দফা প্রস্তাব গ্রহণ করে। নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক শশী যাদব বলেন করোনাকালে যখন গোটা দেশ ঘরবন্দি, তখন এই স্কিমকর্মীরাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশ ও জনতার সেবা করে গেছেন। এদের প্রতি মোদী সরকার বিন্দুমাত্র সংবেদনশীল ছিল না।

সম্মেলনে গৃহীত রাজনৈতিক প্রস্তাব সমূহ।

১) দেশজুড়ে দীর্ঘ বছর কর্মরত এক কোটির অধিক আশা, অঙ্গনওয়ারী, মিড-ডে-মিল মহিলা কর্মী ন্যূনতম মজুরি ও সামাজিক সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত, এই সম্মেলন দাবি জানাচ্ছে — সমস্ত প্রকল্প কর্মীদের সরকারি কর্মীর স্বীকৃতি দাও, সরকারি কর্মীর বেতন ও সামাজিক সুরক্ষা যথা ইপিএফ, ইএসআই, গ্রাচুইটি দাও। এই দাবি নিয়ে অক্টোবর ও নভেম্বর ২০২৩ দেশজুড়ে প্রচার অভিযান করা হবে।

২) দেশব্যাপী প্রচার অভিযান শেষে দিল্লী সংসদ ভবন অভিযান হবে।

৩) দেশজুড়ে প্রকল্প কর্মীদের সংগঠনকে আরো মজবুত করে তোলার আহ্বান জানানো হয়।

৪) অন্যান্য সংগঠনগুলির সংগঠনের সাথে আলোচনা করে দেশব্যাপী একদিনের ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হবে।

৫) দেশের এক কোটির অধিক প্রকল্প কর্মীর উপর মোদী সরকারের উদাসীনতার বিরুদ্ধে আগামী লোকসভা নির্বাচনে (২০২৪) কর্মীরা সরকারের বিরুদ্ধে সক্রিয় প্রচার করবে এবং উচিৎ শিক্ষা দেবে।

৬) দেশব্যাপী মহিলাদের সম্মান ও সুরক্ষার উপর হামলা এবং কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি ও সম্মান হানির মতো ঘটনায় সম্মেলন গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে। মণিপুরের মহিলাদের এবং মহিলা কুস্তিগীরদের সম্মান রক্ষার আন্দোলনের প্রতি সম্মেলন পূর্ণ সংহতি জানায়।

৭) সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা ও কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন সমূহের যুক্ত আহ্বানে ২৬-২৯ নভেম্বর ২০২৩ নয়াদিল্লীর কেন্দ্রীয় বিক্ষোভ সফল করার আহ্বান জানানো হয়।

৮) সম্মেলন উত্তরপ্রদেশ ও হরিয়ানায় চলা আশা কর্মীদের আন্দোলনের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানায়।

jadavpur-university-studentsnew-vice-chancellor

স্বপ্নদীপের মৃত্যুর পর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আভ্যন্তরীণ কমিটি গঠন হয়েছিল তার রিপোর্ট জমা পড়ার পর সেই অনুযায়ি কিছু পদক্ষেপ নেওয়া শুরু হয়। গত ২১ আগস্টের একটি মিটিংয়ের রেসোলিউশন সম্প্রতি সামনে এলে দেখা যায়, আগের রেগিং-বিরোধী কমিটিতে আরো কিছু মেম্বার যুক্ত করে ৩৩ জনের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিতে দুটি এনজিও’র সদস্য এবং যাদবপুর থানার ওসিকেও যুক্ত করা হয়েছে। ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে আর্টস ফ্যাকাল্টি স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (আফসু)’র একজন প্রতিনিধি ও প্রথম বর্ষের দুই ছাত্রকে কমিটিতে রাখা হয়েছে। ক্যাম্পাসের কিছু জায়গায় সিসিটিভি লাগানোর এবং ক্যাম্পাসে সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে প্রাক্তন সেনা ও পুলিশকর্মীদের নিয়োগ করার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে।

এই মিটিং ও তার রেজোলিউশনকে ঘিরে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিক্ষোভ ছড়ায়। এই মিটিংয়ে সায়েন্স ফ্যাকাল্টি স্টুডেন্টস ইউনিয়িন (এসএফএসইউ) ও ফ্যাকাল্টি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনলজি স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (ফেটসু)’র কোনো প্রতিনিধিকে ডাকা হয়নি। ডাকা হয় নি বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনগুলিকেও। এই মিটিংয়ের খবর সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআই ছাড়া ক্যাম্পাসের অন্য কোনো সংগঠনের কাছেই ছিল না। ২০১৯ সালে স্টুডেন্টস ইউনিয়নের সর্বশেষ নির্বাচন হওয়ায় ইউনিয়ন এখন অকার্যকরী হয়ে আছে। সেখানে আফসু থেকে প্রতিনিধি যেতে হলে সেটা সাধারণ সভার মাধ্যমে নির্ধারণ করার কথা। কিন্তু এক্ষেত্রে সেটা হয়নি। এমনকি মিটিংয়ের মিনিটসে উপরের সিদ্ধান্তগুলি নিয়ে আফসুর কোনো বিরোধ বা ‘নোট অব ডিসেন্ট’-ও নেই।

অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (আইসা) জেইউ ইউনিটের সেক্রেটরি বর্ষা বড়াল ও প্রেসিডেন্ট সায়নি সাহার জারি করা এক প্রেস বিবৃতিতে বলা হয়,

বর্তমান পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে ছাত্রছাত্রীদের বিরুদ্ধে যে মিডিয়া ট্রায়াল চলে তাকে নিন্দা করে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে কলুষিত করার উদ্দেশ্যকে নিন্দা করে ভিসিকে প্রেসে একটি বক্তব্য প্রকাশ করতে বলা হয়েছিল সংশ্লিষ্ট সর্বপক্ষ (অল স্টেক হোল্ডার্স) -এর বিগত মিটিঙে। এই সিদ্বান্ত ভিসি, প্রোভিসি এবং কর্তৃপক্ষের অন্যান্য সদস্যদের উপস্থিতিতে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু উল্লিখিত মিটিং শেষ হওয়ার ঠিক পরের মুহূর্তেই ভিসি বাইরে এসে মিডিয়ার সামনে বক্তব্য রাখেন যে, ওনাকে নাকি ছাত্রছাত্রীরা জোর করে এই বক্তব্য রাখতে বলেছে। ওই মিটিংএ নেওয়া সিদ্বান্তকে চাপা দেওয়ার জন্য তিনি মিথ্যে বলেন মিডিয়ার সামনে।

কিছুদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মধ্যে সেনার পোষাক পরিহিত ২০ জন ঢুকে পড়ার যে ঘটনায় চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছিল তার পেছনে থাকা ‘এশিয়ান পিস কিপিং সোসাইটি’ নামে সংগঠনের সভায় যাদবপুরের ভিসি স্বয়ং উপস্থিত ছিলেন বলে জানিয়েছে আইসার বিবৃতি। আইসা এই ঘটনাকে ‘আতঙ্কজনক’ বলে অভিহিত করেছে। বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ভিসি বুদ্ধদেব সাউ পড়ুয়াদের উদ্দেশ্যে কটূক্তি করেন এবং সমস্ত বিষয়ে অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রবণতা দেখান যা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল পরিসরকে সংকীর্ণ করে তুলছে এবং ভিসির ব্যক্তিগত সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট থেকে আরও জানা যায় যে তিনি এসসিএসটিদের সংরক্ষণের অধিকারের বিরোধী, নারী-বিদ্বেষী, হোমোফোবিক।

প্রথম থেকেই অ্যান্টি ৠাগিং সেলে নির্বাচিত প্রতিনিধি রাখার দাবি জানানোর পরেও কোন ভিত্তিতে দুজন পড়ুয়াকে নির্বাচন ছাড়াই ওই কমিটিতে রাখা হল সে প্রশ্ন তুলেছে আইসা। ২১ আগস্টের মিটিং ও সিদ্ধান্ত সম্পর্কে আফসু সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ধোঁয়াশায় রেখেছিল কেন সে প্রশ্নও উঠেছে। ফ্যাসিস্ট শক্তির আক্রমণের মুখে দাঁড়িয়ে ছাত্রছাত্রীদের ঐক্য অটুট রাখতে সবরকম প্রচেষ্টা আইসা চালিয়ে যাবে বলে জানিয়েছে।

farmers-commit-suicidesuicide-in-maharashtra
কৃষি প্রতিমন্ত্রীর জেলা রয়েছে শীর্ষস্থানে

এবছর ৩১ অগস্ট পর্যন্ত মহারাষ্ট্রের মারাঠাওয়াড়া অঞ্চলে ৬৮৫ চাষি আত্মঘাতী হয়েছেন। সরকারি রিপোর্ট থেকেই জানা যাচ্ছে, সবচেয়ে বেশি চাষি আত্মঘাতী হয়েছেন বিড জেলায়, যেখানে এই সময়ে ১৮৬ জন চাষি আত্মঘাতী হয়েছেন। ধনঞ্জয় মুন্ডে হলেন বর্তমান রাজ্য মন্ত্রীসভার কৃষি প্রতিমন্ত্রী, যিনি এই জেলারই বাসিন্দা!

ধনঞ্জয় মুন্ডে হলেন ‘বিদ্রোহী’ এনসিপি’র এক নেতা, যিনি ২ জুলাই বিজেপি-একনাথ শিন্ডের সাথে যোগ দেওয়ার পর ওই প্রতিমন্ত্রীর পদ পান।

ডিভিশনাল কমিশনারের পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক রিপোর্ট থেকে জানা যায়, বিড’এর পর অন্যান্য যে জেলাগুলোতে চাষিরা আত্মঘাতী হয়েছেন, সেগুলো হল, ওসমানাবাদ (১১৩), নান্দেদ (১১০), ঔরাঙ্গাবাদ (৯৫), পরভানি (৫৮), লাতুর (৫১), জালনা (৫০), হিঙ্গোলি (২২)। উক্ত রিপোর্ট থেকে জানা যায়, ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ আগস্টের মধ্যে মাত্র তিন বর্ষাকালীন মাসে, জুন থেকে আগস্টে, ২৯৪ জন চাষি আত্মঘাতী হয়েছেন।

বর্তমানে, মারাঠাওয়াড়া অঞ্চলটি অপ্রতুল বর্ষার কবলে। সেখানে ২০.৭ শতাংশ বৃষ্টির ঘাটতি চলছে। গোটা অঞ্চলে এরফলে তীব্র সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।

bidi-sramik-unionsramik-union-in-dhubri

১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ধুবুলিয়ায় বিড়ি শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। অংশগ্রহণকারীরা সকলেই মহিলা শ্রমিক। ন্যায্য মজুরি বা সামাজিক সুরক্ষা থেকে ওরা বঞ্চিত। রাজ্য সরকার বিড়ি শ্রমিকদের পূর্বেকার সমস্ত প্রকল্পগুলি বন্ধ করে দিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার ই-শ্রম কার্ড করেছে। সম্প্রতি সেই কার্ড এবং বিড়ি শ্রমিক কার্ড বিড়ি ওয়েলফেয়ার বোর্ড জমা নিচ্ছে। হাজার হাজার মহিলা বিড়ি শ্রমিকরা লাইন দিয়ে সেগুলি জমা দিচ্ছেন। কিন্তু সেখানকার আধিকারিকরা জানালেন এই কাগজ জমা দিয়ে আদৌ কোনো সুযোগ সুবিধা পাওয়া যাবে কিনা জানা নেই। এইভাবে বিড়ি শ্রমিকদের সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে মোদী সরকার প্রতারণা করে চলেছে।

বৈঠকে এলাকায় বিড়ি শ্রমিকদের দাবিগুলি যথা তুচ্ছ কারণে ছাঁটাই করে দেওয়া, দুর্ব্যবহার করা এগুলি আলোচনায় উঠে আসে। এছাড়া পিএফ ও বোনাসের দাবিও শ্রমিকরা বলেন।

১১ জনের এক কমিটি গঠন করা হয়। সম্পাদিকা — বেলা নন্দী, সহ-সম্পাদিকা — রুমা পাল, সভানেত্রী — লতিকা দাস।

কমিটি সদস্যরা আসন্ন এআইসিসিটিইউ জেলা সম্মেলনে প্রতিনিধি হবেন।

বৈঠকে উপস্থিত এ্যাপোয়া জেলা সম্পাদিকা অপু কবিরাজ আগামী মহিলা জাতীয় সম্মেলন সম্পর্কে আলোচনা করেন। মিটিংয়ে অংশ নেন এআইসিসিটিইউ জেলা সম্পাদক জীবন কবিরাজ।

journey-from-gangotrigangotri-to-the-sea

১০ থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত নদী বাঁচাও অভিযান কর্মসূচির অঙ্গ হিসাবে ১১ সেপ্টেম্বর থেকে বজবজে এক কর্মসূচি পালিত হয়। প্যালেস স্টার মোড় থেকে মিছিল শুরু হয়ে বজবজ ফেরীঘাট ‘কালিবাড়ি’তে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। গঙ্গোত্রীর সন্নিকট ভারতের শেষ প্রান্তে যোশীমঠ বাঁচাও সংঘর্ষ সমিতির আহ্বায়ক অতুল শতি, ছত্রিশগড়ের গৌতমবাবু, বাংলার পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের অক্লান্ত সংগঠক তাপস দাস, থার্ড প্ল্যানেট, বজবজ মহেশতলা নেচার স্টাডি সেন্টার, নদী বাঁচাও জীবন বাঁচাও, যুব ভারত, সিপিআই(এমএল) লিবারেশন ও গঙ্গা প্রেমিক সাথীরা নদী ও পরিবেশ বাঁচাতে একসাথে পথ চললো।

