প্রয়াত বিপ্লবী জনগায়ক গদর
singer-gadar

“যদি তারা আমার কণ্ঠরোধ করে দেয়,
আমি হাত দিয়ে টেবিল বাজাবো।
যদি তারা আমার হাত কেটে নেয়,
তাহলে পায়ে বোল তুলবো।
যদি পাও কেটে নেয়,
তবে আমার শরীরকেই জমিতে নাচাবো।
যদি তারা আমাকে ফাঁসিতে ঝোলায়,
তবু রক্তসঙ্গীতের ধারায় ধারায়
আমি আমার গানকে
মানুষের কাছে পৌঁছে দেব।”

গত ৬ আগস্ট ২০২৩ হায়দ্রাবাদে প্রয়াত হলেন বিপ্লবী জনগায়ক, গীতিকার, রাজনীতিজ্ঞ গদর। প্রকৃত নাম গুম্মাদি বিঠল রাও। তিনি ছিলেন নকশালবাড়ি আন্দোলনের অগ্রণী রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক যোদ্ধা। অন্ধ্রপ্রদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় বিপ্লবী সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘জননাট্যমণ্ডলী’র তিনি ছিলেন অন্যতম অগ্রণী যোদ্ধা।

গদরের জন্ম ১৯৪৯ সালে অন্ধ্রপ্রদেশের মেদক জেলার তুপরান গ্রামের এক গরিব উপজাতি সম্প্রদায়ের ঘরে। বাবা ছিলেন আম্বেদকরবাদী, মা ছিলেন এক সাধারণ ক্ষেতমজুর। ছাত্র হিসাবে খুব মেধাবীই ছিলেন, ফলে ১৯৬৭ সালে ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে ভর্তিও হন। উপজাতি সম্প্রদায়ের সংরক্ষিত আসনে জায়গা পান, হোস্টেলও পান। কিন্তু যখন ৭৭ শতাংশ নম্বর পেলেন, তখন এক উচ্চবর্ণের ছাত্র তাঁকে ব্যঙ্গ করে বললো, “তুমি তো সরকারের জামাই।” এই কথায় অত্যন্ত অপমানিত বোধ করেন। তখন বৌদ্ধদর্শন ও সাহিত্যের বইপত্র পড়তেন। কিন্তু লাভ কিছুই হল না, বরং বিভ্রান্তি বাড়তে থাকে। দলিত আন্দোলনও তখন চলছে না। সবকিছুই স্থিতাবস্থার শিকার। তবু মনের শান্তির জন্যই শোষিত-নিপীড়িত শ্রেণির মানুষের জীবন নিয়ে গান লিখতে শুরু করেন।

১৯৬৮-৬৯-এ তখন তিনি ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন, নকশালবাড়ি আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। শ্রীকাকুলামের কৃষক বিদ্রোহও তখন তুঙ্গে। সুব্বারাও পাণিগ্রাহীর মতো বিখ্যাত কবি গায়কগণ যুক্ত হয়েছেন আদিবাসীদের জমি আন্দোলনে। যাঁরা শত শত বছর ধরেই ওইখানে বাস করেছেন, তাঁরা তাদের জমি দাবি করলেন। তৎকালীন সিপিএম থেকে বিভক্ত সিপিআই(এমএল)’কে সমর্থন জানালেন। গণশিল্পীরা মঞ্চে মঞ্চে গাইছেন — “এসো চলো আমরা জনসেনায় শামিল হই, প্রজাসেনায় শামিল হই, লালসেনায় সামিল হই”। এই ঘটনায় গদর দারুণভাবে প্রভাবিত হলেন। একজন ছাত্র এবং একজন বুদ্ধিজীবী হিসাবে তিনিও উন্মুখ ছিলেন শোষিত মানুষের মুক্তির জন্য কিছু করতে; শ্রীকাকুলামের আন্দোলনের ফলে তাঁর আকাঙ্ক্ষা তীব্র হয়ে উঠল। এই সময়ের ছাত্র এবং বুদ্ধিজীবীদের মধ্যেও সারা ভারতে এই আন্দোলন ব্যাপক প্রভাব সাড়া ফেলে। তিনিও তাতে অংশগ্রহণ করেন। ক্রমে এই প্রবাহের মধ্যে মিশে যান।

