গত ৯ আগস্ট বিশ্ব আদিবাসী দিবসে বাঁকুড়ার মাচানতলার আকাশ মুক্ত মঞ্চে দুপুর ১১টা থেকে দুপুর ৩টে পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়। এই অবস্থানে বক্তব্য রাখেন সারা ভারত কিষান মহাসভার জেলা নেতা আদিত্য ধবল, ভারতীয় খেতমজুর ইউনিয়নের জেলা নেতা কল্যাণ সিং, বাঁকুড়া কোর্টের বার এসোসিয়েশনের সদস্য শৌভিক বিশ্বাস, বিশিষ্ট আইনজীবী অভিষেক বিশ্বাস, আদিবাসী অধিকার ও বিকাশ মঞ্চের জেলা নেতা রামনিবাস বাস্কে, বিশিষ্ট শিক্ষক সহদেব মান্ডি যিনি নিজের ভাষায় বক্তব্য রাখেন, এছাড়াও বক্তব্য রাখেন প্রগতিশীল মহিলা সমিতির রাজ্য নেত্রী তিতাস গুপ্ত, বিশিষ্ট সামাজিক কর্মী পরিবেশবিদ শান্তব্রত সেন। সভা পরিচালনা করেন এআইএআরএলএ জেলা সভাপতি বাবলু ব্যানার্জি। সভায় সকল বক্তাই বলেন আজ বড় বড় সভা করে সরকারের পক্ষ থেকে আদিবাসীদের সংবর্ধনা দেওয়া হবে অপরদিকে বিজেপি সরকার বন সংরক্ষণ সংশোধন আইন কোন আলোচনা ছাড়াই লোকসভায় পাস করিয়ে নিল। এর ফলে আদিবাসীদের দখলীকৃত বনের জমি বড় বড় কর্পোরেটদের হাতে তুলে দিতে কোন বাধা রইল না। এর ফলে বনের জমি-বনজ সম্পদ থেকে আদিবাসীরা উচ্ছেদ হবে। আর আদিবাসীদের কাছ থেকে জমি কেড়ে নেওয়ার জন্য বিজেপি জাতি দাঙ্গা লাগিয়ে দিতে পিছপা নয়। উদাহরণ মনিপুর। মনিপুরের ডবল ইঞ্জিনের সরকার তিন মাস ধরে ইন্টারনেট বন্ধ করে জাতিদাঙ্গা লাগিয়ে রেখেছে। এই দাঙ্গায় সবচেয়ে বেশি অত্যাচারিত হচ্ছেন মহিলারা। মনিপুরের দাঙ্গা মহিলা নির্যাতন নিয়ে মন কি বাতের প্রধানমন্ত্রীর বাতের সময় নেই। শুধু মনিপুর নয় সারা দেশেই এরা জাতি দাঙ্গা লাগাতে চাইছে আমাদের রাজ্য আমাদের জেলাতেও চক্রান্ত করে চলেছে। আমাদের জেলায় ছাতনা ব্লকের মহসিনা গ্রামের দীর্ঘদিন ধরে আদিবাসীদের দখলে থাকা প্রায় ১৫ বিঘা জমিতে গাছ লাগিয়ে দিচ্ছে এখানেও সেই একই পন্থা নিজেদের মধ্যে মারপিট লাগিয়ে দাও। বক্তারা আরো বলেন শুধু বনের জমি নয়, মনিটাইজেসন পাইপ লাইনের মধ্য দিয়ে এরা দেশের রেল স্টেশন-বিমান বন্দর-খনি-জাতীয় সড়কের দুই পাশ কর্পোরেটদের বিক্রি করে দিচ্ছে। বাঁকুড়া স্টেশনের জায়গাও বিক্রি করে দেবে — এর ফলে বহু মানুষ কাজ হারাবে, তাই এই সরকারটার বিরুদ্ধে সকলকে একজোট হতে হবে।
অবস্থান থেকে বাঁকুড়ার জেলাশাসক, জেলা বনাধিকার এবং দেশের রাষ্ট্রপতিকে পৃথক পৃথক স্মারকলিপি দেওয়া হয়। স্মারকলিপি দিয়ে আসার পর সঞ্চালক বাবলু ব্যানার্জি সমাপ্তি ভাষনে বলেন আজকের দিনে বিজেপির নয়া ব্রাহ্মণ্যবাদ আদিবাসী-দলিত-সংখ্যালঘু-মহিলাদের সামাজিকভাবে হেয় করছে। মধ্যপ্রদেশে যেমন দলিত যুবকের গায়ে মূত্রত্যাগ করে দিচ্ছে আবার কেথাও গায়ে পায়খানা লেপে দেওয়া হচ্ছে অপরদিকে চলন্ত ট্রেনে আরপিএফে কর্মরত যুবক যোগী-মোদির স্লোগান দিতে দিতে সংখ্যালঘুদের গুলি করে দিচ্ছে আর এগুলোকে বৈধতা দিতে এসসি/এসটি নিপীড়ন বিরোধী আইনকে লঘু করা হচ্ছে। আমাদের রাজ্যে ২০২১ সালের নির্বাচনে বিজেপিকে যেহেতু এরাজ্যের মানুষ ভোট দেয়নি তাই উচিত শিক্ষা দিতে দু-বছর ধরে কেবল আমাদের রাজ্যেই ১০০ দিনের কাজ বন্ধ করে মজুরি বকেয়া রেখেছে। অজুহাত, চুরি হচ্ছে। যারা চুরি করছে তাদের উপযুক্ত শাস্তি হোক কিন্তু গরিব মেহনতি মানুষ কেন বঞ্চিত হবেন? আসলে আমাদের রাজ্যে কাজ বন্ধ রেখে ইচ্ছাকৃতভাবে মজুরি কম রেখে বাইরে কাজ করতে যেতে বাধ্য করিয়ে আমাদের মেহনতি মানুষের শ্রম লুঠ করা হচ্ছে। নিরব মোদী-বিজয় মালিয়ার মতো মানুষরা ব্যাঙ্কের টাকা ধার করে শোধ না দিয়ে যারা বিদেশে চলে গেছে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য মোদি-শাহ ১৫ লাখ কোটি টাকা মকুব করে দিচ্ছে অপরদিকে গরিব মেহনতি মানুষ যাদের নিজেদেরই করের টাকার সামান্য কিছু সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে পান তাদের মোদি-শাহ বলছেন অনুগ্রহজীবী, ধান্দাবাজ। এটা আসলে মেহনতি মানুষদের অপমান। এই অপমানের জবাব দেওয়ার জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তিনি আরো বলেন আজ শুধু আদিবাসী দিবস নয় আজ ভারত ছাড়ো দিবস। ১৯৪২ সালের আজকের দিনে ভারতের শ্রমিক-কৃষক জোট বেঁধে ডাক দিয়েছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ ভারত ছাড়ো। তেমনি করে আজ ১৯২৩ সালের ৯ আগষ্ট শ্রমিক, কৃষক, ছাত্র, যুব সকল মেহনতি মানুষদের ঐক্যবদ্ধ করে আওয়াজ তুলতে হবে দেশ বেচনেওয়ালা দাঙ্গাবাজ দলিত, আদিবাসী, সংখ্যালঘু সংবিধান বিরোধী মোদি-শাহ পরিচালিত বিজেপি সরকার ভারত ছাড়ো।