ক্ষতবিক্ষত মণিপুর। বিধ্বস্ত মণিপুর। জাতি হিংসায় বিদীর্ণ মণিপুর।
৩ মে থেকে ৩২.২ লক্ষ জনসংখ্যার ছোট্ট উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্য মণিপুর আজও দাউদাউ করে জ্বলছে। কোনো বিরোধী শাসিত রাজ্যে এমন ঘটনা ঘটলে ‘বিশ্বগুরু’ কী বলতেন, কীই বা করতেন তা সকলেই অনুমান করতে পারছেন। আর, বহু বিজ্ঞাপিত ‘ডবল ইঞ্জিন’ চালিত সরকার যে আজও কেন মণিপুরকে শান্ত করতে পারল না, তা স্পষ্ট নয়।
এই অস্পষ্ট ধূসর প্রান্তরে হঠাৎ কিছুটা আলোকসম্পাত করলেন মণিপুরেরই বিজেপি বিধায়ক পাওলিয়েনলাল হাওকিপ। তিনি ওই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সরাসরি চিঠি লিখে বলেছেন, কয়েকমাস ধরে চলতে থাকা এই মর্মান্তিক মানবতার ট্রাজেডির আগুন নিরন্তর জ্বলছে, কারণ এই আগুন জ্বালিয়ে রাখার পেছনে রয়েছে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্রয়ে কদর্য রাষ্ট্রীয় হিংসার খোলখুলি মদত। মেইতেই জঙ্গীবাহিনীর সাথে সরকারের সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীর যৌথ মদতে ইম্ফল উপত্যকায় পাহাড়ের পাদদেশে কুকি-জো’দের একের পর বসবাসস্থলকে জ্বালিয়ে, তাদের হত্যা করা হল। মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এই সশস্ত্র অভিযানকে ‘ড্রাগ-সন্ত্রাসীদের’ বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের যুদ্ধ হিসাবে গৌরবান্বিত করেছিলেন। মণিপুরে আইনসভা, প্রশাসন, বিচারবিভাগ সংখ্যাগুরু মেইতেইদের প্রতি নির্লজ্জ পক্ষপাতিত্ব নিয়ে চলে এসেছে আবাহমান কাল ধরে। এই হিংসার আগুনে কত মানুষ যে প্রাণ হারিয়েছেন, বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, কত শত নারীকে ধর্ষণ, রাষ্ট্রীয় হিংসার কবলে পড়তে হয়েছে তার হিসাব নেই।
মে মাসে, দু’টি মেয়েকে বিবস্ত্র করে উন্মত্ত ভিড় প্রকাশ্য রাস্তায় প্যারেড করিয়ে একজন মেয়ের বাবা ও ভাইকে খুন করার পর গণধর্ষণ করে। আর সেই ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যাওয়া আপামর জনগণের বিবেক আলোড়িত হয়। ঘুম থেকে উঠে শীর্ষ আদালতের স্বতঃপ্রণোদিত হস্তক্ষেপের পর অত্যন্ত ধূর্ত প্রধানমন্ত্রী দু’চার বাক্যে ঘটনার নিন্দা জানিয়ে মণিপুরের সাথে বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলোকে একই বন্ধনিতে ফেলে পুরো বিষয়টাকেই লঘু করে দিলেন। মালদার একটি চরম নিন্দিত ঘটনাকে সামনে এনে মণিপুর-মালদাকে একই বন্ধনিতে ফেলে রাজ্যে বিজেপি হৈচৈ শুরু করে দিয়েছে। মণিপুরে একটি নির্দিষ্ট জাতি ‘কুকি জো’কে নিকেষ করার বিজেপির বৃহৎ ষড়যন্ত্রের প্রেক্ষিত থেকে কাটছাঁট করে ওই ঘটনাকে শুধুমাত্র নারী নির্যাতনেই সীমাবদ্ধ রাখার শয়তানি তত্ত্ব বাজারে ফেরি করা শুরু হল, যাতে বামপন্থীদের একটি অংশও প্রভাবিত হলেন।
গুজরাট মডেল, উত্তরপ্রদেশে যোগী মডেল আর হালে মণিপুর মডেল হল সংখ্যালঘুদের নিকেষ করার, বিদ্বেষ-বিভাজনের এক হীন কুচক্রী রাষ্ট্রীয় ফ্যাসিস্ট ষড়যন্ত্র। যেখানে নারী ধর্ষণকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, যেমনটা হয়েছিল গুজরাটে ২০০২ সালের দাঙ্গায়। এরসাথে মালদা বা বিরোধী শাসিত অন্য রাজ্যের কোনো তুলনাই টানা যায় না। মোদীর সুরে সুর মিলিয়ে এখন বিজেপি জঘন্য খেলায় নেমেছে। উত্তাল হয়ে উঠেছে সংসদ। মণিপুর নিয়ে মোদীর বিবৃতির দাবিতে ‘ইন্ডিয়া’ ঐক্যবদ্ধ। যুদ্ধরেখা টানা হয়ে গেছে। এখন সম্মুখ সমর!