ওয়ালর্ড ইকনমিক ফোরাম প্রকাশ করল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট, ২০২৩। তাতে দেখা যাচ্ছে, ১৪৬টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ১২৭। আগের তুলনায় ভারত আট ধাপ উপরে উঠেছে। গতবছর ভারতের স্থান ছিল ১৩৫। যে চারটি সূচকের উপর এই সারণি তৈরি হয়, তা হল, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ এবং সুযোগ সুবিধা, শিক্ষা অর্জন করতে পারা, স্বাস্থ্য ও বেঁচে থাকার অন্যান্য শর্তাবলী এবং রাজনৈতিক সক্ষমতা। প্রকাশিত সমীক্ষা অনুযায়ী, শিক্ষার সুযোগ সুবিধার ক্ষেত্রে আগের তুলনায় উন্নতি এবং রাজনৈতিক সক্ষমতার দিক থেকে নানান স্বশাসিত সংস্থাগুলোতে মহিলা প্রতিনিধিত্ব ৪০ শতাংশের একটু বেশি হলেও ভারতের সংসদ মাত্র ১৫.১ শতাংশ মহিলা সাংসদকে প্রতিনিধিত্ব করে। ১৯৬৩ সালে নাগাল্যান্ড ভারতের এক রাজ্য হিসাবে প্রথম স্বীকৃতি পাওয়ার পর ২০২৩ সালে নাগাল্যান্ড পেল তার প্রথম দু’জন বিধায়ক!
কিন্তু আর্থিক ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ ও সুযোগ সুবিধার ক্ষেত্রে ভারত অনেকটাই নিচের দিকে আর এই প্রশ্নে তার রেকর্ড মাত্র ৩৬.৭ শতাংশ। শিক্ষাক্ষেত্রের সমস্ত স্তরেই মহিলাদের সমান সুযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক এই রিপোর্ট। সারণিতে প্রতিবেশি দেশ পাকিস্থান ১৪২, বাংলাদেশ ৫৯, চীন ১০৭, নেপাল ১১৬, শ্রীলঙ্কা ১১৫ এবং ভুটান ১০৩। অর্থাৎ, পাকিস্থান ছাড়া অন্য সমস্ত প্রতিবেশি দেশগুলো রয়েছে ভারতে উপরে। লক্ষণীয়, প্রতিবেশি দেশগুলোর মধ্যে লিঙ্গসাম্যের প্রশ্নে আন্তর্জাতিক রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশের স্থান সবচেয়ে ভালো।
বেশ কয়েক দশক পর খুব ধীরে হলেও ভারতে কন্যা শিশুর জন্মহারে ১.৯ শতাংশ বিন্দু উন্নতি হয়েছে। রিপোর্ট জানিয়েছে, অতিমারির আগেকার অবস্থার তুলনায় আশাপ্রদ উন্নতি হলেও বর্তমানে জীবন যাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় এবং শ্রম বাজারে অস্থিরতার প্রকোপ বেশি মহিলাদেরই ভুগতে হচ্ছে দুনিয়ার সর্বত্র। এ’প্রশ্নে অগ্রগতি ঘটছে খুবই ঢিমেতালে।
মোট ১৪৬টি দেশকে নিয়ে ২০২৩’র বৈশ্বিক লিঙ্গ অসাম্য বা গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। সমস্ত দেশগুলোর সমষ্ঠিগত লিঙ্গ অসাম্য প্রায় ৬৮.৪ শতাংশ। ২০২২-এ এই হার ছিল ৬৮.১ শতাংশ, যা ২০২৩-এ দাঁড়িয়েছে ৬৮.৪ শতাংশ। অর্থাৎ, গতবছরের তুলনায় মাত্র ০.৩ শতাংশ বিন্দু উন্নতি হয়েছে। এই ফোরামের অনুমান, বর্তমানের এই হার বজায় থাকলে পূর্ণ সাম্যতা আনতে লেগে যাবে আরও ১৩১ বছর!
রিপোর্ট জানাচ্ছে, বিশ্বের কোনো দেশই এখনও পর্যন্ত সম্পূর্ণ মাত্রায় লিঙ্গ সাম্য অর্জন করতে পারেনি। তবে শীর্ষে থাকা ন’টি দেশ ( আইসল্যান্ড, নরওয়ে, ফিনল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, সুইডেন, জার্মানি, নিকারাগুয়া, নামিবিয়া, লিথুয়ানিয়া) অসাম্যকে প্রায় ৮০ শতাংশ কমিয়ে এনেছে আর আইসল্যান্ড রয়েছে শীর্ষ স্থানে — এই দেশে অসাম্য কমিয়ে ৯২.২ শতাংশ হয়েছে। এটাই একমাত্র দেশ, যারা ৯০ শতাংশের বেশি কমিয়ে এনেছে অসাম্য।
শ্রমবাজার ও বিভিন্ন শিল্পের উচ্চপদে আসীন মহিলা কর্মকর্তার সংখ্যাও অনেক কম। ২০১৩ সালে ১৬৩ দেশে লিঙ্কড-ইন’এর সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, সমগ্র শ্রমশক্তির মাত্র ৪১.৯ শতাংশ মহিলা, শিল্প সংস্থার উচ্চপদে আসীন মহিলা আধিকারিকদের হার মাত্র ৩২.২ শতাংশ।
অর্থনৈতিক ভাবে এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ দেশ ভারত, চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া এখনও কর্মক্ষেত্রে এবং মজুরির প্রশ্নে বড় ধরনের লিঙ্গ অসাম্যের শিকার।
বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং গণিত — এই উচ্চহারের বেতন ক্ষেত্রগুলো আগামী দিনে আরও প্রসারলাভ করবে। কিন্তু, এই পেশাগুলোতে মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব খুবই কম, মাত্র ২৯.২ শতাংশ। ২০২২-২৩’র মধ্যে শ্রমবাজারে মহিলাদের অংশগ্রহণ সামান্য বেড়েছে ৬৩ শতাংশ থেকে ৬৪ শতাংশ। মহিলারা এখনও পুরুষদের তুলনায় অধিক সংখ্যায় কর্মহীনতার শিকার। আর, কাজের সুযোগ পেলেও মহিলাদের ঠাঁই হয় নিম্নমানের কাজের ধরনে। দেখা যাচ্ছে, ২০২০’র পর থেকে কাজের বাজারে মহিলাদের অংশগ্রহণে সামান্য উন্নতি হলেও তা হয়েছে ইনফর্মাল কাজে — প্রতি পাঁচটি ইনফর্মাল কাজের মধ্যে চারটিতেই মহিলারা যুক্ত, আর পুরুষদের অনুপাত হল প্রতি তিনটির মধ্যে দু’টো।
ইনফর্মাল ক্ষেত্রে, সামাজিক সুরক্ষা বিহীন, স্বল্প মজুরি এখনও মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রধান প্রবণতা হয়ে রয়েছে।
- অতনু চক্রবর্তী