যে বুলডোজার হয়ে উঠেছে ভারতের হিন্দু-আধিপত্যবাদী ফ্যাসিবাদের একটা প্রতীক, তা মূলত মুসলিমদের বিরুদ্ধে চালিত হলেও দলিত ও অন্যান্য দরিদ্রদেরও তার নির্মম অভিযান থেকে রেহাই মিলছে না। অতি সম্প্রতি গত ৬ জুন যোগী আদিত্যনাথের বুলডোজার গুঁড়িয়ে দিল উত্তরপ্রদেশের মির্জাপুর সদর তহশিলের কোটওয়া পান্ডে গ্রামের ৩০০টা ঘর। বুলডোজারের সহিংস হানাদারি নিয়ে ক্রমবর্ধমান সমালোচনার মুখে যোগী আদিত্যনাথ ২০২২’র এপ্রিলে বলেছিলেন, “দরিদ্রদের কুঁড়ে ঘর ও দোকানের বিরুদ্ধে বুলডোজারকে ব্যবহার করা হবে না। শুধু দুর্বৃত্ত মাফিয়াদের অবৈধ পথে অর্জিত অর্থের বিরুদ্ধেই একে প্রয়োগ করতে হবে। …” কিন্তু ৬ জুন ২০২৩ কোটওয়া পান্ডে গ্রামে বুলডোজার যাদের ঘর ধূলিসাৎ করল তারা সবাই দলিত, আদিবাসী ও অন্যান্য পশ্চাদপদ সম্প্রদায়ের মানুষ। যোগী আদিত্যনাথের পাশবিকতা থেকে তারাও রেহাই পেল না।
দরিদ্রদের ঘরগুলো ধূলিসাৎ করার একদিন আগে সিপিআই(এমএল)-এর এক প্রতিনিধি দল জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা করে চরম পদক্ষেপ নেওয়া থেকে প্রশাসনকে বিরত থাকতে বলেছিলেন। জেলাশাসক রাজিও হয়েছিলেন, মৌখিক প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন — যথাযথ পুনর্বাসন ছাড়া কাউকেই উচ্ছেদ করা হবে না। কিন্তু যে পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে প্রশাসন ঠিক করে রেখেছিল, তারসঙ্গে জেলা শাসকের মুখের কথার মিল ছিল না। এই বুলডোজার অভিযানের ফলে শিশু-নারী-সহ কয়েকশ মানুষ এখন আশ্রয়হীন অবস্থায় একরকম রাস্তাতেই দিন কাটাচ্ছেন। ঘরের জিনিসপত্র সব ধ্বংস করা হয়েছে। এই অভিযান চালাতে বিশাল পুলিশ বাহিনীকেও নামানো হয়। স্থানীয় যে জনগণ ঐ অভিযানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন এবং তাদের সঙ্গে প্রতিবাদে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন সিপিআই(এমএল)-এর যে নেতারা, পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে।
উল্লেখ্য যে, উচ্ছেদ হওয়া জনগণের অনেকই সাত দশক ধরে ঐ স্থানে বসবাস করছিলেন। সিপিআই(এমএল)-এর উত্তরপ্রদেশ শাখার রাজ্য সম্পাদক সুধাকর যাদব জানিয়েছেন, ঐ স্থানে বসবাসকারী পরিবারগুলোর অনেকেই সেচ দপ্তরের কাছ থেকে পাট্টা পেয়েছিলেন এবং সরকারকে জমির খাজনাও দিয়ে চলেছিলেন। এই পাট্টাগুলোর নবীকরণ একটা নিয়মিত ব্যাপার হলেও প্রশাসন সম্প্রতি তা করেনি। পরিবারগুলো যেহেতু অত্যন্ত দরিদ্র এবং জমি কেনার সামর্থ্য তাদের নেই, তাঁরা তাই প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছিলেন যে তাঁদের জন্য যেন বিকল্প স্থানে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু সে কথায় কর্ণপাত না করে প্রশাসন চরম পদক্ষেপের পথেই গেল। সুধাকর যাদব আরও জানিয়েছেন, চন্দৌলি জেলাতেও বুলডোজার দিয়ে দরিদ্রদের উচ্ছেদ করা হয়েছে এবং লখিমপুর খেরিতেও ৫৪টা গ্রামের বাসিন্দারা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন, কেননা, তাঁদেরও উচ্ছেদের নোটিশ ধরানো হয়েছে।
সিপিআই(এমএল)-এর পক্ষে বিন্ধ্যাচল অঞ্চলের কমিশনার এবং জেলা শাসককে চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে — যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে এবং যাদের উচ্ছেদ করা হয়েছে তাদের পুনর্বাসন দিতে হবে। এই উচ্ছেদের বিরুদ্ধে ৮ জুন ২০২৩ উত্তরপ্রদেশের বহু জেলাতেই প্রতিবাদ সংগঠিত হয়।