আমার পরিচয়, আমি একজন নামী কোম্পানির ডেলিভারি বয়। আমার জীবন কাহিনী হ’ল, প্রতিদিন ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার পথ দুই চাকার বাইকে রানারের মতো পিঠে বোঝা ভরা ওষুধের ব্যাগ নিয়ে এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে সময় মতো মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার গুরুদায়িত্ব আমার। কারণ সবার সময়মত ওষুধ চাই, তা নাহলে রুগীরা যে মরে যাবে, ভাই। আমার খবর কারো কাছে নেই। আমার বোধহয় বাঁচারও অধিকার নেই। কেন না, আমি যখন ওষুধের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে বাইক চালাই তখন কেউ ফোন করে বলে, “আমার ওষুধ আগে দিও ভাই। ডাক্তারবাবু আমায় বলেছে দুপুর ১২টায় ওষুধটা খেতে, তাই।” আবার অন্য প্রান্ত থেকে কেউ ফোন করে বলে, “কোথায় তুমি? আমার ওষুধ খাওয়ার সময় হয়ে এল। এখনও তুমি এলে না!” কেউ আবার ফোনে গালিগালাজ দিয়ে বলে, “আজ ঠিক ২টোর সময় ওষুধ না পেলে তোমার নামে কোম্পানির কাছে রিপোর্ট করব।” আমায় কথা বলার সময় দেয় না কেউ। আমার নেই কোনো খাওয়ার বা টিফিন করার সময় কারণ আমার কাঁধে মালিকের দেওয়া ওষুধ ভর্তি ব্যাগ যা সবাইকে সময়মতো পৌঁছে দেওয়া দায়িত্ব আমার। তবুও আমার মালিক বারবার বলে, “এই তো সামান্য কাজ কর।” বলার কারণ, আমাকে ২০০ টাকার বেশি মজুরি দেবে না, তাই। মালিকের ব্যবহার এমনই অদ্ভুত যে উনি চা বিস্কুট খাচ্ছেন অথচ ভুলেও আমাকে এক কাপ চা খাওয়ার কথা বলবেন না। আমার জীবনের এত ঝুঁকি অথচ আমার কোনো লাইফ ইনসিওরেন্স নেই। কারণ ওই যে বললাম, আমাদের কোনো বাঁচার অধিকার নেই। আমার ছোট্ট মেয়ে অলিভিয়া। এখনই তো আমার তার কথা ভাবার সময়। আজ আমি যদি কোনো দুর্ঘটনার শিকার হই কেউ কখনো ভাববে না আমার ছোট্ট মেয়েটির কথা। এই পৃথিবীর কোথায় যে ঠাঁই হবে তার? অর্থাৎ জলে ভেসে গেলেও আমার ছোট্ট মেয়েটির কেউ খবর রাখবে না।
আমার একটাই দাবি। সমস্ত ডেলিভারি বয়দের (রানার) জন্য সরকার একটা আইন আনুক যাতে সমস্ত ডেলিভারি বয়’রা ন্যূনতম বেতন ও পথ দুর্ঘটনার জন্য লাইফ ইনসিওরেন্স পায়। আমার মতো যেন কাউকে মালিকের মুখ থেকে শুনতে না হয়, “এইতো সামান্য কাজ”। তবুও আর একবার বলি, আমি কিন্তু নামি ওষুধ কোম্পানির একজন ডেলিভারি বয়। সবার কাছে আমার একটাই অনুরোধ, “কোনো ডেলিভারি বয়কে কেউ অবহেলা কোরো না। কেন না আমরা হয়ত কারো পিতা অথবা ভাই অথবা কোনো মায়ের সন্তান কিম্বা কারো স্বামী।”
- অপূর্ব কুমার ঘোষ