সিকন্দ্রাবাদের চলচ্চিত্র নির্মাতা নির্দেশক নরসিংহ রাও ১৯৬৮ সালে ‘আর্ট লাভার্স’ নামে শিল্পী এবং বুদ্ধিজীবীদের একটি সংস্থা গঠন করেন; গদর তাতে শামিল হন। মার্কসবাদের প্রতি এই গ্রুপটির বিশেষ আকর্ষণ ছিল। নরসিংহ রাও তেলেঙ্গানার সশস্ত্র সংগ্রামের উপর গৌতম ঘোষের নির্দেশনায় ‘মাভূমি’ নামে একটি ফিল্ম তৈরি করেন। গদর তাতে গান গেয়েছিলেন এবং একটি ছোট্ট ভূমিকাতেও অভিনয় করেছিলেন।

ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা জর্জ রেজ্জির হত্যার প্রতিবাদে ‘আর্ট লাভার্স’ ‘স্মৃতি সপ্তাহ’ পালন করে। এই উপলক্ষে একটি গানের বই প্রকাশ করা হয় এবং সারা শহরে বহু অনুষ্ঠান করা হয়। এই অনুষ্ঠানগুলিতে ব্যাপক সংখ্যক জনগণকে তাঁরা আকর্ষণ করতে সমর্থ হন। জনগণের মধ্যে যে শিল্পরূপগুলি বিদ্যমান ছিল সেগুলিকে তাঁরা বিপ্লবের বাণী প্রচারের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করার জন্য অগ্রসর হলেন এবং এই বিকাশের পরিণতি হিসেবে ১৯৭৩ সালে ‘জননাট্যমণ্ডলী’র জন্ম হল। তাঁরা মানুষের আন্দোলনের সাথে একাত্ম হতে গেয়ে উঠলেন,

“ও রিক্সাচালক রহিম ভাই,
পাথর ভাঙ্গিয়ে রাম ভাই,
ড্রাইভার মল্ল ভাই, কুলি কোমরম ভাই,
ভারিওয়ালা মেসন ভাই,
আর মজুর ভাইদের প্রতি নিবেদন
অনুগ্রহ করে আমাদের কথা শুনুন ...”

আর কাঁধের উপর লালপাড় চাদর, হাঁটু অবধি লালপাড় হলদে ধুতি, পায়ে ঘুঙুর, হাতে লাঠি নিয়ে জনগণের কাছে আবেদন রাখছেন জননাট্যমণ্ডলীর নেতৃত্বকারী শিল্পী গদর। আড়াই দশক ধরে বিপ্লবী গান গেয়ে, পালা বদলের নাটক অভিনয় করে, নৃত্যনাট্যে নেচে গেয়ে বিদ্রোহের বাণী শুনিয়ে আসছিলেন। খেটে খাওয়া মানুষদের কাওয়ালি, রাখালদের নৃত্যে মাতিয়ে দিচ্ছিলেন গ্রামগঞ্জ। জনগণের হৃদয় আর মস্তিষ্কের কাছে আবেদন রাখছিলেন শিল্পীদল। বিপ্লবী চিন্তাধারা এবং সংগ্রামী সংস্কৃতিকে তাঁরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন দিন প্রতিদিন। এখনও অন্ধ্রপ্রদেশের জননাট্যমণ্ডলী ও গদর নামের সাথে সাধারণ সর্বস্তরের মানুষ পরিচিত।

জননাট্যমণ্ডলী জনগণের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সব রচনাই সংগঠনের সদস্যরা জনগণের সাহায্যেই লেখেন, তাঁদের সাহায্যে লেখার পরিমার্জনা করেন। এই প্রক্রিয়া ততদিন চলতে থাকে যতদিন পর্যন্ত না রচনাটি ঠিকঠাক উঠে আসে। তারপর তা ব্যাপক জনগণের সামনে উপস্থিত করা হয়। যখন কোন নতুন গান লেখা হয়, সেই গানের প্রস্তুতির জন্য বেশভূষা, ভঙ্গিমা, শব্দাবলী, বাক্যরচনা, ভাষা — সংক্ষেপে বলতে গেলে প্রদর্শনের জন্য খুঁটিনাটি সবকিছুই জনগণের কাছ থেকে তাঁরা শেখেন। প্রক্রিয়াটি এই রকম : জনগণের কোন শ্রেণির সম্বন্ধে কিছু লিখতে হলে, জননাট্যমণ্ডলীর শিল্পীরা তাঁদের মাঝে থেকে তাঁদের জীবন যাত্রার অংশীদার হয়ে জ্ঞানার্জন করেন। “জনগণের কাছ থেকে নিয়ে জনগণকে দেওয়া”র প্রয়োগ করেন। এই কারণেই তাদের গান সোজা, সরল ও হৃদয়গ্রাহী হয়।

“আগুন এ যে আগুন
খালি পেটের আগুন
এ যে অশ্রুজলের অঙ্গার
এ যে দুঃখীজনের হাহাকার
দাউ দাউ করে জ্বলে উঠছে এ যে
দিক থেকে দিকে ছাইছে যে এ ...”

