“প্রাণে বাঁচতে চাস্ তো কাপড় খোল্!” পরাক্রমশালী ‘পৌরুষের’ এই ভাষা অশ্রুত নয়। যুগ যুগ ধরে বর্বর বিজয়োল্লাস প্রথম আছড়ে পড়েছে সেই সহজ শিকার প্রতিপক্ষের নারীর ‘পেলব’ ‘কোমল’ শরীরের ওপর। ক্ষমতা এইভাবেই বার বার নগ্ন করেছে নারীকে, উলঙ্গ করেছে নিজেকে, কলঙ্কিত করেছে সভ্যতাকে। সেই দেহ ছিন্ন ভিন্ন করে বিকট উল্লাসে উন্মত্ত নৃশংসতায় প্রতিপক্ষের ঘর বাড়ি খামার শস্যগোলা উপাসনাস্থল জ্বালিয়ে দেওয়া, নরমুণ্ড শিকার করা হয়েছে গোষ্ঠী, সম্প্রদায়ের পরস্পর সংঘাতে, পররাজ্য দখলের ক্ষেত্রে। — কিন্তু সভ্যতা কী ক্রমশ পিছনে হাঁটছে! — হ্যাঁ, ঠিক এমনটাই ঘটেছিল দু'দশক আগে গুজরাটে। আবারও ঘটলো স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তির ‘অমৃতকালে’ – ‘রত্ন ভূমি’ মণিপুরে। কন্যা, বোনের সম্ভ্রম রক্ষায় এগিয়ে আসা পিতাকে, ১৯ বছরের ভাইকে স্রেফ পিটিয়ে মেরে ফেলে হাজার জনতার উল্লাসধ্বনির মধ্যে একুশ আর চুয়াল্লিশের দুই কুকি নারীকে নগ্ন করে হাঁটানো হয়েছ, যথেচ্ছ নির্যাতন আর গণধর্ষণ করে রাস্তায় ফেলে দেওয়া হয়েছে। মাঝবয়সী নির্যাতিতার অভিযোগ, পুলিশ রক্ষা করতে তো আসেইনি, বরং ওদের হাতে তুলে দিয়েছে। তার অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মী স্বামীর মর্মান্তিক আক্ষেপ, “দেশের মান বাঁচিয়েছি, কিন্তু স্ত্রীর সম্মান রক্ষা করতে পারলাম না!” নিজের গ্রাম, চির চেনা পরিবেশ এখন তার কাছে যুদ্ধক্ষেত্রের থেকেও ভয়ঙ্কর। তিনি নিজের পোড়া বাড়ির ভিটেয় আর ফিরতে চান না। ১৮ মে তিনি প্রথম এফআইআর দায়ের করেন।
সেই নির্যাতনের ভিডিও দীর্ঘ আড়াই মাস পর সংবাদমাধ্যমে এলে গোটা দেশ শিউড়ে ওঠে বীভৎসতায়, ক্রোধে ঘৃণায় ফেটে পড়ে। মণিপুরের কাংপোকপি’র এই ভিডিও প্রকাশ পাওয়ার পর পরই আরও বহু ঘটনা সামনে আসে। ঐ ৪ মে-তেই কাংপোকপি’র থেকে ৪০ কিমি দূরে কর্মস্থল থেকে টেনে হিঁচড়ে বার করে দুই কুকি তরুণীকে বন্ধ ঘরে গণধর্ষণ করে খুন করে রক্তাপ্লুত অবস্থায় ফেলে রাখা হয়। তাদের দেহ এখনও মর্গে। ১৬ মে নিহত তরুণীদের একজনের মা এফআইআর দায়ের করেন। ২৮ মে কাকচিং জেলায় সেরু গ্রামে এক স্বাধীনতা সংগ্রামীর অশীতিপর বিধবা স্ত্রীকে পুড়িয়ে মারা হয়।