কুখ্যাত নরেন্দ্রপুর থানায় এবার দলিত যুবকের হেফাজৎ মৃত্যুর ঘটনা উদ্বেগ সৃষ্টি করল। ১৩ এপ্রিল বিনা ওয়ারেন্টে কয়েকজন যুবককে মন্দিরের পাশে নেশা করার অভিযোগের অছিলায় তুলে নিয়ে গিয়ে বাড়ির লোকজনকে টাকা চাওয়া হয়। তার মধ্যে একজন ছিলেন সুরজিত সর্দার, যার বাড়ির লোক ২০ হাজার টাকা দেওয়ার পর আরও পাঁচ হাজার টাকা দিতে বাকি থাকায় তাঁকে নির্মমভাবে প্রহার করে মেরে ফেলা হয় ২১ এপ্রিল। জীবন্ত অবস্থায় বাড়ির লোকেদের তাঁর সঙ্গে দেখাই করতে দেওয়া হয়নি। মৃত্যুর পর বডি দেওয়া হয়। অসংখ্য গুরুতর আঘাতের দাগ ছিল সারা শরীরে। থানা এখন উল্টে পরিবারটিকে টাকা নিয়ে কেস মিটিয়ে নিতে বলছে।
গত ২৫ এপ্রিল সিপিআই(এমএল)-এর পক্ষে তিনজনের এক প্রতিনিধি দল নিহত যুবকের গড়িয়ার বাড়িতে গিয়ে তাঁর মা, দাদা ও অন্যান্যদের সাথে কথা বলে ঘটনার অনুসন্ধান করে। সুরজিত স্থানীয় কে কে দাস কলেজে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রাবস্থায় পড়া ছেড়ে দিয়ে হোম ডেলিভারির কাজ করতেন। ভালো স্পোর্টসম্যান ছিলেন। দাদা ছোটখাট ব্যবসা করেন। বাবা কংগ্রেস দলের পরিচিত কর্মী ছিলেন। এখনও পর্যন্ত তাঁদেরকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দেখানো হয়নি। গ্রেপ্তারের খবরও তাঁরা অনেক পরে পেয়েছিলেন। কোন আক্রোশে পিটিয়ে মারা হল, তাঁরা এখনও বুঝতে পারছেন না। কংগ্রেস নেতা কৌস্তভ বাগচী তাঁদের হয়ে মামলা লড়ছেন। কংগ্রেস, সিপিএম এপিডিআর-এর পক্ষ থেকে নানা প্রতিবাদী কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। তাঁরা দায়ী পুলিশ অফিসারদের শাস্তি চান। আইসি অরিন্দম বিশ্বাস এবং আইও দলমত নির্বিশেষে সকলকেই পক্ষে পেতে চান। তৃণমূল মিটিয়ে নিতে পরামর্শ দিচ্ছে। বিরোধী দল বিজেপি একেবারেই উদাসীন।
কুখ্যাত নরেন্দ্রপুর থানায় ছাত্রছাত্রীদের ওপর অত্যাচারের ঘা শুকাবার আগেই নাগরিক স্বাধীনতার ওপর আবার নতুন ঘা দিল বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেপ্তার করে লক আপে পিটিয়ে দলিতহত্যা করে। এর প্রতিবাদে এলাকায় স্থানীয় মানুষকে সামিল করে মিছিলের উদ্যোগ চলছে। প্রতিবাদে ২ মে বারুইপুর এসপির কাছে পার্টির প্রতিনিধি ডেপুটেশনের জন্য জানানো হয়েছে। শাসকদল এই ঘটনায় কিছুটা আত্মরক্ষামূলক অবস্থানে রয়েছে বোঝা যাচ্ছে। দোষী পুলিশ আফিসারের শাস্তির দাবিতে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া হবে।