দেশের সুপ্রিম কোর্ট গত ৬ জুলাই ২০২৩ জাতিবৈষম্য জনিত এক মামলায় ইউজিসি’কে (বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন) এক নির্দেশ দিয়েছে, অবিলম্বে শিক্ষাকেন্দ্রে জাতিবৈষম্য যাতে আর চলতে না পারে তারজন্য নিয়মরীতি যা যা তৈরি করার ও কার্যকরী করার তা করা হোক। গত বেশ কয়েকবছর যাবত শুরু শিক্ষাকেন্দ্রে, বিশেষ করে উচ্চশিক্ষা কেন্দ্রগুলিতে, তা সে ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিক্যাল, পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন বা গবেষণা ক্ষেত্র হোক, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে এসসি-এসটি ছাত্রী-ছাত্রদের জাতিবৈষম্যের শিকার হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ছাত্রীদের উপরন্তু লিঙ্গগত বৈষম্যের পীড়নের মুখে পড়তে লক্ষ করা গেছে। নির্যাতন মানসিক ও শারীরিক উভয়তই ঘটেছে। সোজা কথায়, নিচু জাতের ছেলে-মেয়েদের উচ্চশিক্ষায় পঠন-পাঠনে শোভা দেয় না — এই জাতীয় অবজ্ঞা-অপমানে জর্জরিত হতে হয়েছে, এমনকি ইউজিসি’র অর্থবরাদ্দ পাওয়ার প্রশ্নেও একই রকমের বৈষম্যজাত বঞ্চনার শিকার হতে হয়েছে। তার দুঃসহ যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে অনেকক্ষেত্রে ভুক্তভোগী ছাত্রী-ছাত্ররা নিজেকে শেষ করে দেওয়ার চরম পন্থা নিয়ে ফেলেন। কারণ, কোনোরকম প্রাতিষ্ঠানিক সাহারা অনুভব করতে পারেন না। এক অবসাদগ্রস্ততা গ্রাস করে, অতলে নিয়ে যায়। বাঁচার ইচ্ছেটাই মরে যায়। কিন্তু এই পরিণাম আপাতঅর্থে আত্মহনন মনে হলেও চূড়ান্তঅর্থে জাতিবৈষম্যগত হত্যা বললে অত্যুক্তি হয় না।
সুপ্রিম কোর্টের এক ডিভিশন বেঞ্চ সম্প্রতি যে রায় দিয়েছে তা পিএইচডি স্কলারশিপ ছাত্র প্রয়াত রোহিত ভেমূলার মা রাধিকা ভেমুলা ও মেডিক্যাল পড়ুয়া পায়েল তদভির মা আবেদা তদভির করা জয়েন্ট পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে। রোহিত ও পায়েল দুজনেই জাতিবৈষম্যের শিকার হন যতাক্রমে ২০১৬ ও ২০১৯ সালে। এর বিরুদ্ধে দেশজুড়ে লাগাতার আন্দোলন হয় শিক্ষাঙ্গন থেকে রাজপথে। তার পরেও জাতিবৈষম্যের পীড়ন বন্ধ হয়নি, বরং সম্প্রতি বিভিন্ন উচ্চশিক্ষার ইন্সটিটিউটে তার শিকার হয়েছেন আরও কয়েকজন ছাত্র। তাই সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ইউজিসি’কে নির্দেশ দিয়েছে জাতিবৈষম্যের মোকাবিলায় কী পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ করা হচ্ছে তা অবিলম্বে কোর্টকে জানাতে হবে। এই বিষয়ে ২০১২ সালে ইউজিসি কিছু নিয়মনীতি প্রণয়ন করেছিল তা কেমন মেনে চলা হচ্ছে, তার প্রতিক্রিয়াই বা কী, সেই সবকিছুই কোর্টকে অবগত করতে হবে। প্রত্যুত্তরে ইউজিসি’র কৌসুলী আদালতে কথা দিয়েছেন ২০১২ সালে প্রণীত নিয়মকানুন মোতাবেক সমস্ত উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে সার্কুলার পাঠানো হবে এবং তার চেক-আপ করা হবে। শহীদ রোহিত ভেমুলা ও পায়েল তদভির মায়েরা তাদের পিটিশনে দাবি করেছেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতিবৈষম্যের অবসান হোক। গণতান্ত্রিক ছাত্র সংগঠন ও আন্দোলনের এক অন্যতম দাবিও তাই।