উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া ঘটনার প্রাথমিক রিপোর্ট
chopra-incident-in-north-dinajpur

উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ার আমবাড়ি-লোধাবাড়িতে চা বাগানের জমির দখল নিয়ে আদিবাসী চা শ্রমিকদের ওপর প্রাণঘাতী হামলা ও তাঁদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনায় আহত হয় ১৪ জন মানুষ। হামলাকারীদের ছররা গুলিতে আহত ১২ জন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসিত ছিল। গতকাল এদের মধ্যে ৯ জন বাড়ি ফিরেছেন। বাকি তিনজন গুরুতর আহত অবস্থায় এখনও হাসপাতালে আছেন। এদের মধ্যে একজনের নিম্নাঙ্গ অসাড় হয়ে আছে।

আজ অর্থাৎ ২৩ আগস্ট পার্টির রাজ্য সদস্য পবিত্র সিংহের নেতৃত্বে তিনজনের একটি তথ্য অনুসন্ধানকারী দল মেডিক্যাল কলেজে গিয়ে আহতদের বয়ান নথীভূক্ত করে। অনুসন্ধানকারী দলের অন্য দু'জন সদস্য হলেন দার্জিলিং জেলা কমিটির শরৎ সিংহ ও পৈসাঞ্জু সিংহ।

আহত ব্যক্তিরা জানান ২১ তারিখ সকাল ৯টা-সাড়ে ৯টা নাগাদ অধুনা বন্ধ এই চা বাগানের জমিতে ঘর বানিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ বসবাসকারী আদিবাসী শ্রমিকদের বেশিরভাগই তখন অন্য বাগানে কাজে গেছেন। এই সময় বহিরাগত (সংলগ্ন গ্রামের অনেকেই, যার মধ্যে আদিবাসী সেঙ্গেলের জমি মাফিয়াদের পক্ষধর দলছুট নেতা, স্থানীয় রাজবংশী মানুষ ও সংখ্যালঘু নাগরিক) প্রায় ১৫০ জনের একটি সশস্ত্র দল শ্রমিকবস্তীতে হামলা চালায়। এরা একতরফা বাড়িতে থেকে যাওয়া পুরুষদের ওপর ছররাগুলি চালায়, ৫০টির মতো বাড়ি ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগ করে। আহত ব্যক্তিরা জানান এই চা বাগানটি ১০০ একরের মতো ভেস্ট জমি ও ৩০ একর রেকর্ডেড জমির ওপর গড়ে তোলা হয়েছিল। বিগত কয়েক বছর আগে বাগানটির ‘মালিকানা’ হস্তান্তর হয়। ইতিমধ্যে বাগানটি বন্ধ হয়ে থাকায় জমি মাফিয়ারা ওই জমির অনেকটাই প্লটে প্লটে ভাগ করে বিক্রি করে আসছে। এর মূলত নতুন মালিকের সঙ্গে টাকার যোগসূত্রে জড়িত। বাগানটিতে দীর্ঘ সময়ের কর্মরত শ্রমিকেরা তাদের কাজ চলে যাওয়ার পর চাটিবাটি রক্ষা করতে বাগানের জমিতে কোনরকমে কিছু বাড়িঘর তৈরি করে বাস করতে শুরু করে এবং অচিরেই এদের ঠাঁইনাড়া করতে তৎপর হয় মালিকের পক্ষের কুখ্যাত ভূ-মাফিয়ারা। কারণটি সহজ। ১০০ একর সরকারী লীজপ্রাপ্ত জমি বেআইনিভাবে হস্তান্তর ঘটিয়ে বিপুল অর্থ বাগিয়ে নেওয়া, যার অংশভাগ হল বাগানের নতুন ফাটকাবাজ মালিক কর্তৃপক্ষ। এই জমির দখল নিয়ে বচসা-বিবাদ নতুন নয়। বেশ কয়েক বছর ধরে পর্যায়ক্রমে প্রশাসনিক ‘হস্তক্ষেপ’ করেও সমাধানে পৌঁছনো যায়নি। বাগানটির পাশেই পুলিশের অস্থায়ী ক্যাম্প থাকা সত্ত্বেও তাদের চোখের সামনেই নির্বিচারে গুলি ও হামলা চালিয়ে চলে জমি-মাফিয়াদের বাহিনী। আহতরা বলছেন আক্রমণকারীরা শাসকদল তৃণমূলের আশ্রিত পরিচিত দুস্কৃতি। অভিযোগের তীর চোপড়ায় সংখ্যাগুরু মুসলমানদের বিরুদ্ধেই বেশি। ইতিমধ্যেই বিজেপি'র দার্জিলিং জেলার কিছু স্থানীয় নেতাকর্মীদের আহতদের ‘দেখভালের’ দায়িত্ব নিতে দেখা যাচ্ছে। ‘জমি নিয়ে দাঙ্গাহাঙ্গামায় এখন সাম্প্রদায়িক রঙ লাগাতে ব্যস্ত সংঘীরা’। এলাকায় প্রচুর পুলিশ ও RAF নামানো হয়েছে। বাইরে থেকে ধেয়ে যাওয়া মানুষজনকে অকুস্থলে ঢুকতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি মোটেই সুবিধের নয়। যে কোনো সময় বিজেপি-আরএসএস এই সংঘাতের ঘটনাটিকে দাড়িভিটের মডেলে পাল্টে ফেলতে পারে বলে অনুমান।

- অনুসন্ধানকারী দলের পক্ষে পবিত্র সিংহ

খণ্ড-30
সংখ্যা-29