আইপিসিসি বা পরিবেশ সংক্রান্ত বিশ্ব স্তরের বৈঠকগুলোর যে রির্পোট প্রকাশিত হচ্ছে তা ভয়ঙ্কর। প্রকৃতি মানুষ সহ সব জীবজন্তুর উপযোগী এই গ্রহকে গড়ে তুলতে অকৃপণ হাতে সাজিয়েছিল। মানুষরূপী একদল মুনাফাখোরের স্বার্থে পৃথিবী দ্রুত গতিতে শেষ হওয়ার দিকে এগিয়ে চলেছে। বিশেষ করে ৯০’র দশকে সমস্ত সমস্যার সমাধান বিশ্বায়ন, বিশ্বায়ন, একমাত্র বিশ্বায়নে আছে, এই শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত। কল্যাণকর নয়, বাজার অর্থনীতিই আমাদের বেঁচে থাকার একমাত্র পথ। বাজার অর্থনীতিকে উন্নয়নের চাদরে ঢেকে আমাদের নয় — আমার আরো চাই, আর এই আরো চাই এর দর্শনে গোটা সমাজকে গ্রাস করতে থাকল। লোহা গরম থাকতে থাকতে হাতুড়ি পেটাতে হয়। আরো চাই আর উন্নয়নের মিশেল যখন মানুষকে মোহিত করে চলেছে, ঠিক তখনই সবুজে ভরা তৃতীয় বিশ্বের বুক চিরে ছুটতে থাকলো কর্পোরেটদের বুলডোজার। ব্রাজিলের এ্যামাজন জঙ্গল থেকে গঙ্গার উৎসস্থলের নিকটে একাধিক জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তুলতে নদী বাঁধ দেওয়া, চারধামের পূণ্যি নিতে পাহাড় কেটে চার লেনের রাস্তা নির্মাণ, হিমালয়ের পাদদেশে গাড়োয়াল, কুমায়ুন ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া। চারদিকে জল-জঙ্গল-জমি লুঠ করে, ভেল্কি বাজির মতো ঝা চকচকে নগরায়ন গড়ে উঠল। চারদিক কংক্রিটের জঙ্গল। জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হতে থাকল। এই নির্মাণ কান্ডে অল্প সময় অতিমুনাফা। তাই দ্রুত অতিমুনাফার লক্ষ্যে দুর্বল চিত্তের ভদ্রলোকের দরকার নেই। চাই লৌহমানব। যে দল বা মানুষটি সিদ্ধান্তকে কার্যকরী করতে সমস্ত কাঁটা অতিদ্রুত নিকেষ করতে নির্মমতম পথ অবলম্বনে কুণ্ঠাবোধ করে না। সেই রকম ৫৬ ইঞ্চি ওয়ালা মোদীকে ক্ষমতায় আনতে কর্পোরেটরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল, সাথ দিয়েছিল উচ্চ বেতনভুকরা, আর দিশাহারা, বিভ্রান্ত, হতদরিদ্র মানুষের একটা অংশ।

প্রকৃতির এই অবাধ লুন্ঠনে, প্রকৃতি মুচকি হাসছে। প্রকৃতির অবাধ লুন্ঠন তো মানুষ সহ জীবকুলের শ্মশান যাত্রা। পাশ্চাত্যের সাম্রাজ্যবাদী শীতপ্রধান দেশগুলোর কোথাও কোথাও ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা উঠে যাওয়ায় আমাদের দেশের মত অনেকে পথ চলতে চলতে জল দিয়ে সারা শরীরে ভিজিয়ে নিচ্ছে। অর্থাৎ গ্লোবাল ওয়ার্মিং যুগ পেরিয়ে গ্লোবাল বয়েলিং যুগে প্রবেশ করছি। জনবিরোধী, পরিবেশ বিরোধী উন্নয়নের অশ্বমেধের এই ঘোড়াকে এখনি রুখতে না পারলে এ গ্রহ দ্রুত জীবকূলের বাসের অযোগ্য হয়ে যাবে। তাই এই কঠিন লড়াই শুধুমাত্র পরিবেশকর্মী, বিজ্ঞান কর্মীদের লড়াইয়ে জয়ী হওয়া যাবে না। এই গ্রহকে জীবকূলের বাসযোগ্য রাখতে পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন, বিজ্ঞান আন্দোলন, সমাজের সমস্ত স্তরের মানুষ ও প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক, বামপন্থী আন্দোলনের রাজনৈতিক কর্মীদের অংশগ্রহণ একান্ত দরকার। তাই ১০-২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ পরিবেশ রক্ষায় যে কর্মসূচি চলছে তাকে সফল করুন। যা আগামী প্রজন্মকে পথ দেখাবে।

- কিশোর সরকার

workers-convention-demanding

new-pension-scheme

১০ সেপ্টেম্বর  ২০২৩ চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ ওয়ার্কস  রেলওয়ে এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের আহ্বানে পুরানো পেনশন স্কীম লাগু এবং নতুন পেনশন স্কীম বাতিল করার দাবিতে কনভেনশন সংগঠিত হয়। প্রধান বক্তা ছিলেন ফ্রন্ট এগেনস্ট নিউ পেনশন স্কীম ফর রেলওয়েজ ‘এফএনএসআরপি’এর সর্বভারতীয় প্রেসিডেন্ট অমৃক সিং। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন কানপুর থেকে প্রতিরক্ষা বিভাগের প্রেমসাগর, চিত্তরঞ্জন লোকোমটিভ ওয়ার্স থেকে মৌমিতা কর্মকার, সম্পাদক সুভাষ চ্যাটার্জি এবং কার্যকরী সভাপতি প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী ১ অক্টোবর ২০২৩ দিল্লীর রামলীলা ময়দানে নয়া পেনশন স্কীম বাতিলের দাবিতে যে সমাবেশ হতে চলেছে তাকে সফল করে তুলতে সার্বিক উদ্যোগের শপথ নেওয়ার হয়।

ওই একই দাবিতে, ১১ সেপ্টেম্বর কাশিপুর গান অ্যান্ড শেল ফ্যাক্টরির ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন জিএসএফ রিক্রিয়েশন ক্লাবের প্রাঙ্গনে এক সফল কনভেনশন সংগঠিত করে। অনুপ মজুমদারের উদাত্ত কণ্ঠে গণসঙ্গীতের মাধ্যমে এই অনুষ্ঠান শুরু হয়। কনভেনশনে উপস্থিত বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়ন ও মঞ্চের নেতৃবৃন্দকে ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের পক্ষ থেকে ঊষা জয়সওয়ারা পুষ্পস্তবক দিয়ে স্বাগত জানান। এরপর কনভেনশনের প্রস্তাবনা বাংলায় পাঠ করেন ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সুবীর কুমার বোস, যার হিন্দী অনুবাদ করে পাঠ করেন ধ্রুব কুমার। এরপর একে একে বক্তব্য রাখেন এনএমওপিএস’র অমৃক সিং, প্রেম সাগর, উত্তম বিশ্বাস, এনপিডিইএফ’এর সর্বভারতীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অতনু চক্রবর্তী, জিএসএফ কর্মচারী ইউনিয়নের নেতা অভিষেক বিশ্বাস। কনভেনশনে উপস্থিত ছিলেন মজদুর ইউনিয়ন, মজদুর সংঘ এনডিএনজিওএ, এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন ও অন্যান্য এসোসিয়েশেনের প্রতিনিধিরা। প্রধান বক্তা অমৃক সিং নয়া পেনশন স্কীমের সর্বনাশা দিকগুলোকে উন্মোচিত করেন। ১ অক্টোবর দিল্লীর সমাবেশকে সর্বাত্মকভাবে সফল করার শপথ নিয়ে কনভেনশন শেষ হয়।

১২ সেপ্টেম্বর কাঁচরাপাড়া সিটি বাজার এলাকায় এআইআরইসি অফিসে ইস্টার্ন রেলওয়েজ এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের উদ্যোগে এনপিএস বিরোধী এই সভা হয়। সভায় প্রধান বক্তা ছিলেন অমৃক সিং, এআইআরইসি’র নেতা অসিত সরকার এবং আইআরইএফ’র নেতা রবি সেন ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। সভায় এনপিএস আওতাভুক্ত যুব শ্রমিকদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রথমেই রবি সেন আজকের দিনে ওপিএস বিরোধী লড়াইয়ের পরিপ্রেক্ষিত ও ব্যাপ্তি বিশ্লেষণ করে জানান যে প্রবল আন্দোলনের চাপে ঠিক তার আগের দিন সিকিম সরকারও ওপিএস চালু করার কথা ঘোষণা করে। আগামী ১ অক্টোবর দিল্লীতে অনুষ্ঠিত রেল শ্রমিকদের সর্বভারতীয় জমায়েত এনপিএস’এর বিরুদ্ধে যে জোরাল এক প্রতিবাদ, তা তিনি ব্যাখ্যা করেন।

অমৃক সিং তাঁর ভাষণে তুলে ধরেন যে বর্তমানে মোদী সরকার কিভাবে কর্পোরেট পুঁজির স্বার্থে সমস্ত নীতিগুলোকে পরিচালিত করছে। ১ অক্টোবর দিল্লীর সমাবেশের মধ্য দিয়ে এনপিএস বিরোধী লড়াইকে জাতীয় স্তরে উন্নীত করতে সবার অংশগ্রহণকে সুনিশ্চিত করার উপর জোর দেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগকে উপেক্ষা করে এই সভাকে সফল করে তুলতে তিনি সকলকে অভিনন্দন জানান। উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে এই সভা শেষ হয়।

two-minor-girls-sexually-assaultedharidebpur-blind-home
অঞ্চলে আইসা, আইপোয়া ও সিপিআই(এমএল)-এর প্রতিনিধি দল

সম্প্রতি হরিদেবপুরের একটি ব্লাইন্ড হোমে দুই নাবালিকাকে দীর্ঘদিন ধরে যৌন নির্যাতনের খবর সংবাদমাধ্যম মারফত প্রকাশ্যে আসে। গত ৯ সেপ্টেম্বর আইসা, আইপোয়া ও সিপিআই(এমএল)-এর পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধি দল হরিদেবপুরের হোমে যায়। প্রথমে এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলা হয়৷ পরবর্তীতে হরিদেবপুর থানার অফিসার ইন চার্জের সঙ্গেও এই বিষয়ে কমরেডরা কথা বলতে যান। প্রতিনিধি দলের সদস্যরা তুলে ধরেন যে মহিলারা যৌনহেনস্থা বা গৃহ-হিংসার অভিযোগ নিয়ে থানায় এলেই থানা তাদের নিরুৎসাহিত করে, এই ক্ষেত্রেও সেরকম একটি অভিযোগ আছে খবরের কাগজে। অফিসার ইন চার্জ বলেন, যেহেতু এই ঘটনা পক্সো আইনের অধীন তাই তিনি এই কেস সম্পর্কিত কোনও তথ্যই আলোচনা করতে পারবেন না। এছাড়া জানা যায়, এই কেসটি ৮ সেপ্টেম্বর রাতে লালবাজারে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। লালবাজারে স্পেশাল জ্যুভেনাইল পুলিশ ইউনিটের পক্ষ থেকে এই কেসের তদন্ত করা হচ্ছে। সারা ভারতবর্ষে জুড়ে হোমগুলিতে শিশুদের ওপর যে যৌনহেনস্থা হয় এবং তাদের নিরাপত্তার যে বেহাল অবস্থা এই ঘটনা তা আরো একবার প্রমাণ করল।

আইসা, আইপোয়া ও সিপিআই(এমএল) এই ঘটনার দ্রুত তদন্ত ও ঘটনার সাথে জড়িত সকল ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানায়। প্রতিনিধি দলে আইসা’র পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন অনন্যা, ত্রিয়াশা, সায়নী ও শিবদ্যুতি; আইপোয়ার পক্ষে মলিনা বক্সি, মমতা ঘোষ, ইন্দ্রাণী দত্ত, চন্দ্রাস্মিতা চৌধুরী; সিপিআই(এমএল) লিবারেশন থেকে সৈকত ভট্টাচার্য, শান্তনু ভট্টাচার্য, বিরুন ব্যানার্জি, স্বরূপ দত্ত এবং গনতান্ত্রিক আন্দোলনের কর্মী পার্থ সিনহা।

what-is-the-state-of-educationeducation-in-the-state

(‘এমটি ক্লাসরুমস্ অ্যান্ড র‍্যাপিডলি ক্লোসিং স্কুলস্ স্পেল ডুম ফর বেঙ্গলস্ চিল্ড্রেন’ — এই শিরোনামে ‘দ্য ওয়্যার’এ প্রকাশিত এক চমৎকার অন্তর্তদন্ত রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থার প্রকৃত অবস্থাকে তুলে ধরেছে। বর্তমানে গোটা শিক্ষা ব্যবস্থায় নেমে আসা অরাজক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এই প্রবন্ধটির নির্বাচিত অংশ প্রকাশ করা হল। শিরোনাম আমাদের — সম্পাদকমন্ডলী, দেশব্রতী।)

ক্রমে ক্রমে গভীর অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছে রাজ্যের সরকারি শিক্ষাব্যবস্থা।

একটা ছোট্ট উদাহরণ দিয়ে শুরু করা যাক। কসবার মডার্ণ ইন্সটিটিউশন ফর গার্লসের গোড়াপত্তন হয় ১৯৬৭-এ। কয়েকবছর আগে পর্যন্ত এই স্কুলটি রীতিমতো সরগরম থাকতো পড়ুয়াদের উপস্থিতিতে। কিন্তু আজ? সরকার পোষিত এই স্কুলে সাতজন শিক্ষক প্রতিদিন আসছেন নিজেদের উপস্থিতি রেকর্ড করাতে কিন্তু সেখানে নেই একজনও পড়ুয়া!

