১০ আগস্ট শহিদ বেদিতে মাল্যদানের মধ্য দিয়ে শুরু হল এই সর্বভারতীয় সম্মেলন। এআইএসএফ, এসএফআই, পিএসইউ, এআইডিএসও থেকে ভ্রাতৃপ্রতীম ছাত্র সংগঠন এই সম্মেলনের প্রকাশ্য অধিবেশনে আমন্ত্রিত ছিল। তারা প্রত্যেকেই মোদীর ফ্যাসিবাদী রাজের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ছাত্র আন্দোলনের উপর জোর দেন।
এই সম্মেলনকে সম্বোধিত করেন পার্টির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত প্রতিনিধিদের স্বাগত জানিয়ে তিনি এই আশা প্রকাশ করেন যে আগামী দিনে দেশজুড়ে সর্বত্র আইসার উপস্থিতি লক্ষ করা যাবে। আইসা’র জন্ম, তার গড়ে ওঠার পেছনে যে নির্দিষ্ট ধারা, ইতিহাস, এক বিপ্লবী ঐতিহ্য রয়েছে তা তিনি স্মরণ করে বলেন, আজ আইসার সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যা মোকাবিলা করে তাকে এগিয়ে যেতে হবে। যখন সোভিয়েত রাশিয়ার পতন হয়, চিনে ঘটে যায় তিয়েন-আন-মেন স্কোয়ারের ঘটনা, যখন দুনিয়া জুড়ে মার্ক্সবাদ, লালঝান্ডা ও বামপন্থার প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে বিতর্কের ঝড় উঠতে শুরু করে, ঠিক সেই সন্ধিক্ষণেই জন্ম নেয় আইসা। সেই সময় দেশেরই বা কী পরিস্থিতি ছিল? আজ আমরা ফ্যাসিবাদের যে ভয়ঙ্করতম রূপ দেখছি, সেই সময়ই তার লক্ষণগুলো ফুটে ওঠে। রামমন্দির বিবাদ, রথযাত্রা, যেখান যেখান দিয়ে রথযাত্রা যায়, সেই সব জায়গা রক্তাক্ত হয় ভ্রাতৃঘাতী দাঙ্গায়। আইসা এই সাম্প্রদায়িক উন্মাদনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। ভিপি সিং’এর মন্ডল কমিশনের বিরুদ্ধে যখন তীব্র ভাবে সংঘ পরিবার সংরক্ষণ বিরোধী ভাবাবেগে সবকিছু ভাসানোর অপচেষ্টা করে তখন আইসা এর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে সংরক্ষণের পক্ষে দাঁড়ায়।
চন্দ্রশেখরের স্মৃতি তুলে ধরে সাধারণ সম্পাদক বলেন যে চন্দ্রশেখর দুই ভারতের ছবি তুলে ধরেন। তিনি যে মহান স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে শহিদ হয়েছেন, তাকে পূরণ করার লক্ষ্যেই এগিয়ে যেতে হবে। চন্দ্রশেখর মনে করতেন দুটো ভারত রয়েছে। একটা বিজেপির ভারত, সমস্ত পশ্চাদপদতাকে নিয়ে যা দেশকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাবে পেছন দিকে, আর আরেকটা প্রগতির ভারত, ধর্মনিরপেক্ষ ভারত। যে বুলডজার রাজ আজ তার সমস্ত নৃশংসতা নিয়ে হাজির, তার প্রাথমিক লক্ষণ সেই সময় মাথা চাড়া দিয়েছিল। এই দুই রাস্তা, দুই ভারতের মধ্যে বেছে নিতে হবে কোন লক্ষ্যে আমরা এগিয়ে যাব। চন্দ্রশেখরের হত্যাকারীদের ছাত্র আন্দোলন ও পার্টি জেলে পাঠিয়েছে, শাস্তি দিয়েছে। চন্দ্রশেখরের অপূর্ণ কাজকে এখন আমাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
ভগৎ সিং ও আম্বেদকরের যে স্বপ্নের ভারত গড়ে তোলার ডাক আইসা দিয়েছে তার তাৎপর্যও তিনি ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন যে আম্বেদকর ছিলেন এক বিরাট মাপের ভবিষ্যৎ দ্রষ্টা। তিনি জানতেন যে বৃটিশ চলে গেলে, ভারত স্বাধীন হলেও রয়ে যাবে চরম বৈষম্যমূলক এক সামাজিক কাঠামো। রাজনৈতিক স্বাধীনতা, এক ব্যক্তি এক ভোটের সমতা অর্জিত হলেও গোটা সমাজের বনিয়াদ দাঁড়িয়েই থাকবে চরম অসাম্যের ভিত্তিতে, যার অবসান না হলে প্রকৃত স্বাধীনতা হয়ে যাবে অর্থহীন। আর, ভগৎ সিং মনে করতেন, বৃটিশ চলে গেলেও দেশবাসীর শোষণ মুক্তি ঘটবে না। তাই স্বাধীনতার পরও লড়াই চালাতে হবে দেশীয় শাসকদের বিরুদ্ধে।
সাধারণ সম্পাদক যে বিষয়টাতে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তা হল, মোদী বা যোগী তো শুধু দুই ব্যক্তি নয়। তারা আজ চতুর্দিকে এক উন্মত্ত ভিড়ের জন্ম দিয়েছে। যারা হিংসাত্মক কার্যকলাপে মত্ত।
এই ভীড়ে যারা সামিল তারা সাধারণ যুবক, বেকার যুবক। তারা জানে না কেন তাদের হাতে কাজ নেই। বিজেপির কোনো নেতা-মন্ত্রীর ছেলেদের সেই ভিড়ে দেখা যাবে না। তাদের নেতারা পাঠিয়ে দেন বিদেশে।
মণিপুরে এত দিন ধরে যে জাতি হিংসা চলছে, হাজার হাজার ঘরছাড়া ত্রাণ শিবিরের আর্ত মানুষ, অগুন্তি প্রাণ চলে যাওয়া, কিন্তু আজ পর্যন্ত মোদী মণিপুর নিয়ে টুঁ-শব্দটি করলেন না। তিনি বিশ্ব ভ্রমণ করে বেড়ান, কিন্তু মণিপুর যাওয়ার সুযোগ পান না।
সাধারণ সম্পাদক নির্ভয়া কান্ডে আইসার অসামান্য ভূমিকার কথা তুলে ধরেন। নারী নিরাপত্তার নামে মেয়েদের ঘরের কোণে বন্দি করে, সিসিটিভির আতস কাঁচে আটক রাখার বিরুদ্ধে নির্ভয় স্বাধীনতার অধিকারের দাবিতে আইসা আইপোয়া আন্দোলনের ঐতিহ্যকে তুলে ধরেন।
আইপোয়ার রাজ্য সম্পাদিকা ইন্দ্রাণী দত্ত, সাউথ এশিয়া সলিডারিটির পক্ষ থেকে কল্পনা উইলসন ছিলেন অন্যতম বক্তা।
সারা দেশ থেকে প্রায় ৫০০ জন প্রতিনিধি সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।