গত ২৬-২৭ জুলাই ২০২৩ মৌলালী যুবকেন্দ্রে রাজ্য কমিটির বৈঠকের শুরুতে বিগত সময়ে প্রয়াতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। যথা বিশিষ্ট কমিউনিস্ট বিপ্লবী নেতা সনৎ রায়চৌধুরী, গণবিজ্ঞান আন্দোলনের অগ্রণী ব্যক্তিত্ব সমর বাগচী, হুগলী জেলার পার্টি কর্মী দিনেশ দাস, হাওড়া জেলার পার্টি কর্মী সুপ্রভা বেরা, জলপাইগুড়ি জেলার দীর্ঘদিনের পার্টি কর্মী রূপেশ্বর রায়, নাট্যকর্মী ও পার্টি দরদী সুমিত বিশ্বাস (গোপ), মহিনের ঘোড়াগুলির বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী তাপস দাস।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত রাজ্য পঞ্চায়েত নির্বাচন শাসক তৃণমূলের প্রবল সন্ত্রাস, পুলিশ ও দলীয় দুস্কৃতিদের দ্বারা হত্যাকান্ড, অপহরণ সব মিলিয়ে তৃণমূলস্তরে গণতন্ত্র হরণ ও হিংসার ঘটনাবলীকে সামনে নিয়ে এনেছে। যদিও কিছু এলাকায় মানুষের পাল্টা প্রতিরোধের দিকগুলিও দেখা গেছে। কিছু জেলায় আমাদের কর্মীরা তীব্র সন্ত্রাসের মুখোমুখি হয়েছেন। প্রবল প্রতিকূলতার মুখে দাঁড়িয়ে সাহসী ভূমিকা গ্রহণ করায় লড়াকু কর্মীবাহিনীকে রাজ্য কমিটি সংগ্রামী অভিনন্দন জানায়।
কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলিকে ব্যবহার করে, কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকাকে বাড়িয়ে, বিভাজন ও হিংসার রাজনীতি ফেরি করে, অর্থের বিপুল ব্যবহার করেও বিজেপির নির্বাচনী ফল মোটেই তাদের আশানুরূপ হয়নি। বরং তাদের প্রাপ্ত ভোট ৩৯ শতাংশ থেকে ২১ শতাংশ হয়েছে। বিজেপির এই অধোগতি স্পষ্ট। তাঁদের কেন্দ্রীয় ক্ষমতার দাপট বা রাজ্যের বেশ কয়েকটি স্থানে দাঙ্গা লাগানোর পরিকল্পিত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ বা বিভিন্ন পরিচিতি সত্তাকে সপক্ষে নেওয়ার অপকৌশল তেমন সাফল্য লাভ করেনি। সব মিলিয়ে গ্রামবাংলার এই গণরায়ে বিজেপি বিরোধীতার দিকটা আগের তুলনায় বেড়েছে। বামপন্থীদের ভোট বেড়েছে প্রায় ১২ শতাংশ।
অন্যদিকে চরম অর্থনৈতিক সঙ্কটের বর্তমান বাস্তবতায় রাজ্য সরকারের কিছু জনমোহিনী প্রকল্প ও ব্যাপক প্রচার ফলাফলে ছাপ রেখেছে।
সীমাবদ্ধ স্বশাসিত সংস্থা রূপে পঞ্চায়েত ব্যবস্থা এবং গ্রামসংসদ তথা জনগণের অংশগ্রহণকে জলাঞ্জলি দিয়ে তৃণমূল দলীয় ও সরকারি আমলাতন্ত্র কায়েম করেছে। গ্রামাঞ্চলে ক্রমবর্ধমান বেকারত্বের পরিপ্রেক্ষিতে কাজের প্রশ্নে বা কৃষি সহায়তা প্রভৃতি ক্ষেত্রে সীমাহীন লুঠতন্ত্র চালিয়েছে। নির্বাচনে আশানুরূপ ফলাফল অর্জন করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। মোট পাঁচটি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে আমরা জয়লাভ করি, আরো ১৫টি আসনে আমরা দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছি। এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামীতে আমাদের কাজের ধারা এবং পরিবর্তনশীল গ্রামীণ অর্থনীতি ও সামাজিক ক্ষেত্রে সমীক্ষা অনুসন্ধানের কাজ হাতে নিতে হবে। অনুশীলনের ইতিবাচক দিককে রক্ষা করা ও তাকে ছড়িয়ে দিয়ে কাজের বিস্তারের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। গ্রামীণ ক্যাডার গড়ে তোলা, ছাত্র-যুবদের নতুন করে গ্রামে চলো অভিযান সংগঠিত করা এবং এই প্রক্রিয়ায় বাংলার গ্রামাঞ্চলে আমাদের কাজের ধারায় আমূল পরিবর্তনের দিশায় এগিয়ে যেতে হবে।