গত আড়াই দশক ধরে অন্ধ্রপ্রদেশের গ্রামেগঞ্জে, কারখানার গেটে, মিছিলে, সভায়, প্রদেশের প্রতিটি কোণায় জননাট্যমণ্ডলী হাজার হাজার প্রোগ্রাম করে লক্ষ লক্ষ লোকের কাছে বিপ্লবের বার্তা পৌঁছে দিয়েছে। রাজনীতিকে অগ্রাধিকার দিয়ে, দলিত ও নিপীড়িত জনগণের কল্পনাকে আশ্বস্ত করে — মজুর, কৃষক, ছাত্র-যুবক ও কর্মচারী সকলেরই সমস্যা তাঁরা ছুঁয়েছেন। রেল মজদুর, রিক্সাওয়ালা ও গরিব পুলিশের উপর লেখা গান অতুলনীয়। প্রোগ্রাম ভেস্তে দেওয়ার জন্য পাঠানো হয়েছে পুলিশ। তখন জননাট্যমণ্ডলী গরিব পুলিশের উপর লেখা গান গাইতে শুরু করেছে, পুলিশের লাঠি থেমে গেছে, গানের তালে তালে তাঁরা মাথা নেড়েছে। এন টি রামারাও, সত্য সাঁইবাবার উপর ব্যঙ্গগীত এবং শহিদদের উপর লেখা ‘অমর বীরলোকু জয় বোলো’ অত্যন্ত লোকপ্রিয়। এছাড়া ‘গাঁও হামারা গলি হামারী’, ‘মজদুর মেরে ভাই’, ‘লাল সেলাম’ এবং ‘ভারত অপনী মহান ভূমি’ গানগুলি আজ শুধু অন্ধ্রেই সীমাবদ্ধ নয়, ভারতের বিভিন্ন সংগ্রামী অঞ্চলের সাংস্কৃতিক দলই আজ এই গানগুলি গাইছে। জননাট্য মণ্ডলী প্রায় ৩০০ গান ‘রগল জণ্ডা’ (লাল পাতাকা), ‘অসম’ এবং ‘কাশ্মীর’ নৃত্যনাট্য ও নাটকে তাদের রচনা কুশলতা এবং প্রয়োগ নৈপুণ্যের পরিচয় রেখেছেন। আর এর নেতৃত্ব দিয়েছেন গদর। জননাট্যমণ্ডলী এটা প্রমাণ করেছে যে লেখক শিল্পীরা প্রতিভা নিয়েই জন্মগ্রহণ করেন ধারণা ঠিক নয়; পরিবেশ লেখক-শিল্পীকে তৈরি করে। জননাট্যমণ্ডলীর সব শিল্পীরাই খুব সাধারণভাবেই শুরু করেছিলেন, কিন্তু জনগণের সঙ্গে তাঁদের একাত্মতা এবং প্রশিক্ষণের মধ্যে দিয়ে গদর, সঞ্জীব, বাঙ্গপাণ্ডু প্রসাদ রাও, দিবাকর ও রমেশের মত শিল্পীদের মুক্তোয় পরিবর্তিত করেছে। শিল্পীদের সম্পর্কে কোনো রকম দেবদত্ত ধারণা জননাট্যমণ্ডলী মিথ্যা প্রমাণিত করে দিয়েছে। আসল শিল্প জনগণের মধ্যে বিদ্যমান, বিপ্লবী শিল্পীদের অত্যন্ত বিনম্রভাবে তাঁদের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। এইভাবে শিক্ষাগ্রহণ করে জননাট্যমণ্ডলী আজ এই জায়গায় পৌঁছেছে।

