মিলান কুন্দেরা ও প্রাগ বসন্ত সম্পর্কে দু’চার কথা
prague-spring

লুডভিগ যখন কলেজে পড়ত তখন তার এক বান্ধবী তাকে বলেছিল আশাবাদী তরুণেরা মার্কসবাদ থেকে জ্ঞান আহরণ করে নিজেকে ক্রমশ সমৃদ্ধ করতে থাকে। লুডভিগ রসিকতা করে সেই বান্ধবীকে এর জবাবে লিখেছিল যে আশাবাদ মানবজাতিকে আফিমের নেশায় বুঁদ করে রাখে। ট্রটস্কি দীর্ঘজীবী হোন — এমন কথাও ছিল সেখানে। “Optimism is the opium of mankind! A healthy spirit stinks of stupidity! Long live Trotsky!” সেই বান্ধবীর থেকে এই কথাটা ক্রমশ নানা জায়গায় ছড়াল।

সেটা ১৯৫০’র দশক। বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৮-এ চেকস্লোভাকিয়া এসেছে কমিউনিস্ট শাসনের অধীনে। এই ধরনের রঙ্গতামাসা কর্তৃপক্ষ খুব একটা পছন্দ করলেন না। তারা লুডভিগকে কমিউনিস্ট পার্টি থেকে তো তাড়ালেনই। তাড়িয়ে দিলেন কলেজ থেকেও। লুডভিগকে সেনাবাহিনীতে ভর্তি হতে হল। যেতে হল লেবার ক্যাম্পে। খনিতে কঠোর পরিশ্রমের কাজে লাগিয়ে দেওয়া হল।

অনেক বছর পরে লুডভিগ মোরাভিয়াতে ফেরে। তার নিজের শহরে। ততদিনে সে সফল এক বিজ্ঞানী। যদিও অতীতের নানা অভিজ্ঞতায় তার মন তিক্ত। এক রসিকতার জন্য তার তারুণ্যের দিনগুলো কীভাবে তিক্ত হয়ে গিয়েছিল সেটা সে ভুলতে পারে না। জেমেনেক বলে যে তাকে পার্টি-বিরোধী অবস্থানের জন্য দেওয়া শাস্তির অন্যতম হোতা ছিল, তাকে লুডভিগ নানাভাবে শাস্তি দিতে চায়। জেমেনেকের স্ত্রী হেলেনার সঙ্গে সে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি করে, তাকে জেমেনেকের থেকে বিচ্ছিন্ন করে। কিন্তু জেমেনেকের কাছে এটা শাস্তি না হয়ে সুবিধে হিসেবে দেখা দেয়। হেলেনা ডিভোর্স নিয়ে নেওয়ায় সে তার প্রেমিকার সঙ্গে নির্বিঘ্নে দিনযাপন শুরু করে।

১৯৬৫ সালেই লুডভিগ বলে চরিত্রটিকে কেন্দ্র করে মিলান কুন্দেরা তাঁর ‘দ্য জোক’ উপন্যাসটি লিখে ফেলেছিলেন। তবে রাষ্ট্রীয় সেন্সরশিপের আওতায় তা তখন প্রকাশিত হয়নি। ১৯৬৭ সালে সেটি প্রকাশিত হল। অনতি পরেই অবশ্য সেটি আবার নিষিদ্ধ হয়ে যায় চেকস্লোভাকিয়ায়। পরবর্তীকালে মিলান কুন্দেরাকে দেশও ছাড়তে হয়। আশ্রয় নিতে হয় প্যারিসে। আমৃত্যু সেটাই ছিল তাঁর শহর। একসময় তিনি চেক ভাষায় লেখালিখিও ছেড়ে দেন। লেখার ভাষা হিসেবে বেছে নেন ফরাসী।