এটা কোনো বিচ্ছিন্ন উদাহরণ নয়। এরকম প্রায় ২৫৩টি সরকার পোষিত স্কুল রয়েছে, যারা একই সমস্যায় আক্রান্ত। ব্ল্যাক বোর্ড রয়েছে, কিন্তু স্কুলগুলোর ডেস্ক ফাঁকা। সেখানে নেই একজনও পড়ুয়া।

রাজ্য সরকার ঘোষণা করে দিয়েছে, যে স্কুলগুলোতে ৩০’র কম পড়ুয়ায় এসে ঠেকেছে, এমন ৮,২০৭টি প্রাইমারী ও সেকেন্ডারি স্কুল চিরতরে বন্ধ করে দেওয়া হবে, যা সমগ্র সরকারি স্কুলের প্রায় ১০ শতাংশ! কারণ হিসাবে বলা হয়েছে আর্থিক সংকট আর শিক্ষাক্ষেত্রে আর্থিক উৎসগুলোকে আরো নিশ্চিত ও মজবুত করার পরিকল্পনা নাকি সরকারের রয়েছে।

আলিপুরদুয়ারের পাহাড়ি অঞ্চল কালচিনিতে ২১টি চা বাগিচা রয়েছে। সেখানে ৩৭টি সরকার পোষিত স্কুল বন্ধ হওয়ার মুখে। এই স্কুলগুলোতে চা বাগিচায় কর্মরত আদিবাসী পরিবার থেকে আগত বিরাট সংখ্যক ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করে। অনেক পরিবার এখন বেসরকারি ইংরাজি মাধ্যম স্কুলে তাঁদের ছেলে মেয়েদের ভর্তি করাতে বাধ্য হচ্ছেন। নাগালের মধ্যে স্কুল থাকার যে আইন রয়েছে, তা পুরোপুরি লঙ্ঘিত হচ্ছে। শিশু কিশোরদের ওই সমস্ত বনাঞ্চল ঘেরা অঞ্চলে বিরাট ঝুঁকি নিয়ে একা একা স্কুলে যাতায়াত করতে হবে কারণ তাদের মা বাবারা চা বাগিচায় কর্মরত।

গতবছর, সোদপুর সুশীল কৃষ্ণ শিক্ষায়তনে সুমন দাস চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ছিল। তার শ্রেণিকক্ষে পড়ুয়ার সংখ্যা ক্রমে কমতে থাকায় তার অভিভাবকেরা তাকে ৫ কিলোমিটার দূরের একটা স্কুলে ভর্তি করাতে বাধ্য হন। ওই স্কুলে এখন রয়েছে মাত্র পাঁচজন ছাত্র, কিন্তু সর্বক্ষণের শিক্ষকের সংখ্যা ১৩! সুমনের আগের স্কুলটি ছিল হাঁটা পথ। কিন্তু এখন বেশ দূরে অবস্থিত নতুন স্কুলে যাতায়াতের জন্য তাকে অটো নিতে হয়, যারজন্য বাড়তি খরচ পরিবারকে বইতে হচ্ছে।

এরাজ্যে ৮৪ শতাংশ ছাত্রছাত্রী সরকারি বা সরকার পোষিত স্কুলের পড়ুয়া। রাজ্য সরকার স্কুলে পাঠানোর জন্য পরিবারগুলোকে উৎসাহিত করতে কন্যাশ্রী সহ আরও কিছু প্রকল্প চালু করে। এরমধ্যে কন্যাশ্রী প্রকল্পটি বিশেষ করে ছাত্রীদের স্কুলে পাঠানোর লক্ষ্যেই পরিচালিত, যা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও পায়। কিন্তু তা সত্ত্বেও, মাধ্যমিক পর্যন্ত টিকে থাকা ছাত্রীর সংখ্যা ক্রমেই তলানিতে এসে ঠেকছে। ২০২৩-এ মাত্র ৬.৯৯ লক্ষ পড়ুয়া মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসে, ২০২২-এ ছিল ১০.৯৮ লক্ষ অর্থাৎ ৩৬ শতাংশ কম, আর ২০২১-এ এই সংখ্যাটি ছিল ১১.১৮ লক্ষ। দেখাই যাচ্ছে, যত দিন যাচ্ছে, ততই মাধ্যমিকে বসার সংখ্যাটা হ্রাসপ্রাপ্ত হচ্ছে।

রাজ্য সরকারের প্রস্তুত করা ২০২২’র একটা রিপোর্ট দেখাচ্ছে, সরকারি স্কুলগুলোতে ভর্তির সংখ্যা বিপুল হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। অতিমারীর সময়ে সবচেয়ে লম্বা সময় পর্যন্ত স্কুল বন্ধ থাকা সত্ত্বেও সরকারি স্কুলগুলোতে (৬ থেকে ১৪ বছরের পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে) ভর্তির সংখ্যা যা ২০১৮ সালে ছিল ৮৮.১ শতাংশ, তা ২০২১এ বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৯২.২ শতাংশ!

রাজ্যজুড়ে প্রাইমারী, আপার প্রাইমারী, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্কুলগুলোতে সর্বমোট ১,১০,০০০ শূন্যপদ রয়েছে, যারমধ্যে ৬৯ শতাংশই গ্রামীণ এলাকায় অবস্থিত। গত ১১ বছরে রাজ্য থেকে ৭,০০০ স্কুল উবে গেল — ২০১২-তে ৭৪,৭১৭ প্রাইমারী স্কুল কমতে কমতে ২০২২-এ ৬৭,৬৯৯-এ এসে দাঁড়ায়। একটা টাটকা উদাহরণ দেওয়া যাক।

দমদমে অমৃত লাল ওঝা বিদ্যামন্দিরের জমি রিয়েল স্টেট প্রজেক্টের জন্য নিয়ে নেওয়ায় স্কুলটাই অবলুপ্তই হয়ে গেল!

কয়েক বছর আগে রাজ্য সরকার শিক্ষক বদলির এক স্কিম চালু করে। এরফলে অসম হারে শিক্ষক ছাত্র অনুপাত তৈরি হল। দক্ষিণ ২৪ পরগণার কুলতলি মডেল স্কুলে মাত্র ২২ জন ছাত্রর জন্য আটজন সর্বক্ষণের শিক্ষক রয়েছে। বিপরীতে, একই জেলার কল্যাণপুর হাই স্কুলে ২,০০০ ছাত্রের জন্য রয়েছে মাত্র ২৪ জন শিক্ষক।

রাজ্য স্কুলে শিক্ষক নিয়োগের যে অভূতপূর্ব দুর্নীতি চরম ক্লেদাক্ত, দেউলিয়ে চিত্রকে ফুটিয়ে তুলল, তার প্রভাব অপরিসীম। এখন অভিভাবকদের মনোভাব হয়ে দাঁড়িয়েছে, “দুর্নীতির রাস্তা ধরে যারা আজ শিক্ষক হয়ে ঢুকেছেন, তাঁদের হাতে নিজের সন্তান সন্ততিদের ভবিষৎ আমরা তুলে দেব না।” নজীরবিহীন এই বিশ্বাসভঙ্গ, আস্থাহীনতা আজ গোটা রাজ্যজুড়ে গ্রাস করেছে। আর, এই আবহে, বাধ্যতামূলক ভাবে অভিভাবকেরা তাঁদের সন্তানদের ভর্তি করাচ্ছেন বেসরকারি স্কুলগুলোতে, গুচ্ছ গুচ্ছ টাকার বিনিময়ে।

search-team

আবার, শিক্ষাকেন্দ্রে একটি তরতাজা ছোট্ট ছেলের জীবনাবসান হল। ক’দিন আগেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে, গ্রাম থেকে পড়তে আসা মেধাবী ছেলেটিকে কেড়ে নিয়েছিল এই শিক্ষাব্যবস্থা। সেই ক্ষত এখনও এতটুকু মলিন হয়নি। তাই শ্রমজীবী মহিলা ও স্কীমকর্মী ঐক্যমঞ্চ’র পক্ষ থেকে প্রকৃত ঘটনাটি জানার চেষ্টায় রওনা হলাম মৃত ছাত্র শেখ শানের আবাসনের উদ্দেশ্যে।

৪ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টা ৫০ নাগাদ তাড়াতাড়ি করে বাড়ির থেকে বেড়িয়ে পড়েছিল দশম শ্রেণির ছাত্র শেখ শান, তার স্কুল সিলভার পয়েন্ট হাইস্কুলের উদ্দেশ্যে।

শোকে পাথর হয়ে যাওয়া ৩৭ বছরের মা পিঙ্কি বিবি যিনি ২০১৯ থেকে ৯১ নম্বর ওয়ার্ডের আশা কর্মী, অতি কষ্টে বললেন, “দুপুর ২-৩০ নাগাদ স্কুল থেকে ফোন আসে। প্রথমে বলে, শান মাথা ঘুরে পড়ে গেছে, তারপর বলে সিঁড়ির থেকে পড়ে গেছে। এটাও বলে সুস্থ আছে, শুধু একটু মাথা ফেটে গেছে । ফোন করে তিনবার তিন রকমের কথা বলে। আমরা সবাই ছুটতে ছুটতে যাই, কাছাকাছি এত হাসপাতাল থাকতে শানকে ভর্তি করা হয়েছে মুকুন্দপুরের আমরি হাসপাতালে। গিয়ে দেখি শানের মৃত অসার দেহ পড়ে আছে, স্কুলের কেউ নেই। আমরা ম্যামেদের খোঁজ করি। তাদের দেখতে তো পাই না উপরন্ত আমাদের ছেলেদেরকে সিকিউরিটি গার্ড মারধর করে। আর বলে আগে গিয়ে এফআইআর করো তারপর সব বলবো। এফআইআর করতে গিয়েছি সেই সময় ম্যামেদের সরিয়ে দেয়। ফিরে গেলে ম্যামেদের আর পাওয়া যায়না। পরের দিন ১১টায় বডি দেবে বলে। কর্তৃপক্ষ যদি অপরাধী না হবে, তা হলে চোরের মতোই একগাদা টাকা ঘুষ দিয়ে মৃত ছেলেকে রেখে অভিভাবকদের সাথে দেখা না করে পালিয়ে গেল কেন? এ প্রশ্নের উত্তর দিক।”

উপরোন্ত নারী ও শিশুকল্যাণ দপ্তরের আধিকারিক অনন্যা চক্রবর্তী কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বললেন, কাছেই শানের বাড়ি, কিন্তু সেখানে গেলেন না। কোন ডাক্তারী পরীক্ষা ছাড়াই অনন্যা চক্রবর্তী বললেন, ছেলেটি মানসিক অবসাদে ভুগছিল। গোটা ঘটনা না জেনে বুঝে তিনি একথা বলেন কি করে?

আসল কথা, করনার সময় দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ ছিল। ২০০০ ছাত্রছাত্রী কসবা রথতলার নর্থ পয়েন্ট উচ্চমাধ্যমিক ইংরাজী মাধ্যম বিদ্যালয়ে পড়ে। শানের বাবা শেখ পাপ্পু সমস্ত অভিভাবকদের নিয়ে, গার্জিয়ান ফোরাম তৈরি করে কর্তৃপক্ষের উপর চাপ সৃষ্টি করে ৩৫ শতাংশ স্কুল-ফি কমান। শানের পরিবারের অভিযোগ, এটাই ছিল বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আসল রাগের কারণ। তাছাড়া মাসের ১০ তারিখ হয়ে গেলে প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীকে ৮০০ টাকা করে বেশি দিতে হবে — এর বিরুদ্ধে শেখ পাপ্পু গার্জিয়ান ফোরামের সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এলাকার মানুষজনও বললেন, এটাই ছিল নাকি তাঁর অপরাধ। ফলে, ভালো পরীক্ষা দিয়েও শানকে সব সময়েই কম নম্বর পেতে হয়েছে। শান’এর বাবা ভেবেছিলেন শানকে অন্য স্কুলে নিয়ে যাবেন। ছেলের সাথে বাবার সম্পর্ক ছিল বন্ধুর মতন, সেই কথাই ঘুরে ফিরে বারবার তিনি বলতে লাগলেন।

বহু অভিভাবকের স্কুলের শিক্ষকদের ও কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে। তাঁদের দাবি — নিরপেক্ষ তদন্ত হোক। বাবা শেখ পাপ্পু বললেন, দুপুর ২-১৫ নাগাদ ফোন করে বলা হয়েছিল, “মাথা ঘুরে উঁচু থেকে পড়ে গিয়েছে, কিন্ত সিঁড়ি বা ছাদ থেকেই যদি পড়ে যাবে, তবে আঘাতের চিহ্ন নেই কেন?” প্রতিবেশী জ্যোৎস্না গিয়েছিলেন। তিনি বললেন, “শানের দেহে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না, এমন কী কোনো হাড়ও ভাঙ্গা ছিল না!”