বিপ্লবী সাংস্কৃতিক সংগঠন হওয়ার অপরাধে জননাট্যমণ্ডলীকে শ্রেণীশত্রুর আক্রমণের সামনে পড়তে হয়েছে। ভূস্বামী ও তাদের গুণ্ডারা এবং সরকার বহুবার জননাট্যমণ্ডলীর প্রোগ্রাম ভেস্তে দিয়েছে — শিল্পীদের উপর আক্রমণ করেছে। পুলিশ শিল্পীদের প্রেপ্তার করেছে; তাঁদের বেধড়ক পিটিয়েছে, বিভিন্ন সময়ে জেলে পুরেছে। গুন্টুর জেলার র‍্যাডিক্যাল ইয়ুথ লীগের প্রতিষ্ঠা অধিবেশনের প্রচার অভিযানের সময় ১৯৭৫ সালে পুলিশ জননাট্য মণ্ডলীর সদস্যদের গ্রেপ্তার করে। গদরকে পুলিশ বেশ কিছুদিন বেআইনিভাবে তাদের হেফাজতে আটক রাখে, শারীরিক যন্ত্রণা দেয়। পরে উনি জামিনে মুক্ত হন এবং জননাট্যমণ্ডলীর অন্য সদস্যদের সঙ্গে আণ্ডারগ্রাউণ্ডে চলে যান। কানাড়া ব্যাঙ্কের চাকরি ছেড়ে পার্টি এবং জননাট্যমণ্ডলীতে পুরোপুরি সক্রিয় হন। জরুরি অবস্থায় গদর মোষপালকের বেশে গ্রামে ঘুরেছেন, এই সময় জননাট্যমণ্ডলী তেলেঙ্গানায় অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল। জননাট্যমণ্ডীর উপর পুলিশি অত্যাচার নেমে আসলে পাঁচ বছর অবধি গুপ্ত জীবন যাপনের পর ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৯০ সালে হায়দ্রাবাদের প্রেস ক্লাবে পত্নী বিমলা, কন্যা কেল্লা (চাঁদনী) ও দুই পুত্র সূর্যকিরণ ও চন্দ্রকিরণের সঙ্গে গদর আবার সাধারণ জীবনে ফিরে এলেন। এই ফেরার পর জননাট্যমণ্ডলী যখন প্রথমবার প্রোগ্রাম করেন তা দেখতে দু’লাখ লোক এসেছিলেন। ১৯৯০ সালের ৫ এবং ৬ মে ‘রায়তু কুলী সঙ্ঘম’ (ক্ষেত মজদুর সঙ্ঘ)-এর তৃতীয় রাজ্য সম্মেলনে এক সাক্ষাৎকারে গদর বলেন, “পুলিশ এবং শাসকদলের বক্তব্য হল সিপিআই(এমএল) শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু আমরা জীবনমরণ পণ করে তাকে বাঁচিয়ে রেখেছি। লক্ষ লক্ষ লোক আমাদের সঙ্গে রয়েছেন — জনগণের এগিয়ে যাওয়া কেউ রুখতে পারবে না।” এটা কিন্তু ফাঁকা আওয়াজ ছিল না, ছিল কৃষি বিপ্লবের বাস্তব ছবি।

গদরের স্বর ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য তাঁকে রামনগর ষড়যন্ত্র মামলায় জড়ানো হয়। ১৯৯০ সালে ভিলাই’য়ে গদর সহ জননাট্যমণ্ডলীর ২৫ জন শিল্পী এবং কবি ভারভারা রাওকে ভারতীয় জনতা পার্টির সরকার গ্রেপ্তার করে।

৬ই এপ্রিল ১৯৯৭। সময় সন্ধ্যা ছ’টা দশ। নিজের ঘরে বসে রেডিওতে সান্ধ্য খবর শুনছিলেন কমরেড গদর। তখন কয়েকজন আততায়ী তাঁকে সরাসরি গুলি করে। গদরের দেহে পাঁচটি গুলি লেগেছিল, ডাক্তাররা চারটি গুলি বের করে দিলেও; একটি গুলি তাঁর মেরুদণ্ডের শিরার কাছে আটকে ছিল এবং তাঁর ফুসফুসের একাংশ ফাটল ধরিয়া দিয়েছিল। সেই গুলি পিঠে নিয়ে গদর প্রয়াত হয়েছেন কিন্তু তাঁর স্বপ্নকে স্তব্ধ করতে পারেনি। তিনি গেয়ে চলেছেন,

“যখন সময় হবে
আগুন আর মহাসাগর
উঠে দাঁড়াবে লক্ষ লক্ষ ঢেউয়ে ...”

আর আগামী প্রজন্ম কাছে রেখে গেলেন তাঁর পরামর্শ “প্রতিটি শহিদের রক্ত থেকে একটি ‘রক্তিম গান’ লিখে লিখে প্রত্যেক ঘরে যদি পৌঁছে দেওয়া যায়, তাহলে এই গান শোক কমিয়ে আনবে, ধৈর্য এনে দেবে এবং সংগ্রামের গল্প বলবে। শহিদের রক্ত যে ব্যর্থ হবে না, এই গান সে ভরসা দেবে।”

রক্তিম অভিবাদন কমরেড গদর।

(তথ্যঋণঃ ‘গদর সীমাহীন গানের খনি’ পুস্তক)
- দীপক মিত্র

খণ্ড-30
সংখ্যা-27