খবরা-খবর
কলকাতায় সর্বোদয় সংঘের প্রেস মিট
press-meet-in-kolkata

উত্তরপ্রদেশে বুলডোজার রাজ!
উচ্ছেদ করা হলো গান্ধীবাদী সর্বসেবা সংঘ!
কলকাতায় প্রতিবাদ।

উত্তর প্রদেশে ‘বুলডোজার রাজ’ চালু করে বিজেপি সরকার সমস্ত ভিন্ন মতাবলম্বীদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু করে তুলেছে। যোগী-মোদী রাজত্বে সংখ্যালঘু, দলিত, কমিউনিস্টদের পাশাপাশি হামলা নামানো হয়েছে গান্ধীবাদীদের উপর। উত্তরপ্রদেশের বেনারসে গান্ধীবাদী আদর্শে কর্মরত সর্বসেবা সংঘ প্রতিষ্ঠানটিকে উচ্ছেদ করে দেওয়া হয়েছে, যার বেনারস ক্যাম্পাস, ১৩ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত, বিগত ৬৩ বছর ধরে কাজ চালাচ্ছে সেটি এখন পুলিশী দখলদারীর মধ্যে। সর্বসেবা সংঘ এই ক্যাম্পাস নির্মাণে ১৯৬০ সালে শহরের উপকন্ঠে রেলের কাছ থেকে ১৪ একর জমি কেনে। এইখানেই গড়ে ওঠে সর্বসেবা আশ্রম। ১৯৬৩ সালে জয়প্রকাশ নারায়ণ এখানে গড়ে তোলেন ‘গান্ধী বিদ্যা সংস্থা’ নামে বুনিয়াদি শিক্ষার বিদ্যালয়। এই সমগ্র প্রতিষ্ঠানটিকে উচ্ছেদ করে দেওয়া হয়েছে। অজুহাত হিসাবে রেলের জমি বেসরকারি কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে, আসলে এ হল ভিন্ন মতাদর্শকে মুছে দেওয়ার চক্রান্ত! ভয় ও আতংকের পরিবেশ সৃষ্টি করা। একে দেশের বুকে ফ্যাসিষ্ট একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টা রূপে চিহ্নিত করে সংগঠনের পক্ষ থেকে সারা দেশজুড়ে প্রতিবাদের ডাক দেওয়া হয়।

গত কয়েক মাস যাবৎ উত্তরপ্রদেশ পুলিশ ও উত্তর প্রদেশের যোগী সরকার এই আশ্রম তুলে দেওয়ার জন্য হুমকি দিয়ে যাচ্ছিল। জমির কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও তারা কোনো কথা শুনতে নারাজ। ওই কেন্দ্রের সাংসদ হওয়া সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কোনও আলোচনায় বসতে চায়নি। সংশ্লিষ্ট গ্রামটিকে তিনি নাকি ‘দত্তক’ নিয়েছেন। অথচ গ্রামবাসীদের সমর্থন রয়েছে সর্বসেবা সংঘের প্রতি। গত একমাস যাবৎ গান্ধীবাদী কর্মীরা আশ্রম প্রাঙ্গণে অবস্থান করছিলেন। তাঁরা জেলা আদালত থেকে হস্তক্ষেপ ও উচ্ছেদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা চেয়েছিলেন। আদালত নিষেধাজ্ঞা না দিয়ে ২৮ জুলাই শুনানির তারিখ দেয়। এই সুযোগে প্রায় ১০০০ রাজ্য পুলিশ ও আরপিএফ গত ২৩ জুলাই আশ্রমটি দখল করে। আশ্রমিকদের তাদের ঘর থেকে বহিস্কার করে ফাইল, দরকারি চিঠিপত্র, লাইব্রেরী তছনছ করে দেয়। তারপর শিশুদের বুনিয়াদি বিদ্যালয়টি বন্ধ করে দেয়। ২৩ জুলাই সর্বোদয় কর্মীদের পুলিশ গ্রেপ্তার করে। যাঁদের মধ্যে রয়েছেন সর্বসেবা সংঘের সর্ব ভারতীয় সভাপতি চন্দন পাল ও বেনারস মণ্ডলের সভাপতি রাম ধীরাজ। তারা সম্প্রীতি জামিনের মুক্তি পেয়েছেন।