স্কুলের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে, গার্জিয়ান ফোরাম দাবি করেছে, “বিচার বিভাগীয় তদন্ত চাই। সঠিক তথ্য উন্মোচিত হোক। প্রকৃত অপরাধীর দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি হোক।”

- স্নিগ্ধা বসু

the-centre-agenciescentre-agencies

তৃণমূলের অধুনা দ্বিতীয় নির্দেশক অভিষেক ব্যানার্জীকে ইডি ফের তলব করেছে। এর প্রতিক্রিয়ায় তৃণমূলনেত্রী মন্তব্য করেছেন, এটা “রাজনৈতিক প্রতিহিংসা”। আগেও বারকয়েক ইডি কলকাতায় ও দিল্লীতে শ্রীযুক্ত অভিষেককে ডেকে পাঠায়। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের ব্যাপারে দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ করে। তারই জের টেনে কলকাতা অফিসে আবার জেরার সম্মুখীন হতে তলব করেছে। তবে, এবার এমন দিনে ডেকে পাঠিয়েছে যাকে এক অর্থে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সমাপতন বললে অত্যুক্তি হবে না। কারণ ঐ একইদিনে দিল্লীতে পূর্ব নির্ধারিত “ইন্ডিয়া” জোটের সমন্বয় কমিটির প্রথম বৈঠকে অভিষেকের অংশগ্রহণ করার কথা। তাই, ইন্ডিয়া বৈঠক নাকি ইডি-র তলব — কোথায় যাওয়া হবে তা নিয়ে চূড়ান্ত মনস্থির করতে নিশ্চিত এক মানসিক সংঘাত পোহাতে হয়েছে। শেষে ইডি-র অফিসেই যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

ইডি-সিবিআই-এর এহেন আচরণ একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। অবশ্যই প্রতিহিংসাপূর্ণ, পক্ষপাতদুষ্ট। আদালতের নির্দেশে ও তত্ত্বাবধানে তদন্ত চলছে বটে। বহিরঙ্গে এটাই ঘটনা। কিন্তু অন্তর্নিহিত সত্য হল, ইডি-সিবিআই-কে চালাচ্ছে আসলে কেন্দ্রের অমিত শাহর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। আরও সত্যি বলতে, মোদী সরকারের ‘এজেন্সি রাজ’ চালানো হচ্ছে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলোকে বুলডোজ করতে। বিরোধী শক্তিগুলো কোনোরকম জোটে সামিল হওয়ার বহু আগে থেকে ’২৪-এর লোকসভা নির্বাচনকে পাখীর চোখ করে ভয় দেখাতে পথের কাঁটা সরাতে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার এজেন্সি হানা, খানা তল্লাসি, জিজ্ঞাসাবাদ ও হেফাজতে নেওয়া শুরু করে দেয়। এরাজ্যে কেন্দ্রীয় এজেন্সির কড়া নাড়ার ঘটনা-প্রবণতা কোনো বিচ্ছিন্ন পলিসি নয়। বিজেপির এ হল সর্বভারতীয় দৃষ্টিকোণ থেকে সংগঠিত করা অভিযান। পশ্চিমবঙ্গে অপারেশন চালানোর কিছুটা বাড়তি অনুকূল জমি পেয়ে গেছে। সেটা হল, রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে শিক্ষাক্ষেত্র থেকে শুরু করে নানাক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা। বিপরীতে বিজেপিকে নিশানা করে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলোর ক্রমবর্দ্ধমান শরিকী অংশগ্রহণে “ইন্ডিয়া” জোটের শক্তিবৃদ্ধি হয়ে চলা দেখে গেরুয়া শিবির আতান্তরে পড়েছে। তাই দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করাতে, ভাঙন ধরাতে, সিবিআই, ইডি, নিয়া নামের এজেন্সিগুলোকে ব্যবহার করছে। এই পলিসি বিজেপি নিয়েছে কেবল বিরোধী দল শাসিত রাজ্যগুলোতেই। কোনো বিজেপি শাসিত রাজ্যে এজেন্সি হানা নেই। ঐসব রাজ্যে পরম নিশ্চিন্তে নিরাপদে শাসকের দুর্নীতি চলে। এই দ্বৈততা বস্তুত রাষ্ট্রের যুক্তরাষ্ট্রীয় চরিত্রকে ধ্বংস করে এক পার্টির ডবল ইঞ্জিন চালিত একনায়কতন্ত্র চালানোর পদ্ধতি-প্রকরণগত মহড়া শুরু করে দেওয়ারই লক্ষণ। তাই, এর পাল্টা বিরোধিতা করতে হবে সর্বভারতীয় দৃষ্টিকোণ ও প্রেক্ষিতকে অগ্রাধিকার দিয়ে। প্রকৃত গণতন্ত্রপ্রিয়তা, দেশপ্রেম ও যুক্তরাষ্ট্রীয়তার বোধ থেকে। আর, এই এজেন্সি হানা যখন যেখানে ধর্মীয় সংখ্যাগুরুবাদের নামে চলতে দেখা যাবে তখন সেখানে রুখে দাঁড়াতে হবে ধর্মনিরপেক্ষতার দৃষ্টিকোণ থেকে।

এসব অবস্থান নেওয়ার মানে এটা নয় যে পশ্চিমবাংলায় নানা দুর্নীতির সাথে জড়িত সন্দেহে সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সহ বিভিন্ন মাপের সব টিএমসি নেতা-মাথাদের হয়ে ব্যাটিং করতে নামতে হবে! নৈব নৈব চ। কোনটা সাজানো মামলার জন্য আর কোনটা বাস্তবে পেছনে কোন নির্দিষ্ট কারণ রয়েছে সেই তফাত একটু সদিচ্ছা থাকলে বোঝা যায়, বুঝতে হবে।

টিএমসির যারা অভিযুক্ত, তারা ও তাদের দল তদন্তে ও আদালতে নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করুন। এ দায় কেবল তাদের। এর পিছনে বঙ্গবাসীর দাঁড়ানোর কোনো দায় বর্তায় না। এই অবস্থানে অবিচল থাকার যথেষ্ট সঙ্গত কারণ রয়েছে। টিএমসি সরকারের বিরুদ্ধে দু'দশকের বেশি সময়ের রাজত্বে সবচেয়ে বড় অভিযোগ হল দুর্নীতি, সর্বব্যাপী নানা দুর্নীতি। একেবারে গোড়ার দিক থেকে সারদা, নারদ ইত্যাদি চিটফান্ড কেলেংকারী দিয়ে যার সূত্রপাত, সময় গড়িয়ে চলার সাথে সাথে প্রায় সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতি-কেলেংকারীর দূর্গন্ধ বের হয়ে আসছে। সময়ে সময়ে অসাবধানবশত বা অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে টিএমসির ভেতর থেকে তার কিছু কিছু তথ্য বেফাঁস হয়েছে। কাউকে বলি দিতে জেলবন্দী করেও পরে মুখ বন্ধ করাতে জেলখালাস করতে হয়েছে, দলের মুখপাত্র বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের জ্ঞানচক্ষুকে তো সব ভুলিয়ে রাখা যায় না। এরকম নজীর রয়েছে অজস্র। ঠগ বাছতে উজার হয়ে যাবে দল। এর সাথে রয়েছে সন্ত্রাসের বাতাবরণ। তবু এত কান্ড সত্ত্বেও ‘দুয়ারে সরকার’ ও একগুচ্ছের নানা সংস্কারের ডালির দৌলতে এক আপাত জনচিত্ত আকর্ষক ভাবমূর্তি রয়েছে বলে তৃণমূল জমানা চলতে পারছে। বাকিসব অর্থাৎ দলের সাংগঠনিক কাঠামোয় ওপর থেকে নিচতলা পর্যন্ত, আর মন্ত্রীসভায়, পৌরসভায় ও পঞ্চায়েতরাজে ক্ষমতার অদল-বদল করে ব্যালেন্স করে চলতে হচ্ছে।

কিন্তু বিজেপির তুলনা টিএমসি কেন, কোনও দলেরই সঙ্গে হয় না। এটা মেলেনা বিদ্বেষ-বিভাজনের মতাদর্শ ও রাজনীতির বিচারে যেমন, তেমনি দুর্নীতির প্রশ্নেও। বিজেপির গন্তব্য হিন্দুরাষ্ট্র। এটাই তার বৈশিষ্ট্যকে আর সব রাজনৈতিক দলের বিপরীত চরিত্রের প্রমাণ দেয়। কোনোরকম বিরোধিতাকে রেয়াত না করার ফ্যাসিবাদী প্রবণতা তাকে এমনকি হিন্দুত্ববাদী শিবসেনার মূল অংশকে নির্মূল করতেও এখন প্ররোচিত করছে।

শত শত লক্ষ কোটি টাকার কর্পোরেট লুঠ চলতে দিতে আর নিজেরা দুর্নীতির চূড়ামনি হতে বিজেপির জুড়ি মেলা ভার। ললিত মোদী, নিরব মোদী, বিজয় মাল্য ইত্যাদি ব্যাঙ্ক লুটেরাদের নিয়ে মোদী সরকার সদম্ভে কিছুতেই কোনও আলোচনা তুলতে দিতে চায় না। তাছাড়া একটা কটাক্ষ বেশ চালু হয়ে গেছে, তা হল, দুজন কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন গুজরাটি (মোদী ও শাহ্) দেশের সবকিছু সম্পদ বেচে দিচ্ছে, আর কর্পোরেট ক্ষমতাসীন দুজন গুজরাটি (আদানি ও আম্বানি) সবকিছু কিনে নিচ্ছে। মধ্যপ্রদেশের মেডিক্যাল কলেজ সংক্রান্ত ‘ভ্যাপম’ কেলেংকারির ঘটনাক্রম ভয়ংকর। ভর্তির সংস্থান বিক্রি থেকে কোটি কোটি টাকা কামিয়ে নেওয়া তো হয়েছেই, আরও হাড়হিম ধরানো ঘটনা হল, ঐ দুর্নীতির মামলার একের পর এক সাক্ষীকে রহস্যজনকভাবে ‘নিখোঁজ’ করে দেওয়া হয়। এরপর তদন্তের প্রহসন ছাড়া আর কি অবশিষ্ট থাকতে পারে! মোদীর পিএম কেয়ারস্ ফান্ড ও বিজেপির ইলেক্টোরাল বন্ডের কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা কোথা থেকে কোথায় আসছে যাচ্ছে, বিজেপি তার হিসাব দেওয়ার পরোয়াই করে না। পাঁচশ কোটি টাকার দুর্নীতিবাজ বলে অভিযুক্ত অজিত পাওয়ার বাগে আসার পর বিজেপি মুখে কুলুপ এঁটেছে। হালের সড়ক নির্মাণের ‘ভারতমালা’ প্রকল্প খরচের হিসাব পেশে ধরা পড়েছে বড় মাত্রায় গরমিল! ক্যাগ-এর হিসাব পরীক্ষার রিপোর্টে সড়ক দুর্নীতির সত্যাসত্যের একেবারে পর্দা ফাঁস হয়ে গেছে। মোদী সরকার নিযুক্ত ‘ক্যাগ’-এর রিপোর্টে চিহ্নিত হয়েছে বিশাল গলদ। ধরা পড়েছে প্রকল্পের বরাত দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রচন্ড অনিয়ম, আর বরাদ্দ অর্থ ও ব্যয়িত অর্থের মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাৎ। এর সাথে দুর্নীতির আরও সাতকাহন রয়েছে। ‘আয়ুস্মান ভারত-প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য প্রকল্পে মৃতদের নামেও স্বাস্থ্য বিমায় অর্থ বরাদ্দ’, ‘কেন্দ্রীয় সরকারের স্বদেশ দর্শন প্রকল্পের অধীন উত্তরপ্রদেশ অযোধ্যা উন্নয়ন প্রকল্পে’ ঠিকাদারদের প্রায় ২০ কেটি টাকার সুবিধা পাইয়ে দেওয়া, ‘কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন প্রকল্পের অধীন পেনশন প্রকল্পে’র বরাদ্দ অর্থ থেকে ২ কোটি ৮৩ লক্ষ টাকা অন্য প্রকল্পের প্রচার বাবদ ব্যয়, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ‘হ্যাল’-এ বিস্ময়কর লাগে ১৫৯ কোটি টাকার লোকসান, জাতীয় সড়কে টোল আদায়ের নিয়ম ভেঙ্গে যাত্রীদের থেকে ১৫৪ কোটি টাকা টোল আদায়। অসমে বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে উঠেছে জমি কেলেংকারীর অভিযোগ।

দুর্নীতির প্রশ্নে পশ্চিমবঙ্গেও বিজেপি চালাচ্ছে দুমুখোপনা। অভিযোগ আছে রাজ্য বিধানসভায় খোদ বিরোধী দলনেতার সারদা ও নারদ কেলেংকারীতে জড়িত থাকার বিরুদ্ধে। তিনি নিত্যদিন শাসক টিএমসির নেতা-মন্ত্রী-চ্যালা-সান্ত্রীদের তুলোধোনা করেন দুর্নীতির ইস্যুতে। কিন্তু তাঁকে ইডি-সিবিআাই নোটিশ ধরানোর হিম্মৎ হয় না বিজেপির! এই দ্বিচারিতা লুকানের উপায় নেই।

মোদী সরকারের এইসব আর্থিক অনাচারের অপরাধ নিয়ে কখনও তো ইডি-সিবিআই নিয়োগ করার কথা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ওঠে না। এই কারণেই দুর্নীতি ধরা ও সেই অপরাধে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়ার নামে যে ‘এজেন্সিরাজ’ চলছে তা একপেশে, পক্ষপাতদুষ্ট, প্রতিহিংসাপরায়ণ।

– অনিমেষ চক্রবর্তী

birth-certificatecertificate-mandatory
মোদি সরকারের আনা আইন জনতার কাঁধে নতুন বোঝা ও বৈষম্য চাপিয়ে দিচ্ছে

লোকসভায় ২৬ জুলাই পেশ হয়ে ১ আগস্ট পাস হল এই আইন সংশোধনী। রাজ‍্যসভায় পাশ হয় ৭ আগস্ট। এই বিলের মাধ‍্যমে ‘জন্ম ও মৃত‍্যু নথিভুক্তি আইন, ১৯৬৯’-এ বদল আনা হয়েছে।

জন্ম ও মৃত‍্যুর তথ‍্যভাণ্ডার কেন্দ্রীকরণ: এনআরসির এক ধাপ

মূল আইনে ছিল, একজন রেজিস্ট্রার-জেনেরাল নিযুক্ত হবেন এবং তিনি চাইলে জন্ম ও মৃত‍্যু নথিভুক্তকরণের সাধারণ নির্দেশাবলী জারি করতে পারেন। এখন সংশোধন করে বলা হয়েছে, রেজিস্ট্রার-জেনেরাল জন্ম ও মৃত‍্যুর একটি জাতীয় তথ‍্যভাণ্ডার গচ্ছিত রাখবেন। চীফ রেজিস্ট্রার (রাজ‍্য সরকার দ্বারা নিয়োজিত) ও রেজিস্ট্রারেরা (স্থানীয় স্তরের পঞ্জীকরণের জন‍্য রাজ‍্য দ্বারা নিয়োজিত) জন্ম ও মৃত‍্যুর সমস্ত তথ‍্য জাতীয় তথ‍্যভাণ্ডারে বাধ‍্যতামূলকভাবে জমা করবেন। চীফ রেজিস্ট্রারও রাজ‍্যস্তরে একইরকম তথ‍্যভাণ্ডার রাখবেন।