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য নংপোক সেকমাই থানাকে ২০২০-তে দেশের ‘সেরা থানা’ ঘোষণা করা হয়েছিল। তার ৮৫০ মিটারের মধ্যেই ঘটেছিল সেই ‘নগ্ন প্যারেড’! পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং জানান – এরকম শ’য়ে শ’য়ে ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ কোনদিকে যাবে? নিজের অক্ষমতার নির্লজ্জ স্বীকারোক্তি! ৪ মে এক তরুণ কুকি কলেজছাত্র সরকারের পক্ষপাতিত্ব নিয়ে সমালোচনামূলক পোস্ট করায় পুলিশ যখন তাকে ধরে থানায় নিয়ে যাচ্ছিল, উন্মত্ত জনতা তাকে ছিনিয়ে নিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলে। এই গণ হিস্টিরিয়ার (সঙ্গে রাজ্য পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার) বলি এ পর্যন্ত প্রায় দুশো প্রাণ। লক্ষাধিক মানুষ বাস্তুচ্যুত। আপাতত ৫০,০০০ মানুষ ৩০০ ত্রাণ শিবিরে দিন কাটাচ্ছেন। ২৫০র বেশি গির্জা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অসংখ্য গণধর্ষণ, নারীনির্যাতন, খুন, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ সংক্রান্ত ৬০০০ এফআইআর এপর্যন্ত দায়ের হয়েছে যার বেশিরভাগ কুকি সম্প্রদায়ের মানুষ করেছেন। বেশ ক’টি সরকারি অস্ত্রাগার লুঠ হয়েছে। মণিপুর বিশ্ববিদ্যালয়েও কুকি ছাত্র-ছাত্রী ও গবেষকদের ওপরও হামলা চালানো হয়েছে। তাদের ভবিষ্যৎ প্রশ্ন চিহ্নের মুখে। ২ মে থেকে শুরু হওয়া জাতি দাঙ্গার আগুনে আজ তিন মাস ধরে জ্বলছে মণিপুর। ‘ডবল ইঞ্জিন সরকার’ আশ্চর্য নির্বিকার! সুপ্রিম কোর্ট ভিডিও প্রকাশের পর এবং অন্য একটি মামলা প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের এই নির্লিপ্ততাকে তীব্র ভর্ৎসনা করেছে। যদিও দীর্ঘ আড়াই মাসে এত প্রাণবলি, এত সম্পত্তি হানির ঘটনায় মৌলিক অধিকার ভূলুণ্ঠিত হওয়ার সময় শীর্ষ আদালতের প্রত্যাশিত কার্যকরী পদক্ষেপ না দেখে হতাশাও জেগেছিল।
সুন্দরী মণিপুর। উজ্জ্বল নীল আকাশের নিচে সবুজ পাহাড় ঘেরা উপত্যকার কোলে ছোট্ট রাজ্য। মাটির নিচে তার অমূল্য প্রাকৃতিক সম্পদের সম্ভার। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, শিল্প সংস্কৃতির বহুবর্ণ ঐতিহ্য যুগে যুগে মানুষের মন কেড়েছে। ৩২ লক্ষ অধিবাসীর মধ্যে প্রায় ৩৬টি জনজাতি। উপত্যকার সমতলে সংখ্যাগরিষ্ঠ (প্রায় ৫৩%) মেইতেই আর পাহাড়ে সংখ্যালঘু কুকিদের বাস। দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিরোধ বহুকালের। কিন্তু সেটা এমন রক্তক্ষয়ী বিধ্বংসী হয়ে উঠলো কেন? কীভাবে? কোন প্ররোচনায়? কেন আজ মণিপুর সরাসরি দু’ভাগ হয়ে গেল? এমনকি বিজেপি বিধায়করাও কুকি-অধ্যূষিত অঞ্চলগুলির জন্য আজ আলাদা প্রশাসন, আলাদা রাজ্য দাবি করছেন!