এর প্রতিবাদে কলকাতা প্রেস ক্লাবে গত ৩১ আগস্ট ২০২৩ অনুষ্ঠিত হল প্রতিবাদী সাংবাদিক সম্মেলন। বিজেপি বাদ দিয়ে সমস্ত রাজনৈতিক দলকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সর্বভারতীয় সভাপতি চন্দন পাল এই সংগঠনের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন, আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের কালপর্বে মহাত্মা গান্ধী গড়ে তুলেছিলেন ‘সর্বসেবা সংঘ’। যা গত ১০০ বছর ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের প্রত্যন্ত গ্রামে ও শহরতলিতে দরিদ্র মানুষের মধ্যে গঠনমূলক কাজ করে চলেছে। আমাদের রাজ্যেও পশ্চিমবঙ্গ সর্বোদয় মন্ডল দীর্ঘ আট দশক যাবৎ মহাত্মা গান্ধীর আদর্শকে পাথেয় করে কিছু গ্রামে বিভিন্ন গঠনমূলক কাজ করে চলেছে। চরকা ও তাঁতের প্রচলন, হস্ত শিল্পের সংরক্ষণ, অস্পৃশ্যতা দূরীকরণ, বুনিয়াদি শিক্ষার প্রচলন প্রভৃতি গঠনমূলক কাজই হচ্ছে আমাদের কাজের বৈশিষ্ট্য। মহাত্মা গান্ধী নিহত হবার পর আচার্য বিনোবা ভাবে ‘সর্বসেবা সংঘের’ দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর সঙ্গে পরবর্তী কালে এই গঠনমূলক কর্মকাণ্ডে যোগ দেন জয়প্রকাশ নারায়ণ। বিনোবাজি ও জয়প্রকাশজির উদ্যোগে এবং রাষ্ট্রপতি বাবু রাজেন্দ্রপ্রসাদের একান্ত সমর্থনে ১৯৬০ সালে বেনারসের উপকন্ঠে রেলের কাছ থেকে ১৪ একর জমি কেনা হয়। তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যে গুজরাট সরকার মহাত্মার স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহাসিক ‘সবরমতি আশ্রম’ দখল করেছে। মহাত্মা গান্ধীর অহিংস শোষণমুক্ত সমাজ গঠনের স্বপ্ন এখন আক্রমণের সম্মুখীন। দেশ আজ হিংসায় ছেয়ে গিয়েছে। মণিপুরে কি হচ্ছে আমরা দেখতে পাচ্ছি। সংস্কারের নামে জালিয়ানওয়ালাবাগের ইতিহাস পাল্টে দেওয়া হয়েছে। এই বছর মোদী সরকার ‘গান্ধী শান্তি পুরস্কার’ দিয়েছে মহাত্মার হত্যাকাণ্ডের সমর্থক গোরক্ষপুরের গীতা প্রেসকে।

সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন প্রদেশ কংগ্রেসের সহ সভাপতি ডাঃ মায়া ঘোষ, পিডিএসের সমীর পুততুন্ড, সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের জয়তু দেশমুখ, সপ্তাহের সম্পাদক দিলীপ চক্রবর্তী, সিপিআই’এর সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য প্রবীর দেব, কালান্তরের সম্পাদক কল্যান ব্যানার্জী, প্রবীন গান্ধীবাদী ও মানভুম ভাষা আন্দোলনের নেতা কাজল সেন, প্রসাদ দাসগুপ্ত, পশ্চিমবঙ্গ সর্বোদয় মন্ডলের সভাপতি বিশ্বজিৎ ঘোড়ুই, কংগ্রেস নেতা অমিতাভ সিংহ প্রমুখ। সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সপ্তাহ পত্রিকার সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য শান্তনু দত্ত চৌধুরী।

খণ্ড-30
সংখ্যা-26