কয়েক বছর আগে ‘নাগরিক পঞ্জী’ বা এনআরসি করার উদ‍্যোগ ব‍্যাপক গণপ্রতিরোধের মুখে পড়েছিল। ‘এনআরসি’-র জন‍্য যে ‘এনপিআর’ বা ন‍্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টারের ধাপ দরকার তা এখন এইভাবে করতে চলেছে কেন্দ্র সরকার। বিভিন্ন রাজ‍্য সরকার বিজেপির এনআরসি-উদ‍্যোগের বিরোধ করেছিল। জন্ম ও মৃত‍্যুর নথিভুক্তি সংক্রান্ত বিষয়টি রাজ‍্য ও কেন্দ্র উভয়েরই ক্ষমতাক্ষেত্র বা যৌথ তালিকায় ছিল। নতুন এই বিলটি রাজ‍্যকে জাতীয় তথ‍্যভাণ্ডারের অধীনস্ত করেছে এবং কেন্দ্রীয়করণের মধ‍্যে দিয়ে চরম বৈষম‍্যকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে চলেছে।

সর্বক্ষেত্রে বার্থ সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক : শিক্ষার অধিকার ও ভোটাধিকার খর্ব করবে, বৈষম‍্য বাড়াবে

মূল আইনে ছিল, যে কেউ চাইলে রেজিস্ট্রারকে দিয়ে তথ‍্যভাণ্ডার খুঁজিয়ে যে কোনো জন্ম বা মৃত‍্যু সংক্রান্ত তথ‍্য নিতে পারবেন। সংশোধন করে বলা হয়েছে, তথ‍্য নেওয়ার বদলে সার্টিফিকেট নিতে পারেন। জন্মের ৩০ দিনের মধ‍্যে বার্থ সার্টিফিকেট পেতে হবে। না পারলে, পরবর্তীতে এক বছর সময় দেওয়া হয়েছে, কিন্তু সেক্ষেত্রে ডিস্ট্রিক্ট রেজিস্ট্রারের (অথবা অনুরূপ কোনো আধিকারিকের) লিখিত অনুমতি লাগবে এবং জরিমানা দিতে হবে। এক বছর পেরিয়ে গেলে ডিস্ট্রিক্ট ম‍্যাজিস্ট্রেটের আদেশ পেতে হবে যিনি জন্মের দাবির সত‍্যতা যাচাই করে এবং জরিমানা নিয়ে এই আদেশ দেবেন।

রেজিস্ট্রারের কোনো আদেশ বা পদক্ষেপের বিরুদ্ধে কিছু বলার থাকলে আদেশ পাওয়ার ৩০ দিনের মধ‍্যে তা জানাতে হবে এবং রেজিস্ট্রার এই আবেদন পাওয়ার ৯০ দিনের মধ‍্যে তার উত্তর দিতে বাধ‍্য থাকবেন।

বিলে বলা হয়েছে, যে কোনো ব‍্যক্তিকে নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে এই সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে। এই “নির্দিষ্ট ক্ষেত্র”-গুলির মধ‍্যে ফেলা হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া, ভোটার লিস্টে নাম তোলা, সরকারি পদে নিয়োগ পাওয়া, বিবাহ নথিভুক্তকরণ এবং এগুলি ছাড়াও কেন্দ্র সরকার নির্দেশিত অন‍্য যে কোনো ক্ষেত্র।

এই নির্দেশিত ক্ষেত্রগুলির কয়েকটি বাস্তবে নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার ক্ষেত্র। এই ক্ষেত্রগুলিতে বার্থ সার্টিফিকেট বাধ‍্যতামূলক করার অর্থ নাগরিকের সেই সাংবিধানিক অধিকারকে খর্ব করা।

সংবিধানের ২১(ক) অনুচ্ছেদে স্কুলে ভর্তি হওয়ার যে অধিকার প্রত‍্যেক শিশুর জন‍্য লব্ধ তা এই নির্দেশ লঙ্ঘন করছে। ২০০৯ সালের শিক্ষার অধিকার আইন বলেছে স্কুলে ভর্তি হতে আসা শিশুর বয়স নির্ধারণের জন‍্য বার্থ সার্টিফিকেট সহ অন‍্য যে কোনো নথিকে গণ‍্য করতে হবে এবং বয়সের প্রমাণ না থাকলেও কোনো শিশুকেই স্কুলে ভর্তি হওয়া থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। নতুন আইন এই অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। যারা বার্থ সার্টিফিকেট করাতে পারবে না তারা সারা জীবনে কখনই আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারবে না। সাধারণ প্রান্তিক গরিব মানুষ এবং বহু ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক বা অন্য বিভিন্ন বিপর্যয়ের শিকার হওয়া পরিবারের শিশুরা চরম বৈষম‍্যের মধ‍্যে পড়বে।

সংবিধানের ৩২৬ অনুচ্ছেদে ১৮ বছর বয়স্ক সমস্ত নাগরিকের ভোটাধিকারের গ‍্যারান্টি দেওয়া হয়েছে। অপরাধ, দুর্নীতি, অপ্রকৃতিস্থতা বা দেশে বসবাস না করার ব‍্যতিক্রমী ক্ষেত্রে ভোটদানে অযোগ‍্য হওয়ার কথাও বলা আছে। কিন্তু বার্থ সার্টিফিকেট (বা কোনোরকম বয়স প্রমাণ) না থাকাকে ভোটদানের অযোগ‍্যতা বলেনি সংবিধান। জন্ম নথিভুক্ত করতে না পারা নাগরিকের ভোটাধিকার কেড়ে নিচ্ছে এই নতুন আইন।

তদুপরি অপ্রাপ্তবয়স্কদের বিচারের ক্ষেত্রে যে আইনি ধারা আছে তাকেও লঙ্ঘন করছে এই নতুন আইন। বার্থ সার্টিফিকেট না থাকলেও বয়সের প্রমাণ হিসেবে অন‍্যান‍্য যে সকল পন্থা এই জুভেনাইল জাস্টিস আইনে বিবৃত আছে তা নতুন আইনে নাকচ হয়ে যাচ্ছে। ফলত বিচারে বৈষম‍্য হবে।

নতুন আইন অনুসারে বার্থ সার্টিফিকেটই বয়সের একমাত্র প্রমাণপত্র। বার্থ সার্টিফিকেট না থাকলে কেউই ভোট দিতে, স্কুলে ভর্তি হতে, বিবাহ নথিভূক্ত করতে বা সরকারি চাকরিতে আবেদন করতে পারবে না। বার্থ সার্টিফিকেট যিনি বা যারা ইস‍্যু করার অধিকারী হবেন তিনি বা তাঁরা ব‍্যক্তির জীবন নিয়ন্ত্রণে এতটাই ক্ষমতাশালী হয়ে উঠবেন যে ঘুষ ও দুর্নীতির বিরাট ক্ষেত্র খুলে যেতে পারে।

পিতা-মাতার বা তথ‍্যপ্রদানকারীর আধার ডিটেলস জমা দিতে হবে : ব‍্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার খর্ব হবে

মূল আইন অনুযায়ী, জন্ম বা মৃত‍্যুর খবর কোনো না কোনো ব‍্যক্তিকে রেজিস্ট্রারের কাছে জমা দিতে হবে। যেমন, যে হাসপাতালে শিশুর জন্ম হল তার মেডিক‍্যাল অফিসার, বা পরিত‍্যক্ত শিশুর ক্ষেত্রে রাজ‍্যের স্বাস্থ‍্য আধিকারিক। এবারে নতুন আইনে বলা হয়েছে, যে ব‍্যক্তি জন্মের খবর দেবেন তাঁকে রেজিস্ট্রারের কাছে তাঁর নিজের এবং ওই শিশুর পিতা-মাতার আধার নাম্বার জমা করতে হবে। জেল, হোটেল ইত‍্যাদিতে জন্মের ক্ষেত্রে সেখানকার আধিকারিকের ওপরও এই দায় বর্তাবে।

জন্ম নথিভুক্তকরণে পিতা-মাতা ও তথ‍্য প্রদাণকারীর আধার ডিটেলস বাধ‍্যতামূলক করাটা নাগরিকের গোপনীয়তার অধিকার লঙ্ঘন করছে। হাসপাতালে জন্ম নেওয়া প্রতিটি শিশুর সাথে মেডিক‍্যাল অফিসারের আধার জুড়ে দেওয়া বা সমস্ত পরিত‍্যক্ত শিশুর সাথে স্টেট হেলথ অফিসারের আধার যুক্ত করা এই সমস্ত অফিসারের ব‍্যক্তিগত তথ‍্যের গোপনীয়তার অধিকারকে খর্ব করছে। ২০১৮'র আধার রায়ে স্পষ্টভাবে বলা হয়ছিল যে ২০১৬’র আধার আইন অনুযায়ী, সরকারি সুযোগ ও পরিষেবামূলক ক্ষেত্রে আধার লিঙ্ক বাধ‍্যতামূলক হতে পারে কিন্তু সেই কারণ দেখিয়ে ব‍্যাঙ্ক একাউন্ট ও মোবাইল ফোন নাম্বারের সাথে আধার লিঙ্ক করাটা বেআইনি। একই কথা জন্ম নথিভুক্তির ক্ষেত্রেও প্রযোজ‍্য। বিবাহ নথিভুক্তিতে আধার লিঙ্ক করার প্রশ্নেও সুপ্রিম কোর্ট একইরকম নির্দেশ দিয়েছিল।

বিভিন্ন তথ‍্যভাণ্ডারের সংযুক্তিকরণ : ব‍্যক্তিগত তথ‍্যের ওপর সেই ব‍্যক্তির অধিকার হরণ করবে

নতুন আইন অনুযায়ি, জন্ম ও মৃত‍্যুর এই তথ‍্যভাণ্ডারকে অন‍্যান‍্য বিবিধ তথ‍্যভাণ্ডার যেমন, জনসংখ‍্যা পঞ্জিকা, নির্বাচক তালিকা, রেশন কার্ড বা অন‍্য যে কোনো সরকার নির্দেশিত ডেটাবেসের সাথে সংযুক্ত করা হবে। এই সংযুক্তিকরণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব‍্যক্তির অনুমতি নেওয়া বাধ‍্যতামূলক করা নেই। ফলত এই সংযুক্তিকরণ ব‍্যক্তির গোপীয়তার অধিকারকে লঙ্ঘন করছে। নাগরিককে সুযোগ বা পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রেই একমাত্র সরকার এক তথ‍্যভাণ্ডারকে অন‍্য কাজে ব‍্যবহার করতে পারে, অন‍্যথায় নয়। ভারতে তথ‍্য সুরক্ষা বিষয়ক কাঠামো গড়ে তোলার প্রশ্নে গঠিত শ্রীকৃষ্ণ কমিটি সুপারিশ করেছিল যে এক উদ্দেশ‍্যে নেওয়া তথ‍্য অন‍্য কোনো উদ্দেশ‍্যে ব‍্যবহার করা সঠিক নয়।

জন্মমৃত্যু নথিভুক্তি সংক্রান্ত আইন সংশোধনীটি ইতিমধ্যেই সংদদের উভয় কক্ষেই পাস হয়ে গেছে, রাষ্ট্রপতির সীলমোহর পাওয়ার অপেক্ষা। সব মিলিয়ে এই নতুন আইনের মাধ্যমে কেন্দ্রের মোদি সরকার সাধারণ মানুষের ওপর বিপুল বোঝা ও নতুন বৈষম‍্য চাপিয়ে দিতে চলেছে।

- মলয় তেওয়ারি

torn-the-diarydiary-of-pain

আনন্দের একলা উড়ান! কিন্ত ক্লান্ত ডানা, তৃষ্ণায় শুকনো ঠোঁট একসময় জানান দেয়- তোমার এই একলা উড়ানেই তোমার বিপদ! নিঃসীমে হারিয়ে যাওয়ার!

মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক হওয়ার পর আজকের তরুণ-তরুণীরা আর প্রথাগত চাকরির তালাশে থাকেন না। সরকারি অফিস, রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা ও সংস্থার দরজা তো কবে থেকেই বন্ধ। স্থায়ী রোজগারের আশায় জলাঞ্জলি দিয়ে অবশেষে ‘আধুনিক রানার’। তাই-ই সই! একটা বাইক, একটা স্মার্টফোন। সেই স্মার্টফোনই কর্মক্ষেত্র। নিয়োগ তার মাধ্যমেই। ‘তুমি শ্রমিক নও, স্বাধীন কন্ট্রাক্টর! নিজেই নিজের শ্রমের মালিক! নিজেই নিজের নিয়ন্তা!’ কিন্তু অচিরেই সেই ভুল ভেঙে যায়। পিঠে ভারী বোঝা নিয়ে জনবহুল যানবহুল পথে নিরন্তর শুধু ছোটা। ক্ষুধা, তৃষ্ণা, ক্লান্তি এমনকি প্রকৃতির ডাকেও সাড়া দেওয়ার ফুরসৎ নেই। পিছনে রেটিং-এর তাড়া। যখন তখন আই ডি ব্লকের ভয়। তখন প্ল্যাটফর্ম কর্মীটি হাড়ে হাড়ে বুঝে গেছে, ‘স্বাধীন কন্ট্রাক্টর’ নয়, সে আসলে দিনমজুরেরও অধম। তার কোনো নিয়োগত্র নেই, চুক্তির শর্তগুলো আইনি ভাষার মারপ্যাঁচে দুর্বোধ্য। ন্যূনতম মজুরি বলতে কিছু নেই। সংস্থার মর্জিনির্ভর পারিশ্রমিক। সবেতন ছুটি, চিকিৎসা ভাতা, দুর্ঘটনা বিমা, পেনশন, এমনকি অভিযোগ জানানোর কোনো ব্যবস্থা পর্যন্ত নেই। অথচ স্বাস্থ্যহানি তো ঘটেই চলেছে, প্রতিমুহূর্তে ওঁত পেতে আছে দুর্ঘটনা। বাইক কেনার ইএমআই আর দুর্মূল্য জ্বালানিতেই কষ্টার্জিত আয়ের বড় অংশ চলে যায়।

যুগের সঙ্গে পুঁজির শোষণের ধরণ, শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক ক্রমাগত পাল্টাচ্ছে। আর সেই পরিবর্তনের হাত ধরেই গিগ অর্থনীতি হু হু করে বেড়ে চলেছে, মূলধারার অর্থনীতিকে কোণঠাসা করে। আর শ্রমিকের শ্রেণি পরিচিতি মুছে তাকে ক্রমশ ‘একলা-মানুষ’, ব্যক্তি মানুষে পরিণত করছে। শ্রমের বাজারে শ্রমিকের স্বীকৃতি হারিয়ে নতুন অভিধা-প্রাপ্ত সেই একলা-মানুষের না আছে আইনি সুযোগসহ শ্রমিকের প্রাপ্য কোনো অধিকার, না আছে সংগঠিত হওয়ার সুযোগ। এই নতুন অভিধাটি হল গিগ কর্মী বা প্লাটফর্ম কর্মী – তথাকথিত ‘স্বাধীন’ বিশেষণটি যেন তার নীরব যন্ত্রণাক্লীষ্ট জীবনের প্রতি এক নিষ্ঠুর ব্যঙ্গ। সবই ধূর্ত পুঁজির চালু পরিভাষা। শ্রম চুরির নিত্য নতুন ছলা কলা। সরকারও তার সঙ্গে সঙ্গত করে চলেছে। নিয়োগকর্তা হিসেবে সব দায় যেমন ঝেড়ে ফেলেছে নিজে, তেমনই রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত শ্রমিকের অধিকার কেড়ে নিয়ে, ৪৪টি শ্রম আইনকে ৪টি শ্রম কোডে বেঁধে শ্রমিকদের হতমান দুর্বল নিঃস্ব করে পুঁজির হাত শক্ত করে চলেছে। গিগ কর্মীদেরও চাতুর্যের সঙ্গে ‘শ্রমিক’ সংজ্ঞার বাইরে রেখে তাদেরও ন্যূনতম অধিকারটুকু থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছে।

প্রথম নীতি আয়োগের রিপোর্টে (ইন্ডিয়াস্ বুমিং গিগ অ্যান্ড প্ল্যাটফর্ম ইকোনমি, পলিসি ব্রিফ) বলা হয়েছিল ২০২০-২১-এ ভারতে প্রায় ৭৭ লক্ষ গিগ কর্মী (মোট শ্রমশক্তির ১.৫% ) অর্থনীতিতে রয়েছেন। ২০২৯-৩০-এ সেই সংখ্যা পৌঁছাবে ২.৩৫ কোটিতে। এবং সেখানে বিশেষভাবে কাজের সুযোগ রয়েছে মহিলা ও বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের। বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপ এবং মাইকেল অ্যান্ড সুজান ডেল ফাউন্ডেশনের গবেষণা-সমীক্ষা বলছে – আগামী ৮-১০ বছরের মধ্যে ভারতে গিগ কর্মীর সংখ্যা পৌঁছাবে প্রায় ৯ কোটিতে। বর্তমানে এই শ্রমশক্তির প্রায় ২৮% মহিলা। প্রথম লক ডাউনে কাজ হারিয়েছিলেন প্রায় ৪৭% মহিলা। অনেকেই আর পুরোনো কাজে ফিরতে পারেননি বা কাজ ফেরত পাননি। সংগঠিত ক্ষেত্র মহিলাদের জন্য ক্রমশ সংকুচিত হয়ে যাওয়া, স্থায়ী কাজের অভাব, কর্মসংস্থান সৃষ্টির অত্যন্ত মন্থর হার ইত্যাদির কারণে গিগ অর্থনীতিতে মহিলাদের সংখ্যাও দ্রুত বাড়ছে। তারা আছেন ড্রাইভার, ডেলিভারি পার্টনার, ল্যাব টেকনিশিয়ান, কারখানা-কর্মী, বিউটিশিয়ান, গৃহ পরিচর্যাকারী ও শিক্ষা সংক্রান্ত পরিষেবায়। বিভিন্ন সংস্থায় তারা বিভিন্ন অনুপাতে আছেন। যেমন ফুড ডেলিভারি প্ল্যাটফর্ম জোম্যাটোতে মহিলা কর্মীর অনুপাত আপাতত মাত্র ১%; ‘আরবান কোম্পানি’র ৪৫০০০ কর্মীর মধ্যে এক তৃতীয়াংশ মহিলা।

প্রত্যাশা ছিল এই প্ল্যাটফর্ম মহিলাদের আরও নমনীয়তা, মর্যাদা, স্বায়ত্ততা ও উন্নত আয়ের প্রতিশ্রুতি দেবে। কিন্তু প্ল্যাটফর্ম অর্থনীতির প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে আসল ছবিটা সামনে এল। ‘অ্যাকশন এইড’-এর সাম্প্রতিক গবেষণা দেখিয়েছে – এই ক্ষেত্রে মহিলারা নানা দিক থেকেই অসুরক্ষিত; কম মজুরি, সীমিত নমনীয়তা, নিরাপত্তার অভাব, লিঙ্গবৈষম্য, বিশেষ করে অ্যালগোরিদমিক ম্যানেজমেন্টের নানা অসৎ, অস্বচ্ছ কারসাজির দরুণ মহিলা কর্মীরা জেরবার হয়ে যাচ্ছেন, আরও শোষিত ও অপমানিত হচ্ছেন। কর্তৃপক্ষের ইচ্ছেমতো কাজ দেওয়া, রেটিং-এর তাড়না, যখন তখন অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া, “পুরুষদের মতো ওরা তাড়াতাড়ি সাড়া দিতে পারে না, বেশিক্ষণ কাজ করতে পারে না” এইসব বস্তাপচা অজুহাত ইত্যাদির জেরে মহিলা কর্মীদের মানসিক পীড়ন বাড়ছে।

মহিলাদের, বিশেষ করে, মহিলা ড্রাইভারদের সমস্যা রাস্তায় পরিচ্ছন্ন ও সুরক্ষিত শৌচাগারের অভাব। অনেক সময় গুগল দেখে শৌচাগার খুঁজতে গিয়ে সওয়ারীর খারাপ রেটিং, কোম্পানির জরিমানার মুখে পড়তে হয়। লিঙ্গবৈষম্যমূলক কথাও শুনতে হয় ‘গাড়ি চালাতে জানেন তো?’ এসব খুচরো সমস্যাও আছে দৈনিক দৌড়ে।

মহিলারা কর্তৃপক্ষের অন্যায়, অস্বচ্ছতার বিরুদ্ধে ক্রমশ প্রতিবাদমুখর হচ্ছেন। গত জুলাই মাসে আরবান কোম্পানির হাজার হাজার মহিলা গিগ শ্রমিক ভারত জুড়ে অন্তত আধ ডজন শহরে অস্বচ্ছ প্রতিক্রিয়া ও রেটিং-এর বিরুদ্ধে পথে নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।

প্রসাধন ও গৃহপরিচর্যা পরিষেবার অ্যাপনির্ভর ফার্মের মহিলা কর্মীরা কর্তৃপক্ষের নতুন নিয়ম আর অ্যাকাউন্ট ডিঅ্যাক্টিভেশনের বিরুদ্ধে দেশজোড়া প্রতিবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাদের হাতিয়ার শ’য়ে শ’য়ে হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ। আরবান কোম্পানির মহিলা গিগ কর্মীদের ‘অল ইন্ডিয়া গিগ ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন’-এর নেতৃত্বে। ভারতে মহিলা গিগ শ্রমিকদের এই প্রথম দেশজোড়া প্রতিবাদ হতে চলেছে।

দ্রুত প্রসারণশীল গিগ অর্থনীতিতে এমনিতেই পুরুষ প্রাধান্য রয়েছে। মহিলাদের কাজের বিপুলমাত্রায় অসংগঠিত চেহারার জন্য মহিলাদের ট্রেড ইউনিয়নে অংশ নেওয়া কার্যত কঠিন ছিল। কিন্ত এখন পরিস্থিতি দ্রুত পাল্টাচ্ছে। অনেক মহিলা ইউনিয়নে যোগ দিচ্ছেন। গিগ কর্মীদের অধিকারের দাবিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মহিলারা। আরও সুবিধাজনক অবস্থান ও নিজেদের তথ্যের ওপর নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তারা আলাপ-আলোচনা চালাচ্ছেন। সম্প্রতি রাজস্থানে ‘সূচনা এবং রোজগার অধিকার অভিযান’ নামে একটি মহিলা গোষ্ঠী গিগ কর্মীদের আইনি খসড়া তৈরিতে সাহায্য করেছে। তারই এক সদস্য রঞ্জিতা স্বামী ‘থম্পসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন’কে জানিয়েছেন “মহিলা গিগ শ্রমিকরা অন্য প্ল্যাটফর্মের শ্রমিকদের আন্দোলন দেখে উৎসাহিত, উদ্বুদ্ধ হচ্ছিলেন। তারা মোবাইলের মাধ্যমে সহজে আর তাড়াতাড়ি যোগাযোগ গড়ে তুলতে পেরেছেন, শহর বলেই; গ্রামে স্বভাবতই কাজটা আরেকটু কঠিন” ।

মঞ্জু গোয়েল উত্তর ভারতের মানেসর শহরে অ্যামাজন ওয়্যারহাউসে কয়েক মাস কাজ করেছেন। ওনার অভিজ্ঞতা- লম্বা লাইনে মেয়েদের দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়, ভারী বোঝা তুলতে হয়, কাজের ফাঁকে রেস্ট রুমে যাওয়ারও সুযোগ খুব কম। উনি উন্নত পরিস্থিতির দাবিতে এবং ব্ল্যাক ফ্রাইডে-তে বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদে সামিল হওয়ার জন্য ‘অ্যামাজন ওয়ার্কার্স’-এর তরফে হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ ও টুকরো আলাপের মাধ্যমে ৬০ জনের স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছিলেন। তিনি আরও জানান, আরবান কোম্পানির বিরুদ্ধে মহিলা গিগ কর্মীদের প্রতিবাদ দেখেই তারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। তার মত আরও অনেক একলা-মায়ের কষ্টের কথা, সমস্যার কথা তারা নিজেরা ছাড়া আর কে বলবে?

অ্যামাজনের এক মুখপাত্র অবশ্য তাদের অভিযোগ “সত্য নয়” বলে জানিয়ে বলেন, কোম্পানি মহিলাসহ সবার কাজের সুস্থ পরিবেশের নিশ্চয়তা দেয়। অ্যাসোসিয়েশনের স্বাধীনতা এবং সহযোগীদের কোনো প্রতিশোধ, হুমকি ও হেনস্থার ভয় ছাড়াই শ্রমিক সংগঠন গড়ার, তাতে যোগ দেওয়ার বা না দেওয়ার স্বাধীনতাকে সম্মান করে।

বাইক-সওয়ার ডেলিভারি সার্ভিসে থাকা কর্মীদের থেকে প্রসাধন ও গৃহ পরিচর্যা পরিষেবায় যুক্তদের সংগঠিত করাটা চ্যালেঞ্জিং, কারণ তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করাটাই মুশকিল। ২০২১-এর অক্টোবরে আরবান কোম্পানির মহিলা শ্রমিকরা বেশি কমিশনের দাবিতে এবং রেটিং সিস্টেমের অস্বচ্ছতা ও অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থা না থাকার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সংঘটিত করতে পেরেছিলেন কয়েক মাসের হোয়াটসঅ্যাপ আলোচনার পর। যখন বোঝা যায় সবার দাবি একই, তখন চুপচাপ পার্কে ছোট ছোট দলে মিটিং চলতে থাকে। জানিয়েছেন সীমা সিং, যিনি ঐ কোম্পানিতে চার বছর কাজ করার পর তার আইডি ব্লক করা হয়। দিল্লির কাছে গুরুগ্রামে কোম্পানির অফিসের বাইরে প্রায় দু’শো মহিলা শ্রমিক বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। ডিসেম্বরে হয় দ্বিতীয় বিক্ষোভ। বিক্ষোভের জেরে আরবান কোম্পানি কয়েকটি দাবি মেনে নিলেও, সীমা সহ চারজন মহিলা সংগঠকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিল যা ভারতের গিগ অর্থনীতিতে প্রথম।

জুলাই-এর বিক্ষোভে হাজার হাজার মহিলার সামিল হওয়া বুঝিয়ে দেয়, মহিলা শ্রমিকরা এই প্ল্যাটফর্মের অসততা ও অস্বচ্ছতা সম্পর্ক অনেক বেশি সচেতন হয়েছেন যদিও এখনও পর্যন্ত তেমন কিছু পাল্টায়নি – সীমার অভিমত। কোম্পানি অবশ্য এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত বছর বেতন, কাজের শর্তাবলী এবং পরিচালন ব্যবস্থার নিরিখে অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইন্সটিটিউট-এর ‘ফেয়ারওয়ার্ক’ নামক সমীক্ষায় উপরি উক্ত ফার্মটি ভারতের ডজন খানেক গিগ কোম্পানির মধ্যে শীর্ষস্থান পেয়েছিল!

