খবরা-খবর
রাজ্যভাগের বেদনাদায়ক স্মৃতি উস্কে দেওয়ার বিজেপি প্রকল্প খারিজ হল
memories-of-partition-rejected

২৯ অগস্ট ২০২৩ রাজ্য সরকার নবান্নে এক বৈঠকের আহ্বান করেন বিজেপির প্রস্তাবিত ২০ জুনকে পশ্চিমবাংলা দিবস হিসাবে পালন করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে নাকচ করেই শুধু নয়, বাংলা বিভাজনের এক রক্তাক্ত অধ্যায়কে নিজেদের সাম্প্রদায়িক ফ্যাসিস্ট অ্যাজেন্ডার কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত করার যে প্রকল্প নিয়ে দিল্লীর নির্দেশে রাজ্যপাল অগ্রসর হচ্ছিলেন, উক্ত বৈঠক তা পুরোপুরি খারিজ করে দিল।

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সিপিআই(এমএল) লিবারেশন ও এসইউসিআই(সি) ছিল। সমাজের প্রায় সমস্ত স্তরের মানুষকে প্রতিনিধিত্ব করছে, এমন প্রায় সমস্ত সামাজিক, ব্যবসায়িক সংগঠন (ফিকি, বেঙ্গল চেম্বার অফ কমার্স, প্রভৃতি), ফুটবল জগতে তিনটি প্রধান ক্লাবের কর্মকর্তা (মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল ও মহামেডান স্পোর্টিং), বিভিন্ন সংবাদ ও বৈদ্যুতিন মাধ্যমের প্রতিনিধি, সমস্ত ধর্মীয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি, বেশ কয়েকটি সামাজিক সংগঠন, অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভার প্রতিনিধি, বুদ্ধিজীবী (যারা বেশিরভাগই শিবিরের), গৌতম ঘোষের মতো চিত্র পরিচালক, এছাড়া আমলা পুলিশ কর্মকর্তারা।

১৯৪৭ সালের ২০ জুন দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে বাংলাভাগের সিদ্ধান্ত বিধানসভায় গৃহীত হয়। রাজ্য সরকারকে না জানিয়ে, পুরোপুরি অগোচরে রেখে, ফের সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের লক্ষ্যে সেই বেদনাদায়ক ইতিহাসকে ফিরয়ে আনার কেন্দ্রীয় সরকারের চক্রান্তের বিরুদ্ধে, ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ স্থির করার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা মুখ্যমন্ত্রী বলেন, যার ভিত্তিতে আলোচনা শুরু হয়। রাজ্য সরকারের মূখ্য পরামর্শদাতা আলাপন বন্দোপাধ্যায় প্রথমেই বিভিন্ন রাজ্যে ঘোষিত রাজ্য দিবসের তারিখ ও রাজ্য সঙ্গীত সম্পর্কে একটা প্রতিবেদন পাঠ করেন। এরপর একে একে বিভিন্ন সংগঠন বক্তব্য রাখা শুরু করেন।

‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’, ‘বাংলা দিবস’, ‘বিশ্ববঙ্গ দিবস’ — এই তিনটি নামকরণ উঠে আসে। পয়লা বৈশাখ, রাখী বন্ধনের দিন, ১৯ অগস্ট, প্রভৃতি একাধিক দিন ওই দিবসের জন্য প্রস্তাবিত হলেও, পয়লা বৈশাখের পক্ষেই সংখ্যাগরিষ্ঠ মত প্রকাশ পায়। আর রাজ্য সঙ্গীত হিসাবে প্রস্তাবিত হয় ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’ রবীন্দ্রসঙ্গীতটি। মুখ্যমন্ত্রী উক্ত গানে ‘বাঙালি’র বদলে ‘বাংলা’র পক্ষে ছিলেন। এই শব্দের পরিমার্জন নিয়ে কিছু আপত্তি ওঠায় ঠিক হয় পরবর্তীতে এ’ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

পার্টি রাজ্য কমিটির পক্ষ থেকে মুখ্যন্ত্রীর উদ্দেশ্যে এক চিঠি মারফত মতামত জানানো হয় যা সভাকক্ষে পাঠ করেন পার্টির পলিটবুরো সদস্য কার্তিক পাল। রাজ্য কমিটির পক্ষ থেকে অতনু চক্রবর্তীও ওই বৈঠকে অংশ নেন।


partition-rejected

১৯৪৭ সালের ২০ জুন বাংলার ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক দিন। সেদিনের সাম্প্রদায়িক রাজনীতির আধার হিন্দু মহাসভা, ভারতীয় জনসংঘ, আরএসএসের নেতৃবৃন্দ ও অন্যদিকে মুসলিম লীগের প্রত্যক্ষ ভূমিকায় দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে বাংলাভাগের সিদ্ধান্ত বিধানসভায় গৃহীত হয়।

সেদিনের বাংলাভাগের কান্ডারীদের উত্তরসূরি বিজেপি অতীতের ধর্মভিত্তিক সংঘাতের ইতিহাসকে খুঁচিয়ে তুলতে আজ বাংলার রাজ্যপালের মাধ্যমে ঐ কলঙ্কিত ২০ জুনকে রাজভবনে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ হিসাবে পালন করেছে। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে বাংলার বুকে সাম্প্রদায়িক উন্মাদনা তৈরি করার এটি একটি অন্যতম ফ্যাসিবাদী কৌশল।

আমরা বাংলার মাটিতে মোদী-শাহদের এই অপকৌশলকে ব্যর্থ করতে বিরোধীদের ঐক্যের পক্ষে এবং ২০ জুন দিনটিকে ক্ষতলাঞ্ছিত ইতিহাসের আস্তাকুঁড় থেকে তুলে এনে মহিমান্বিত করার সম্পূর্ণ বিরোধী।

আমরা মনে করি যদি ২০ জুনের প্রতিস্পর্ধী কোনো একটি নির্দিষ্ট দিনকে বেছে নিতে হয়, তবে বাংলার বহুত্ববাদী সংস্কৃতি, বহুস্বরের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা অসাম্প্রদায়িক ঐতিহ্যের অনুসারী অন্য কোনো উজ্জ্বল ইতিহাস চিহ্নিত দিনকে সর্বসম্মতিতে গ্রহণ করা যেতে পারে।

- অভিজিৎ মজুমদার, সিপিআই(এমএল) লিবারেশন, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি


খণ্ড-30
সংখ্যা-30