কাপ প্লেট, শৌচালয়, কম্পিউটার কেনা হয়েছে রেলের সুরক্ষা তহবিল থেকে, জানাল সিএজি
railway-protection-fund

২০১৭ সালে মোদী সরকার রেলের সুরক্ষার জন্য এক বিশেষ তহবিল তৈরি করেছিল। কিন্তু, কাপ-প্লেট ও পদযুগলকে মালিশ করতে বিশেষ এক যন্ত্র, শীতকালীন জ্যাকেট, কম্পিউটার, এস্কেলেটর, বাগান, শৌচালয় নির্মাণ, বেতনও বোনাস প্রদান প্রভৃতি খাতে তা খরচ করা হয়েছে।

২০২২ সালে রেলের বে-লাইনের ফলে দুর্ঘটনা সংক্রান্ত এক অডিট রিপোর্টে সিএজি ২০২২’র ডিসেম্বরে এই গুরুতর অভিযোগ এনেছে।

তদানিন্তন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেঠলি ২০১৭-১’র বাজেট পেশ করার সময়ে ‘রাষ্ট্রীয় রেল সংরক্ষা কোষ’ নামাঙ্কিত ৫ বছরের জন্য এক লক্ষ কোটি টাকার একটি তহবিল গড়ে তোলেন। এই ধার্য তহবিল সিড ক্যাপিটাল হিসাবে সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়, আর ঠিক ছিল রেল নানা উৎস থেকে এই খাতে টাকা জোগাবে।

বালাসোরে মর্মান্তিক রেল দুর্ঘটনার পর সিএজি’র এই চাপা পড়ে থাকা রিপোর্ট সামনে এল। আর তা মেলে ধরলো এই করুণ ছবি। এই রিপোর্ট ভারতীয় রেলের জন্য তৈরি করা ২০১৫ সালের এক শ্বেতপত্রকে উল্লেখ করে জানিয়েছে যে তাতে বলা হয়েছিল ১.১৪ লক্ষ কিলোমিটার রেল নেটওয়ার্কের জন্য ৪,৫০০ কিমি যে ট্র‍্যাক আছে, তা প্রতি বছর নবীকৃত করতে হবে। আর এটাই হল সুরক্ষা তহবিল গঠন করার প্রধান উদ্দেশ্য ।

সিএজি রিপোর্টে দেখিয়েছে, ২০১৭ থেকে ২০২১ পর্যন্ত ২,০১৭ ট্রেন দুর্ঘটনার মধ্যে ১,৩৯২টির ক্ষেত্রে অর্থাৎ ৬৯ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটে লাইনচ্যুতির কারণে। রেলের পরিভাষায় গুরুতর দুর্ঘটনা হল সেগুলোই যাতে প্রাণহানি ঘটে, আর মুখোমুখি সংঘর্ষ বা বে-লাইন হওয়ার ফলে দুর্ঘটনার হার প্রায় ৮০ শতাংশ।

অরুণ জেঠলি গঠিত সুরক্ষা তহবিল রক্তাল্পতায় ভুগছিল। সিদ্ধান্ত হয়েছিল, প্রতি বছর ২০,০০০ কোটি টাকা সুরক্ষা তহবিলে জমা করা হবে। এরমধ্যে ১৫,০০০ কোটি টাকা কেন্দ্র দেবে বাজেট বরাদ্দের মাধ্যমে, আর অবশিষ্ট ৫,০০০ কোটি টাকা রেল সংগ্রহ করবে তার আভ্যন্তরীণ ক্ষেত্র থেকে। চার বছরে রেলের ২০,০০০ কোটি টাকা ওই তহবিল খাতে গচ্ছিত রাখার কথা ছিল। কিন্তু, তারা ৪,২২৫ কোটি টাকা জমা করে, ফলে ঘাটতি হয় ১৫,৭৭৫ কোটি বা ৭৮.৯ শতাংশ। এই ঘাটতির ফলে সিএজি তার রিপোর্টে উল্লেখ করে, সুরক্ষা তহবিল গঠন করার মূল উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হয়ে যায়।

সিএজি এটাও দেখায় যে রেলের উচ্চপদস্থ কর্তাব্যক্তিরা ব্যয় সংক্রান্ত ক্ষেত্রে সমস্ত নিয়মকে লঙ্ঘন করে এমন সমস্ত খাতে তা খরচ করে যার সঙ্গে রেল সুরক্ষার কোনো সম্পর্ক নেই। কাপ-প্লেট, পদযুগল মালিশ করার যন্ত্র, আসবাব পত্র, শীতকালীন জ্যাকেট, কম্পিউটার, শৌচালয় তৈরি, ফুলবাগিচা প্রভৃতি খাতে ব্যয় করা হয় সুরক্ষা তহবিলের টাকা।

সিএজি রিপোর্টে দেখিয়েছে তহবিলের টাকা খরচ ক্রমেই কমতে থাকে। ২০১৭-১৮-তে ওই খাতে খরচ হয়েছিল ৮১.৫৫ শতাংশ; ২০১৯-২০তে তা কমে দাঁড়ায় ৭৩.৭৬ শতাংশ। রেললাইন নবীকরণের জন্য ২০১৮-১৯ বরাদ্দ হয়েছিল ৯,৬০৭.৬৫ কোটি টাকা। কিন্তু ২০১৯-২০-তে তা কমে দাঁড়ায় ৭,৪১৭ কোটি টাকা।

রেল দপ্তরকে যে তহবিল দেওয়া হয়েছিল, সেটা পর্যন্ত তারা খরচ করতে পারেনি। ২০১৭-১৮ সালে সাতটি জোনাল রেল সুরক্ষা খাতে খরচ করতে না পেরে ফেরত দেয় ২৯৯ কোটি টাকা। একইভাবে ২০১৮-১৯ সালে ন’টি জোনাল রেল ফেরত দেয় ১৬২.৮৫ কোটি টাকা খরচ করতে না পেরে। ২০১৯-২০-তে পাঁচটি জোনাল রেল, একই কারণে ফেরত পাঠায় ১১.৬৮ কোটি টাকা। ২০১৭-২১ পর্যায়ে ১,১২৭টি ট্র‍্যাক থেকে বেলাইনের ঘটনা ঘটে, যারমধ্যে ট্র‍্যাক নবীকরণ না হওয়ার কারণের জন্য ২৮৯টি দুর্ঘটনা হয় ।

(সূত্রঃ দ্য টেলিগ্রাফ, অনলাইন, ১২ জুন ২০২৩)

খণ্ড-30
সংখ্যা-19