জুলাই-এর প্রতিবাদের প্রতিক্রিয়ায় কোম্পানি জানিয়েছে – কয়েকজন অংশীদার পরিষেবার মান বজায় রাখতে না পারায় তাদের বিদায় নিতে বলা হয়েছে, “এক মুক্ত-দ্বার নীতি বজায় রাখতে ও অংশীদারদের সঙ্গে আলাপ আলোচনাকে উৎসাহিত করতে” নাকি কোম্পানি বদ্ধপরিকর। কিন্তু বিউটিশিয়ান সীমা পারভীন, যিনি আরবান কোম্পানির হায়দ্রাবাদ শাখায় দু’বছরের কর্মী এবং যার আইডি ব্লক করে দেওয়া হয়েছে, অ্যাপের মাধ্যমে কোম্পানির কারও কাছে আবেদন জানাতে পারেননি, একমাত্র যে পথটা তার কাছে খোলা ছিল। তিনি আক্ষেপ করে বলেছেন, “এই প্ল্যাটফর্ম যে কতজনের জীবন কেড়েছে! আমি এই রাজ্যের অন্তত দু’জন মহিলার কথা শুনেছি যারা আইডি ব্লক করে দেওয়ার পর নিরুপায় হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন”।

জুলাই-তে রাজস্থান সরকার এমন একটি প্রকল্প গ্রহণের জন্য বিল এনেছে যা ভারতের গিগ অর্থনীতিতে প্রথম। সেটি হল – অ্যামাজন জোম্যাটো আরবান কোম্পানির মতো সংস্থাগুলির প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ব্যবসায়িক লেনদেনের ওপর সারচার্জ বসিয়ে সেই অর্থে গিগ ও প্ল্যাটফর্ম শ্রমিকদের জন্য কল্যাণ তহবিল গঠন করা। কর্ণাটক ও তামিলনাড়ু সরকারও ইতিমধ্যে তাদের কল্যাণ, নথিভুক্তি ও অভিযোগ নেওয়ার জন্য কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। আন্দোলনকারীরা মনে করেন, ভারতে সংঘবদ্ধ হতে থাকা মহিলা গিগ কর্মীরা “এখন রাজনৈতিক আলাপ আলোচনায় তাদের নিজেদের পরিসর খুঁজে পেয়েছেন” যদিও তাদের সমর্থনে আইন পাস হতে সময় লাগবে।

ইউনিয়নে যোগ দিতে চাকরি হারানোর ভয় ছিল। আন্দোলন সংগঠকদের কেউ কেউ চাকরিও হারিয়েছেন। তা সত্ত্বেও আজ মহিলা গিগ শ্রমিকরা বৃহত্তর আন্দোলনের পথে। শ্রমিক শ্রেণিকে সংগঠিত করতে গেলে গিগ শ্রমিকদেরও সংঘবদ্ধ করতে হবে যেটা যথেষ্ট কঠিন কাজ। আর সেই কঠিন কাজেরই দায়িত্ব যথেষ্ট ঝুঁকি নিয়েও কাঁধে তুলে নিয়ে ভারতের মহিলা গিগ শ্রমিকরা এক ইতিহাস গড়তে চলেছেন। তাদের লড়াই জয়যুক্ত হোক।

ঋণস্বীকার : ইন্ডিয়া’স উইমেন গিগ ওয়ার্কার্স অর্গ্যানাইজ উইথ হোয়াটসঅ্যাপ, সিক্রেট মিটিংস : থম্পসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন (বিএল)    
- জয়ন্তী দাশগুপ্ত

by-modi-government-in-forest-lawin-forest-law
পরিবেশ ও বনবাসীদের অধিকারকে সঙ্কটে ফেলবে

দেশের প্রচলিত অরণ্য সংরক্ষণ আইনে বড়সড় পরিবর্তন ঘটালো বিজেপি সরকার। অরণ্য সংরক্ষণ আইন, ১৯৮০’র পরিবর্তন ঘটিয়ে নতুন সংশোধনী বিলটি ২৫ জুলাই ২০২৩ ধ্বনি ভোটে লোকসভায় পাস করানো হয়। এই সংশোধন অনুযায়ী সরকার অধিগৃহীত অরণ্যগুলিই এখন থেকে কেবল অরণ্য হিসেবে ধরা হবে। কিছু কিছু অরণ্যভূমিকে ব্যক্তি মালিকানায় বা বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য দিয়ে দেওয়া হবে। মুখে পরিবেশ ও অরণ্যরক্ষার কথা বলছে মোদী সরকার, কিন্তু যে আইন তারা করছে তা খতিয়ে দেখলে বোঝা যাচ্ছে বাস্তবে অরণ্য সম্পদের বাণিজ্যিকীকরণ এবং অরণ্যবাসীদের নানা অধিকার কেড়ে নেওয়াই তাদের এই নয়া আইনের উদ্দেশ্য।

১৯২৭ সালে ব্রিটিশ ভারতে যে বন আইন তৈরি হয়েছিল এই নয়া সংশোধনীতে তারই উত্তরাধিকার দেখা যায়। বিজেপি মুখে বলে যে তারা ঔপনিবেশিক ভারতের আইন কানুন রীতিনীতিকে বদলাতে চায়। কিন্তু তাদের কাজকর্ম ভালোভাবে বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় তারা মুখে জাতীয়তাবাদের বুলি আওড়ালেও কার্যক্ষেত্রে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের স্বার্থকে উপেক্ষা করে ভারতের জাতীয় সম্পদসমূহকে দেশি বিদেশি একচেটিয়া পুঁজিপতি মিত্রদের জন্য কুক্ষীগত রাখতে বদ্ধপরিকর।

ব্রিটিশ আমলের বন আইন অরণ্যের ওপর বনবাসীদের অধিকার খর্ব করে অর‍ণ্য সম্পদের যথেচ্ছ লুটের ব্যবস্থা পাকা করে দিয়েছিল তাদের মিত্রদের জন্য। স্বাধীনতার অনেক পরে ১৯৮০ সালে এই আইনে বেশ কিছু বদল আনা তাই জরুরী হয়ে পড়েছিল। বিজেপি আবার চাকা পরিবেশ ও অরণ্যবাসীদের বিরুদ্ধে ঘুরিয়ে দিতে চাইছে।

১৯৫০ থেকে ১৯৮০ সালের মধ্যে, আমাদের দেশে প্রায় ৪৩ লক্ষ হেক্টর অর্থাৎ ৪৩,০০০ বর্গ কিলোমিটার বনভূমি ধ্বংস করা হয়েছে। একদিকে সরকারের তরফে শিল্প, খনি, জলবিদ্যুৎ, পুনর্বাসন ও কৃষির মতো উন্নয়ন প্রকল্প, অন্যদিকে ব্যক্তিপুঁজির লোভ লালসা মেটাতে অরণ্যে বেআইনি দখল ছিল এই ধ্বংসের পেছনে থাকা মূল দুই কারণ।

১৯৭০’র দশক থেকে পরিবেশ আন্দোলন বিশ্বের নানা প্রান্তে জনপ্রিয় হতে শুরু করে। ১৯৭২ সালের স্টকহোম পরিবেশ সম্মেলন অরণ্য আইনকে নতুনভাবে তৈরি করার জন্য সরকারের ওপর চাপ তৈরি করে। ১৯৮০ সালের বন আইনে নতুন পরিবেশ চেতনা ও আন্দোলনের প্রভাব পড়েছিল। ১৯৫০ থেকে ১৯৮০ সাল অবধি নানা উন্নয়নমূলক কাজের জন্য ব্যাপকভাবে অরণ্য পরিবেশ ধ্বংস করা হয়েছিল। নতুন পরিবেশ সচেতনতা — নীতি ও দৃষ্টিভঙ্গী বদলের দিকটির ওপর সবচেয়ে বেশি জোর দেয়। পরিবেশ প্রকৃতি ধ্বংস করে তথাকথিত উন্নয়নের মডেলটি প্রশ্নের মুখে পড়ে।

এই নতুন পরিবেশ চেতনা ও আন্দোলনের প্রেক্ষাপটেই আসে ১৯৮০ সালের অরণ্য সংরক্ষণ আইন। এই আইন এই ধরণের ব্যাপক অরণ্য ধ্বংসের পরিমাণে হ্রাস ঘটাতে সক্ষম হয়। ১৯৮০ সালের আগে অরণ্য ধ্বংসের বার্ষিক হার ছিল ১,৪৩,০০০ হেক্টর। আইন প্রবর্তনের পর এই হার কমে দাঁড়ায় বার্ষিক ৪০,০০০ হাজার হেক্টর। কেন্দ্রীয় সরকার ফরেস্ট অ্যাডভাইজরি কমিটি (FAC) গঠন করে এবং বলে যে এই কমিটির অনুমোদন ব্যতিরেকে অরণ্যভূমিকে অন্য কোনওভাবে ব্যবহার করা যাবে না।

বিজেপি সরকার ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পরেই অরণ্য আইনকে শিথিল করে বনভূমিকে কর্পোরেটদের মুনাফার বাণিজ্যিক স্বার্থে ব্যবহারের সুযোগ করে দিতে থাকে। পরিবেশ ও অরণ্য রক্ষা সম্পর্কিত সমস্ত আইনের পরিবর্তন শুরু হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য ১৯২৭’র বন আইনে আমাদের দেশে তিন ধরনের অরণ্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল।

‌১)‌ রিজার্ভ ফরেস্ট — এখানে বনবাসীদের কোনও অধিকার ছিল না।   
২)‌ প্রোটেক্টেড ফরেস্ট — এখানে কেবল কাঠ নয় এমন বনজ সম্পদের উপর কিছু অধিকার বনবাসীদের ছিল।   
৩)‌ গ্রামের বনাঞ্চল — এগুলির ওপর গ্রামবাসীদের যৌথ অধিকার ছিল। অনেক ক্ষেত্রে বনবাসীদের ইষ্টদেবতার নামে কিছু বনাঞ্চল সংরক্ষিত থাকত।

২০১৮ সালের নতুন বন আইনে ১৯২৭’র আইনের সংশোধন করে আগের তিন ধরণের বনভূমির সঙ্গে আর এক ধরনের বনভূমিকে নতুন করে যুক্ত করা হয়েছে। একে বলা হয়েছে উৎপাদক অরণ্য। এর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে বনজ সম্পদ উৎপাদনের জন্য নির্দিষ্ট করা যেকোনো ধরনের বনাঞ্চলকে এই ধরনের বন হিসাবে চিহ্নিত করা যেতে পারে। পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্র রক্ষায় অরণ্যের যে ভূমিকার কথা ১৯৭২’র স্টকহোম পরিবেশ সম্মেলন বা ১৯৮০’র অরণ্য সংরক্ষণ আইনের মধ্যে দিয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল, উৎপাদক অরণ্যের প্রসঙ্গটি আইনিভাবে এনে বিজেপি সরকার তার একেবারে উল্টোপথে যাত্রা করল। এই উৎপাদক বনাঞ্চলগুলিকে এবার থেকে আসবাব তৈরির কাঠ, কাগজ তৈরির কাঠ, বিভিন্ন ধরনের অকাঠজাত বনজ সম্পদ, ঔষধি গাছ ইত্যাদি উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা যাবে। সন্দেহ নেই পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে অরণ্যের যে বৃহৎ ভূমিকা রয়েছে, এরফলে তা ব্যাপকভাবে সঙ্কটে পড়বে। এই উৎপাদক অরণ্যভূমি হবে কৃষিভূমির মতো।

- সৌভিক ঘোষাল

ecuador-pledges-to-protect-naturenature-in-referendum

ইকুয়েডর একটা ছোটো দেশ, আয়তনে ভারতের প্রায় ১২ ভাগের এক ভাগ, আর ভারতের জনসংখ্যা যেখানে ১৪২ কোটিকে ছাপিয়ে গেছে, ইকুয়েডরের জনসংখ্যা সেখানে মাত্র ১ কোটি ৮২ লক্ষ। কিন্তু ছোটো দেশও কখনও কখনও দৃষ্টান্ত স্থাপনের মধ্যে দিয়ে পৃথিবীর কাছে পথপ্রদর্শক হয়ে উঠতে পারে। গত ২০ আগস্ট ২০২৩ ইকুয়েডরের রাষ্ট্রপতি ও আইনসভার সদস্যদের নির্বাচিত করার ভোটের সঙ্গে দুটি বিষয়ে গণভোটও নেওয়া হল। গণভোটের বিষয় দুটো ছিল — পূর্ব অ্যামাজনের ইয়াসুনি জাতীয় পার্কে যে তেল খনি থেকে তেল তোলা হচ্ছে, সেই খনিতে থাকা ৭২৬ মিলিয়ন ব্যারেল তেল অনির্দিষ্ট কাল ধরে মাটির নীচেই থাকবে নাকি তার উত্তোলন অব্যাহত রাখতে হবে; আর অন্য বিষয়টা ছিল রাজধানী কুইটো সংলগ্ন চোকো অ্যানডিনো অঞ্চলে তামা, সোনা, রূপো ইত্যাদি খনিজ দ্রব্যের খনন চলতে থাকবে নাকি খনিগুলো থেকে উত্তোলনকে বন্ধ করতে হবে। দুটি বিষয়েই অনুষ্ঠিত জাতীয় ভোটে ইকুয়েডরের জনগণ তাঁদের রায়ে জানিয়ে দিলেন — দু’টি খনন কাজই পরিবেশের ক্ষতি করছে, মানুষের অস্তিত্বে বিপর্যয় ঘটাচ্ছে, ইকুয়েডর এবং তার সাথে পৃথিবীর ভবিষ্যতকেও বিপন্ন করে তুলছে, আর তাই দুটো শিল্প উদ্যোগকে অব্যাহত রাখাটা অসংগত হবে, সেগুলো থেকে তেল ও খনিজের উত্তোলনে যতি টানতে হবে। গণভোটে যাঁরা অংশ নিলেন তাঁদের ৫.২ মিলিয়ন বা ৫২ লক্ষ মানুষ ইয়াসুনি জাতীয় পার্কে তেল খনি বন্ধের পক্ষে মত দিলেন, এর বিপক্ষে মত দানের মানুষের সংখ্যা ছিল ৩৬ লক্ষ। অতএব তেল খনি বন্ধের পক্ষে রায় দাঁড়ালো প্রদত্ত মোট ভোটের ৫৯ শতাংশ। আর তামা, সোনা, রূপো উত্তোলনের খনি বন্ধের পক্ষে ৭০ শতাংশ ভোটদাতা তাঁদের সম্মতি জানালেন। ইকুয়েডর তেল সমৃদ্ধ দেশ, তেল বিক্রি থেকেই সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আসে সরকারি তহবিলে। ইকুয়েডরের সরকারি রাজস্বে খনিজ দ্রব্যের উৎপাদন ও বিক্রির অবদানও রয়েছে চার নম্বরে। তেল ও খনিজর উৎপাদন ও সেগুলির বিক্রয়ের হ্রাস মোট জাতীয় উৎপাদনে সংকোচন ঘটাবে, অর্থনীতিতে প্রতিকূল প্রভাব ফেলবে — এ’সম্পর্কে অবহিত হয়েও ইকুয়েডরের জনগণ তেল ও খনি সম্পদকে মাটির নীচে রেখে দেওয়ার বিকল্পকেই বেছে নিলেন। আশু লাভের চেয়ে ভবিষ্যতের সুরক্ষাই তাঁদের বিবেচনায় অধিকতর গুরুত্ব পেল।