চেক কমিউনিজম ও কুন্দেরার সম্পর্ক নানা পর্বে ওঠানামা করেছে। যে কুন্দেরা কমিউনিস্টরা চেকস্লোভাকিয়ায় ক্ষমতায় আসার আগেই নিয়েছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ, কমিউনিস্টদের চেকস্লোভাকিয়ার ক্ষমতা দখলের লড়াইতে ছিলেন প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণকারী, তিনি অচিরেই এর বিরোধী হয়ে উঠলেন। এতটাই কড়া সমালোচনা শুরু করলেন কমিউনিস্ট পার্টির, যে ১৯৫০ সালেই তাঁকে পার্টি থেকে বহিষ্কৃত হতে হল। ১৯৫৬ সালে আবার তাঁকে পার্টিতে ফেরানো হল। ১৯৬৭-৬৮’র পালাবদলের সময়ে তিনি হয়ে উঠলেন পার্টির এক প্রধান বুদ্ধিজীবী লেখক। তৎকালীন সংস্কার কর্মসূচির পক্ষে চলল তাঁর সওয়াল ও লেখালিখি। কিন্তু সংস্কারকে আবার আটকানো হল, কুন্দেরাও চলে গেলেন কালো তালিকায়। তাঁকে আবার কমিউনিস্ট পার্টি থেকে বহিষ্কৃত হতে হল। নিষিদ্ধ হল তাঁর উপন্যাসও। এর কেন্দ্রে থাকল ১৯৬৮-র প্রাগ বসন্ত। প্রাগ বসন্তের ইতিহাস বাদ দিয়ে কুন্দেরা, তাঁর লেখালিখি পড়াই সম্ভব নয়। বোঝা সম্ভব নয় কুন্দেরার রাজনৈতিক দর্শনকেও।

প্রাগ বসন্তর সময়কালটা ১৯৬৮। ১৯৬৮ সালের ৫ জানুয়ারি চেক কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান হিসেবে নোভৎনিনের স্থলাভিষিক্ত হলেন দুবচেক। চেকস্লোভাকিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে তিনি বেছে নিলেন লুদভিক সাবোদাকে। প্রাগ বসন্তের মূল কারিগর এই দুবচেকই। এই সময়ে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দুবচেক নোভৎনিনের অনেক নীতির বিরুদ্ধে খোলাখুলি কথা বললেন। নীতি বদলের কথা বলে তরুণ সমাজকে স্বপ্ন দেখালেন গণতন্ত্র আর খোলা বাজার অর্থনীতির। নতুন চেকস্লোভাক সরকার বেশ কিছু নীতি পরিবর্তনের দিকে হাঁটার কথা বলল। এর নাম দেওয়া হল ‘মানবিক মুখের সমাজতন্ত্র’, ‘সোশ্যালিজম উইথ এ হিউম্যান ফেস’। এই নীতিমালার মধ্যে থাকল সংবাদমাধ্যমের আরো অনেক বেশি স্বাধীনতার কথা। থাকল বাক স্বাধীনতার কথা, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অধিকারের কথা। অর্থনীতির ক্ষেত্রে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের কথা বলা হল। তার অন্যতম ভোগ্যপণ্য তৈরির ক্ষেত্রে জোর বাড়ানো। চেক ও স্লোভাক — চেকস্লোভাকিয়ার দুই অংশকে সায়ত্তশাসন দেবার নীতিও গৃহীত হয়।

নীতি বদলের যে দিকটি নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোড়ন তৈরি হয় তা হল আগামী দশ বছরের মধ্যে ধাপে ধাপে কিছু পরিবর্তন এনে বহুদলীয় গণতন্ত্র ও নির্বাচনের কথা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৮ সালে কমিউনিস্ট পার্টি ক্ষমতায় আসার পর থেকে নির্বাচন আর হয়নি চেকস্লোভাকিয়ায়। কমিউনিস্ট পার্টি ছাড়া অন্য দলগুলি রাষ্ট্রীয় রাজনীতিতে সক্রিয় থাকতে পারেনি। দুবচেকের আমলে একদিকে যেমন সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা এল, নানা বিষয়ে রাষ্ট্রীয় নীতির সমালোচনা শুরু করতে শুরু করল অপেক্ষাকৃত স্বাধীন সংবাদ মাধ্যমগুলি, তেমনি ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টি, সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি — এদেরও পুনরুত্থানের ইঙ্গিৎ দেখা গেল।

