প্রত্যেক বছরের ন্যায় এবছরেও ২৪ জুন ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন ধিক্কার দিবসের ডাক দেয়। এবং ২৩ জুন বিবি বাজার মোড়ে ধিক্কার সভার আয়োজন করে। এই সভায় যেমন গান এন্ড শেল ফ্যাক্টরির প্রত্যেকটি ট্রেড ইউনিয়ন নেতৃত্ব উপস্থিত ছিলেন, তেমনি এআইসিসিটিইউ-র রাজ্য সভাপতি ও এনপিডিইএফ-র সাংগঠনিক সম্পাদক অতনু চক্রবর্তী এবং ব্যাঙ্ক কর্মচারী আন্দোলনের নেতা সুজিত ঘোষও উপস্থিত ছিলেন।
গান এন্ড শেল ফ্যাক্টরিতে ২০১৭ সালের ২৪ জুন শ্রমিকদের উপর এক ভয়ংকর হামলা নেমেছিল। শ্রমিকদের উপর ক্রমাগত বাড়তে থাকা কর্তৃপক্ষের আমলাতান্ত্রিক, অশালীন আচরণ, আর্থিক অবিচার সহ্য করতে না পারা কারখানার সমস্ত শ্রমিকদের সতঃস্ফুর্ত বিক্ষোভকে সে সময়ের জেনারেল ম্যানেজার বরদাস্ত করেনি। কারণ তার কাছে এটা ছিল ‘অশনি সংকেত’। “রুল ১০এ”-র মাধ্যমে ৮ জন শ্রমিককে, যার মধ্যে ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের প্রথম সারির ৩ জন নেতা ছিলেন, অনির্দিষ্ট কালের জন্য সাসপেন্ড করা হয় এবং আরও ১৭ জন শ্রমিকের উপর একাধিক শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়। প্রতি বছর ২৪ জুন “ধিক্কার দিবস” পালন করার শিকড় রয়েছে অতিতের এই ঘটনায়।
এই ধিক্কার সভায় গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো ও অঙ্গীকার বেরিয়ে এসেছে তা হল —
১) যে “রুল ১০এ” প্রয়োগের সময় কোনো কারণ দর্শানোর প্রয়োজন হয় না, এক কলমের খোঁচায় সরকারি কর্মচারীকে সাসপেন্ড করা যায়, তা শ্রমিক কর্মচারীরা মেনে নিতে পারে না। তাই “রুল ১০এ” সরকারকে বাতিল করতে হবে।
২) অতিতের ঐ ভয়ংকর হামলা রোখা যায়নি, কারণ শ্রমিকদের মধ্যে সার্বিক ঐক্য গড়ে তোলা যায়নি। এর জন্য সমস্ত ট্রেড ইউনিয়নকে ঐক্যবদ্ধ হতে হতো।
৩) আজকের পরিস্থিতিতে আবারও কর্তৃপক্ষের আস্ফালন বাড়ছে, এমতাবস্থায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিলেশনকে গণতান্ত্রিক করার লক্ষ্যে কারখানার সমস্ত ইউনিয়নেকে এক হয়ে কর্তৃপক্ষের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে। এক্ষেত্রে পিস্তল সেকশনের “শোকজ” প্রাপ্ত শ্রমিকদের সপক্ষে সব ইউনিয়নের এক সাথে দাঁড়ানোর সাম্প্রতিক উদ্দ্যোগকে এই সভা স্বাগত জানাচ্ছে।
৪) প্রতিরক্ষা শিল্পে কর্পোরেশন বিরোধী ধর্মঘট লড়াইয়ে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে যেভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সমস্ত ইউনিয়নগুলো এবং সাধারণ শ্রমিকরা রুখে দাঁড়িয়ে ছিল, একইভাবে অপশন ফর্মে প্রত্যেকটি শ্রমিক কর্মচারীকে সরকারি ক্ষেত্রে থেকে যাওয়ার সম্মিলিত ইচ্ছা ব্যক্ত করতে হবে। এই ধিক্কার সভা এবিষয়ে ট্রেড ইউনিয়নগুলোকে ঐক্যবদ্ধ থাকার দিক নির্দেশ করছে।
৫) এনপিএস বাতিল করে সমস্ত কর্মচারীদের ওপিএস-এর আওতায় আনাতে হবে। এই দাবি কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরাসরি কর্মচারীদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয় উঠেছে। কিছু জনপ্রিয় আন্দোলন ও গড়ে উঠেছে। কাশীপুরে নতুন প্রজন্মের কর্মচারীদের এই আন্দোলনে যুক্ত করার কর্তব্যটিও এই সভা স্বীকার করছে।
৬) “ইডিএসএ” কার্যত প্রতিরক্ষা কর্মীদের অধিকারহীন করে রেখেছে। ধিক্কার সভা এই আইন প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছে। ধিক্কার সভা খুবই প্রাণবন্ত ছিল এবং শ্রমিক কর্মচারীর উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।