পূর্ব অ্যামাজনের ইয়াসুনি জাতীয় পার্ক অঞ্চল জীব-বৈচিত্রের এক সমৃদ্ধ স্থান। এখানে রয়েছে রেনফরেস্ট বা ঘনবর্ষণের বনাঞ্চল। রয়েছে অন্তত ১১৩০ প্রজাতির গাছ, ৮০ প্রজাতির অধিক বাদুড়, প্রায় ৬০০ প্রজাতির পাখি এবং আরও অনেক প্রজাতির সরিসৃপ ও উভচর। অ্যামাজন হল এক গুরুত্বপূর্ণ কার্বন সিঙ্ক যা পরিমন্ডল থেকে কার্বন ডাইঅক্সাইড শুষে নিয়ে পরিমন্ডলকে নির্মল করে। বিজ্ঞানীরাও সতর্ক করে বলেছেন এবং এখনও বলছেন যে, অ্যামাজনকে ঘিরে যে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড চলছে তাতে অ্যামাজন দ্রুতই এমন একটা সংকটজনক পরিস্থিতিতে পৌঁছে যাবে, সেখানে এমন পরিবর্তন ঘটবে যার ফলে তার বুনিয়াদি বৈশিষ্ট্যগুলোকে ধরে রাখা বা সেগুলোকে ফিরিয়ে আনা হাজারো প্রচেষ্টাতেও আর সম্ভব হবে না, আটকানো যাবে না পরিবেশের সর্বনাশকে। এর মোকাবিলায় প্রতিবাদ প্রতিরোধও তাই জারি রয়েছে কয়েক দশক ধরে।

প্রেসিডেন্ট রাফাল ক্যুরির জমানায় ২০১৬ সাল থেকে রাষ্ট্রীয় তেল সংস্থা পেট্রো-ইকুয়েডরের পরিচালনায় এখানে তেল উৎপাদন শুরু হয়, এবং সেই উৎপাদন ইকুয়েডরে মোট উৎপাদিত তেলের ১২ শতাংশ বা ৫৭,০০০ ব্যারেল প্রতিদিন। এর পাশাপাশি প্রকৃতির এমন সংবেদনশীল অঞ্চলে তেল উত্তোলন বন্ধের দাবি ও প্রতিবাদও চলতে থাকে। তেল খনি বন্ধের প্রচারের সঙ্গে স্বাক্ষর সংগ্ৰহ অভিযানও চলে এবং ৭,৫০,০০০ স্বাক্ষর সংগৃহীত হয়। নির্বাচন পরিচালনার জাতীয় পরিষদ গণভোটের শর্ত পূরণ হয়েছে বলে স্বীকার করে নেয় এবং বিষয়টা এরপর যায় সাংবিধানিক আদালতে। সাংবিধানিক আদালত মে মাসে সিদ্ধান্ত নেয়, রাষ্ট্রপতি ও আইনসভার সদস্য নির্বাচনের সঙ্গেই উপরিউল্লিখিত দুটি বিষয় ব্যালটে অন্তর্ভুক্ত করে সেগুলিতে ভোট নেওয়া হবে। গণভোটের আগে কয়েক মাস ধরে পরিবেশবিদ এবং তেল খনি বন্ধ করা আন্দোলনের কর্মীরা সমাবেশ, জনসভা ও ডিজিটাল সমাজমাধ্যমের ওপর ভর করে প্রচার অভিযান সংগঠিত করেন। পরিবেশবিদরা এই রায়কে ‘ঐতিহাসিক’ বলে অভিহিত করেছেন এবং ফল বেরোনোর পর ইকুয়েডরের ওয়াওরানি সম্প্রদায়ের সহ-সভাপতি নর্মা নেমকুইমো জানিয়েছেন, “ইকুয়েডরের বিভিন্ন প্রদেশে প্রচার সংগঠিত করতে যাওয়াটা যথেষ্ট কাজের হয়েছে। আমরা অ্যামাজন, পার্বত্য এলাকা ও উপকূলবর্তী অঞ্চলে গিয়েছি — আর তার ফলাফল হল এই।” ঐ সম্প্রদায়ের আর এক নেতা নেমন্তে নেমকুইমোও বলেছেন, “আমাদের এখন তেল কোম্পানিগুলোকে বিদায় জানানো এবং জল, জমি ও জীবনকে বিজয়ী করার ক্ষমতা রয়েছে।”

তেল খনি থেকে লাভ পাওয়া একটা অংশ ইয়াসুনি জাতীয় পার্কের তেল খনি থেকে তেল উত্তোলন অব্যাহত রাখার পক্ষেই মত দিয়েছেন। ইকুয়েডরের খনন সম্পর্কিত বাণিজ্য চেম্বারের প্রধান মারিয়া ইউলালিয়া সিলভা রয়টারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “স্পষ্টতই, ইয়াসুনি এবং চিকো অ্যানডিনোতে যা ঘটল তা তেল বা খনন কাজে সহায়তা করবে না, বনাঞ্চলে বিনিয়োগেও না। জনগণ দারিদ্র্য জর্জরিত থাকলে পরিবেশকে রক্ষা করা যাবে না।” বাণিজ্য সংগঠনের প্রধান যা বলছেন তার মর্মার্থ হল — শিল্পপতিদের বিনিয়োগ করতে না দিলে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে না, বেকারি বাড়বে, ফলে জনগণকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে না এবং তার পরিণামে পরিবেশও নিরাপদ থাকবে না। যে বিনিয়োগ প্রকৃতিকে ধ্বংস করে শেষের শুরুর সূচনা ঘটাচ্ছে আজ তা পৃথিবীর কাছে কতটা ভরসাস্থল হতে পারে? পৃথিবীতে কোনো প্রকল্প থাকবে না এমন কথা বলার কোনো অবকাশই নেই। আজকের পৃথিবীতে প্রকৃতির সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা করেই উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে চালিত হতে হবে, এবং পুঁজির অবাধ ছাড়পত্র কখনই সেই দিশার অনুগামী হবে না। পুঁজির ওপর রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ আজ তাই অনেক বেশি আবশ্যক হয়ে উঠেছে। দূষণ কমাতে গেলে তার ধাক্কা ধনীদের তুলনায় অনেক বেশি পড়ে দরিদ্রদের ঘাড়ে। আর তাই জীবাশ্ম জ্বালানি-মুক্ত পৃথিবী গড়ে তুলতে গেলে জনগণের সামনে যে এক কঠিন লড়াই রয়েছে তা অবোধগম্য হওয়ার নয়।

ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রথম দফার ভোটে ফলাফলের নিষ্পত্তি হয়নি। আট প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে কেউই ৫০ শতাংশ ভোট পাননি বা ৪০ শতাংশ ভোট ও নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে ভোটের ব্যবধানকে ১০ শতাংশে রাখতে পারেননি। প্রথম দুই প্রতিদ্বন্দ্বী লুইসা গনজালেজ (প্রাপ্ত ভোট ৩৩.৬১ শতাংশ) এবং ভ্যানিয়েল নোবোয়ার (প্রাপ্ত ভোট ২৩.৪৭ শতাংশ) মধ্যে দ্বিতীয় দফার নির্বাচন হবে ১৫ অক্টোবর ২০২৩। যিনিই নির্বাচিত হোন না কেন, তেল জনিত রাজস্ব কমে যাওয়া এবং কিছু কর্মসংস্থান লোপের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে অবশ্যই সমাজ ও অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণে কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়তে হবে।

ইকুয়েডরের গণভোট ভারতবাসীর কাছেও এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হয়ে দেখা দিচ্ছে। জীবাশ্ম জ্বালানি নিয়ন্ত্রণ এবং বনভূমি সংরক্ষণ সারা পৃথিবীর সামনে এবং ভারতের কাছেও এখন এমন এক কর্তব্য হিসাবে হাজির হয়েছে যাকে আর কিছুতেই উপেক্ষা করা যাচ্ছে না। অর্থনীতির বৃদ্ধি ঘটাতে গিয়ে পরিবেশকে জলাঞ্জলি দেওয়ার স্বেচ্ছাচারের পরিহার অত্যাবশ্যকীয় হয়ে দেখা দিচ্ছে। মোদী সরকারের তৈরি নতুন বন আইনের অনুসারী হয়ে গ্রামসভার অনুমোদন না নিয়েই কি আমরা ‘উন্নয়নের স্বার্থে’ কর্পোরেটদের বন ধ্বংস করতে দেবো? ‘উন্নয়নের স্বার্থে’ই বৃক্ষছেদনের বিপুল আয়োজন ও জলাভূমি বোজানোকে বাধাহীনভাবে চলতে দেবো? হিমাচলপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড ও দিল্লীর বন্যা এবং গ্রীষ্মপর্বে পশ্চিমবাংলার তাপমাত্রা প্রায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়ে উষ্ণতায় আফ্রিকাকে ছাড়িয়ে যাওয়া, ঘূর্ণিঝড়ে সুন্দরবনের তছনছ হওয়া — চরম আবহাওয়া জনিত বিপর্যয়ের এই নিদর্শনগুলো কি ‘উন্নয়নের’ অপরিণামদর্শী কর্মযজ্ঞে লাগাম পরাতে আমাদের প্রণোদিত করবে না? সর্বোপরি, ইকুয়েডরের জনগণ সেখানকার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অনুমতিতে দুটো বিষয়ে তাঁদের মতামত জানানোর অধিকার পেলেন। পরিবেশ সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত গ্ৰহণে ভারতের জনগণও কি নিজেদের অভিমত জ্ঞাপনে গণতান্ত্রিক রীতির অবাধ প্রয়োগের অধিকারী হতে পারবেন না?

tapan-duttatapan-dutta

কমরেড তপন দত্ত, হিন্দমোটর ৪নং শাখার পার্টি সদস‍্য ও হিন্দমোটর কারখানার অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক ছিলেন। গত তিনমাসের রোগভোগে প্রথমে কলকাতা মেডিকেল, পিজি ও শেষে হিন্দমোটর রিলাইফ হাসপাতালে ভর্তি হন। হার্ট ব্লকেজ, সিরোসিস অফ লিভার, কিডনী ফেলিওর সহ নানাবিধ সমস্যা জর্জরিত করে তোলে তাঁকে। অবশেষে গত ২৫ আগস্ট ২০২৩ ভোরে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। নকশালবাড়ি আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি স্কুল জীবন থেকেই নবদ্বীপে পার্টির গোপন কাজে যুক্ত হন, অংশ নেন নাট্যাভিনয় সহ বিবিধ সাংস্কৃতিক কার্যকলাপেও। পরবর্তীতে হিন্দমোটর কারখানার চাকরির জন্য হুগলি জেলায় আসা। একজন পার্টিজান কমরেডকে আমরা হারালাম। রেখে গেলেন স্ত্রী, মেয়ে, ছেলে, পুত্রবধূ ও নাতিকে। পার্টির হিন্দমোটর লোকাল কমিটির পক্ষ থেকে ১০ সেপ্টেম্বর তাঁর স্মরণসভা আয়োজিত হয়। কমরেডের স্ত্রী জয়শ্রী দত্ত, পুত্র গৌরব ও ওনার মেজদি’র স্মৃতিচারণে গুমরে ওঠা কান্না উপস্থিত সবাইকে ছুঁয়ে যায়। নিঃস্তব্ধ সভাগৃহে যেন ছড়িয়ে পড়ে শিশির ভেজা শিউলি ফুল। কমরেড পার্থ ঘোষ বলেন, “আমাদের পরিবার ছোটো, তাই একজন মানুষ চলে যাওয়া পার্টির কাছে বড় ক্ষতি।” স্মরণসভায় বক্তব্য রাখেন হুগলি জেলা সম্পাদক প্রবীর হালদার, উত্তরপাড়া জোন এরিয়া সম্পাদক অপূর্ব ঘোষ, হিন্দমোটর লোকাল সম্পাদক বিশ্বজিৎ দাস, সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতির সংগঠক সুদীপ্তা বসু, এআইসিসিটিইউ’র সংগঠক প্রদীপ সরকার, এরিয়া সদস্য স্বপন মজুমদার, শাখা সম্পাদক অশোক গুহ ও কোন্নগর লোকাল সম্পাদক সৌরভ রায়। শেষ হয় নচিকেতার গান ‘এক বোকা বুড়োর গল্প’র মধ্যে দিয়ে।

=== 000 ===

খণ্ড-30
সংখ্যা-32