সোভিয়েত ইউনিয়ন ও তার বন্ধুরাষ্ট্রগুলি চেকস্লোভাকিয়ার এইসব পরিবর্তন, বিশেষ করে বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার কথাবার্তাকে গভীর সন্দেহের চোখে দেখল। চেকস্লাভ সংবাদমাধ্যম নতুন পরিস্থিতিতে যে ধরনের লেখালিখি করছে তার উসকানিতে ১৯৫৬’র অক্টোবর নভেম্বরে হাঙ্গেরিতে সোভিয়েত প্রভাবাধীন সরকারকে উচ্ছেদ করে যেমন হয়েছিল, তেমন ধরনের ‘প্রতিবিপ্লবের পরিস্থিতি’ তৈরি হতে পারে ভেবেও তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন।

প্রতিবিপ্লবী অভ্যুত্থান থেকে চেক সমাজতন্ত্রকে রক্ষা করার কথা বলে সোভিয়েত নেতৃত্বাধীন ওয়ারশভুক্ত জোটের সেনাবাহিনী চেক প্রজাতন্ত্রে পৌঁছলো ২০ অগস্ট ১৯৬৮’র মধ্যরাতে। সেনার সংখ্যা ছিল পাঁচ লাখেরও বেশি। সঙ্গে কামান, ট্যাঙ্ক, আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র। পরের দিনই সোভিয়েত নেতৃত্বাধীন সেনা চেক কমিউনিস্ট পার্টির সদর দফতর সহ প্রাগ শহরের দখল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিল। চেক রেডিওতে কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্ব জনগণকে সোভিয়েত সেনার বিরুদ্ধে কোনও আগ্রাসী নীতি না নিয়ে শান্ত থাকার পরামর্শ দিলেন। দুবচেক গ্রেপ্তার হলেন। তাঁকে মস্কোয় নিয়ে আসা হল। সোভিয়েতের দেওয়া মস্কো প্রোটোকলের সমস্ত শর্ত মেনে নিয়ে সইসাবুদ করার পরেই তিনি ফিরতে পারলেন চেকস্লোভাকিয়ায়। এরপরের কয়েক মাসে বেশ কয়েকবার দুবচেককে মস্কোয় হাজিরা দিতে হয়েছে। সোভিয়েত নেতৃত্ব না খুশি হতে পারছিলেন দুবচেক সরকারের ওপর, না তাঁদের ওপর আস্থা রাখতে পারছিলেন। দুবচেকের পক্ষেও পরিস্থিতি ছিল বেশ কঠিন। একদিকে পুরনো পথে চলার জন্য সোভিয়েত ইউনিয়নের নিরন্তর চাপ, অন্যদিকে দেশের ভেতরে পুরনো কট্টরপন্থী ও নতুন পরিবর্তন পন্থীদের মধ্যেকার দ্বন্দ্ব। এসবের মাঝে সমাধানসূত্র বের করা দুবচেকের পক্ষে ক্রমেই অসম্ভব হতে থাকে। ১৯৬৯’র এপ্রিলে কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদকের পদ থেকে দুবচেক পদত্যাগ করেন। নতুন সম্পাদক হন গুস্তাভ হুসাক। সোভিয়েত চাপের কাছে নত হয়ে হুসাকের নেতৃত্বে চেকস্লোভাকিয়ার কমিউনিস্ট পার্টি ও সরকার প্রাগ বসন্তের ঘোষণাগুলি থেকে সরে এসে প্রাক-দুবচেক আমলের নীতিতে চলতে শুরু করে।

