নয়া পৃথিবী গড়ার কারিগর
new-world
খুদে সৈনিকদের মাটিতে পা, নির্মল বাতাস, জল আর সূর্যকণার পরশ মাখিয়ে নয়া পৃথিবী গড়ার কারিগর হতে সাহায্য করো

আমাদের চারপাশে শিশু-কিশোর-কিশোরীদের মনে কুপ্রভাব পড়ার মতো ঘটনা সবসময় ঘটেই চলেছে। হিংসা, ঘৃণা, বিদ্বেষ, বৈষম্য, বিকৃত তথ্য। আমরা যারা বয়সে বড়, আমাদের দায়িত্ব নয় কি এক সুন্দর, সুস্থ পৃথিবী আগামী প্রজন্মের জন্য রেখে যাওয়া ? চেষ্টা করতে দোষ কী? আর এই চেষ্টাকে সঙ্গী করে, আমরা ‘স্টিল অ্যাণ্ড মুভি প্ল্যাটফর্ম’-এর পক্ষ থেকে সিনেমার ঝুলি নিয়ে স্কুলে-স্কুলে যাব ঠিক করেছি। স্কুলে সিনেমা। মূল কাজ হল, কিশোর-কিশোরীদের, শিশুদের তাদের চেনা সিনেমার বাইরে এক অন্যরকম সিনেমার গল্প বলা। আর সেই গল্পের সাথে সাথে তাদের নিজেদের জীবনের গল্প শোনা। যে সমাজে, যে পরিবেশে তারা বড় হচ্ছে, তা বোঝাতে ও বুঝতে চাওয়া, কথা শোনা, তার নিজের মতো করে বলা কথা, প্রতিক্রিয়া। গত ২৮ এপ্রিল, ২০২৩ সোদপুর স্টেশনের কাছে দেশবন্ধু বালিকা বিদ্যাপীঠ-এ ছিল এই প্রকল্পের প্রথম দিন। ছাত্রীদের মধ্যাহ্ন ভোজনের পর সিত্যিজিত রায়ের ‘টু’, চাও হাম্বার্গের ‘দ্যা বয়, দ্যা স্লাম অ্যাণ্ড দ্যা প্যানস লিডস’, নর্মান ম্যাকলারেনের ‘নেইবরস’ এবং আব্বাস কিয়ারোস্তামির ‘লিটল টেররিস্ট’ — এই পাঁচটি স্বল্প দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হওয়। আর কথাবার্তা হওয় ছাত্রীদের সাথে প্রচুর। একাদশ শ্রেণীর এক মেয়ে বলে, তার জীবনে ডান্সার হবার শখ। কিন্তু বাড়ির অর্থনৈতিক চাপে সে কোনদিন নাচ শিখতেই পারলোনা। ‘টু’ দেখে খুব সহজেই বুঝে গেলো দুটি শিশুর বেড়ে ওঠার বৈষম্যের গল্প। ওদের মন খারাপ লাগছিলো তখন, যখন বড়লোকের ছেলে বন্দুক দিয়ে খোলা আকাশে ওড়া গরিব ছেলের ঘুড়িটা ছিঁড়ে দিল। এভাবেই শিশুদের কল্পনা ডানা মেলে। চেনা চোখে জানতে চেষ্টা করে অজানা পৃথিবীকে।

টেরোরিস্ট কাদের বলা হয়? ওরাই বললো, আতঙ্কবাদীদের। কাদের আতঙ্কবাদী বা শত্রু ভাবি? সবাই মিলে বলে ওঠে পাকিস্তান। পাকিস্তান আমাদের শত্রু, এটা শিশু মনে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। কিন্তু 'নেইবরস' আর 'লিটিল টেররিস্ট' সিনেমা দুটি দেখে ওদের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়। আমরা বললাম ক্লাসরুমের মাঝখানে একটি গন্ডী কেটে যদি তোমাদের বন্ধুদের আলাদা করে দেওয়া হয়, যদি এমন হয়, কেউ কাউকে দেখতে পাবেনা, কথা বলতে পারবে না, তাহলে কেমন লাগবে? এক ছাত্রী নিজের ভাষায় বললো, ঘৃণা-বিদ্বেষ নয়, কাউকে কারোর ধর্ম, জাত, গরিব, বড়লোক দিয়ে আলাদা করা উচিৎ হবে না। ক্লাস ফাইভের একটি মেয়ে ‘নেইবরস’ সিনেমা নিয়ে বললো, একটা ফুলের জন্য মারপিট করে সব ধ্বংস করে দিল! বড় মেয়েরা বলল, এখন কাশ্মীরে যা হচ্ছে। অনেকের ধারণা, শিশুরা রাজনীতি বোঝে না। ওদেরকে এইসব থেকে দূরে রাখা উচিত। কিন্তু যে হামলার মুখে এই প্রজন্ম বড় হচ্ছে, প্রতিনিয়ত শিশুর মন-শরীর আক্রান্ত হচ্ছে, সেই শিশুদের সুপ্ত প্রতিরোধী মনকে গড়ার কাজে আমাদের হাত লাগাতে হবে না! না অন্য কাজের ভীড়ে, এই কাজটাকে সরিয়ে রাখা হবে? ভিন্নধারার গান, নাচ, আবৃত্তি, ছবি আঁকা, গল্প, নাটক, সিনেমা প্রভৃতি শিশু-কিশোর-কিশোরীর মন গড়ার কাজের একটা ধাপ। আগামী দিনে নয়া পৃথিবীকে বাসযোগ্য করার কারিগর এই প্রজন্মের শিশুরাই হবে, যদি আমরা দায়বদ্ধতায় আমাদের কাজটা ঠিক মতো করি। দেশবন্ধু বালিকা বিদ্যাপীঠ-এর বড়দি (মাননীয়া প্রধান শিক্ষিকা মহাশয়া) ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে বলেন, এই ‘লিটিল টেররিস্ট’ সিনেমা নিয়ে তোমাদের সবার সামার প্রজেক্ট থাকবে, ‘সবার উপরে মানুষ সত্য’ এই বিষয়ের উপর। তখন আমাদের মনে হয়, আজকের কর্মসূচি অল্প হলেও সার্থক। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো সমস্ত ছাত্রীদের জন্য শিশু মনোপযোগী ‘সিনেমা ইন স্কুলস’ শিরোনামে একটি ফোল্ডার প্রকাশিত হয়। সোদপুরের দেশবন্ধু বালিকা বিদ্যাপীঠ-এর সমস্ত ছাত্রী, সহশিক্ষিকা, অশিক্ষক কর্মচারী কর্মসূচিতে উচ্ছাস প্রকাশ করেন। সহশিক্ষিকারা ও প্রধান শিক্ষিকা মহাশয়া জানিয়েছেন আবার এধরনের উদ্যোগ নেওয়ার ইচ্ছা আছে। সকলের কাছে বিনীত অনুরোধ, আপনাদের পরিচিত বিদ্যালয়ে যদি এরকম চলচ্চিত্র প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেন, তাহলে আমাদের এই শিশু মনোপযোগী প্রকল্পটি সার্থক হয়। গণসংস্কৃতি পরিষদের এই প্ল্যাটফর্মকে ডাকলেই পাবেন, যোগাযোগ দূরভাষ : সাগর ৯৪৩৩৮৯৭২২১, মিতালি - ৯৪৩৩৭৬০৭৫২, ধন্যবাদ।

খণ্ড-30
সংখ্যা-14