২০২৪’র লোকসভা নির্বাচনী লড়াইয়ের প্রাকপর্বে পাটনায় প্রথম বৈঠক ও পরে বেঙ্গালুরুতে দ্বিতীয় বৈঠকের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা বহুপ্রত্যাশিত বিজেপি-আরএসএস বিরোধী নবগঠিত জোট ‘ইন্ডিয়া’র আমরা শরিক। ‘ইন্ডিয়া’ জোটের প্রেক্ষিতে রাজ্যস্তরে যথেষ্ট জটিলতা বিদ্যমান। তবে এরাজ্যে সিপিআই(এম) বা বামফ্রন্টের শরিক দলগুলির ঘোষিত কৌশলের সঙ্গে আমাদের রাজনৈতিক অবস্থানের ভিন্নতা থাকছে। রাজ্য বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের পক্ষে আমরা নিষ্ক্রিয় নয়, সক্রিয় ভূমিকায় থাকবো। বামদলগুলি এবং বিভিন্ন বাম ও গণতান্ত্রিক গোষ্ঠী ও ফ্যাসিবিরোধী সামাজিক সংগঠনগুলির সঙ্গে কথা বলার উদ্যোগ নেবো।
সাম্প্রতিকতম জাতীয় রাজনৈতিক পরিস্থিতির পর্যালোচনা ও হস্তক্ষেপের রূপরেখা এবং পশ্চিমবঙ্গের জটিল রাজনৈতিক আবর্তে ফ্যাসি-বিরোধী লড়াইয়ের নির্দিষ্ট গতিপথ সম্পর্কে আমাদের বর্তমান অবস্থান বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বোঝাপড়ার লক্ষ্যে আগামী ২০ আগস্ট মৌলালী যুবকেন্দ্রের সভাগৃহে অনুষ্ঠিত হবে রাজ্যভিত্তিক কর্মীসভা।
পলিটব্যুরোর আহ্বানে দেশব্যাপী ব্রাঞ্চ ও লোকাল কমিটি পুনর্নবীকরণ/পুনর্গঠন অভিযান আমাদের রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনের কারণে বিলম্বিত হয়েছে। ২৮ জুলাই থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর, এই দু’মাস সময়কালের মধ্যে এই অভিযানকে কার্যকরী করতে হবে।
সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতির জাতীয় সম্মেলন আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ১ অক্টোবর ২০২৩ দিল্লীতে অনুষ্ঠিত হবে। এ’রাজ্যের সংগঠন ৪০ হাজার সদস্য সংগ্রহ করে এই সম্মেলনে যোগ দেবে। বিগত পঞ্চায়েত নির্বাচনে মহিলাদের অংশগ্রহণ ভালো মাত্রায় দেখা গেছে। সদস্য ও অর্থসংগ্রহে মহিলা কর্মীদের টিমকে উদ্যোগ নিতে হবে, রাজনৈতিকভাবে তাঁদের সংগঠিত করতে হবে।
আগামী ৯-১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ পাটনায় সারা ভারত স্কীম ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। আমাদের রাজ্যে প্রধানত মিড-ডে-মিল কর্মীরাই এই সম্মেলনে যোগ দেবেন। সম্প্রতি রাজ্যে রন্ধনকর্মীদের কাজ হাতেগোনা কয়েকটি মাত্র জেলা থেকে বেরিয়ে মুর্শিদাবাদ, মেদিনীপুর ও বাঁকুড়া জেলায় শুরু হয়েছে, যা ইতিবাচক। এ’রাজ্য থেকে ৪ হাজার সদস্য সংগ্রহ করে সম্মেলনে যোগ দেওয়া হবে।
আগামী ২ অক্টোবর ২০২৩ মৌলালী যুবকেন্দ্রে এআইসিসিটিইউ’র রাজ্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। বেশ কিছু জেলায় ইতিমধ্যে জেলা সম্মেলন সংগঠিত হয়েছে। বাকি জেলাগুলিতে হচ্ছে। মোট ২৫ হাজার সদস্য নিয়ে রাজ্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
একাদশ পার্টি কংগ্রেসে গৃহীত দলিলগুলির বাংলা তর্জমার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। জাতীয় পরিস্থিতি ও ফ্যাসিবাদকে প্রতিহত করার কর্মকৌশল সংক্রান্ত দলিল ছাপা হয়েছে। জেলা কমিটিগুলির নিজস্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী দলিলগুলির যৌথ অধ্যয়নের সময়সূচি স্থির করতে হবে। রাজ্যস্তরে শিক্ষক হিসাবে কিছু নেতৃস্থানীয় কমরেডদের নাম নির্ধারিত হয়েছে। এঁরা জেলা শিক্ষা শিবির পরিচালনায় সহযোগিতা করবেন।
দেশব্রতী পত্রিকার বকেয়া অবিলম্বে মিটিয়ে দেওয়ার জন্য জেলাগুলিকে জরুরী উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সেইসঙ্গে পত্রিকা বণ্টন ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে প্রতিটি জেলা কমিটি নির্দিষ্টভাবে একজন জেলা সদস্যকে পার্টি মুখপত্রের গ্রাহক সংগ্রহ, সুষ্ঠু বণ্টন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে দায়বদ্ধ করবে এবং সেই সদস্যর নাম দেশব্রতী প্রকাশনা দপ্তরে নথিভুক্ত করবে। দেশব্রতী সম্পাদকমণ্ডলির পক্ষ থেকেও সরাসরি তদারকি থাকবে।