ভোট যুদ্ধে উত্তরের ফকদইবাড়ি
in-the-vote-war

পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে যখন রাজ্য জুড়ে হইচই, উত্তরের তথাকথিত প্রাণকেন্দ্র শিলিগুড়ি শহর বা দার্জিলিং জেলা তখন খানিক চুপচাপে শহর সংলগ্ন জলপাইগুড়ি জেলার অংশের গ্রাম পঞ্চায়েতের ভোট প্রচারের উত্তাপ নিতে ব্যস্ত। শিলিগুড়ি শহর সংলগ্ন বেশ কিছু গ্রাম পঞ্চায়েত যেগুলো জলপাইগুড়ি জেলার অন্তর্ভুক্ত সেগুলোতে ভোট হচ্ছে। স্বভাবতই উঠে আসছে স্বজনপোষন, দুর্নীতি, সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের প্রশ্ন। মানুষ গণতন্ত্রের উৎসবে সামিল হওয়ার আগে শেষ সময়ের পড়া ঝালিয়ে নেওয়ার মতো বুঝে নিতে চাইছেন তাদের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলির অবস্থান। তবে স্বাভাবিকভাবেই পঞ্চায়েতে নির্বাচনের ক্ষেত্রে সবথেকে বড় বিষয় হয়ে দাঁড়ায় গ্রামগুলির স্থানীয় সমস্যা, জল নিকাশি, রাস্তা, স্কুল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, যোগাযোগ ব্যবস্থা সর্বোপরি বর্তমানে দুর্নীতিতে প্রায় পিএইচডি করে ফেলা তৃণমূলের লুঠ ও স্বজনপোষনের অভিযোগ। ডাবগ্রাম-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের ফকদইবাড়ি ২৬নং আসনে সিপিআই(এমএল) পার্টির এবারের একমাত্র প্রার্থী ময়না সূত্রধর। আমাদের ময়নাদি।

ছোট্টখাট্টো চেহারার সবসময়ই হাসিমুখের ময়নাদি পার্টির সঙ্গে আছেন অনেকদিন। হাতিয়াডাঙাতে উনি আছেন কুড়ি বছরের বেশি সময় ধরে। ফলত এলাকার বেড়ে ওঠার সঙ্গে তিনি অনেকটাই পরিচিত। বলা যায় তিনি সামনে থেকে দেখেছেন। মূলত শ্রমজীবী মানুষদের বসবাস এই এলাকায়। শাসক তৃণমূলের সঙ্গে সঙ্গে বিজেপির দাপাদাপিও এখানে কম নয়। পার্টি দীর্ঘদিন ধরে এলাকার সমস্যা, শাহু নদীর বাঁধ নির্মাণ, পানীয় জলের সমস্যা, এলাকার মানুষদের অধিকারের প্রশ্নে সরব থেকেছে। এলাকার বেশ ভালো সংখ্যক মানুষদের একত্রিত করে রাজগঞ্জে বিডিও ডেপুটেশন থেকে পঞ্চায়েত ঘেরাও ইত্যাদি একাধিকবার সংঘটিত হয়েছে পার্টির নেতৃত্বে। কমরেড ময়না সূত্রধর (ময়নাদি) সব ক্ষেত্রেই থেকেছেন সামনের সারিতে। দিন প্রতিদিনের জীবনের লড়াইতেও তিনি যাপন করেছেন, এবং করছেন। করতে শিখিয়েছেন। এই ময়না সূত্রধর শহরে এসে গৃহ পরিচারিকার কাজ করে ফিরে গিয়ে কাঁধে তুলে নিচ্ছেন তিনতারার লাল পতাকা, পৌঁছে যাচ্ছেন এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়ি। নিজের মতো করে বলছেন কেন এবার সকলে ময়নাদিকে ভোট দেবে।

northern-fakdaibari

এরমধ্যেই বৃষ্টি পথ আটকে দাঁড়াচ্ছে। জল কাদা পেরিয়ে ময়নাদি কিন্তু লক্ষ্যে অবিচল। কখনও কাজে যাওয়া আসার পথে চা দোকানে, মুদি দোকানে, হাটে লিফলেট দিয়ে নিজের প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। সঙ্গে আছেন দীনবন্ধু দাস, রীতা দাস, লক্ষ্মীদির মতো কমরেডরা। আছে ময়নাদির মেয়েরা। এলাকার মানুষ বলছেন বর্ষা এলেই প্রতিবারের নোংরা জমা জলের দুর্গতি আর যন্ত্রণা তারা আর মেনে নিতে চাইছেন না, চাইছেন নিকাশি ব্যবস্থার সুষ্ঠু সমাধান, গ্রামের বাচ্চাদের জন্য অন্তত একটি সরকারি প্রাথমিক স্কুল, চাইছেন পরিস্রুত পানীয় জল। তারা চান এমন একজন গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য এবার হোক, যে তাদেরই একজন; তাদের দাবি, তাদের কথা সে পৌঁছে দিক সঠিক জায়গায়। তাই গ্রামবাসীরা, গ্রামের মহিলারা ভরসা করতে শুরু করেছেন পতাকায় তিনতারাকে। তাদের ময়নাদিকে। অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর মতো পোস্টার, ব্যানারে ছয়লাপ করার ক্ষমতা বা তাগিদ পার্টির কোনদিনই ছিলো না। পার্টির বিশ্বাস মানুষের ওপর। তাইতো জনগনণের প্রতিনিধি এবারে সিপিআই(এমএল)-এর কালো ঘোড়া নিজেদের ক্ষুদ্র সামর্থ্য নিয়ে এগিয়ে চলেছেন নিজেদের সেরাটা দেওয়ার জন্য। কোনও প্রতিশ্রুতি নয়। ভোটের ফলাফল যাইহোক, মানুষের সঙ্গে থাকার অদম্য ইচ্ছাশক্তিই তো এক এবং একমাত্র হাতিয়ার মানুষের পঞ্চায়েত গড়ে তোলার জন্য। কারণ মানুষই তফাত গড়ে দেয় শেষ পর্যন্ত। নকশালবাড়ি তার অন্যতম উদাহরণ বা উপাদান।

তাই ময়নাদি এগিয়ে চলেছেন সামনের দিকে — মানুষের ভরসা, ভালোবাসাকে পাথেয় করে।

খণ্ড-30
সংখ্যা-22