চিত্রাঙ্গদার উত্তরসূরী মণিপুরের নারীরা চির প্রতিবাদী। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, বর্বরতার বিরুদ্ধে তাদের সেই অনন্য দৃপ্ত প্রতিবাদ গোটা বিশ্বের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। সেখানে মেইতেই-কুকি একসঙ্গেই ছিলেন। আফস্পা প্রত্যাহারের দাবিতে ইরম শর্মিলা চানুর টানা ষোল বছর অনশনে থাকার একক লড়াই — তাও ফিকে হয়ে যায়নি। গোলমাল শুরুর মুহূর্তে মেইতেই-কুকি মহিলারা একসঙ্গে মানববন্ধন করে শান্তির আবেদন জানিয়েছিলেন। কোন প্ররোচনায় তাহলে আজ মেইতেই মহিলারা ধর্ষণকারীদের রুখে দিতে পারলেন না? পারলেন না রক্ষা করতে কুকি মা-বোনেদের যারা সমাজে পরিবারে অত্যন্ত ইতিবাচক ভূমিকা নিয়ে থাকেন? কোন বিষ কে প্রয়োগ করলো তাদের মনে?
দীর্ঘ তিন মাসব্যাপী ঘটনাপরম্পরা থেকে অবধারিতভাবে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছাতেই হয় যে এই জাতি-দাঙ্গা, যা এই মুহূর্তে অনিবার্য ছিল না, তা ‘ডবল ইঞ্জিন সরকারের’ পূর্ব পরিকল্পিত। কেন, তা একটু খতিয়ে দেখা যাক। ‘শুট অ্যাট সাইট’ জারি করে, ইন্টারনেট বন্ধ করেও হিংসা ক্রমাগত বেড়েই গেছে কারণ বীরেন সিং সরকারের প্রত্যক্ষ মদত আছে এতে। এক বিজেপি বিধায়ক বীরেনকে ‘বিভাজনের কারিগর’ বলে অভিহিত করেছেন। বীরেন সিং সরকারের মেইতেই সম্প্রদায়ের প্রতি নির্লজ্জ পক্ষপাতিত্ব এবং দীর্ঘ অবহেলিত কুকি জনজাতির সুদীর্ঘ বঞ্চনা ও ক্ষোভের প্রতি উদাসীনতা এই আগুনে ঘি ঢেলেছে। বীরেন এখানেই থেমে থাকেননি। মেইতেই নাগরিক সমাজের কাছে, কুকিদের, যারা মণিপুরের বহু শতাব্দীর অধিবাসী, তাদের ‘মায়ানমারের বহিরাগত’, ‘নার্কো টেররিস্ট’, ‘অবৈধ আফিম চাষকারী’ ইত্যাকার নানা অপবাদ দিয়ে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। পেটোয়া চ্যানেলগুলোও কুকি প্রসঙ্গে একই ধুয়ো তুলে গেছে। যেন অস্ত্র, আফিম আর ড্রাগ-সন্ত্রাস কুকি-জীবনের অচ্ছেদ্য অংশ।
মেইতেই ও কুকিদের মধ্যে সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায় এক বিরাট ভারসাম্যহীনতা রয়েছে। বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জেরে (৪০টি আসন) মেইতেইরা রাজ্যের ব্যয়বরাদ্দের একটা বড় অংশ নিজেদের অনুকূলে টেনে নেয়। বিভিন্ন নীতি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণেও তাদেরই আধিপত্য। আর সম্পদের এই অন্যায় আত্মসাতের ওপর নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাগুলোকেও অকেজো করে রাখা হয়েছে। যেমন হিল এরিয়া কমিটিগুলোকে নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়েছে — তাদের সাংবিধানিক কাজ বা ক্ষমতা কোনোটাই নেই। ডিলিমিটেশন কমিশনের রিপোর্ট মুলতুবি রাখা হয়েছে কারণ তারা রাজ্যে লোকসংখ্যাবৃদ্ধির অনুপাত বিচার