kundera-and-the-prague-spring

প্রাগ বসন্তের দিনকাল নিয়ে কুন্দেরা ১৯৮২ সালে লেখেন তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত ও আলোড়ন সৃষ্টিকারী উপন্যাস ‘দ্য আনবিয়ারেবল লাইটনেস অব বিয়িং’। এর প্রধান চরিত্র পাত্ররা হল টমাস, তার স্ত্রী টেরেজা, টমাসের প্রেয়সী সাবিনা, সাবিনার আর এক প্রেমিক ফ্রানজ। শুধু এই চরিত্র পরিচয়গুলো থেকেই আঁচ করা যায় বিবাহ সম্পর্কের বাইরের খোলামেলা দিকটি এই উপন্যাসে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। প্রধান চরিত্র টমাস সত্যিই মনে করে স্ত্রী টেরেজার প্রতি তার ভালোবাসা এবং অন্যান্য মেয়েদের সঙ্গে শরীরী সম্পর্ক তৈরি করার মধ্যে কোনও স্ববিরোধ নেই। দুটিই একইসঙ্গে সম্ভব। টেরেজাও স্বামীর বহুগামিতার কথা জানে। সে এই বহুগামিতার জন্য চিন্তিত নয়। তার শুধু ভয় সেও না স্বামীর কাছে ভালোবাসার মানুষের বদলে কোনওদিন শুধু এক নারী শরীর হয়ে ওঠে। উপন্যাসের আর এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র সাবিনা একইসঙ্গে ভালোবাসে টমাস এবং ফ্রানজকে। সমাজের চাপিয়ে দেওয়া নীতিমালার গণ্ডীকে সে কিছুতেই মানতে রাজি নয়। কমিউনিস্ট অনুশাসনের বিরুদ্ধে তার প্রতিবাদের ভাষাকে সে রূপ দেয় তার আঁকা ছবিতে। অন্যদিকে টেরেজাও প্রাগ বসন্তের দিনগুলিতে ঝুঁকি নিয়ে চিত্র সাংবাদিকতার কাজ করে যায়। ক্যামেরায় ধরে রাখে সোভিয়েত সেনার আগ্রাসনের মুহূর্তগুলো। উপন্যাসের আর এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র ফ্রানজ লেখালিখি এবং পড়াশুনোর জগতের লোক। কিন্তু সমাজ রাষ্ট্রের ক্ষতচিহ্নগুলোর বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে সে প্রতিবাদ করে। তা সে দেশের ভেতরেই হোক বা বাইরে। ব্যাঙ্ককে এমন এক পরিস্থিতিতেই সে প্রাণাত্মক আঘাত পায়।

উপন্যাসের নায়ক টমাস পেশায় একজন শল্য চিকিৎসক। প্রাগ বসন্তের পরিপ্রেক্ষিতে চেকস্লোভাকিয়ায় সোভিয়েত নেতৃত্বাধীন ওয়ারশ গোষ্ঠীর সেনাবাহিনী হানা দিলে সে তার স্ত্রী টেরেজাকে নিয়ে সুইজারল্যাণ্ডের রাজধানী জুরিখে চলে যায়। টেরেজা অবশ্য বিদেশের পরিবেশে ক্লান্তিবোধ করতে থাকে ও ফিরে আসে প্রাগে। কিছুদিন পর টমাস দেখে স্ত্রীকে ছেড়ে তারও প্রবাসে ভালো লাগছে না। সেও প্রাগে ফেরে। ততদিনে প্রাগ বসন্তের সমাপ্তি ঘটেছে। দুবচেক’দের বদলে শুরু হয়েছে গুস্তাভ হুসাকের জমানা। এসেছে কঠোর দমনমূলক ব্যাটন আইন। চলছে পার্টি সদস্যদের গণহারে বহিষ্কার। সোভিয়েত ইউনিয়নের নির্দেশিকায় ও সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে চলছে প্রাগের চেকস্লোভাক সরকার ও কমিউনিস্ট পার্টি। এই অবস্থায় প্রাগের জীবন অসহ্য বোধ করে প্রাগ ছেড়ে চেকস্লোভাকিয়ার গ্রামাঞ্চলেই চলে যান টমাস টেরিজা দম্পতি। সেখানে তারা সুখের অন্য মানে খুঁজে পান। টমাস বেরিয়ে আসেন এক নারী থেকে অন্য নারীতে শরীরী গমনের অভ্যাস থেকে।

