দরিদ্রের উচ্ছেদের বিরুদ্ধে বিহার জুড়ে প্রতিবাদ

বিহারে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প রূপায়ণকে অছিলা করে দরিদ্র ও দলিত পরিবারগুলোকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। এই বলপূর্বক উচ্ছেদের বিরুদ্ধে আয়ারলা এবং এমএনআরইজিএ মজদুর সভা ১১ জুলাই ২০২৩ সারা বিহারেই প্রতিবাদ সংগঠিত করে। আয়ারলা নেতা এবং সিপিআই(এমএল) পলিটব্যুরো সদস্য ধীরেন্দ্র ঝা বলেন, বিহারে দরিদ্রদের ঘরবাড়ি ধূলিসাৎ করতে বুলডোজারকে ঘেঁষতে দেওয়া যাবে না। তিনি আরও বলেন, এখন বরং এমন একটা আইন রচনার সময় যার বলে সবার জন্য বাসস্থানের সাংবিধানিক অধিকার সুরক্ষিত হবে। তিনি প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বরাদ্দকে বাড়িয়ে পাঁচ লক্ষ টাকা করার দাবিও তোলেন।

সেদিন শত শত ব্লকে প্রতিবাদ সংগঠিত হয়। প্রতিবাদের সমস্থ স্থান থেকেই দাবি ওঠে — যে সমস্ত দরিদ্রের বাসস্থান বা ঝুপড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তাদের সবার জন্যই পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। আরও দাবি ওঠে, বিহার জুড়ে সমস্ত বাসস্থানের সমীক্ষা করা হোক যাতে বাসস্থান বা পুনর্বাসনের প্রয়োজন এমন দরিদ্রের চিহ্নিত করা যায়। হাজার হাজার প্রতিবাদী জনগণ সেদিন মহাগাঠবন্ধন সরকারের উদ্দেশ্যে আর্জি রাখেন — সমস্ত জেলায় উচ্ছেদের যে নোটিস দেওয়া হয়েছে তা প্রত্যাহার করে নিতে হবে এবং সবার জন্য বাসস্থান সুনিশ্চিত করার কর্মনীতি গ্ৰহণ করতে হবে। আর এই লক্ষ্যে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া না হলে সারা বিহারেই গ্রামীণ ক্ষেত্রের শ্রমিকরা ১ আগস্ট ২০২৩ ধর্মঘট সংগঠিত করবেন বলে ঘোষণা করা হয়।

আয়ারলা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বিহারে প্রায় এক কোটি জনগণের বাসস্থানের কোনো মালিকানা বা পাট্টা নেই, যার ফলে তারা উচ্ছেদের নোটিশের অসহায় শিকার হয়ে পড়ে এবং তাদের বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা হয়।

সিপিআই(এমএল)-এর বিধায়করা বিধানসভার ভিতরে এই বিষয়টি উত্থাপন করেছেন, তাঁরা দারিদ্রপীড়িত পরিবারগুলি চিহ্নিত করার জন্য একটি সমীক্ষা করার কথা বলেছেন। এবং আদালতে একটি হলফনামা দেওয়ার প্রস্তাব সরকারের কাছে রেখেছেন যাতে বিচারবিভাগীয় হস্তক্ষেপে কায়েমী স্বার্থরা কোনো উচ্ছেদ সংঘটিত করতে না পারে। রাজ্য সরকার এর আগে বলেছিল যে যথাযথ পুনর্বাসন ছাড়া কোনো দরিদ্র পরিবারকেই উচ্ছেদ করা হবে না, কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি সরকার রাখেনি। আয়ারলা নেতা শত্রুঘ্ন সাহানির পরিচালনায় মুজাফ্ফরপুরে এক বড় আকারের প্রতিবাদ সংগঠিত হয়। তিনি প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বরাদ্দ হ্রাস করার জন্য মোদী সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন, যদিও গ্রামাঞ্চলে আর্থিক পরিস্থিতির অবনতি এবং খরচ বেড়ে চলার জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধিরই প্রয়োজন। তিনি প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বরাদ্দ বাড়িয়ে কমপক্ষে পাঁচ লক্ষ টাকা করার দাবি রাখেন।

এই প্রতিবাদগুলোর মধ্যে দিয়ে অদক্ষ শ্রমিকদের জন্য ১০০ দিনের কাজের মজুরি বাড়িয়ে কেন্দ্রীয় সরকার নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরির স্তরে নিয়ে যাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ দাবিটিও তোলা হয়। মোদী সরকার ১০০ দিনের কাজের মজুরিকে বেঁধে রেখেছে একেবারেই শোষণমূলক স্তরে। ঐ মজুরিকে নির্ধারিত করতে হবে প্রতিদিন ৪২৯ টাকায়, যেটা হল অদক্ষ শ্রমিকদের জন্য বিদ্যমান মজুরির হার।

খণ্ড-30
সংখ্যা-25