করে আদিবাসী আসন সংখ্যা বাড়াতে বলেছিল। আদিবাসীদের জমিগুলোকে পরিবেশ উন্নয়নের নামে সংরক্ষিত বনাঞ্চল বা সুরক্ষিত বনাঞ্চল বলে ঘোষণা করে তাদের উৎখাত করা হচ্ছে। যে লুঠ সারা ভারত জুড়েই চলছে। সরকারি নিয়োগের ক্ষেত্রে নানা দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে আদিবাসীদের জন্য সংরক্ষণ কে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখানো হচ্ছে। এই বহুমাত্রিক বঞ্চনা জনিত ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হয়েছে কুকিদের মধ্যে।
মেইতেইদের প্রতি বীরেন সিং সরকার তথা আরএসএস-বিজেপি’র পক্ষপাত কেন? কারণ এই সম্প্রদায়ের মধ্যে হিন্দুরা আছেন এবং বিধানসভায় এরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। নির্বাচনে এরা বিজেপি’র বড় ভরসা। হিন্দুরাষ্ট্র গঠণের বৃহত্তর অ্যাজেন্ডায় এরা একটা নিশ্চিত শক্তি। এদের বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী, যারা কুকিসহ অন্যান্য আদিবাসী নিধন অভিযানে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছে, সেই মেইতেই লীপুন, আরামবাই তেংগোলের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর খুবই সুসম্পর্ক। এদের পূর্ণ সহযোগিতায় এবং এদের সামনে রেখেই কুকি-জো সহ আদিবাসী বনবস্তিগুলি জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অরণ্যের অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভূতভাবে। কারণ ঐ পাহাড়ী অঞ্চলেই মাটির নিচে আছে নিকেল, প্ল্যাটিনামসহ বিভিন্ন খনিজ যা কর্পোরেটের হাতে তুলে দিতে মোদী সরকার দায়বদ্ধ। ৩৭১নং ধারার অধীনে ঐ আদিবাসী অরণ্যভূমি সংরক্ষিত এবং মেইতেই সহ অন্য কারও সে জমি কেনার অধিকার নেই।
গত ১০ মার্চ, সংরক্ষিত বনভূমি সম্প্রসারণের নামে যথেচ্ছভাবে কুকিদের গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়ে তাদের উৎখাতের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে ইন্ডিজেনাস ট্রাইবাল লীডার্স ফোরাম-এর নেতৃত্বে কুকি নাগরিক সমাজ বিভিন্ন পাহাড়ি জেলাগুলোয় শান্তিপূর্ণ মিছিল সংগঠিত করে। এটা ছিল রাজ্যব্যাপী অহিংস প্রতিবাদ। এই মিছিলের সঙ্গে সশস্ত্র জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর কোনো সংযোগ ছিল না। নিতান্তই নাগরিক উদ্যোগ। কিন্তু বীরেন সিং সরকার কুকি নাগরিক সমাজের সঙ্গে কোনো আলোচনায় বসা দূরে থাক, উল্টে ১৪৪ ধারা জারি করে বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করল। সরকার তো বটেই, মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং মেইতেই নাগরিক সমাজকে বোঝাতে বসলেন — এই কুকিদের সঙ্গে জঙ্গিগোষ্ঠীর সরাসরি যোগ আছে এবং ‘নার্কো টেররিস্ট’দের উৎখাতের জন্যই সরকার বনাঞ্চল অভিযান চালাচ্ছে!
