১৫ মে চানকু মাহাতোর শহীদ দিবস। ১৮৫৬ সালের এই দিনে ব্রিটিশ কোম্পানিরাজ তাঁকে ফাঁসি দিয়েছিল। শহীদের মৃত্যু বরণ করেছিলেন ৪০ বছর বয়স্ক জননেতা চানকু মাহাতো। অধুনা ঝাড়খণ্ড রাজ্যের গোড্ডা জেলার রংমাটিয়া গ্রামে চানকুর জন্ম। শৈশবেই মাতৃহারা চানকু বাবার সাথে কৃষিকাজ করত। ব্রিটিশ কোম্পানির রাজত্ব তখন দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে গ্রাম গ্রামান্তরে, আর তার সাথে মহামারীর মতো ছড়াচ্ছে অত্যাচার নিপীড়ন লুন্ঠন, গ্রামীণ স্বশাসিত সমাজ ও সমষ্টিগত ভূমি-মালিকানা ব্যবস্থার ধ্বংসসাধন। ছোটবেলা থেকেই সাহসী ও বুদ্ধিদীপ্ত হিসেবে পরিচিত চানকুর সজাগ দৃষ্টির সামনেই এসব ঘটে চলেছিল। চানকু বুঝতে পারছিল, বিদ্রোহই একমাত্র রাস্তা। ঠিক যেমন বুঝতে পারছিল আরও পূবের দিকে দামিন-ই-কোহ্’র সিধো-কানু-ফুলো-ঝানোরা। চানকু গ্রামে গ্রামে বৈঠক শুরু করে। গাঁয়ের খেটে খাওয়া কৃষক সমাজ একজোট হতে শুরু করে। চানকু মাহাতো শ্লোগান তোলে, “আপন মাটি, আপন দানা, পেট কাটি নাহি দিবহ খাজনা”। নিজের পেট কেটে কোম্পানির তফিল আর ভরব না, এই শস্য এই ভূমি আমাদের। গ্রামে গ্রামে জেগে ওঠে আদিবাসী যুবসমাজ। ১৮৫৩-৫৪ সালে রাজবীর সিংহ, বেজল সোরেন, ভাগীরথ মাঝি, হুঘলি মাহাতো, বুধু রায়, বলুয়া মাহাতো, রামা গোপ, চালো জোলহা, গান্দো, ইরদেব সিংহ প্রমুখ একসারি নেতৃত্বকে সাথে নিয়ে কোম্পানির সরকার ও জমিদার শ্রেণির বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন শুরু করেন চানকু মাহাতো। এই সময়েই এসে যায় হুলের আহ্বান। ১৮৫৫’র ৩০ জুন ভগনাডিহির মাঠে মহাসমাবেশের ডাক। সমস্ত আন্দোলন হুলে এসে মেশে। সাঁওতাল, মাহাতো, বাউড়ি সহ সমস্ত জনজাতির মানুষ কোম্পানিরাজ ও তার দালালদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে জেগে ওঠে। বহু বহু মানুষ প্রাণ দেন হুলে। যুদ্ধক্ষেত্রে শহীদ হন সিদো ও কানহু। চানকু মাহাতোও হয়ে ওঠেন হুলের অন্যতম নেতা। কোম্পানির পুলিশ খুঁজে বেড়ায় চানকুকে। চানকু গোপন বৈঠক চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এরকম এক বৈঠকে পুলিশের ঘেরাওয়ের মুখে পড়ে পুলিশের গুলিতে আহত হয়েও পালিয়ে যেতে সক্ষম হন সাথিদের তৎপরতায়। শেষে তাঁর নানিঘর বাড়েডিহ গ্রাম থেকে ধরা পড়েন চানকু। ১৫ মে ১৯৫৬ গোড্ডার রাজকাছারির কাছে কঝিয়া নদির তীরে ফাঁসির মঞ্চে শহীদ হন চানকু। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অগ্রপথিক চানকু মাহাতোকে আমরা শ্রদ্ধা জানাই। তাঁদের লড়াইয়ের পথ বেয়ে যা কিছু অর্জন আমাদের ছিল তা আজ নতুন করে কোম্পানিরাজের গ্রাসে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। চানকুর “আপন মাটি, আপন দানা” আর বিরসার “আবোয়া দিশম, আবোয়া রাজ” শ্লোগান আজকের প্রেক্ষিতে নতুন করে প্রাসঙ্গিক ও জীবন্ত হয়ে উঠছে। আমরা আমাদের শহীদদের স্বপ্ন সফল করার সংগ্রাম চালিয়ে যাব।