এই উপন্যাসের পরিণতি অংশ পড়তে পড়তে আমাদের কৌতূহল তৈরি হয় এই নিয়ে যে অভিবাসী জীবনে কুন্দেরা নিজেও কি যন্ত্রণাদগ্ধ ছিলেন? তাঁর উপন্যাসের নায়ক নায়িকা টমাস টেরিজার মতো? এই জল্পনা আরো বাড়ে যখন ২০০০ সালে সত্তর পেরনো অভিবাসী কুন্দেরা লেখেন তাঁর ইগনোরেন্স উপন্যাসটি। উপন্যাসটির কেন্দ্রে আছে আটষট্টির প্রাগ বসন্তের সময় চেকস্লোভাকিয়া থেকে দেশান্তরী হওয়া দু’জন মানুষ। আছে তাঁদের নতুন করে জীবনকে দেখা, আছে ফেলে আসা জীবনের জন্য মায়া ও যন্ত্রণা। কিন্তু উপন্যাসে অভিবাসী জীবনের যে যন্ত্রণাই থাকুক না কেন, বাস্তবে কুন্দেরা যে এর দ্বারা তাড়িত হয়েছিলেন, এমন কোনও প্রমাণ নেই। তিনি আজীবন প্যারিসেই থেকে গেলেন। এমনকী নব্বইয়ে সোভিয়েত রাশিয়া ও পূর্ব ইউরোপের অন্যান্য সব দেশের মতো যখন চেকস্লোভাকিয়াতেও কমিউনিস্ট জমানার অবসান হল, তখনও তিনি ফিরলেন না দেশে। শুধু তাই নয় লেখালিখির ভাষা হিসেবেও ত্যাগ করলেন মাতৃভাষা চেককে। শেষদিকে লিখে গেলেন কেবল ফরাসীতে।

ইউরো আমেরিকান দুনিয়া ঠান্ডা যুদ্ধের সময়কালে সব সময়েই কমিউনিস্ট দেশগুলির সেইসব মানুষজনকে আলোকবৃত্তে আনতে চেয়েছে যাঁরা কমিউনিস্ট জমানায় গণতন্ত্রের অভাব নিয়ে সোচ্চার হয়েছিলেন। বরিস পাস্তেরনাক, আলেকজান্ডার সলঝেনিৎসিন, মিখাইল বুলগাকভ, ইসমাইল কাদারে, দানিলো কিশ, চেসোয়াভ মিউজদের এই তালিকার অন্যতম প্রধান নাম অবশ্যই মিলান কুন্দেরা। নিঃসন্দেহে তাঁর ঔপন্যাসিক দক্ষতা অসামান্য। যে সোভিয়েত আগ্রাসন ও প্রাগ বসন্তের দমন নিয়ে তিনি কথা বলেন, তাও কমিউনিস্ট জমানার প্রবল সমালোচনাযোগ্য দিক। কিন্তু কুন্দেরা কখনো তথাকথিত পশ্চিমী উদার গণতন্ত্রের সাম্রাজ্যবাদী চরিত্র নিয়ে, ইউরো মার্কিন ন্যাটো অক্ষ নিয়ে সমালোচনামুখর হননি — এই আক্ষেপ আমাদের থেকেই যায়।

- সৌভিক ঘোষাল

খণ্ড-30
সংখ্যা-25