এরপর ১৯ এপ্রিল এল মণিপুর হাইকোর্টের সেই আদেশ — সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেইদের তফসিলি উপজাতির মর্যাদা দেওয়ার জন্য তালিকাভুক্ত করার ব্যাপারে মণিপুর সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। ব্যস। দীর্ঘ বঞ্চনা আর ক্ষোভের বারুদে ফুলকি পড়ল। জ্বলে উঠল দাউ দাউ আগুন। বীরেন সরকার তথা কেন্দ্রীয় সরকার যে এটাই চেয়েছিল সেটা দৃঢ়মূল হয় ‘ডবল ইঞ্জিনের’ অদ্ভুত নিষ্ক্রিয়তা তথা নীরবতা তথা নির্লিপ্ততা দেখে। দুই সম্প্রদায়কে জাতি দাঙ্গার আগুনে ছুঁড়ে দিল তাদের ঘৃণা ও বিভাজনের রাজনীতি — আদিবাসী কুকিদের উৎখাতের ‘এথনিক ক্লীনজিং’-এর নিশানায়। এসটি মর্যাদা পেলে মেইতেইদের আদিবাসী জমি কেনায় আর কোনো বাধা থাকবে না যা তাদের আরও সমৃদ্ধ, আরও লাভবান করবে। তাই তারা মরিয়া আশায় সেই আগুনে ঝাঁপ দিল। আর অনন্যোপায় কুকিরা পুঞ্জীভূত বঞ্চনা আর অবহেলা থেকে মুক্তি চেয়েছিল।
পাহাড়ী রাজ্য পুড়ে খাক হচ্ছে। জাতি-দাঙ্গার সেই আগুনে হাত সেঁকছেন মোদী-শাহ। মেইতেইদের বকলমে শেষপর্যন্ত আদিবাসী জমির মালিক হবে কর্পোরেটরা। কিন্তু আগুন নিয়ে খেলার বিপদ কি তারা জানেন না? জঙ্গিগোষ্ঠীর হাতে অস্ত্র যোগানোর ভয়ঙ্কর পরিণাম তারা বোঝেন না?
মণিপুরের প্রতিবেশী মিজোরামের সংখ্যাগরিষ্ঠ মিজোরা মণিপুরের কুকি-জোমিদের সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরে আত্মিক বন্ধনে জড়িয়ে আছেন। তারা কুকি বোনেদের লাঞ্ছনা অপমানে ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ, বেদনার্ত। পাশের রাজ্যের ভাই বোনেদের দুঃখের অংশীদার হতে, সংহতির বার্তা পৌঁছাতে আর প্রতিবাদ জানাতে জনজাতিরা গত মঙ্গলবার আইজলে এক বিশাল মিছিল করেছেন। পুরোভাগে ছিলেন মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রী ও বিধায়করা। রাজ্যের সব দল ও সংগঠন সেখানে পা মিলিয়েছে। সেখান থেকে মণিপুর ভেঙে আলাদা কুকি রাজ্যের দাবি উঠেছে। ছাত্রীদের হাতে প্ল্যাকার্ড “আমাদের শরীর তোমাদের যুদ্ধক্ষেত্র নয়!”
সেই কাংপোকপি-র নির্যাতিতার প্রেমিক তার ট্রমা কাটানোর জন্য পরম যত্নে তাকে আগলে রেখেছে। গির্জায় অনাড়ম্বরভাবে বিয়েও সেরে নিয়েছে। মূল অভিযুক্তের বাড়ি ভেঙে দিয়েচেন মেইতেই মহিলারাই। বিজেপি-আরএসএস-এর ঘৃণার রাজনীতির বিষক্রিয়া একদিন কেটে যাবে। সাধারণ মানুষের রোজকার বেঁচে থাকার লড়াই সেই বিষ কাটিয়ে দেবে। এমন স্বপ্ন হয়তো দিবা স্বপ্ন হবে না যে কুকি-ভাইয়ের দগ্ধ ঘর নতুন করে গড়ে দিতে হাত লাগাবেন তার মেইতেই প্রতিবেশী।
কিন্তু উত্তর-পূর্বে যে ক্ষোভের আগুন জ্বলতে শুরু করেছে তার দাবানল থেকে নিজেদের বাঁচাতে পারবেন তো মোদী-শাহ?
- জয়ন্তী দাশগুপ্ত